জীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে (৩য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:১২:০০ রাত
কানিজ অনেক সময় চুপ করে থেকে এবার বলা শুরু করে! আপনি কি বলছেন? কানিজের বিয়ের সবকিছু তো হয়েই গেছে! তারিখ হয়েছে, বিয়ের কার্ড বিলি হয়েছে, লোক জানাজানি হয়েছে, কেনাকাটা হয়েছে, এখন শুধু কবুল বলা বাকি আর আগামি কালকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কানিজের সত্যিকারের কবুল বলে বিয়ে হবে! আযাদ এবার কানিজের মুখ পানে তাকায়! দেখে কানিজ হয়তো খুব কান্নাকাটি করেছে! দু'চোখ তার ফুঁলে ফুঁলে লাল বর্ণ হয়ে আছে! আযাদ জানতে চায় তুমি কি বলছো কানিজ? কানিজ চুপ করে থেকে বলে কালকেই কানিজের বিয়ে হবে এবং আপনার সাথেই! আমি বিয়ে ভেঙে দিতে আসিনি সবাই রাজি না থাকলেও আমি রাজি এবং বিয়ের অুনষ্ঠানও কালকেই হবে! আমি এসেছি কালকেই যেন বিয়ে হয় সে কথাটা আপনাকে বলতে! আপনি বিয়ে ভেঙে দেবেন না! কারন কানিজের মনের সাথে আপনার বিয়ে হয়ে গেছে আরো অনেক আগেই! বাকি আছে শুধু আনুষ্ঠানিকতা! আর কালকে তা হয়ে গেলে কেউ আর আপনার থেকে আমাকে দুরে নিতে পারবেনা! আযাদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে কানিজের দিকে এসব কি বলছে কানিজ? ওর মাথা কি ঠিক আছে? আমি অপেক্ষাতে আছি সে এসে বিয়ে ভেঙে দেবে বলে! আর সে বলছে কালকের তারিখেই বিয়ে সম্পন্ন করতে! এটা কি করে হয়? আমি একজন পঙ্গু মানুষ! আর তার সুন্দর জীবনটা কেন একজন পঙ্গু স্বামীর সাথে কাটাবে? আযাদ বলা শুরু করে কানিজ তুমি এখন আবেগে এসব বলছো নাকি ভেবে চিন্তে বলছো? কানিজ বলে আমি অনেক ভেবেই বলছি! কারন আপনার যদি বিয়ে পরের দিন বা তার পরে এমন হতো তবে আমি কি আপনাকে ছেড়ে যেতে পারতাম? আর আপনি কি তখন আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারতেন? আযাদের মাথায় যেন কোন কিছুই খেলেনা! না কানিজ তুমি ফিরে যাও তোমার কথা থেকে কারন আমি যে একেবারে শূন্য হয়ে গেছি!
তোমাকে দেবার মত আমার কাছে কিছুই নেই! কানিজ বলে জীবনের বাকিটুকু সময় আপনাকে সেবা করেই আমি কাটিয়ে দিতে চাই! আপনি কি সে সুযোগ আমাকে দেবেন না? আযাদ বলে এ হয়না কানিজ; হতে পারেনা! কারন তোমার নতুন জীবনের শুরুই হয়নি এখনো কেন তুমি তোমার সুন্দর জীবনটা আমার জীবনের অনলে পোঁড়াতে চাইছো? তুমি আসল সত্য জানলে আমাকে ধিক দিয়ে চলে যাবে! কানিজ জানতে চায় কি সেই সত্য? আযাদ বলে ডাক্তার একটু আগে বলে গেছে একজন স্বামীর কাছে স্ত্রীর যা হক্ব তা দেয়ার অধিকার আমি হারিয়েছি তবে তুমি কি জন্য আমার জীবনে জড়াতে চাইছো? কিছুই পাবেনা আমার কাছ থেকে! কানিজ বলে আমি আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইনা! আমি চাই আপনি শুধু আপনার পাশে থাকার অনুমতি দিন আমাকে! আযাদ চুপ করে থাকে কি বলবে কানিজকে? কানিজ আরো বলে সবাই আমার বিরোধ করলেও আমি আমার কথাতে অনড়! আমি গতরাত থেকে সবার সাথে অনেক বুঝাপড়া করেছি! বুঝাপড়া করেছি নিজের মনের সাথে! এরপরই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আপনার সাথেই বিয়ে হবে এবং কালকেই! আযাদ বলে আমি তোমাকে কিভাবে বুঝাই জীবনটা আবেগে ভরা তাই বলে আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা! তুমিও একসময় আমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে যাবে! তোমার মাঝে তখন হয়তো পাওয়ার ইচ্ছা জাগবে তখন আমি থাকবো নিরুপায় তখন তুমি কি করবে? কানিজ বলে আমি কিছুই জানিনা জানতে চাইনা আমি শুধু জানি এবং জানতে চাই কালকেই আমার বিয়ে আর আপনি সব ব্যবস্থা করাবেন! আযাদ বলে এত আবেগী হইওনা কানিজ আরো ভাবো আবেগের বর্শবর্তী হয়ে নয় একজন বিবেকবান হয়ে!
কানিজ তার কথায় অনড়! সে তার মায়ের সাথে এ বিষয় নিয়ে খুব বুঝাপড়া করেছে! তার বলেছে এটা হতে পারেনা! আর সে বলে কেন হতে পারেনা? যদি বিয়ের পর বা তার আরো পরে এমনটি হতো আযাদের তখন কি আযাদ থেকে কানিজকে ছাড়িয়ে নিতো? কানিজের মা অনেক তর্কের পর মেয়ের মতের উপর মেয়েকে ছেড়ে দেন! আর বলেন তুই ইচ্ছে করে তোর নতুন জীবনকে কষ্টের রঙে রাঙালি! কোন সময় আমাদেরকে দোষারোপ করতে পারবিনা! তোর ভালো মন্দের সিদ্ধান্ত তুই নিয়ে নিলি! আর এজন্য কোন সময় কোন অযুহাত আমাকে দেখাতে পারবিনা! কানিজের বাবা মা কানিজকে বলেন তুই আরো ভাব মা! আমরা তোর কল্যান চাই! কানিজ এক কথায় জবাব দেয় আমার জীবনের সিদ্ধান্ত তো সেদিনই আপনারা করেছেন যেদিন বিয়ের কথা ফাইনাল হলো! এরপর থেকে আমি তাকে স্বামীর আসনে বসিয়েছি! পুরো মাস ভরে একজন ব্যক্তিকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি! আমি আর কাউকে ভাবতে পারবোনা! বাবাকে খুব অনুরোধ করে হাসপাতালে তাকে দিয়ে আসার জন্য! আর সে সেখান থেকে ফিরবেনা যতক্ষন না আযাদ তাকে বউয়ের মর্যাদা দেয়! সে সেখানে থেকে যাবে যতদিন আযাদ সুস্থ না হয়! সবকথা আযাদকে বলে দেয় কানিজ আর এজন্যই গতকালকে কানিজ হাসপাতালে আসতে পারেনি! আযাদ ভাবছে কি করবে? কি তার করা উচিৎ? একদিকে কানিজের আগত ভবিষ্যত অপর দিকে নিজের দূর্বলতা সব মিলিয়ে আযাদ খুব পেরেশানিতে পড়ে যায়! আযাদ কানিজকে আবারও অনুরোধ করে কানিজ তুমি আরো ভালো করে ভাবো! আমিও ভাবছি এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও! কানিজ বলে দেয় আমি আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই আপনাকে জানিয়েছি! এখন সবকিছু আপনার হাতে আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে আপনার ঘরে আশ্রয়ও দিতে পারেন! এখন আপনি কি করবেন আপনিই ভালো জানেন! আমি একরকম বাবা মাকে তুচ্ছ করে আপনার কাছে এসেছি এখন আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন! আমি আপনার ইচ্ছাকেই মূল্যায়ন করবো তবে যদি ফিরিয়ে দেন আমি আর বাবার ঘরে ফিরে যাবোনা দু'চোখ যেদিকে যায় চলে যাবো বলেই কানিজ হাঁটুর উপর মাথা রেখে খুব কাঁদতে থাকে!
আযাদ এবার বলা শুরু করে কানিজ তুমি আমার জন্য এতবড় কোরবানি করবা? নিজের জীবনের সকল চাহিদাকে মাটি করে আমাকে সেবা করবা? আমি তোমার ঋন শোধ করবো কি দিয়ে? কি দিয়েই বা আমি তোমাকে পূর্ণ করবো? কানিজ বলে আপনি হতাশিত হবেন না! এর মাঝেই লুকায়িত আছে বহু কল্যান! আপনি শুধু আপনার মতামতকে বাস্তবায়ন করুন! আর আমাকে নিয়তির উপর ছেড়ে দিন! আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট! কানিজের কথা শুনে আযাদ এবার পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে তার দিকে তাকায় আর বলে কানিজ তুমি সত্যিই সত্যিই আমাকে এত ভালোবেসেছো? আমি কি দিয়ে এর প্রতিদান দেব? কানিজ সহজে জবাব দেয় আপনার পাশে রেখে! আযাদ বলে ঠিক আছে কানিজ আমি সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি! তুমি নিশ্চিন্ত থাকো! তুমিই হবে আমার পথ চলার সাথী! আমার জীবন সঙ্গীনি! তবে তোমার কষ্ট আমাকেও কাঁদাবে কানিজ! কানিজ আযাদের কথা শুনে খুবই খুশি হয় আর বলে পৃথিবীর জীবন তো ক্ষনিকের এখানে না হয় আমরা একজন একজনের থেকে দুরেই থাকলাম এটা তো অল্প সময়ের ব্যপার মাত্র! পরের পৃথিবীতে আমরা আমাদের বাকি ইচ্ছাগুলো পূরনের জন্য স্রষ্টার কাছে আবেদন রেখে যাবো যাতে ওখানে আমাদেরকে কোন কষ্ট না দেন! আযাদ মুগ্ধ চোখে তাকায় কানিজের দিকে আর প্রার্থনা করে কানিজ আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন সবখানে! তোমার জন্য সবোর্ত্তম ব্যবস্থা করে দিন! আর আমি দোয়া করি সবসময় যেন তোমার মুখে চাঁদের হাসি ছড়িয়ে থাকে! কোন মেঘ যেন তোমাকে ঢেকে না দেয়!
চলছে....চলবে!
বিষয়: সাহিত্য
১২৩৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারণ নান্দিকতায় ভালো লাগার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অনুভূতিগুলো! 'কানিজ'দের কে আল্লাহ অবশ্য ই উত্তম প্রতিদান দিবেন!বর্তমান মেকি আধুনিকতার এই মিছিলে 'আদর্শ মডেল' হয়ে থাকবে 'কানিজ'রা।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আপনাকে.....
কত্ত বড় মন ও কী পরিমাণ ঈমানী দৃঢ়তা প্রয়োজন হবে নিজের জীবনকে এভাবে উৎসর্গ করে দিতে আল্লাহ্ ই ভালো জানেন।
আবার অন্য দিক থেকে চিন্তা করলে, আযাদেরওতো দ্বিতিয় একজনের প্রয়োজন যেহেতু সে নিজের নিত্যদিনের কাজগুলোও একা একা করতে অক্ষম হয়েগেছে। আল্লাহ্ তো সব শ্রেনীর মানুষের জন্যই/সব সৃষ্টির জন্যই সর্বোত্তম ব্যবস্থাপক। কোন একটা ব্যবস্থাতো আল্লাহ করে দিবেনই। আযাদের এই বিপদের দুঃসময়ের সাহায্যকারী সঙ্গী হিসেবে হয়তো কানিজকেই লিখে রেখেছেন আল্লাহ্।
আর কোন পরামর্শ থাকলেও অবগত করতে কৃপনতা করবেন না!
ধন্যবাদ আপনাকে
আমার তো সে বয়স হয়নি;
আমি কি আর পারবো এই জটিল সব সম্পর্ক এর ব্যাপারে পরামর্শ দিতে
যাযাকুমুল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন