মদিনা চত্বরে (৪)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৩:৫০:১৮ রাত

প্রিয় নবী (সঃ) এর রওজাঃ-
মসজিদে নব্বীর সৌন্দর্য বলে কিংবা লিখে তো শেষ করা যাবেনা! মসজিদে নব্বীর অফুরন্ত সৌন্দর্যের মাঝে সবচেয়ে বেশী আকর্শনীয় বিষয় হল আমাদের প্রিয় হাবীব (সঃ) এর রওজা মোবারক! এবং মানব মনের লোভনীয় আকাংখা হল রিয়াদ্বুল-জান্নাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা! এইখানে নাকি নামাজ পড়ে যে যা কিছু প্রার্থনা করে তার প্রার্থনা কবুল করেন আল্লাহ তা'য়ালা রাহমানুর রাহীম! মসজিদে নব্বীতে সব সময়ই প্রবেশ করা যায় কিন্তু রাসূল (সঃ) এর রওজা মোবারকে সব সময় প্রবেশের অনুমতি নেই এখানে যাবার নির্দিষ্ট সময় আছে সেই সময়ই খুলে দেয়া হয় রাসূল (সঃ) এর প্রেমে পাগল প্রেমীক/প্রেমীকা যুগলদের জন্য
আমার প্রিয় হাবীব দয়ার নবী (সঃ) এর রওজা মোবারক জেওয়ারতের সৌভাগ্য নসীব হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২৪ তারিখে! বাংলাদেশ থেকে একজন মুরুব্বী খালাম্মা এসেছিলেন ওমরাহ পালন করতে তার স্বামির সাথে! স্বামি স্ত্রী ইভয়েই হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন! আর মসজিদে নব্বীতে রওজা জেওয়ারতের নিয়ম মহিলাগণ মহিলাদের নামাজের স্থান দিয়ে রওজা জেওয়ারত করবেন আর পুরুষগণ পুরুষের নামাজের স্থান দিয়ে! তাই পুরুষ লোকটিকে উনার ছেলেরা পুরুষের নামাজে স্থান দিয়ে রওজা মোবারক জেওয়ারত করিয়েছেন কিন্তু মহিলাকে জেওয়ারত করাতে পারেননি! সেই খালাম্মাকে হুইল চেয়ারে করে জেওয়ারতের জন্য নিয়ে যেতে আমাকে আমার স্বামি মাধ্যমে অনুরোধ করা হল ২৩ শে ফেব্রুয়ারীর সকালে! আমি বিনা বাক্যে রাজি হলাম কারন তখনও আমার রওজা মোবারক জেওয়ারত হয়নি!
পরদিন হারামে ফজর পড়ার নিয়্যত করলাম! কথামত ফজরের নামাজের আগেই আমরা হারামে উপস্থিত হলাম! ফজর পড়লাম! আমাদের বাসার সুবিদার্থে আমরা সব সময়ই সাত নম্বর টয়লেটের পাশ দিয়ে মহিলাদের নামাজের স্থানে যাই! ( বলে রাখি মসজিদে নব্বীতে কিন্তু টয়লেটের নম্বর ব্যবহার করে চলে যেমন সাতের এ মহিলা টয়লেট, সাতের বি মহিলা টয়লেট আর গেইট নম্বর হল ১৩ ) আমরা সেদিনও সাত নম্বর মহিলা টয়লেটের পাশ দিয়েই প্রবেশ করলাম মসজিদে নব্বীতে! কিন্তু এই গেইট দিয়ে রওজা জেওয়ারতের অনুমতি নেই, অনুমতি আছে এগারোর বি নম্বর দিয়ে! আমরা ফজর পড়ে হাঁটা শুরু করলাম এগার নম্বর টয়লেটের দিকে গেলাম একটু সময় অপেক্ষা করার পর সেই খালাম্মাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসলেন তার ছেলে! সালাম বিনিময়ের পর আমার মেয়ে ওর বাবার কাছে রেখে আমরা এগার বি টয়লেটের পাশ দিয়ে মসজিদে নব্বীতে প্রবেশের যেই গেইট সেই গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম!
ওখানে আরো অনেক বৃদ্ধ মহিলা, মধ্য বয়ষী মহিলা, অবিবাহিত মেয়েদেরকে অপেক্ষা করতে দেখলাম রওজা জেওয়ারতের জন্য! আমরা জানতাম ফজরের পরেই খুলে দেয়া হয় রওজা মোবারকের দরজা তাই ফজর পড়েই গেলাম সেখানে কিন্তু না! সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতে হল অনেক ক্ষন! আমি আর ঐ খালাম্মা উভয়ের পরিচয় ও কিছু কথা বার্তা সেরে জানতে পারলাম পৌনে আটটায় খুলবে রওজার দরজা! তাই বসে বসে কোরআন তেলোয়াত শুরু করে দিলাম! অনেকে বসে বসে তাসবীহ পড়ছে, কেউ কেউ দুরুদ পড়ছে! আমি প্রথমে সূরা ইয়াছিন তেলোয়াত করলাম যা আমার প্রতিদিনের রুটিনের পড়া! এরপর পুরো একপারা পড়লাম দশের পর থেকে এগার পারা পূর্ণ হলো। রওজা মোবারকের দরজা খুলে দেয়া হল সকাল প্রায় পৌনে আটটায়। সবাই দৌড়ে দৌড়ে রওজা মোবারকের দিকে যাচ্ছিল আর মুখে নবী (সঃ) এর দুরুদ পাঠ করতে করতে, কেউ কালেমা ত্বয়্যিবাহ পাঠ করতে করতে, কেউ শাহাদত পাঠ করতে করতে, কেউ কাঁদতে কাঁদতে রওজার দিকে ছুটতে লাগলো। নবী (সঃ) এর প্রতি এত ভালবাসা আমি আর কখনো দেখিনি! মনে মনে ভাবছিলাম এখনের মানুষের ভালবাসার রুপ যদি এইটা হয় তবে সাহাবা (রাযিঃ) গণের নবী (সঃ) এর প্রতি কত ভালবাসা ছিল? এভাবে ভীতরেও অনেক লাইন ধরে আছে মহিলাদের।
মা'জুর মহিলাদের জন্য ( যারা হুইল চেয়ারে করে আসছে) কিছুটা সুবিধা আছে তাদের জন্য কাছের একটি সহজ পথ খুলে দেয়া হল সেখানেও বড় ধরনের লাইন। আস্তে আস্তে আগাতে থাকলাম আমার মত আরো অনেকে বৃদ্ধ মহিলাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলো সামনের দিকে! ওখানের যারা দায়িত্বে আছে তারা পথ দেখাতে লাগলো। যতই আগাতে লাগলাম ; দেখতে পেলাম ইয়াং মেয়েরা রওজার আশে পাশের ছবি তুলছে, রওজার চতুরদিক দিয়ে পর্দার লাগানো! মেয়েরা একজন একজনের হাতের উপর পা দিয়ে ভেতরে ছবি তুলছে। আর দায়িত্বরত মহিলাগণ নিষেধ করছে! এভাবে যেতে যেতে একসময় মহিলাগণ বলতে লাগলো রিয়াদ্বুল জান্নাহর নাম এবং নামাজ পড়ার জন্য বলছে যারা সেখান পর্যন্ত গিয়েছে। আমার সাথি বলে দিয়েছিল যখনই রওজার দিকে যাবে নিচে কার্পেট খেয়াল করবে কারন সব কার্পেটগুলো লাল খয়েরী রঙের আর রিয়াদ্বুল জান্নাহর কার্পেট সাদা রঙের। আমিও তা দেখতে দেখতে গেলাম কার্পেট কোনটা সাদা? দেখতে দেখতে সেই কাংখিত মঞ্জিলে পৌছে গেলাম আলহামদুলিল্লাহ! সেখানে গিয়েই দুই রাকাত নামাজ পড়লাম, অল্প সময় একটু দোয়া করলাম।
আর ( বলে রাখি মহিলাদেরকে রওজার খুব কাছে যেতে দেয়া হয়না) দুর থেকেই তারা দুরুদ ও সালাম প্রেরন করেন। এভাবেই হয়ে গেল রওজার জেওয়ারত আলহামদুলিল্লাহ! আর রিয়াদ্বুল জান্নাতে বেশী সময় দেরি করা যায়না কারন অনেক লোকের আগমন সেখানে সবাই তো নামাজ পড়বে। আমরাও নামাজ শেষ করেই আরেকজনের জন্য স্থান করে দিলাম। আস্তে আস্তে ওখান থেকে বের হয়ে আসলাম। আর আসতে আসতে বললাম হে আল্লাহ! আমি তো রাসূল (সঃ) এর রওজার খুব কাছে যেতে পারলাম না কারন মহিলাদের রওজার এত কাছে যেতে তুমিই নিষেধ করেছে। কিন্তু আমার কাছে যে অনেকে সালাম পৌছানোর দায়িত্ব তুমি তো তা জানো তুমি তোমার হাবীব (সঃ) এর শানে সেই সালাম গুলো পৌছে দিও আর আমাকে দায়িত্ব মুক্ত করো। তুমি তো অন্তরের খবর জানো সে অনুযায়ী নেকী দান করো।
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1729/mslaila/42779#.U1eGEFcTD মদিনার চত্বরে (৩)
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
অনেক কিছু জান্লাম। তবে এটাতো আরও উস্কে দিচ্ছে অবুঝ মনটাকে হারাম শরীফে/রাওজায় যাওয়ার জন্য। নিজের চোখে না দেখলে তৃপ্তি মিটবেনা আপু। কখনও মন ভরবে না।
অনেক শোকরিয়া শ্রদ্ধেয়া আপু।
লিখুন সবকিছু, সবধরনের ছোট্ট বিষয়গুলোও জান্তে ইচ্ছে করে প্রিয় স্থানগুলোর। সাথে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
ইনশা-আল্লাহ! আল্লাহ সুযোগ দিলে আসবেন মক্কা-মদিনায়। দেখা হবে মদিনার চত্বরে।
নেই ভেদাভেদ নেই কোলাহল
ভেতর বাহীর রওজাতে,
শান্ত মুখে ক্লান্থ মানুষ
ব্যস্ত প্রেমের সওদাতে।
চুপটি মেরে আপন মনে
দরুদ মুখে সামনে যায়,
লক্ষ ভক্তের জলসানো চোখ
জল ছাড়ে নবীর মায়ায়।
এই ঘরে মোর প্রিয় নবী
নিত্য বয়ান করত দ্বীন,
দীক্ষা নিয়ে গড়তো জীবন
আশ্রয় পেতো বস্ত্রহীন।
নবীর মায়ায় ছাড়তোনাগো
রয়ে যেতো মদীনায়
আরব্য সংগ্রামী মানুষ
ফিরতোনা আর নিজের গায়।
.....
আপনার লেখা পড়লে হৃদয় হয় উজালা"
কষ্ট করে শ্রম দিয়ে মন্তব্য করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
অনেক ধন্যবাদ। দোয়া করুন আল্লাহতায়লা যেন একবারের জন্য হলেও মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় এবং রওজাতে সালাম আদায় এর সেীভাগ্য নসিব করেন।
আহা নবীজীরই দেশে
আদর করে বুকে নিয়ে চুমু দিতেন গালে
আহা চুমু দিতেন গালে'
অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্যে । ভালো থাকুন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন