গডফাদার কাহিনী ও মন্ত্রীমশাইয়ের আত্মজীবনী
লিখেছেন লিখেছেন এহসান সাবরী ০৬ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩১:৩৭ রাত
আমাদের এই ছোট্ট দেশে এপর্যন্ত বেশ কয়েকজন গডফাদার আত্মপ্রকাশ করেছেন। জাতীয় দৈনিক গুলোতে তাদের আগমনীর ইতিহাস, পতনের লিপিও খুব সুন্দর করে কাভার করা হয়েছে। গডফাদার শব্দটা নিয়ে আমার কৌতুহল অনেক আগে থেকেই। নিজের শৈশবের একটা বড় অংশ খুলনায় কাটানোর জন্য সবার আগে যে গডফাদারের নাম শুনি তিনি হলেন এরশাদ শিকদার। মনে হয় তার মত গডফাদার একজনও আসেনি এই সোনার ভূমিতে। সে পারত না এহেন কোনো কর্ম ছিলনা। আমার খেয়াল আছে, আব্বা আম্মার মুখে শুনতাম পাড়ার তাবৎ দুষ্ট ছেলের শয়তানি সামলানোর জন্য তাদের বাবা মা নাকি এরশাদ শিকদারের নাম বলতেন। আমার অবশ্য সৌভাগ্য. তার নাম শুনিয়ে ভয় দেখানো লাগত না। কারণ ছোটোবেলায় বেশ শান্ত ছিলাম ।যাহোক, একটু যখন বেড়ে উঠলাম তখন শুনলাম হাজি সেলিম আর জয়নাল হাজারীর নাম।তারা নাকি সকল কর্ম সাধনে উস্তাদ।আসলে ব্যাপার হল তখনও জানতাম না গডফাদার শব্দটা দিয়ে আসলে কি বুঝায়! ভাবতাম, বিশেষ সন্ত্রাসীদের বুঝি গডফাদার বলে। এর মাঝে আরো বড় হলাম। শুনলাম ঢাকার পাশ্ববর্তী সবচাইতে বড় গডফাদার শামীম উসমানের নাম। কিন্তু তখনও জানিনা হোয়াট ইজ গডফাদার! এরই মাঝে পড়ার সুযোগ পেলাম সুবিখ্যাত উপন্যাস "গডফাদার"! লেখক মারিও পুজো! তখন বুঝতে পারলাম আসলে গডফাদার কি জিনিস। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত এই আমেরিকান লেখক দেখিয়েছেন সমাজের ভেতরে আরেক সমাজের গল্প। রাষ্ট্রের ভেতরে আরেক আরেক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব।গডফাদার! বইটা পড়ে আমার মিশ্র অনুভূতি হল। মনে হল এরকম একজন লোকের দরকার আছে যে নিজের দেয়া কথা রাখবে, আপনজনকে করবে সাহায্য। কিন্তু মুদ্রার আরেক পিঠ বড় নির্মম! নিজের স্বার্থের বিপরীতে চলা মানুষ, স্বার্থবিরোধী কোনো কাজকে বরদাস্ত করা এই গডফাদারে স্বভাবের বাইরে। সে আঘাত হানে নীরবে! ভদ্রতার মুখোস খসে পড়ে না পলকের জন্যও! এবার স্বদেশে ফিরে আসি।বাস্তবিক ভাবে একমাত্র শামীম উসমান ছাড়া কাউকে গডফাদার মনে হয়নি কখনো। এরশাদ ছিল বড়সড় মাস্তান। জয়নাল হাজারী আর হাজী সেলিমও অনেকটা তাই। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত মাস্তান। শামীম উসমান মোটামুটি শিক্ষিত আর আপাত বিদ্বানের মুখোস পড়া গডফাদার। কিন্তু তাও তার জনসম্মুক্ষে বাড়াবাড়ির খবর পত্রিকায় দেখেছি। যা গডফাদার ক্যারেক্টারের বিপরীত। মজার বিষয় হল আসল গডফাদার হল আমাদের বর্তমানের এক মন্ত্রী! তিনি এসেছেন অভিনয় জগৎ থেকে। প্রখ্যাত হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে আসা তার। বাকের ভাই হিসেবে মন কেড়েছিলেন মানুষের। কিন্তু
তিনি যে প্রকারান্তরে এক বিশাল গডফাদার এটা কি কেউ মনে করত?? অতি সম্মানিত এই ব্যক্তির গাড়িবহরে কে বা কারা হামলা চালালো। আসামী করার যে সিলসিলা এই বাংলায় চলছে তার ধারাবাহিকতায় বিরোধী দলের একগাদা মানুষকে বানানো হল আসামী। আপাত মিষ্টি হাসি হেসে তিনি এসে পড়লেন। কিন্তু তার গাড়িতে হামলা একি সহ্য হয়?? শুরু হল পর্দার আড়ালের খেলা। একে একে পুলিশি হেফাজতে মারা পড়ল প্রথম কয়েকজন আসামী। সেই তালিকায় কালকেও এক নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। থানা পুলিশের মাঝে থেকে নির্মম শাস্তি দিয়ে গেলেন সকল বিরোধীকে। মন্ত্রী মশাই যে অভিনয় করতেন পর্দায় তা করে দেখালেন বাস্তব জীবনে। আসল গডফাদার হওয়ার দাবিদার তো তিনিই! ২০০৯ সাল থেকে যে গুমের ধারাবাহিক ইতিহাস দেখছি তার শেষ কোথায়??পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, ক্রসফায়ারের নাম করে মৃত্যু এগুলা আর কতদিন?? মানুষের জীবনের মত সস্তা আর কিছু ক্ষমতাসীনদের কাছে এই মুহূর্তে আছে বলে মনে হয়না।
বিষয়: বিবিধ
১২০৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ক্ষমতাসীনদের কাছে এই মুহূর্তে আছে বলে মনে হয়না।"
পার্থিব জীবনের মোহে এরা অন্ধ, বিবেকহীন।
যথাযথ গণপ্রতিরোধ ছাড়া এরাও পালাবেনা,
বরং আরো সহিংস হবে
মন্তব্য করতে লগইন করুন