মধ্যপ্রাচ্যে কেমন আছি আমরা ( পর্ব -১৮ ) মহিলা প্রবাসী
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২০ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৫৪:৫৯ সন্ধ্যা
উনাদের দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম উনারা ঘরের কাজে কর্মরত। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম মহিলারা মসজিদের পানির কুলার থেকে বুতল করে পানি নিতে এসেছে। পানি নিয়ে যাওয়ার সময় আমি উনাদের লক্ষ্য করে সালাম দিয়ে জানতে চাইলাম মসজিদ থেকে পানি নেওয়ার কারণ কি ? উনাদের মধ্যে একজন বলেন আমরা এখান থেকেই পানি নেই প্রতিদিন তিন থেকে চার বার। আমি বুঝে নিলাম উনাদের মালিক হাড় কিপ্টা না হয় কেন পানি মসজিদ থেকে নিয়ে পান করবে ?
মহিলা দুজনের কাছ থেকে অনুমতি চাইলাম কিছু কথা বলার। আমি উনাদের মধ্যে একটা অন্যরকম আগ্রহ দেখলাম কথা বলার। আমি প্রথমেই উনাদের স্বামী সন্তান পরিবারের খোজ নিলাম তারপর প্রবাসের অবস্থান সম্পর্কে কথা বলা শুরু করলাম।দুজনের মধ্যে বয়স্ক মহিলা আমার সাথে কথা বললেন , পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে ইন্টারভিউ আকারে লিখলাম ---------
# আপনার দুজনেই একই ঘরে কাজ করেন ?
মহিলা -- জি আমরা দুজনেই একই ঘরে কাজ করি।
# কত দিন থেকে কাজ করতেছেন ?
মহিলা --প্রায় দুই বছর থেকে।
# আপনাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক কি ?
মহিলা -- আমরা দুজন চাচাত বোনের সম্পর্ক।
# কাজ করতে কি আপনাদের কোনো অসুবিধা হয় ?
মহিলা -- ( চোখের পানি মুছতে মুছতে ) ভাই বিদেশ এসেছি কাজ করার জন্য জানতাম না নির্যাতনের শিকার হব !
# কিভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ?
আমাদেরকে যে বাংলাদেশী এনেছিল সে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমাদেরকে নিয়ে আসার একদিন পর থেকে সে আমাদের দেহব্যবসায় লাগাতে চেয়েছিল ,কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পেরে কৌশলে পালিয়ে আসি। পালিয়ে এসে আমরা পরে যাই বড় বিপদে থাকার জায়গা নেই খাওয়ার জন্য টাকা নেই পরিচিত কেউ নেই। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা এক দালালের খপ্পরে পরে ( ) তারপর দুই মাস পরে এক বাংলাদেশির মাধ্যমে এই কাজ পাই। আজ প্রায় দুই বছর থেকে এক আরাবিয়ান মালিকের ঘরের কাজ করে আসছি । মালিক হাড়- কিপ্টা হলেও চরিত্র ভালো আছে তার স্ত্রী সন্তান ও ভালো এখানে আমাদের সমস্যা হচ্ছে না।
আপনারা দেশে যাবেন কি করে ?
মহিলা -- দেশে কবে যাব বুঝতেছিনা ভিসাতো নেই আমাদের পাসপোর্ট কোথায় আছে সেটাও জানিনা।
# আপনাদের বেতন কি ঠিক মোট পাচ্ছেন ?
দিচ্ছে যা কোনো রকম খেয়ে দেয়ে বেছে আছি আর সামান্য টাকা দেহ্সে পাঠাতে পারি। তবে এখন আমরা বেতন নিয়ে বেশি চিন্তা করিনা শধু সুযোগ খোজতেছি দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা হলেই দেশে চলে যাব।
# তাহলে কি দেশে যাওয়ার জন্য কিছু করতেছেন ?
না সেরকম কিছু করিনি। ভাবতাছি মালিক কে শীগ্রই দেশে যাওয়ার জন্য বলব। আর না হলে প্রশাসনে আত্মসমর্পণ করে জেল খেটে দেশে যাব।
প্রবাসে মহিলারা কাজের জন্য আসেন এমনকি সরকারী মাধ্যমে ও আসতেছেন । কিন্তু কয়জন মহিলা শ্রমিক ঠিকমত হক পথে কাজ করতে পারেন ? প্রবাসের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি মধ্যপ্রাচ্যে মহিলা শ্রমিক যে বা যারা নিয়ে আসে তারা এক নাম্বার ক্রিমিনাল। আমার একটাই অনুরুধ দেশের মহিলা সমাজের কাছে প্লিজ আপনরা না জেনে বিপদে পরবেন না , নিজ পরিবার ছাড়া কোনো লোভে বিদেশ আসেবন না।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫০ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক হাজার গৃহ শ্রমিক পাঠানর চুক্তি হয়েছে। আপনি দেখি দেশ বিরোধি লোক!!!
এই অবস্থা জন্য আমাদের দেশিয় দালাল রাই বেশি দায়ি।
আমি ও আপনার মত নারীদের বিদেশ পাঠানোর বিপক্ষে মন্তব্য রেখে গেলাম ।
প্রতিটা ধরনের কাজের জন্য এই Hazard এর ধরন ভিন্ন , Person to person , Gender to gender.
এসব মেনে নিয়েই এবং এর জন্য ব্যবস্থা রেখেই এর মধ্যেই চলতে হয় Employee এবং Employer দের।
কাজে আসার আগেই জেনে নিতে হবে যে, যে পেশায় যাচ্ছে তার সুবিধা-অসুবিধা কি কি । তাহলে সমস্যা মোকাবেলার জন্য বা খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারবে ।
এখানে Job satisfaction এরও একটা ব্যাপার আছে । এটাও Person to person , Gender to gender ভিন্ন হয়।
বিদেশে ছেলেরাই বেশী যায় এবং তাদেরও অনেক সমস্যা আছে এবং এসব সমস্যা মোকাবেলা করেই তারা দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে ।
কাজ করতে গেলে ভয় পেলে চলবে না , ভয়কে জয় করেই কাজে সফলতা আসে।
সরি, সময়ের অভাবে আগের পর্বগুলো পড়তে পারলাম না। পরের গুলো পড়ার চেষ্টা করব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন