ঘুরে দেখা দাতা হাতেম তাঈ এর বাড়ী
লিখেছেন লিখেছেন ফখরুল ১৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৩:৫৯:৫২ দুপুর
হাতেম তাঈ (আরব রীতি অনুযায়ী তাঁর নাম হাতেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সা’য়াদ আত-তাঈ আল-নাজদি) আরব উপদ্বীপের নাজদ প্রদেশের তাঈ উপজাতিদের রাজা ছিলেন।
বর্তমানে এটি সউদি আরবের নাজদ এলাকার হাইল প্রদেশে অবস্থিত। তিনি ইসলাম পূর্ব যুগের একজন বিখ্যাত আরব কবি। তিনি ছিলেন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর উম্মত এবং সাহাবা আদি ইবনে হাতেম ও সাফানা বিনত হাতেম (রাদি আল্লাহু আনহুম) এর বাবা তিনি দানশীল ও অথিতিপরায়ণ হিসাবে আমাদের মাঝে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তাঁর অতিশয় দানশীলতার জন্য ‘দাতা হাতেম তাঈ’ প্রবাদ বাক্যের ন্যায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইসায়ী ৫৭৮ সালে অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মের ৬/৭ বছরের মাথায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তাঁকে হাইলের তয়ারেন নামক স্থানে কবরস্থ করা হয়।
এখানেই চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন দাতা হাতেম তাঈ।
হাইল শহরটি সৌদি আরবের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। এই শহরটি আয়তনের দিক থেকে ছোট, কিন্তু অনেক সুন্দর একটি শহর, বেশ গোছালো, শহরটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে যা দেখলেই বুঝা যায়। কিছু কিছু পাহাড়ের গায়ে বৈদ্যুতিক বাতির সাহায্যে অলংকৃত করা হয়েছে। কোনটির গায়ে সৌদি আরবের পতাকা, কোনটির গায়ে মানচিত্র ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। রাস্তার দুপাশে মাঝে মাঝেই দেখা যায় ঝাউ গাছ দারা সাজানো হয়েছে। প্রতিটি গোল চত্বরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য শিল্পকর্ম করা হয়েছে।
হাতেম তাঈ’র প্রাসাদটি হাইল শহর থেকে প্রায় ৪০ কিঃ মিঃ উত্তরে অবস্থিত। মরুভূমি আর পাহাড় অতিক্রম করে আমাদের গাড়ী ছুটে চলেছে হাতেম তাঈ’র প্রাসাদের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৩৫ কিঃ মিঃ পথ পাকা রাস্তা পাড়ি দেবার পর আমাদের গারিটি চলতে শুরু করল একটি কাঁচা ও ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে এই ধরণের রাস্তাকে আমাদের লক্ষ্মীপুরের ভাষায় বলা হয় (ধজভাঙ্গা)।
বাকী পথটা আমাদেরকে এভাবেই যেতে হবে তা আমরা সবাই আগেই জেনেছিলাম জনাব আব্দুল মান্নান সাহেবের প্রবন্ধে। রাস্তাটি পাড়ি দেবার সময় দুপাশে ছোট বড় কালো পাথরের পাহাড় বেশকিছু পাহাড় লক্ষ্য করা যায়। কয়েকটি পাহাড়ে তাকিয়ে দেখলাম একটি পাথরের উপর আরেকটি পাথর এমনভাবে লেগে আছে, মনে হচ্ছে যেন বাতাসের আলতো আগাতেই পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কি অশেষ গুন তা হালকা বাতাস কেন, দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াতেও এগুলো অপরিবর্তিত থাকে। মহান রাব্বুল আলামিনের এমন সুনিপুণ সৃষ্টি দেখে আমরা সকলেই সুবহানআল্লাহ পড়লাম। সৌন্দর্য মণ্ডিত এমন সব জিনিস দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম দাতা হাতেম তাঈ’র প্রাসাদের সামনে।
প্রাসাদের সামনে গাড়ী থামতেই সবাই তড়িৎ গতিতে নেমে গেল। হাতেম তাঈর বাড়ীর সামনে সৌদি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের পক্ষ থেকে একটি সাইন বোর্ড দুটি ছোট আকৃতির ফিলার দ্বারা খুব শক্তভাবে স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে
( Tawaren Palace
You are now in one of the most splendid areas of the historical and environmental valise of Jabal Aja. And you can see the ruination of Tawaren Place; Castle and antiquities back to Hatem Al-Tayee period and this is the only ruminant of Tawaren historical village. This palace is considered one of the important heritage site, and is linked to Hatem Al-Tayee who was known for his generosity and hospitality. )
অর্থঃ আপনি এখন আজা পাহাড়ের (জাবাল ই-আজা) ঐতিহাসিক ও পারিপার্শ্বিক দিক থেকে খুবই চমৎকার এলাকায় অবস্থান করছেন। তয়ারেন প্রাসাদের বিদ্ধস্ত অবস্থা, দুর্গ এবং প্রাচীন কালের ধ্বংসাবশেষ যা হাতেম তাঈয়ের যুগে ফিরে নিয়ে যাবে তা দেখতে পারেন এবং ঐতিহাসিক তয়ারেন গ্রামের এটিই একমাত্র নিদর্শন। এই প্রাসাদটি উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং হাতেম তাঈয়ের সাথে যোগসূত্র তৈরি করে। যিনি দানশীল ও অথিতিপরায়ণ হিসাবে পরিচিত ছিলেন
প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করতেই হাতেম তাঈয়ের আমলে নির্মিত একটি দুর্গ চোখে পড়ে। যা তৎকালীন সময়ে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত খেজুর গাছ, মাটি, ছোট ছোট পাথর এবং অন্যান্য গাছের সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। দুর্গটির ধ্বংসাবশেষ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর একটু পরেই আছে হাতেম তাঈয়ের সেই প্রাসাদটি, যেখানে তিনি অবস্থান করতেন। সেটিও প্রায় অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে, মাটি, খেজুর গাছসহ অন্যান্য জিনিস দিয়ে তৈরি করার কারণে খুব সহজে এগুলো ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। দুর্গ এবং প্রাসাদটির বর্তমান অবস্থা হল, পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যের অন্তিম মুহূর্তের ন্যায়। তবে আমার মনে হয়, সৌদি আরবে বৃষ্টি তেমন একটা হয়না বিধায় এখনো এই স্থাপনাগুলো রয়ে গেছে। না হলে আরও অনেক আগেই এই স্থাপনাগুলো শেষ হয়ে যেতো।
হাতেম তাঈয়ের প্রাসাদের ঠিক বাম দিকটায় ভ্রমণে আসা মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি বসার বেঞ্চ।
এই দুর্গ এবং প্রাসাদের ঠিক দক্ষিন পার্শ্বেই রয়েছে বেশ উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা একটি কবর স্থান, এখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন আরবের ঐতিহাসিক ব্যক্তি হাতেম তাঈ। এই কবর স্থানের ভিতরে ছোট বড় অনেকগুলো কবর দেখা যায় যেগুলো পাথর দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
এই কবরগুলোর মধ্যে দুটি কবর বেশ বড়, একটি ২২ হাত অন্যটি তাঁর প্রায় অর্ধেক। এত বড় কবর স্থান দেখে আমি ভাবতে শুরু করলাম মানুষ কি এত লম্বা হতে পারে? আবার মনে মনে বলতে লাগলাম হলেও হতে পারে, এ ব্যাপারটি আমি যখন দোদুল্যমানতায় ভুগছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে জনাব আব্দুল মান্নান সাহেব এসে বললেন এসব ভুয়া মানুষ এত লম্বা হয় নাকি? আসলেইতো হাতেম তাঈতো আর আ’দ জাতির লোক ছিলেন না যে এত লম্বা হবেন। অবশ্য পরে সবাই একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই, হয়তো বা এই ২২ হাতের ভিতরে কোন এক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
হাতেম তাঈয়ের প্রাসাদের বাহিরে বর্তমানে ছোট একটি পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে ভ্রমণ কারীরা সহজে ঠাণ্ডা পানি পান করতে পারে।
এই লোকটাকে চেনা যায়?
প্রাসাদের বাহিরে আর একটু দক্ষিণে গেলে কিছুটা সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে। অবশ্য স্থানটি তেমন সুবিধাজনক নয় বিধায় আমাদেরকে সে দিকে যেতে বারন করা হয়েছিল। তারপরেও আমি কিছুদূর গিয়ে কয়েকটি ছবি সংগ্রহ করি। পরে আমাদেরকে খুব সহজ ভাষায় একজন বললেন এই স্থানে সন্ধ্যার পরে আসাটা উচিৎ নয়। কেউ যদি আসতে চায় তাহলে যেন দিনের বেলায় আসে।
পরিশেষে সন্ধ্যা নামার আগেই আমরা আমাদের “হাতেম তাঈ’র প্রাসাদ ভ্রমণ” সংক্ষেপ করে গাড়ীতে এসে বসলাম। এবং ফিরে এলাম মূল হাইওয়েতে। সুন্দর এবং ঐতিহাসিক স্থানটি ভ্রমণ সুস্থ, সফল হওয়ায় আমরা সকলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলি আলহামদুলিল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১০৬০৪ বার পঠিত, ৪৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিরাট প্রভাব শালী,বিশ্ব বিখ্যত,এই মহান মানুষটির বাড়ী আপনাদের সাথা সাথে আমাদেরকেও ভ্রমন করিয়ে আনার জন্য আপনাদের পুরো টিমকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
শুকরান জাযাকাল্লাহ খায়ের ।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
দাতা হাতেম তাঈ এর বাড়ী দেখে খুুউব ভালো লাগলো।
মডু মহাশয়ের কাছে এত সুন্দর এবং ভ্রমন এর পোষ্টটি স্টিকি করার দাবি জানাচ্ছি।
স্টিকি করা হোক পোষ্টটি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন