আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা দু’জন বাড়লো
লিখেছেন লিখেছেন নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩৭:৪৩ রাত
বেশ কিছু দিন ধরে একটি সুখবর দেব দেব করে ও সময় করে উঠতে পারছিনা। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা দু’জন বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদিন ওদেরকে গোসল করানো, সময়মত খাওয়ানো, টয়লেট পরিস্কার করা সব মিলিয়ে আমার ব্যস্ততা আগের চাইতে অনেক বেড়ে গেছে। বাচ্চাদুটো মাশাআল্লাহ দেখতে এত কিউট ! কি সুন্দর করে ছোট ছোট হাত পা গুলো নেড়ে খেলা করে। চোখ গুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিকে তাকায়। দেখতে খুব ভালো লাগে।
ওদের উপর আমার ছোট মেয়ের আধিপত্যই সবার চাইতে বেশী। কেননা এতদিন সেই ছিল পরিবারের সবার ছোট। এটা করোনা, ওটা করোনা সবার এই সব নির্দেশনা শুনতে শুনতে বেচারী পেরেশান হয়ে যেত। এখন ওর চাইতে ও ছোট দু’জনের আগমনে ওর অন্যের উপর আধিপত্য খাটানোর একটি সুযোগ তৈরী হল।
ওই বাচ্চা দুটোর নাম রেখেছে। একজনের নাম মার্বেল । অন্যজনের নাম ক্রীস্টাল। আমি অবশ্য চেয়েছিলাম সুন্দর দু’টি নাম রাখতে। কিন্তু জুয়াইরিয়াকে কিছুতেই রাজি করানো গেলনা। এত ভালোলাগার মধ্যেও বাচ্চা দুটোর জন্য জুয়াইরিয়ার কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম যখন রাতের বেলা বাচ্চা দুটোকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম তখন হতেই সমস্যা শুরু। আমি বললাম- জুয়াইরিয়া, তাড়াতাড়ি স্লীপিং ড্রেস পরে ঘুমাতে এসো। একবার নয়। কয়েকবার বলা হল। দেখি ওর দেখাই নেই। পরে খুঁজে দেখি ডাইনিং টেবিলে যেয়ে বসে আছে। আমি রাগ হয়ে বললাম- ব্যাপার কি? কথা শুনছোনা কেন? তখন সে করুণ মুখ করে বললো- মা ,মার্বেল ও ক্রীস্টাল এর সামনে আমি কি করে জামা পাল্টাবো? ওরা আমার সতর দেখে ফেলবে। আপুদের রুমে পাল্টালে ও তো সেই সমস্যা। আমার সীমিত জ্ঞানে মনে হয় ওদের সামনে কাপড় পাল্টানো জায়েজ। কিন্তু জুয়াইরিয়া মানতে রাজি নয়।
এর পর দিন শুরু হল নতুন সমস্যা। জুয়াইরিয়া সকালে উঠে বাথরুমে যাবে। তখন ও মার্বেল আর ক্রীস্টাল হতে ওর পর্দা সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিল। কেননা রাতে এসিতে বাচ্চাগুলোর ঠান্ডা লাগতে পারে বলে আমি ওদেরকে স্পেসে রেখেছি। ওখান হতে বাথরুম চোখে পড়ে। আর জুয়াইরিয়া এখনো ক্লাশ টুতে পড়ে তো। তাই বাথরুমের দরজা লক করতে ভয় পায়। এরপর দুপুর বেলা আর এক হাঙ্গামা। জুয়াইরিয়া গোসল করার পর আমি ওর ভেজা শরীর মুছে দিই। কেননা ইদানিং ওর চুল মাশাআল্লাহ বেশ বড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেদিন যতই ডাকছি সে নিরব। দেখি গায়ে টাওয়েল পেঁচিয়ে ডাইনিং এ দাঁড়িয়ে আছে। একই সমস্যা মার্বেল, খ্রীস্টাল ওকে দেখে যাবে। বেশ জটিল সমস্যার মধ্যে আছি আমি। আমার ফতোয়ায় ও কোন কাজ হচ্ছেনা।
ওহ আসল কথাই তো মনে হয় বলা হয়নি। মার্বেল, ক্রীস্টাল কোন মানব শিশু নয়। ওরা দুটো খুব ছোট প্রকারের কচ্ছপ। হাতের তালুতে নেয়া যায় এরকম ছোট। কান্ডকারখানা ও বেচারাদের বেশ মজার। ওদেরকে যে বক্সটির মধ্যে রাখি তাতে ছোট একটি গাছ আছে। ওরা দু’জনই চায় গাছের আগায় উঠে ঘুমাতে। একজন আগে উঠে গেলে অন্যজন উঠার সুযোগ না পেলে সামনের হাত দুটো দিয়ে গাছটির পাতা ধরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জুয়াইরিয়ার বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ওকে কচ্ছপ ছানা দুটি কিনে দিয়েছি। ও বাচ্চা দুটোকে এত পছন্দ করে যে কারো বাসায় বেড়াতে গেলে ও সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা একটাই ওদের সাথে যে পর্দার প্রয়োজন নেই তা ওকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছেনা। এখন ওর বড় দু’বোন ও চান্স পেয়ে গেছে। জুয়াইরিয়া ওদের সাথে কিছু নিয়ে ঝামেলা করলেই ওরা ওকে ভয় দেখায় –এই তুমি জামা পাল্টানোর সময় টার্টলদের কিন্ত তোমার সামনে নিয়ে আসবো। আর তো বেচারী কেঁদে কেঁদে নাক মুখ লাল করে ফেলে।
আসলে জুয়াইরিয়ার ছোট বেলা হতেই ওকে আমি কখনো ছোট প্যন্ট পরাইনি। সব সময় লম্বা ট্রাউজার। হাতাকাটা জামা ,মিনি স্কাট কখনো পরাইনি। কেজিতে পরার সময় স্কুল ড্রেস মিনি স্কাট ছিল। কিন্তু ও ব্লু কালার লম্বা ট্রাউজার পরেই যেত। কখনো আমি জোর করে পরানোর পর ক্লাশ রুমে না ঢুকে বাইরে মুখ কালো করে বসে থাকতো। ওর অবস্থা দেখে ক্লাশ টিচার ওকে ট্রাউজার পরার পারমিশন দিয়েছিল। ওর মধ্যে দেখি এসব ড্রেসের প্রতি এত নেগেটিভ একটি ধারণা এসে গেছে যে ছোট বেলা এরকম ড্রেস পরা কাউকে দেখলে বলতো- আম্মু, ওই মেয়েটি কি গরীর। ও এত ছোট ড্রেস পরেছে কেন? এখন আর একটু বুঝতে শিখেছে তো তাই বলে- আম্মু এরকম ড্রেস পরা ওদের জন্য ফেয়ার না। আল্লাহ ওদেরকে জাহান্নামে ফেলে দেবে। আমি আমার মেয়েকে দিয়েই বুঝলাম নৈতিকতার ভিত একটি শিশুর মাঝে গেঁথে দিতে হয় ছোটবেলা হতেই। আর কি লিখবো? এই হচ্ছে কচ্ছপ ছানাদের নিয়ে জুয়াইরিয়ার প্রতিদিনকার পেরেশানী। ও যখন বেডরুমে জামা পাল্টাবে। তখন কচ্ছপগুলোকে আগে ডাইনিং এ রেখে আসবে। আবার যখন বাথরুমে যাবে তার আগে বেডরুমে রেখে আসবে। এভাবেই চলছে দিনকাল।
বিষয়: বিবিধ
১৬২৭ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে পেলাম শিক্ষা ও আনন্দ। সত্যিই যদি ছোটকাল থেকেই শিক্ষা না দেয়া হয় তাহলে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা গড়ে উঠেনা। অথচ আমাদের অনেক মায়েদের দেখি ছোট তাই ছোটকাপড়ে আপত্তি নাই বলে দাবি করতে।
মার্বেল,ক্রিষ্টাল আর জুয়াইরিয়া সকলের জন্য ভালবাসা।
সালাম আজাদী লিখেছেন : যন্ত্রনা কারে বলে। ভাবলাম জময বাচ্চা হয়েছে। শীরোনামে শীর পীড়া ধরিয়ে দিলেন।
আমি অবশ্য অন্যদের মত শিরোনাম দেখে ঘাবড়াইনি। আপনার গল্পে এ ধরনের চমক থাকে। এর আগে প্রতিবেশী বিড়ালদের নিয়েও ছিল। ভালো লাগলো আপু। জুয়াইরিয়ার জন্য অ্যান্টির পক্ষ থেকে অনেক অনেক আদর আর দোয়া রইলো
সালাম আজাদী লিখেছেন : যন্ত্রনা কারে বলে। ভাবলাম জময বাচ্চা হয়েছে। শীরোনামে শীর পীড়া ধরিয়ে দিলেন।
সুন্দর লেখাটির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া , জুয়াইরিয়ার জন্য অনেক ভালবাসা ও আদর .....
মন্তব্য করতে লগইন করুন