যেদিন প্রথম কলমের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মায়।
লিখেছেন লিখেছেন নিভৃত চারিণী ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৫৭:৪৫ রাত
নূরানীর ৩য় জামাতে পড়ি তখন।বার্ষিক পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে আমাদের অংকের টিচার ঘোষণা দিলেন, যে অংকে একশো’তে একশো পাবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।বরাবরই আমি অংকে ছিলাম অমনোযোগী এবং খুব কাঁচা।বাদবাকি সব সাবজেক্ট মন দিয়ে পড়লেও অংকের বেলায় আমি চম্পট।কিন্তু এবার আমাকে যে পুরস্কার নিতেই হবে। তো আর কি করা যেই ভাবা সেই কাজ! জীবনের প্রথম এত মনোযোগ দিয়ে অংক কষতে শুরু করেছিলাম।কারণ পুরস্কারটা যে আমার চাই-ই চাই।
দেখতে দেখতে পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো।পরীক্ষা দিলাম ভালো-ই।কিন্তু মনের ভেতর অজানা একটা আশঙ্কা টিপটিপ করছিলো।কোথাও আবার ভুল করে আসিনি তো ! ওদিকে আবার মনের আরেক কোণে জ্বলছিল একটা আশার বাতি।বোধহয় পুরস্কারটা আমিই পাবো।
সে যাইহোক! অনেক জল্পনা কল্পনার পর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।মাদ্রাসা খোলার পরপরই রেজাল্ট দিলো।পাতা উল্টে সর্বপ্রথম দেখে নিলাম অংকের নাম্বারটা।তারপর দে ছুট। এক দৌড়ে একেবারে স্যারের রুমে।কিন্তু হায়, স্যার এখনো বাড়ী থেকে আসেন নাই উনার মায়ের অসুস্থতার কারণে।দুইদিন পর স্যার আসলেন এবং পুরস্কার দিলেন। সেটা ছিল একটা cello pen.
সেই থেকে আমার কলম প্রীতি শুরু।যা আজ অব্দি রয়ে গেছে।বিভিন্ন রকমের বিভিন্ন কালির কলম সংগ্রহ করা আমার হবি’তে পরিণত হয়েছে।২য় বার কলম পুরস্কার পেয়েছিলাম সম্পূর্ণ নাহুমীরের চিত্র একে।এখনো যদি কেউ আমাকে কলম গিফট করে অন্তহীন খুশি হই আমি।
কিন্তু কখনো মনে হয়নি কলমগুলোর কাছে আমার কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে।আজ এতদিন পর যখন আদীব হুজুরের ‘এসো কলম মেরামত করি’ বইটির “কলমের আত্মকথা” অংশটুকু পড়ছিলাম তখন বারবার মনে হচ্ছিলো আমি কি আমার কলমগুলোর হক আদায় করতে পেরেছি ? কিন্তু কি লিখবো আমি ! কীভাবেই বা লিখবো! “ক” লিখতে কলমের নিব ভাঙ্গি একশো’টা।তাহলে কীভাবে ভাষাশৈলী ও বাক্যের গাঁথুনি দিয়ে থরে থরে সাজাবো আমার প্রকৃতির উদ্যান। হবে কি আমার কলমের কালি আমার ব্যথার মলম,বেদনার উপশম ? হবে কি তলোয়ারের ঝঙ্কার, বজ্রের হুঙ্কার ? আমার কালির প্রতিটি আঁচড়ে লেখা হবে কি সত্যের জয়,বাতিলের পরাজয় ?
এসব ভেবে ভেবে আমি হতাশ হচ্ছিলাম।কিন্তু এখানেও তিনি বাতলে দিলেন আমাকে সামনে আগানোর নতুন কৌশল।এ যেন তিমির আঁধারে একবিন্দু আলোর ছটা।সেই অংশটুকু ছিল এমন “শব্দের শাহযাদী প্রথম আহ্বানেই আসেনা।আগে সে পরীক্ষা করে।তুমি কলমের রাখাল, কৃষাণ,না শাহযাদা ? তাই প্রথমে পাঠায় পরিচারিকা,রাখাল তাতেই মজে যায়।আর শাহযাদী দূর থেকে হাসে অবজ্ঞার হাসি।কৃষাণ হলে পরিচারিকার ছলনায় ভোলে না।শাহযাদী তখন পাঠায় সহচারীকে।কৃষাণ তাতে মজে যায়।আর দূর থেকে শাহাযাদী হাসে করুণার হাসি।কিন্তু তুমি যদি হও শাহযাদা তাহলে এসব ছলনায় তুমি ভুলবে না,বরং সাধনায় নিমগ্ন থাকবে।তখন স্বয়ং শাহযাদী হাযির হবে এবং মধুর হেসে বলবে, আমি এসেছি হে কলমের শাহযাদা !!!
সবশেষে তিনি বলেছিলেন-“তুমি কলমের শাহযাদা হও,শব্দের শাহযাদী সানন্দে তোমায় বরণ করে নেবে”
তাই এখন থেকে নতুন উদ্যমে পথ চলতে হবে। কলমের কাছ থেকে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে হবে। কলমকে বানাতে হবে আমাদের বিজয়ের নিশান। (অবশ্যই সব ক্ষেত্রে নয়। যখন অস্ত্রের প্রয়োজন হবে তখন কিন্তু আবার কলম নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।)
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আর আমাদের প্রেরণাদানকারী হযরত আবু তাহের মিছবাহ সাহেব দামাত বারকাতুহুমকে শায়ানেশান জাযা দান করুন,আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৩২৪৫ বার পঠিত, ৬৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আদীব হুজুরের কথা । আলহামদুলিল্লাহ ।
সেই বর্ণমালা সেই শব্দকলি সেই আধ্যাত্মিকতা । আমি কেমন যেনো বলতে পারি এই লিখাটি সেই আদীব হুজুরের নুর থেকে এসেছে। অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আমিও আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কলম, রুলার, খাতা, ছোট অভিধান ইত্যাদি পুরষ্কার দিয়ে উত্সাহিত করতাম. ধন্যবাদ সুন্দর লেখা পোস্টানোর জন্য.
লেখা দেখে বুঝতে পারছি, আপনার ভবিষ্যত অনেক অনেক ভালো, ইনশাআল্লাহ! লিখে যান!
এগিয়ে চলুন...
আর আমার ব্লগে আপনার শুভাগমনে আনন্দিত হয়ে আপনাকে স্বাগতম!!!
আল্লাহ কবুল করুন আমলে এবং আখলাকে।
অশেষ ধন্যবাদ হ্যরি!
আমি কিন্তু জেনে ফেলেছি আপনার উপাধিখানা! হিহিহি
শিউলি আপু
ফুলের মধ্যে বেলী যেমন প্রিয় শিউলি ফুলও আপনার পছন্দ।
এর মধ্যে আমি যখন মোবাইলে ব্লগে আসি তখন দেখি বর্তমান প্রোফাইল পিকচার আর পিসি দিয়ে আসলে দেখেছি শিউলি ফুলের পিকচার। তাই আপনার নাম দিয়েছিলাম শিউলি আপু।
তাই নামটা নবায়ন করে "পুস্প" রাখা হলো
বাতিলের দূর্গ টুকরো টুকরো হয়ে যাক এই প্রত্যাশা
আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর করে উৎসাহ দেয়ার জন্য।
অনেক খুশি লাগে আপনাকে আমার ওয়ালে দেখলে। ধন্যবাদ আপু।
আমীন। আল্লাহ কবুল করুন হুজুরকে এবং তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমকে।
উনি নোটিফিকেশন পাবেননা।
ওনাকে আবার জবাব দিলে নোটিফিকেশন পাবেন।
''পুস্পকলি" & "পুস্পমনি"।
আর পুস্প আপুরও নাম পছন্দ হয়েছে।
কারন নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ ।
এই নেন ফুল,
মন্তব্য করতে লগইন করুন