ব্যাংকার সমাজ! সাবধান! সাবধান
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩৬:৩৯ সকাল
আক্কাছ আলী ৩ লাখ টাকা ভাংতি নিতে এসেছে ইসলামী ব্যাংকে। ব্যাংকাররাও বেজায় খুশী, অবরোধের কারনে প্রচুর ভাংতি, পুরাতন নোটের বান্ডিল জমেছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে গেলে বড় উপকার হয় তাদের।
আক্কাছ আলী ৩ লাখ টাকা দিলো, ব্যাংকার কে, তার বদলে ব্যাংকার তাকে সমপরিমাণ ৫০ টাকার বান্ডিল দিলো। ২ জনের লেনদেন শেষ! কালো অফিশিয়াল ব্যাগে টাকা ভরতে না ভরতেই আক্কাছ আলীর মোবাইলে কল আসলো।
ফোন রেখে আক্কাছ আলী ব্যাংকারকে বলল- ভাই, ৫০ টাকার বান্ডিল নিতে মানা করেছে, আপনি আমাকে ১০ টাকার নোট দিয়ে ৩ লাখ ভাংতি দিন।
এই বলে আক্কাছ আলী ব্যাগ থেকে সেই ৫০ টাকার বান্ডিল গুলো বের করে দিলো। মাত্রই চোখের সামনে লেনদেন হওয়ায় ব্যাংকার নোট গুলো ঘেঁটে দেখলেন না।
তিনি বরং খুশী ই হলেন, ভাংতি টাকা ব্যাংকারদের জানি দুশমন।
লেনদেন শেষ আক্কাছ আলী বের হয়ে গেলো।
আসলে আক্কাছ আলী যেটা করেছে তা হোল , বাসা থেকে তিন লাখ টাকার হুবুহু বান্ডিল বানিয়ে নিয়ে এসেছিলো। যার সামনে পিছনে কিছু ৫০ টাকার নোট , ভিতরে সব পুরাতন ছেড়া ১০ টাকার নোট। কিন্তু বাহির থেকে দেখে বোঝার কোন উপায়।
দিন শেষে ব্যাংকে টাকা গণনা শুরু হোল। ৫০ টাকার সেই বান্ডিলে উপরে নিচে ৫০ টাকার বেশ কয়টা নোট, আর মাঝে সব পুড়ান ছেড়া ১০ টাকার নোট। ক্যাশে শোরগোল পড়ে গেলো। সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখা গেলো আক্কাছ আলীর কাণ্ড কারখানা। আক্কাছ আলীর ক্যাশ রিসিভ কারী ব্যাংকার এর সব মনে পড়ে গেলো, আর আজ সারাদিন তিনি ই ক্যাশ রিসিভ করেছেন।
সাথে সাথে তিনি সাথে সাথে হার্ট ফেইল করলেন।
কারন, খোয়া যাওয়া ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা তাকে এক রাতের মধ্যে জমা করতে হবে। তাকে হসপিটালে ভর্তি করা হোল, আর সহকর্মীরা যে যার সাধ্যমত টাকা দিয়ে সেই টাকা ক্যাশে জমা করলো।
এরপর এক সপ্তাহ পর আক্কাছ আলী আবার এলো ব্যাংকে, এবার সে ৮ লাখ টাকা ভাংতি করতে এসেছে।অফিসের প্রতিটা মানুষকে সিসি ক্যামেরায় আক্কাছ আলীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিনের সেই অসুস্থ ব্যাংকার এখনো হসপিটালে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছেন। নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন হারুন সাহেব। হারুন সাহেব আক্কাছ আলিকে দেখেই চিনে ফেললেন।
কিন্তু বুঝতে দিলেন না। জিজ্ঞেস করলেন
- আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
- আমার ৮ লাখ টাকা ভাংতি দরকার
- আরে আপনি উনি ই না সেদিন যে ৩ লাখ ভাংতি নিয়ে গেলেন। স্যার, আপনারা আমাদের কতো উপকার করেন ভাংতি নিয়ে, অথচ আপনাদের চা পানি ও খাওয়ালাম না। ৮ লাখ তো অনেক টাকা! বসের রুমে চলেন , অনুমতি নিতে হবে, সেই সাথে চা নাস্তাও করবেন। তা আপনি কি একা?
- জী না, আরেকজন আছে।
- তাকেও ডাকেন
অপকর্মের আরেক সাথীকেও আক্কাছ ফোন দিলো।
আক্কাছ আলী আজ খুশীতে গদগদ। ব্যাংকার গুলা যে এত্ত বোকা তার জানাই ছিল না। যাক, ৮ লাখ টাকার বানানো নোটে ২ লাখ টাকা গছানো যাবে, ৬ লাখ টাকা এক নিমিশে ইনকাম আর সাথে চা নাস্তা ও ফ্রি।এরপর আক্কাছ আলিকে নিয়ে হারুন সাহেব ব্যাংকের ম্যনেজার এর রুমে গেলেন, তার পিছু পিছু ছুটল ২ জন সিকিউরিটি গার্ড।
এরপর কি হোল আপনারা বুঝতেই পারছেন!
৬ লাখ টাকা ইনকাম করতে আমার কতো দিন লাগবে? কিংবা আপনার? ধরে নিন, আপনি একজন টিউটর, কিংবা ব্যাংকার কিংবা ডাক্তার কিংবা শিক্ষক! যাই হোক
আপাত দৃষ্টিতে সততা কিংবা হালাল রুজির কথা যদি আসে, এই টাকাটা আয় করা বাংলাদেশে অনেক মেহনতের পরেই সম্ভব।
কিন্তু, এক শ্রেণীর মানুষ এই টাকা মিনিটেই হাতিয়ে নিচ্ছে।
এভাবেই কেয়ামতের একেকটা লক্ষন প্রকাশ পাচ্ছে।একজন মধ্যবিত্ত মানুষ যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেহেনত করে রাতারাতি ভালো একটা জীবনের নিশ্চয়তা পাচ্ছেনা, সেখানে সমাজের এক শ্রেণীর ঠক, জোচ্চোররা রাতারাতি সেইসব পরিশ্রমী মানুষের কিসমত মেরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।
হাদিসে আছে-
‘ আমাকে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন’! নবীজী বললেন,‘দাসী তার মনিবকে জন্ম দিবে এবং তুমি দেখবে নগ্নপদ, নগ্ন শরীর, অভাবী, বকরীর পালের রাখালরা প্রতিযোগিতা করবে উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ নিয়ে’ (মুসলিম)।
এভাবেই সমাজের নিম্ন, নৈতিকতাহীন মানুষরা অর্থনীতির চালকের আসনে সমাসীন হচ্ছেন। তাদের ছেলেমেয়রা মার্কিসিডিজ হাকিয়ে বেড়াচ্ছে, আর সেইসব গাধাগুলোকে মানুষ করার দায়িত্ব পড়ছে আপনার আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবীদের ঘাড়ে।
তাদের ঠাট বাট আর ভাব দেখে আপনার হয়তো দুঃখের কোন সীমা থাকেনা। শিক্ষিত সৎ ছেলের গ্রাম্য মায়ের মতো কেউ ভাবতেই পারে, এতো লেখা পড়া করিয়ে লাভ কি হোল? ছেলে তো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতে পারলো না, গাড়িতে চড়তে পারলো না!
কিন্তু সততার যেই তকমা গায়ে লাগানো থাকে, সেটার আনন্দ বুঝি তুলনাহীন।
তবুও এভাবে আর কয়দিন? অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে ২ জনই তো সমান পাপী? আমরা কেন সচেতন হবো না আক্কাছ আলীর মতো ঠকরা যাতে আমাদেরকে ঠকাতে না পারে সে ব্যাপারে! আর এসবে আপনি আমিও ঠকবো , আপনিও হয়তো ভবিষ্যতে ব্যাংকার হবেন, কেমন লাগবে অকারণে কারো অসততার ফল ভোগ করতে?
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৯ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
‘আমাকে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন’! নবীজী বললেন,‘দাসী তার মনিবকে জন্ম দিবে এবং তুমি দেখবে নগ্নপদ, নগ্ন শরীর, অভাবী, বকরীর পালের রাখালরা প্রতিযোগিতা করবে উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ নিয়ে’ (মুসলিম)।
এই হাদিসে দাসীর ব্যখা কি বলতে পারবেন, আমি অনেক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেছি সদুত্তর পাইনি। অবশেষে আমি নিজের মত করে একটি উত্তর খোজে পেয়েছি।
সর্বোপরী আপনার লিখাটি সুখপাঠ্য ও বস্তুনির্ভর হয়েছে। ধন্যবাদ।
ফলে আমেরিকার আইনে সন্তান হয়ে যায় মুনিব আর
মা হয়ে যায় দাসী; কেননা সন্তান মায়েরই স্পন্সর! জানিনা হাদিসে এই ধরনের কোন কথার ইঙ্গিত দিয়েছে কিনা।
একদা সেই নারী চ্যানেল আইয়ের বাংলাদেশ স্টুডিওতে আজকের তারকা হিসেবে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে এসেছিল। আমেরিকার সেই জারজ সন্তান নিয়ে গৌরব করছিল, ফোনে বিভিন্ন অনুরাগীদের উপদেশ দিচ্ছিল। এমনি সময় তার বাংলাদেশী সেই স্বামী ফোন করে বসে এবং দর্শক হিসেবে সরাসরি ফোন করে বসে! তখন থেকে ঘটনাটি জানাজানি হয়। ইউরোপের কয়েকটি দেশেও একই পদ্ধতি কার্যকর আছে।
তবে এত তারাতারি একই ব্রাঞ্চে একই লোক যাবে বলে মনে হয়না। এই ধরনের কান্ড অনেক ব্যাংকই হয়েছে বলে যানি।
লেখা অনেক ভাল লেগেছে আপু ।
ব্যাংকাররাও তো কম যায় না, কিছুদিন আগে মনে হয় পত্রিকাতেই দেখেছিলাম যে – ব্যাংক থেকেই জাল টাকা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আসলে সময় যখন খারাপ যায়, সবকিছুতেই খারাপের ছোয়া লাগে ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন