সামাজিকতা রক্ষায় ধর্মীয় সীমালঙ্ঘন কতটা সঙ্গত? পর্ব-০১
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২০ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৫৪:৪৬ সন্ধ্যা
সামাজিকতা রক্ষা আগে নাকি ধর্মীয় অনুশাসন আগে? যারা মনে করেন, সমাজ দ্বারা ধর্ম পরিচালিত হবে, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলা হবে পন্ডশ্রম। যারা মনে করেন, ধর্ম দ্বারাই সমাজ পরিচালিত হবে, সামাজিক অবক্ষয় রোধে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য, তাদের কিছু বলার যোগ্যতা এই অধমের নেই। আর যারা সামাজিকতা আর ধর্মীয় অনুশাসনের মাঝে তালগোল পাকিয়ে ফেলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, তাদের উদ্দেশ্যেই আমার এই ধারাবাহিক লিখা, আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করে শুরু করছি।
‘আমার ছোট বোন, ছোটবেলা থেকেই খুব বেশি না হলেও ধর্মীয় অনুশাসনেই বড় হয়েছে, স্বামীও জুটেছে আলহামদুলিল্লাহ দ্বীনদার। উনার সহযোগিতায় বোনের পর্দা পালন সহজ হয়। কোন অনুষ্ঠানে গেলে, পুরুষ নারীর জন্য আলাদা খাবারের পরিবেশন ব্যবস্থা না থাকলে ঘরের ভিতর খাবার এনে দিয়ে যান। কিছুদিন আগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠানে একদিন আগেই যাওয়ার অনুরোধ করে। ভগ্নিপতি আমার বোনকে সেখানে যেতে দিতে নারাজ কারণ উনার আশংকা সেখানকার পরিবেশ পর্দা পালনে সহায়ক নয়। ঘরের অন্দরে বাহিরে পুরুষের অবাধ যাতায়াত। কিন্তু বোন একদিন আগেই যেতে চায়। এই নিয়ে দুজনার মধ্যে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে বোন তার বর কে বলে, “তুমি একটা অসামাজিক লোক”। এই কথা মায়ের হয়ে আমার কানে আসে। ফোন করে যখন ইসলামী জীবনাচরণে স্বামীর আদেশ নিষেধের কথা স্মরণ করিয়ে দেই, তখন ভুল বুঝতে পেরে অশোভন আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে’।
আরেক বোনের দেবরের বিয়ে। বোন কে সালাম দিয়ে একবার মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার তাকাতে পারিনি। পার্লারে সেজে যেন সাক্ষাত সিনেমার নায়িকা। আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কখনো দেখিনি দুলাভাইয়ের সামনে এমন সাজের ঝলক দেখাতে। সবাই সেজেছে, বোনটিও সেজেছে, অভ্যাগতদের চক্ষু জুড়াচ্ছে, সামাজিকতা রক্ষা করা!!!! সমাজ চায় অনুষ্ঠানাদিতে মেয়েদের মাঝে সাজ সাজ রব পড়ুক, তাই দল বেঁধে সব সাজ সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসে। এইসব দেখে ক্লান্ত, বিষণ্ণ, মন ভারাক্রান্ত।
আমার প্রশ্ন- এমন কোন বিষয় সমাজ স্বীকৃত, কিন্তু ধর্ম কর্তিক স্বীকৃত নয়। তখন কি করব ? দোলাচলে না দুলে যেকোন একটা গ্রহণ করব। আশা করা যায়, বিবেকখানি একটু খরচ করলে যার পরিণতি অনন্ত সুখ, সেদিকেই মনোযোগ দেবো। সমাজ চাপিয়ে দেয়া অন্যায়-অসংগতি গ্রহণ করলে নশ্বর পৃথিবীতে ক’টা দিন সবার সংস্পর্শে বেশ কেটে যাবে। তারপর? সমাজ কি দিবে অনন্ত মুক্তির গ্যারান্টি? আমার ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালন যদি দিতে পারে সেই চির কাঙ্ক্ষিত মুক্তির সন্ধান, তবে কেন সমাজের কথায় বেয়াক্কলের মত উঠবস করব? তাহলে কি ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে সমাজ ত্যাগ করব অথচ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজেই আমায় থাকতে হবে? এই সম্পর্কে সামনে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ।
কখনো ঠিক কোনটা গ্রহণ করব তাই নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই, তখন মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়। শাপ ও মরবে না, লাঠিও ভাংবেনা। সামাজিকতা রক্ষা করতে হবে, ধর্মীয় অনুশাসনও মানতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধর্মীয় অনুশাসনের ব্যত্যয় করা যাবে না। যেমন সাজগোছ কারো খুব পছন্দ, না করতে পারলে তা মনোবদেনার কারণ হয়, তাহলে বলব, যান পার্লারে, সাজুন ইচ্ছেমত( তবে সাবধান, পার্লারের নামে কলগার্ল, পতিতা চালানের মাধ্যমগুলোতে ভুলচক্করে পা দিয়ে ফেলবেন না)। ‘পারসোনা’ ক্যালেংকারীর কথা নিশ্চয় মনে আছে!
কিনুন নিত্য নতুন প্রসাধনী, পড়ুন ব্র্যান্ডের যতসব দামী জামা কাপড়। ইসলাম আপনাকে সাজতে কিংবা আধুনিক না হয়ে খাইশটা হয়ে থাকতে বলেনি। সামর্থ্য থাকলে কার্পন্যতা ইসলাম সমর্থন করে না। আপনি অবশ্যই পড়বেন , সাজবেন, আপনার সাজ, রুপ লাবন্যতা হাজার জন কে নয়, একজন কেই হাজার রকমে দেখান, তাহলে একজনের কাছ থেকে হাজার রকমের বৈচিত্রময় ভালবাসাই পাবেন। ‘স্বামী বা স্ত্রী হল ঠিকানা, বন্ধুবান্ধব বাস স্টপিজ, যত পার আড্ডা ফান মাস্তি কর, তারপর ঠিকানা স্বামীর পাশে নাক ঢেকে ঘুম কর’; ‘একজনাতে শুধুই একগুঁয়েমি, বহুজনায় বিচিত্র সুখ’; প্রগতিবাদীদের এমনসব কথায় বিভ্রান্ত হবেন না।
সম্মানীয় বরসকল, ভাই, বাবা, মায়েদের বলছি, আপনার বোন কিংবা মেয়ে কিংবা পুত্রবধূ দেখতে যেমনি হোক, রুপের প্রশংসা করুন। তকে বলুন, “লম্বা হাতা আর ঢিলে ঢালা গোল জামা এবং বোরখাতেই তোমাকে দারুণ সুন্দর দেখায়, তাতেই তোমার মাঝে ফুটে উঠে নারীসুলভ ব্যক্তিত্ব”। তাতে সে খুশি হবে, পর্দাতেই প্রকৃত সুখ সমৃদ্ধি খুঁজে পাবে। পর্দা পালনে তার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তবে আপনার একটু প্রশংসা এই পথে দৃঢ় থাকতে প্রেরণা যোগাবে। বোরখাধারীরা বাহিরে সৌন্দর্য প্রকাশ করে না, তাই কারো কাছ থেকে রুপের প্রশংশাও পায় না, হয়ত গুনের প্রশংসা পেয়ে থাকে, ঘরেও যদি সৌন্দর্যের তারিফ না শোনতে পায়, তাহলে তা মনোবেদনার এমন কি হতাশারও কারণ হতে পারে।
ধর্মীয় বাধ্যবাধ্যকতা কিংবা বোরখা গায়ে জড়িয়ে বর্তমান কলুষিত নষ্ট সময়ে একজন নারীকে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ঘাট, আত্মীয়স্বজনের কাছে নানাভাবে কটাক্ষের স্বীকার হতে হয়। যাদের ইমান মজবুত, তারা না হয় দাঁতে দাঁত চেপে হজম করবে সকল অপমান, বজায়ে রাখবে নিজস্বতা। যাদের ইমান নড়বরে, ঘরেও কেও তার রুপ লাবন্যের তারিফ করে না, বাহিরে রুপ দেখাতে পারে না, কপালে জুটে তিরস্কার, তারতো দিকভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি এইভাবেই তাকে বেশ সুন্দর দেখায়, এই উপলব্দি তার মনে আনতে পারলে, তার রুপ সর্বসাধারণে বিলিয়ে দেয়ার চাইতে একজনাতেই উজার করে দিতে প্রফুল্ল বোধ করবে। সামাজিকতার দোহাই দিয়ে এক মুহুর্তের জন্যও ইসলাম নির্দেশিত বিধি বিধান লঙ্ঘন করবে না।
চলবে----
সঙ্গেই থাকুন।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৬ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কথা দিচ্ছি, পরবর্তী সবকটা পর্বে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাব ইনশা আল্লাহ।
আপনার ভাললাগায় প্রীত হলাম।
এই তথাকথিক সামাজিকতার পিছনেও রয়েছে স্রেফ ব্যবসা। এই দেশে এখন গলিতে গলিতে বিউটি পারলার।
সত্যি সবকিছুতেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিহিত।
যতদিন সুন্দরীরা বুঝবেনা তাদের গ্লামারাস বানানোর পিছনে রয়েছে প্রভুদের মুনাফা লাভের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা, ততদিন পার্লার কেন্দ্রিকতা রুখবে কে!
ধন্যবাদ ভাই শেখ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ বোন।
সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে প্যারাটা:
ইনশা আল্লাহ, যখন পোস্ট, অবশ্যই আমন্ত্রণ জানাব। দোয়া করেন আল্লাহ তাওফীক দান করেন।
খুশি হলাম।
বন্ধুত্বের সম্পর্ক কি চুক্তির মাধ্যমে লিখিতভাবে হয় একেবারে বন্ধুত্বের শুরুতে যেমনটা বিয়ের শুরুতে হয় ?
বন্ধুত্ব কি ওয়ান সাইডেড হয় যেখানে বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীর ভরনপোষনের দায়িত্ব নেয় পুরোটাই?
পরকালের ভয় কোন মেয়েদেরকে দেখাতে হবে ? তারা কি এসব বিষয়ে জানেই না ?
কোন মেয়েকে কি দেখেছেন বর্তমান কালে যে সামান্য দেনমোহরে (<২ লাখ)বিয়ে করে ?
বেশী দেনমোহরের বিয়ে যদি নেক হত তাহলে তা রাসূল (সাঃ) ই এটা করতেন ।
মোট কথা , অন্যের টাকা ওড়াতে যে মজা পাওয়া যায় তা একমাত্র মেয়েরাই বোঝে । ছেলেদের তো সে সুযোগ নেই ।
আমার স্বল্পবুদ্ধিতে যা ধরে তাই কলমের আগায় নিয়ে আসি, পূর্ণতা পায় আপনাদের জ্ঞানগর্ভ মন্তব্যে। @ সুমাইয়া হাবিবা
সুন্দর বিষয় তুলে ধরেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন