উম্মাহাতুল মু'মিনীন (মুমিনদের মাতাগন) || রেসালতের প্রতি ঈমানের তত্ব্গাথা (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০২ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৪৪:৫৯ রাত
[এক: তত্কালীন সমাজ ও অন্যান্য বিয়ে]
মক্কায় সেসময় এক ভয়ঙ্কর ও ঘৃণ্য সমাজ বিদ্যমান ছিল। বুখারীর এক হাদিস অনুযায়ী (আয়েশা (রা) বর্ণিত) মক্কায় সেসময় চার ধরনের বিয়ে প্রচলিত ছিল। পতাকা ঝুলিয়ে পতিতালয় জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত ছিল। লোকজন সেখানে গিয়ে অপকর্ম করত। একজন মহিলা অগণিত পুরুষের সঙ্গী হত। সন্তান হওয়ার পর ওই মহিলা বলত এই সন্তান অমুকের। তখন ওই লোকের আর কিছু করার থাকত না। নবজাতকের পিতা হিসেবে ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে হত। কি ভয়ঙ্কর খারাপ সমাজ - এ থেকেই চিন্তা করা যায়। সীমা ছাড়াই একজন পুরুষ অসংখ্য মহিলা বিয়ে করতে পারত।
এরকম একটি উদ্ভট ঘৃণ্য সমাজের সমান্তরালে অবস্থান করে দীর্ঘ ২৫ বছর মহানবী (স) সকল প্রকার উপরোল্লিখিত লালসা আর অপকর্ম থেকে বিরত ছিলেন। কোরায়েশের মধ্যেও সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, সবচেয়ে সুন্দর অবয়বের সুপুরুষ, মহানবী (স) সহজেই সুন্দরী, বংশীয় এবং যত ইচ্ছা তত মহিলা বিয়ে করতে পারতেন।
কিন্তু
(১) তিনি বিয়ে করলেন তার থেকে ও ১৫ বছর বেশি বয়সী ৪০ বছরের খাদিজা (রা) কে।
(২) এই সুদীর্ঘ ২৫ বছর যখন মানুষের যৌবনের কামনা সর্বোচ্চ থাকে তখন আর কাউকে বিয়ে করেননি। পরম বন্ধু খাদিজা (রা ) এর সাথেই ছিলেন। খাদিজা (রা) যখন ৬৫ বছর বয়সে মারা যান, তখন মহানবী (স) এর বয়স ছিল ৫০।
এ কারণেই ইসলামের শত্রুরা যতই মহানবী (স) এর লালসা নিয়ে কিচ্ছা কাহিনী বানাক না কেন, তা বাস্তবতার ধারে কাছে আসতে পারেনা। হাস্যকর ই থেকে যায়।
মহানবী (স) তার কামনা পূরণের জন্য একাধিক বিয়ে করেননি। বরং এ বিয়েগুলো ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা।
খাদিজা (রা) প্রসঙ্গে বলা যায়:
(১) তিনি ধনী ছিলেন: যার অর্থ-বিভব ইসলামের সাহায্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। ইসলামের প্রথম যুগের কঠিন অভাবে সময়ে এ সাহায্য ছিল অপরিহার্য।
(২) তিনি ছিলেন ধৈর্যশীলা মহিলা: প্রাথমিক যুগে মহানবীর (স) প্রতি সকল প্রকার অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলেন এক সহায়ক শক্তি ও পরামর্শদাতা ।
(৩) দক্ষ ও কর্মশীলা মহিয়সী নারী: যা ইসলামের দাওয়াতের প্রত্যেক স্তরকে করেছে বেগবান।
এজন্য মহানবী (স) কখন ও খাদিজা (রা) এর বিশ্বস্ততা কে ভুলেননি। সব সময়, এবং আমৃত্যু তার প্রতি কৃতগ্গ ছিলেন।
মহানবী (স) বলেন "খাদিজা তখন আমাকে বিশ্বাস করেছে যখন সবাই আমাকে অবিশ্বাস করেছিল। সে তখন আমাকে সাহায্য করেছিল যখন সবাই আমার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল। আর আল্লাহ আমাকে তার মাধ্যমে সন্তান দিয়ে ধন্য করেছেন। "
মহানবী (স) এর একমাত্র বংশীয় ধারা ফাতিমা (রা) এর মাধ্যমে যিনি ছিলেন খাদিজা (রা) এর কন্যা।
খাদিজা (রা) এর মৃত্যুর পর কয়েক মাস মহানবী (স) বিয়ে করেননি। এরপর ইসলামের দাওআত কে প্রসারের স্বার্থে নিন্মোক্ত বিয়ে করেছিলেন যা আলোচনা করা হবে।
[দুই]
স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় সাওদা (রা) কে উম্মে হাকিম (রা) মহানবী (স) এর কাছে নিয়ে আসেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাসুল (স) তাকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সাওদা (রা) নবীজি (স) কে বলেন "আমি বৃদ্ধ, দেখতে সুন্দর নই। আমার অনেক সন্তান সন্ততি রয়েছে। আপনার সমস্যা হবে যদি সকল সন্তান ঘরে থাকে।"
মহানুভব রাসুল (স) সকল সন্তানের ভরণ পোষণ সহ সাওদা (রা) কে বিয়েতে সম্মত হলেন। কারণ তিনি যে এই উম্মতের জন্য পিতৃতুল্য।
খাদেজা (রা) মারা যাওয়ার পর মহানবী (স) এক বর্ণনা অনুযায়ী ৯ টি বিয়ে করেছিলেন। কেন হটাত করে এই বিয়েগুলো করতে হল? এর মাঝে প্রগ্গা বা হেকমত কি ছিল?
যখন মহানবী (স) মক্কায় ছিলেন, তার ইসলামের দাওয়াতের মিশনের ভিত্তি (base) কে বিস্তার করার প্রয়োজন হয়নি।খাদিজা (রা) প্রয়োজনীয় সব কিছুই (অর্থ, জায়গা, পরামর্শ, ইত্যাদি) সরবরাহ করতেন।
হিজ্রতের পর মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম হল। বিভিন্ন গোত্রকে পেলেন। যাদের সাথে রাজনৈতিক সখ্যতা গড়ার প্রয়োজন হল। এজন্য সেখানে তিনি বিয়ে করেন। এতে উপকারী অনেক কিছুই ঘটে। যেমন বনু মুস্তালাক গোত্রের একজন মহিলাকে বিয়ের মাধ্যমে পুরো গোত্রের সকলে মুসলমান হয়ে যায়। সুব্হানাল্লাহ।
আল্লাহ-তায়ালা চার (৪) খলিফার সাথে মহানবী (স) এর সম্পর্ক জুড়ে দেন। তাদের সন্মানিত করেন।
(১) আবু বকর (রা) এর কন্যা আয়েশা (রা)
(২) ওমর (রা) এর কন্যা হাফসা (রা)
(৩) মহানবী (স) তার কন্যাদের বিয়ে দেন যথাক্রমে ওসমান (রা) এবং আলী (রা) এর সাথে।
এভাবে সকল খলিফাই মহানবী (স) এর সাথে আত্মীয় হয়ে সন্মানিত হন।
মহানবী (স) একজন প্রাক্তন খ্রিস্টান এবং একজন প্রাক্তন ইহুদি নারীকে বিয়ে করেন। এটি প্রমান করে মহানবী (স) পূর্বের নবী - রাসুলদের উত্তরসুরী।
মারি আল কিবতিয়া (রা) ছিলেন প্রাক্তন খ্রিস্টান।
এবং সাফিয়া বিন হায়য়ী আল আখতাব (রা) ছিলেন প্রাক্তন ইহুদি।
মা সাফিয়া (রা) কে কেউ কেউ (অন্যান্য স্ত্রীরা) "তুমি ইহুদি ছিলে' বলে অপমানিত করতেন।
তিনি রাসুল (স) এর কাছে অভিযোগ করলে রাসুল (স) সাফিয়া (রা) কে বলেন, "তারা যদি আবার কখন ও তোমাকে এভাবে অপমান করে তবে দু:খ করবে না; বরং তাদের বলবে যে, "তুমি একজন নবীর স্ত্রী এবং একজন নবীর কন্যা" ((হারুন আ) এর বংশ ধর ছিলেন মা সাফিয়া (রা))।
[তিন: যুক্তি]
একাধিক স্ত্রী থাকার একটি যুক্তি হল: হাদিস বর্ণনার অনেক চেইন (সিকোয়েন্স) বা "রাবি" (বর্ণনাকারী) তৈরী করা। যাতে কোন হাদিস না হারিয়ে যায় বা ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।
নবীজির (স) দিনের এক অংশ পরিবারের সাথে কাটত। কিন্তু সেই পরিবার সম্পর্কিত রাসুলের (স) কথা বা কাজ তথা হাদিস কোথায়? আমরা কিভাবে তার পরিবার-সম্পর্কিত সুন্নাহগুলো পাব? রাত্রিবেলায় তার জীবন প্রণালী কেমনতর ছিল? কিয়ামুল লাইলে তিনি কি করতেন? কিভাবে নামাজ পরতেন? এ সম্পর্কিত তথ্য কিভাবে পাব?
যেমন ধরুন: মহানবী (স) এর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, অথবা ইমাম হিসেবে অথবা বিচারক হিসেবে, অসংখ্য সাহাবার চাক্ষুষ প্রমান হিসেবে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় একই ঘটনার। যেসকল কাজ তিনি বাইরে করতেন বা সাহাবাদের সামনে করতেন সেসকল ঘটনা রেকর্ড হয়ে যাছে অনেক সঙ্গীর মাঝে। কিন্তু পরিবারের ঘটনা? যা কিনা অনেক গুরুত্বপূর্ন এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়। অন্য কোন বিষয় ই তো সবার জানার জন্য একই রকম গুরুত্বপূর্ন নয় - যতটা না পরিবার সম্পর্কিত বিষয়াবলী।
অন্যান্য নির্দিস্ট বা স্পেসিফিক বিষয় যা সবার না জানলেও চলবে ( যেমন বিচারক হিসেবে কাজ সম্পর্কিত হাদিস, ইত্যাদি)।
অথচ তার জন্য অনেক বা একাধিক প্রমান থাকত সাহাবাদের মাধ্যমে। অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় তথা 'পরিবার সম্পর্কিত বিধান' আসবে কেবল একজন স্ত্রীর মাধ্যমে - এটা কি মানানসই হত? এটা কি বিপদজনক হত না? ওই একজন স্ত্রীর কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কি মুহুর্তে সব হাদিস তথা ঘটনা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেত না?
ইসলামের শত্রুরা তখন ওই একজন স্ত্রীকে ই ফোকাস করত। হত্যা করতে সচেস্ট থাকত।ঠিক যেই একই কারণে তারা আবু হুরায়রা (রা) কে হত্যা করতে প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়েছিল (কারণ তিনি ৫০০০+ হাদিস বর্ণনা করেন)।
ইসলাম কে সংরক্ষণের স্বার্থে একজন মাত্র স্ত্রী থাকলে কি যে ভয়ঙ্কর আক্রমন হত ইসলামের শত্রুদের থেকে - তা সহজে অনুমেয়। আর আল্লাহ তায়ালা কেন ই বা ইসলামকে এত ঝুকিপুর্ন রাখবেন? তাই আল্লাহ তায়ালা শুধু মাত্র ইসলামকে দৃর সংরক্ষনের স্বার্থে (যেমন একজন কোন বর্ণনা ভুলে গেলে যেন অন্য কারো মাধ্যমে তা যেন সংরক্ষিত থাকে) রাসুল (স) এর জন্য ৯ টি বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। উল্লেক্ষ্য আল্লাহতায়ালা অন্য সকলের জন্য সর্বোচ্চ ৪ টি বিয়ের অবস্থান রাখেন।
পরন্তু অনেক স্ত্রীর মাধ্যমে কোন হাদিস সঞ্চালিত হলে তা অনেক মানুষের কাছে দ্রুত পৌছবে। হাদিস অবিকৃত উপায়ে অনেকের মাঝে প্রসারের এটিই ছিল সবচেয়ে উপকারী এবং নিরাপদ পদ্ধতি।
এভাবেও উদাহরণ দেয়া যায়: একজন শিক্ষক থেকে ৯ জন শিক্ষক তৈরী হলেন - সকলে একই বক্তব্য জনসাধারণে জানাচ্ছেন, কেউ একজন কোন নির্দিস্ট বিষয় ভুলে গেলে আরেকজন থেকে তা জেনে নিতে পারেন।
[চার : অসহায় মহিলার রক্ষনাবেক্ষনের মত উদারতা]
উম্মতকে যে নেতা পরম - ভালবাসে উম্মতের দু:খে সবকিছু বিসর্জন দিতে পারেন সহজে, তিনি হলেন বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মদ (স)।
মহানবী (স) এর দুটি বিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মহত্বের পরিচায়ক:
(১) উম্মে সালামা
(২) উম্মে হাবিবা
উম্মে হাবিবা (রা) র পিতা হলেন কোরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ান। উম্মে হাবিবা (রা) স্বামী সহ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। স্বামী ছিলেন ওবায়দুল্লাহ বিন জাহশ। রাসুল (স) এর অনুমতিক্রমে তারা আবিসিনিয়া হিজরত করেন।সেখানে একদিন উম্মে হাবিবা একটি স্বপ্ন দেখেন যে, তার স্বামী বিকৃত (deformed ) হয়ে গিয়েছে। পরের দিন সকালে তার স্বামী ওবায়দুল্লাহ তাকে বলে, "আমি খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছি।"
উম্মে হাবিবা (রা) তখন তাকে স্বপ্নের কথা বললেন। তবু ওবায়দুল্লাহর কোন মন-পরিবর্তন হল না। আমৃত্যু মুরতাদ ই রয়ে গেলেন।
সে সময়টা উম্মে হাবিবা (রা) এর জন্য এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরী করেছিল।একেতো মক্কার উচ্চ বংশীয় নারী - ধনবান, প্রখ্যাত নেতা আবু সুফিয়ানের মেয়ে উম্মে হাবিবা ধর্ম ছেড়ে, পরিবার ত্যগ করে অন্য দেশে হিজরত করেছেন। তার উপর স্বামী হয়ে গিয়েছে মুরতাদ। একাকী একজন মহিলার জন্য এটি আসলেই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরী করেছিল।
এমতাবস্থায় মহানবী (স) আবিসিনিয়ার রাজা নাজ্জাশীর কাছে একটি চিঠি পাঠালেন। তাতে তিনি উম্মে হাবিবা (রা) কে বিয়ে করতে মনোবাসনা পেশ করলেন। মূল কারণ ই ছিল একজন অসহায় নারীকে সহায়তা (support) করা।এর পর কয়েক বছর পর্যন্তও মহানবী (স) এর উম্মে হাবিবার সাথে দেখা হয়নি।নাজ্জাশী তাদের দুই জনের মাঝে 'আকদ' নিস্পন্ন করেছিলেন।এভাবেই মহানবী (স) একজন নারীর পাশে দাড়িয়েছিলেন ওই নারীর চরম বিপদের দিনে।
শুধু তাই ই নয়, মহানবী (স) এর চরম শত্রু এবং উম্মে হাবিবা (রা) এর পিতা আবু সুফিয়ান যখন এই বিয়ের বিষয়টা শুনেন তার অভিব্যক্তি কি ছিল? তিনি কি বলেছিলেন?
চরম শত্রু ও কাফের নেতা তখন বলেছিল, "আর মুহাম্মদের মত উত্তম মানুষ আর কে আছে যে আমার মেয়েকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত?"
চিন্তা করুন!
আবার চিন্তা করুন!
যদি আবু সুফিয়ানের মত শত্রু এ কথা বলতে পারে - পরম খুশির প্রকাশ ঘটাতে পারে সবার সামনে - যখন নিজের মেয়েকে মহানবী (স) এর সাথে বিয়ে হতে শুনেন, তখন তুমি কে? তুমি কোন ছাড় - যে বিশ্বমানবতার শান্তিদূত, সৌভাগ্যের পরশ পাথর মুহাম্মদ (স) এর বিযে নিয়ে কথা বলতে দু:সাহস দেখাও?
উম্মে সালামা (রা) এর বিয়েটাও ছিল একই রকম। স্বামী যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর মহানবী (স) তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে - একজন অসহার নারীকে নিষ্ঠুরভাবে সমাজে একাকী ছেড়ে না দিয়ে।
উম্মে সালামা (রা) এর স্বামী ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবন আবদ-আল-আসাদ। তাদের মাঝে প্রগার ভালবাসা ছিল।
তাদের মাঝে একটি কথোপকথন ছিল এরূপ - যা আর কোন বিশ্লেষণের দাবি রাখে না :
আব্দুল্লাহ : কোন মুমিন স্বামী যদি মারা যায় আর তার মুমিনা স্ত্রী যদি আর বিয়ে না করে তবে জান্নাতে তারা একসাথে থাকবে।
উম্মে সালামা: ঠিক আছে। আমি ও সেটা চাই।
আব্দুল্লাহ : কিন্তু আমি চাই আমি যদি মারা যাই, আল্লাহ যেন তোমার আমার চেয়েও ভাল মানুষের সাথে বিয়ে দেন আর তুমি যেন সব সময় সুখে থাক।
উম্মে সালামা: হায়, এ পৃথিবীতে আমি আবদুল্লাহ র মত স্বামী আর কোথায় পাব? সেটা সম্ভব নয়।
আব্দুল্লাহ : আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যদি আমি আগে মারা যাই তবে যেন তোমার জন্য আমার চেয়েও ভাল স্বামী তোমার ভাগ্যে জুটে।
ওহুদ যুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবন আবদ-আল-আসাদ শহীদ হন।
পরে আবু বকর (রা) উম্মে সালামা (র ) কে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রিফিউস্ড হন। ওমর (রা) প্রস্তাব পাঠান। তিনিও রিফিউস্ড হন। পরিশেষে মহানবী (স) প্রস্তাব পাঠান। উম্মে সালামা (অ) রাজী হন। সুবহানাল্লাহ - ভালবাসার মুর্ত্প্রতিক আব্দুল্লাহ ইবন আবদ-আল-আসাদ (রা) এর দোয়া কিভাবে কবুল হয়েছিল দেখুন!
ওমর (রা) এর কন্যা হাফসা (রা) এর স্বামী যখন মারা যান, পিতা ওমর (রা) স্বাভাবিকভাবেই চাচ্ছিলেন তার মেয়ের যেন সবচেয়ে উত্তম পুরুষের সাথে বিয়ে হয়।
তিনি আবু বকরের কাছে গেলেন এবং নিজের মুখে মেয়ের জন্য প্রস্তাব দিলেন, 'হে আবু বকর! আমি চাই আপনি আমার মেয়েকে বিয়ে করুন!'
আবু বকর নিরব ছিলেন। 'হা' বা 'না' কিছুই বলেননি।ওমর (রা) খুব ই হতাশ ও লজ্জিত হলেন। ভেবেছিলেন, আবু বকরের 'হা' বা 'না' কিছু বলা উচিত। ওমর (রা) দারুন ভাবে মনে কস্ট পেলেন।
তিনি এ অবস্থায় ওসমান (রা) এর কাছে গেলেন এবং প্রস্তাব দিলেন মেয়ের জন্য। ওসমান (রা) সরাসরি বললেন 'না' কারণ তার গোত্র ওমরের গোত্র থেকে পুরো ভিন্ন/দুরের ছিল।
সুব্হানাল্লাহ, আবু বকর (রা) কেন কোন কথা বলেননি? কারণ তিনি শুনেছিলেন মহানবী (স) কিছুটা উত্সাহ দেখিয়েছিলেন ওমর (রা) এর মেয়েকে বিয়ের ব্যপারে। তাই আবু বকর (রা) চুপ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মহানবী (স) নিজে ওমর (রা) এর কাছে আসলেন এবং বললেন, "আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই'।
তখন আবু বকর (রা) হেসে ওমর (রা) কে বললেন, 'এজন্যই আমি চুপ ছিলাম এতদিন।
*****************************
মহানবী (স) সকল কাজ এমনকি বিয়েগুলোও করেছিলেন কেবল ইসলামের স্বার্থে। ইসলামের প্রসার ও বিজয়ের মানসে ছিল তার সকল কার্যক্রম। তার মনে ছিল আমাদের তথা মুসলিম উম্মাহর প্রতি আবেগ, ভালবাসা, উত্সাহ এবং পরিকল্পনা। তাই তিনি আমাদের তথা এই উম্মতের জন্য মায়েদের নির্বাচন করেছিলেন। তিনি সুক্ষ্ম দর্শিতার সাথে নির্বাচন করছিলেন কারা এই উম্মতের মায়ের পদমর্যাদায় থাকার যোগ্যা?
আর অনন্ত কৌশলী, প্রবল পরাক্রান্ত, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ও পরিকল্পনা ছিল মহানবী (স) এর জন্য এমন যোগ্যা স্ত্রী নির্বাচন করার যারা কেবল দুনিয়াতে ই নয়, আখেরাতেও মহানবী (স) এর সঙ্গিনী হবেন।
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়ালা আলিহী ওয়াসাল্লিম।
-- সমাপ্ত --
বিষয়: বিবিধ
২০২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন