চাকুরীজীবি মা (দুটোই ত ছেলে কিন্তু মেয়ে হলে কি করতেন)
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২৬ জুলাই, ২০১৩, ১০:৩৭:২৮ রাত
পড়ন্ত বিকেলে ভার্সিটি থেকে লোকাল বাসে ওঠে এই গরমের সময় প্রায় মন বলে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে রংপুরে গিয়ে বাড়ির পিছনে গাছপালার মাঝে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকি।
তাতে কি পড়াশুনা অজীবন আমার পিছু ছাড়বে না
আমি জানি।
আমার সামনে বসেছেন এক ভদ্র মহিলা হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ।
-আমি যখন বললাম আপনি যাবেন কোথায়
ওনার গন্তব্যের কথা
শুনে বলেই ফেললাম
এত দুর থেকে এখানে শপিং করতে এসেছেন।
=ওনি বললেন,
না আমি ত এখানে জব করছি।
-ও আচ্ছা।কি জব? কখন আসেন অফিসে।
=সরকারি।সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা।
-আপনার ত বাসায় যেতে রাত ৭টা বেজে যাবে।আপনার বাবু নেই।
বিশ্রাম কখন নেন।
=তুমি যান এখন বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হব তারপর রান্না বান্না করতে হবে।ছয় মাসের বাচ্চা আছে।বড় ছেলেটা প্রায় ১০ বছর ও ত এখন অসুস্থ হয়ে গিয়েছে যান।
ওদের প্রতি ঠিকভাবে খেয়াল দিতে পারি না খিটখিটে মেজাজ আর রোগাটে হয়ে গিয়েছে।
-আপনার ত অনেক
পরিশ্রম করতে হয়।
=ঠিক পরিশ্রম আছে তবুও শান্তি।দেখ নিজের টাকা দিয়ে শপিং করলাম হাজবেন্ডের কাছে চেয়ে অপেক্ষার করার প্রয়োজন হল না।নিজে স্বাধীনভাবে খরচ করছি নিজের টাকায় কার কাছে হিসেব দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না।শোন তুমি ত ভার্সিটিতে পড় অবশ্যই জব করবা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে অপমানিত জীবনযাপন করার কোন অর্থই নেই।তা ছাড়া ভবিষ্যতে বাচ্চাদের ভাল যায়গায় পড়াশুনা করাতে হলে প্রচুর টাকা পয়সার দরকার।এখন একটা টিউশনি চার পাঁচ হাজারের নিচে ভাল টিচার পাওয়া যায় না।ভাল ভাবে বেঁচে থাকতে হলে টাকার প্রয়োজন আছে।
-হঠাত্ বলে ফেললাম আপনার ত বাচ্চাদের হক আদায় হচ্ছে না।
দুটোই ত আপনার ছেলে কিন্তু মেয়ে হলে কি করতেন?
=দেখ যে যুগ আমি বুড়ো হয়ে গেলে বাচ্চা আমাকে দেখবে তাছাড়া ভাল যায়গায় পড়াতে গেলে ত টাকা লাগবে।আম্মাকে নিয়ে এসেছি।
আর মেয়ে হলে ত জব করতামই না আল্লাহ বাঁচিয়েছে দুটোই ছেলে।
-হ্যা,যুগ ত অনেক কঠিন।চলার পথে টাকার প্রয়োজন আছে।
=জব কিন্তু অবশ্যই করবা এ সমাজে মেয়েদের মূল্য নেই।তোমার পরিচয়ে তোমাকেই দাড়িয়ে থাকতে হবে।
গল্প করতে করতে হঠাত্ সময় ফুরিয়ে গেল নামার সময় হল
বললাম দোয়া করবেন।
নেমে পড়লাম।
সত্যি বলতে কি সম্ভবত হাজার হাজার চাকুরীজীবি মায়েদের ব্যাখ্যা এ রকমই ভিন্ন হতে পারে।
তবে একটা বিষয় খুব কটকা লেগেছে আমার কাছে।
একদম মানতে পারছিনা আমি।
কত বছর আমি প্রাইভেট পড়াতাম
আমার টাকা দিয়ে আমি পড়াশুনা করতাম।
ইফতার মাহফিলেও আমি আমার টাকা
দিয়েছিলাম।
তবে আমি এবছর আমি টিউশনি করিনি বরং আব্বুর কাছে টাকা চেয়ে নিতেই আমার কাছে আনন্দ।যখন আব্বুকে বললাম ইফতার মাহফিলের জন্য টাকা চেয়ে নিলাম আমার খুব প্রশান্তি লেগেছে।আমার নিজের টাকার চেয়ে এই টাকাটি নিতেই বেশি ভাল লেগেছে।
আমার অভিভাবক যিনি তার দায়িত্ব আমার ভরণপোষণ বহন করার তবে এক্ষেত্রে কেন হীনমন্যতা জন্মাবে।
অবশ্যই আমি জব করব তার কারণ কেন প্রধানত টাকা হবে।
আমি আমার মেধাকে কাজে লাগিয়ে
আমার দেশ
আমার রাষ্ট্র
এবং
আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করব।
সেখানে টাকা একটা গৌণ বিষয় হবে এবং কাজ হবে মূখ্য বিষয়।
অপর পক্ষে সন্তান বৃদ্ধ বয়সে বাবা মার হক আদায় করবে কি করবে না
সেই চিন্তাকে মূখ্যভাবে বিবেচনায় নিয়ে টাকার উপর সন্তানের লালন পালনের ভার ছেড়ে দিযে কেল্লা ফতে। সব দায় দায়িত্ব শেষ।সন্তানদের নৈতিক বিকাশ টাকার ভিতর।সমাজের অবক্ষয়ের মুল কারণ বা উপাদান হচ্ছে টাকা।
দুটি সিদ্ধান্ত উপনীত হলামঃ
১১১. বুঝতে পারছি
সন্তানরা বাবা মার চেয়েও কেন বেশি টাকাকে ভালবাসে বর্তমানে।
২২২. বউয়ের চেয়েও গার্লফেন্ড কেন বেশি উপভোগ্য।
নতুন মস
(প্রেক্ষাপট ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য
তবে লেখার ঢং সম্পূর্ণ আমার মত)
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন