হজ্জ শেষে, অবশেষে-প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে-পর্ব : ১
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:১৩:৫৭ রাত
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্পাকের জন্য যিনি এবারের হজ্জ (২০১৫) পালন শেষে আবার প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে সফল প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন। তাঁর প্রতি লক্ষ কোটি সিজদা পেশ করছি। মানবতার মুক্তির দিশারী বিশ্বজগতের আলোর মিনার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)এর প্রতি জানাই অসংখ্য দরূদ ও সালাম যাঁর প্রদর্শিতপথে হজ্জ আদায় করার সৌভাগ্য রাব্বুল আলামীন দান করেছেন। বন্ধুদের কাছে আগেই বলে রাখছি এই লেখা অন্যান্য লেখার ন্যায় র্দীর্ঘ হবে না। আশাকরি ২/৩ পর্বেই লেখার ইতি টানব। কাফেলার কার্যক্রমকে যারা মনযিলে মকসুদে পৌঁছাতে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, এদের মধ্যে অন্যতম হল : কাফেলা অফিসের নিবেদিত প্রাণ স্টাফবৃন্দ, হজ্জ মন্ত্রণালয়, মক্কাস্থ হজ্জ মিশন, মুয়াল্লেম অফিস, বিমান কর্তৃপক্ষ, আদিল্লা অফিস, মক্কা-মদিনার হোটেল মালিকবৃন্দ, প্রবাসী বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীগণ-তাদের কাছে শুরুতেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
২০০৪ সালে জীবনে প্রথমবারের মত হজ্জ করার পর প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের কাফেলার হজ্জ গাইড “বক্ষে আমার কা’বার ছবি: চক্ষে মোহাম্মদ রাসূল (সা)” বা সহজ হজ্জ গাইড লিখি। উক্ত গাইডের দ্বিতীয় অধ্যায়ে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখার প্রয়াস পাই। এবারের সফরসহ মোট ৮ বার সৌদি আরব সফর করলাম। আল্হামদুলিল্লাহ! হে আল্লাহ তুমি আমাকে বার বার তোমার বায়তুল্লাহ এবং তোমার প্রিয় হাবীবের রওজা মোবারক জিয়ারাত করার তৌফিক দান করো। যারা এখনও তোমার বায়তুল্লাহ এবং তোমার প্রিয় হাবীবের রওজা মোবারক দেখার সুযোগ পায়নি তাদেরকেও সে-ই সৌভাগ্য নসীব করো। আমিন।
এবারের হজ্জ ছিল বিভিন্নভাবে ঘটনা বহুল। বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা এবং দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ না করলেও কাছাকাছি ছিলাম। তার রেশ অনুভর করতে পেরেছি। ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার একটু আগে হঠাৎ করে প্রচণ্ড ঝড়ে ক্রেন পড়ে সব লণ্ড ভণ্ড, ২৪শে সেপ্টেম্বর মিনায় পায়ে চাপা পড়ে মানুষ নিহত, আজিজিয়ার একটি ভবনে আগুন লাগার ঘটনা। আসলে মানুষের উৎসাহ-উৎকন্ঠা, রুদ্ধশ্বাস সবই ছিল অস্বাভাবিক। দেশে পরিবার-পরিজনরা ছিল দারুণ শংকায়। তাদের প্রিয়জন বুঝি দুর্ঘটনার শিকার হলো! আর বুঝি ইহজনমে তাদের সাথে দেখা হবে না। মহান মনিবের কাছে শোকরিয়া অন্ত নেই। অতীতের কোন হজ্জে এবারের ন্যায় মানুষ হতাহত আর হয় নি।
৮ সেপ্টেম্বর ’১৫ রাত ১১.৫৯ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০৩৭ এ করে আমরা সরাসরি চট্টগ্রাম-জেদ্দা গমন করি। সাথে ছিল আমাদের কাফেলার মোট ১৩৪ জন হজ্জ যাত্রী। ফিরে আসি ২১ সেপ্টেম্বর’১৫ আবারও বাংলাদেশ বিমানের ফিরতি ফ্লাইট বিজি-০৩৮ এ করে জেদ্দা-চট্টগ্রাম। যদিও প্রথম দিকের হজ্জ ফ্লাইট গুলো শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছিল-আমাদের সেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় নি।
হজ্জ আসলে একটি কঠিন ইবাদত। অনেক কষ্টকর ইবাদত-হাদীস শরীফে হজ্জকে মহিলাদের জন্য জিহাদ হিসেবে বলা হয়েছে। এবারের হজ্জেও সময় এবং এর আগে ও পরে সৌদি আরবের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রীর উপরে ছিল। কী সাংঘাতিক গরমকে হাজী সাহেবদের মোকাবেলা করতে হয়েছিল তা হৃদয়ঙ্গম করা যাবে না-যদি না বাস্তবে সেখানে যাওয়া না যায়! কঠিন এবং কষ্টকর এজন্য বলছি যে, আমাদের বাংলাদেশের হাজীরা বৃদ্ধকালে এবং অনেকে অসুস্থ অবস্থায়, এমনকি মাহরাম পুরুষ ছাড়া একা মহিলাকে অন্য পুরুষের সাথে মাহরাম বানিয়ে হজ্জে পাঠানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থায় পড়ে যা থেকে উত্তরণ করতে ভীষণ বেগ পেতে হয়। শরীয়তও এ অবস্থায় এলাউ করে না। একাকী সফর তো মহিলাদের জন্য জায়েয নেই। তাই আগামীতে যারা হজ্জপালন করবেন এ বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে কষ্ট অনেক কমে যাবে, ইবাদত করতে সহজও হবে।
আমাদের দেশে যেন একটা রসম হয়ে গেছে, যুবক বয়সে বা ছেলেদের মানুষ না করে বা মেয়েদের বিয়ে না দিয়ে হজ্জ না করার ব্যাপারে। মনে রাখবেন হায়াত-মউত-রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আপনার এখন সামর্থ আছে, কিন্তু আগামীতে না ও থাকতে পারে। অথবা আপনি দুনিয়া থেকে চির বিদায়ও নিতে পারেন। এ বছর নয় আগামী বছর এভাবে সময় ক্ষেপন করা উচিত নয় অথবা যুবক বয়সে হজ্জ করে কী হবে, আরেকটু বয়স হোক-এ জাতীয় কথাবার্তা বলে হজ্জের ফরযকে উপেক্ষা করা ঠিক না। সুতরাং হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ফেলে রাখা কোন ভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। যারা হজ্জকে এভাবে অবহেলা করে তাদের জন্য সৌদি আরবের প্রখ্যাত মুফতী শায়খ উসাইমিনের নসীহত হচ্ছে : “একথা সর্বজন বিদিত যে, হজ্জ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন এবং বিরাট ভিত্তি। হজ্জের শর্ত পাওয়া গেলে হজ্জ আদায় না করলে মানুষের ইসলাম পরিপূর্ণ হয় না। হজ্জ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের(সা) নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করতে হবে। মানুষ জানে না তার জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে। হতে পারে অর্থ শেষ হয়ে যাবে বা অসুস্থ হয়ে যাবে বা মৃত্যুবরণও করতে পারে। তাই হজ্জের শর্তসমূহ ঠিক থাকলে তার জন্যে হজ্জ বিলম্ব করা বৈধ হতে পারে না।” কাজেই তাদের জন্য এ হাদীসটি অন্তরের চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
বিশ্বনবী (সা) বলেছেন,
“মান মালাকা যাদান ওয়া রাহিলাতান তুবালেগুহু ইলা বাইতল্লাহে ওয়ালামা ইয়া হজ্জা ফালা আলাইহে আন ইয়ামুতা ইয়াহুদীয়ান আও নাসরা নিয়ান ওয়াজলিকা আন্নালাহা তায়ালা ইয়াকুলু ওয়ালিল্লাহে আলান্নাসে হিজ্জুল বাইতে মানিস ত্বাতায়া ইলাইহে সাবিলা।”
অর্থাৎ, আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মত যার পথের সম্বল ও বাহন আছে, অথচ সে হজ্জ করে নি, তবে এ অবস্থায় সে ইয়াহুদী অথবা নাসারার মৃত্যুবরণ করুক তাতে কিছু যায় আসে না। আর এটা এ কারণেই যে, আল্লাহ্তায়ালা বলেন, সেই ব্যক্তির উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরয, যে ব্যক্তি সে পর্যন্ত পৌঁছার সক্ষমতা লাভ করেছে।” (তিরমিযী)
(পর্ব : ১ সমাপ্ত)
========
বিষয়: সাহিত্য
১৯০৫ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার হজ্ব ও হজ্ব পরবর্তী জীবনকে আল্লাহ সাফল্যমন্ডিত করুণ। আমীন।
শুকরিয়া।
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্পাকের জন্য যিনি এবারের হজ্জ (২০১৫) পালন শেষে আবার প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে সফল প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন। তাঁর প্রতি লক্ষ কোটি সিজদা পেশ করছি।
মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ..
আমারও ইচ্ছে আছে ইন শা আল্লাহ সম্ভব হলে আরেকবার হজে যাবার ।
আমাদের সময় তাপমাত্রা ৪৩-৫২ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠা নামা করতো । আর্দ্রতা কম বলে ঘাম না জমার ফলে গরম খুব একটা জেঁকে বসতো না । এসময়ে পানি বা সরবত খাওয়া খুব জরুরী । হাতে সবসময় একটা পানির বোতল রাখা উচিত যাতে কিছু না কিছু পানি থাকে।
৫ বছরের আগে নাকি যাওয়া যায় না - এটা কি ঠিক ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন