চরণস্পর্শ(!) - কদমবুচি(!) - পায়ে হাত দিয়ে সালাম(!)
লিখেছেন লিখেছেন আশাবাদী যুবক ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০৩:২২:৫১ দুপুর
হিন্দুধর্মে বয়োজ্যেষ্ঠ, গুরু, পিতা মাতার পা স্পর্শ করা তাদের প্রণামের একটি রুপ... একে হিন্দুধর্মে চরণস্পর্শ বলা হয়।
এক্ষেত্রে একজন মাথা নত করে পা ছুঁয়ে আশির্বাদ চায়, অপরজন ডান হাত তার মাথার উপর রেখে "আয়ুষ্মান ভব" বা "তোমার দীর্ঘায়ু হোক" বলে আশির্বাদ করে...
হিন্দুধর্মমতে চরণস্পর্শের মুল উদ্যেশ্য হল "শ্রদ্ধা" ও "করুণা"র আদান প্রদান... যে পা স্পর্শ করবে সে শ্রদ্ধা জানাবে, আর যার পা স্পর্শ করা হবে তিনি করুণা জানাবেন, শুভ কামনা করবেন।
যেহেতু বয়স্ক ব্যক্তিরা পৃথিবীতে বেশিদিন ধরে আছেন, তারা জ্ঞান অর্জনের জন্য পা দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করেছে, ধুলায় মেখেছেন, তাই তার সামনে মাথা নত করে পায়ের সেই ধুলা স্পর্শ করে নিজের মাঝে নেওয়ার জন্য এটি করা হয়।
সাধারণত দর্শন (গুরুদর্শন, দেবতা দর্শন ইত্যাদি) বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে চরণস্পর্শ খুব কমন প্র্যাকটিস... বিয়ের পর নববধুরা তাদের শ্বশুর শাশুড়ির পা ছুঁয়ে সম্মান ও আশির্বাদ কামনা করে... জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন জামাই ষষ্টি হয়, তখন জামাইরা শ্বশুর শাশুড়ির পা ছুঁয়ে পদধূলি না নিলে জামাই ষষ্টি পুর্ন হয় না...
এদেশে ইসলাম আসার আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা যারা হিন্দু ছিল তারা সবাই এই চরণস্পর্শ প্র্যাকটিস করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুসলমান হওয়ার পরেও অন্যান্য কিছু রীতি(যেমন যৌতুক প্রথা) এর মত এই চরণস্পর্শের রীতিও থেকে যায়... শুধু নাম পরিবর্তন করে এটার নাম দেওয়া হয় "পা ছুঁয়ে সালাম" বা "কদমবুচি"!
ঈদের দিনে এই পা ছুঁয়ে সালামের বিনিময়ে যা পাওয়া যায়, সেটাকে বলা হয় সেলামী।
হিন্দুদের প্রণাম দুভাবে করা হয়... একটি হল মুখে মুখে বলে "নমস্কার"... আরেকটি হল মাথা নত করে পা ছুঁয়ে "চরণস্পর্শ"... আর আমাদের মুসলিমদের সালামও ঠিক দুভাবে বানিয়ে ফেলেছি আমরা... মুখে মুখে বলে সালাম "আসসালামু আলাইকুম", আর পা ছুঁয়ে সালাম "কদমবুচি।"
অথচ ইসলামের সালাম শুধু একভাবেই করার নিয়ম... মুখে "আসসালামু আলাইকুম" বলে... আর এটিই হল সবচেয়ে বেস্ট একজন মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর, যা স্বয়ং মহান আল্লাহ আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন।
ইসলামে আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ, তিনি যেই হোন না কেন...
অনেকে আবার বিশেষ করে পীর, সুফি বা মাজারপন্থি হুজুররা কদমবুচিকে জায়েজ বলেন। তারা এর পক্ষে এই হাদিস দেন যে "ওয়াযি বিন আমির বলেন, আমি একদা রাসূল সাঃ এর খেদমতে গিয়া হাজির হলাম। আমাকে বলা হল ইনিই হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল। আমরা তখন তাঁর হস্তদয় ও পদদ্বয় ধরে চুমু খেলাম"।
কিন্তু হাদিসবিদদের মতে এটি এটি যইফ হাদিস হয়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং রাসুল (সা) পায়ে চুমু খেতে নিষেধ করেছেন।
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো যদি তার ভাই বা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়, তবে কি সে তার অভিবাদন এর জন্য মাথা ঝুঁকাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি তাকে লেপ্টে ধরবে এবং চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। তাহলে কি তার হাত ধরবে এবং তার সাথে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিজী, হাদীসটি হাসান)
আমার বিয়ের সময় বউ, আত্মীয় স্বজন ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের আগেই বলে রেখেছিলাম বিয়েতে আমি কাউকে পা ছুঁয়ে সালাম করবো না কিংবা আমার বউকেও করতে দিব না...
কেন করব না সেটা তাদের ব্যাখ্যা করার পর তারা বুঝেছে... কিন্ত এরপরেও দুপক্ষেরই দুএকজন মুরুব্বি ছিল যারা বলেছে কি বেয়াদব জামাই কিংবা বউ যে সালাম করল না! কিন্তু এমন কাজ করে মানুষকে সন্তুষ্ট করে কি হবে, যখন সে কাজে স্বয়ং আমার সৃষ্টিকর্তা অসন্তুষ্ট!
ঈদে যদি মুরুব্বিদের শ্রদ্ধা জানাতেই হয়, তাদের মুখে সালাম দিন, হাত ধরে মুসাফা করুন, কোলাকুলি করুন, দুআ চান... এরকম আরো অনেক উপায় আছে শ্রদ্ধা জানানোর... কিন্তু আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করা যাবে না, হোক সেটা শ্রদ্ধার জন্য কিংবা সেলামির টাকা আদায়ের জন্য...
Collected: Dr. Taraki Hasan Mehedi
বিষয়: বিবিধ
২৪৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন