বউমাকে নিজের মেয়ে বানিয়ে ফেলতে পরলেই সবদিক থেকে মঙ্গল!!
লিখেছেন লিখেছেন আলোকর্বর্তিকা ২৬ জুন, ২০১৪, ১০:৪৪:২৩ সকাল
আপনি মা। ভবিষ্যতে শাশুড়ি হবেন। যদি ছেলের মা হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো মাথায় এই চিন্তা আসতে পারে, ভবিষ্যতে ছেলের বউ কেমন হবে। আপনার সাজানো-গোজানো সংসারে আরেকজন মানুষ এসে মানিয়ে নিতে পারবে তো? অথবা সে কি আপনাকে মায়ের চোখেই দেখবে? এরকম চিন্তা এসে থাকলে জেনে নিন, আপনি যদি ছেলের বউ কে নিজের মেয়ে বানিয়ে নিতে পারেন তাহলে সে আপনাকে মায়ের চোখে দেখতে বাধ্য। তবে ব্যাতিক্রম ঘটতেই পারে। নির্ভর করে সে মানুষ হিসেবে কেমন তার উপরও। এখন চলে আসি কিভাবে আপনার ছেলের বউকে আপনার মেয়ে বানাতে পারেন সেটির উপরঃ
নিজের মন কে বোঝান আপনি আপনার বউমাকে মেয়ের মতই দেখবেনঃ নিজেই যদি না চান বউমাকে মেয়ে হিসেবে দেখতে তাহলে কিভাবে হবে? তাই নিজেকে বউয়ের সামনে শ্বাশুড়ি নয়, মা হিসেবে উপস্থাপন করুন।
ছেলের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বউমাকে জানিয়ে দিন আপনার “মা” ডাক-ই পছন্দঃ ছেলের বউকে সেই ডাকটিই শেখাবেন যে ডাকে আপনি আপনার ছেলেকে সাড়া দেন।
তাকে ও আপনার ছেলেকে নিজেদের সময় কাটানোর সুযোগ দিনঃ তাদের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন।
বউমা কোন ভুল করলে রেগে গিয়ে বকা দিবেন নাঃ আপনার ছেলেকে বিয়ে করে যে মেয়েটি বাড়িতে এসেছে সে যে কোন ভুল করতেই পারে। হয়তো বা সে আপনার মত পরিষ্কার নয়, বা তার কোন আচরণ মেনে নেয়ার মত নয়। এরকম অবস্থায় রাগ না করে তাকে একা ডেকে বুঝিয়ে বলুন যে আপনি বা পরিবারের সদস্যরা তার আচরণের জন্য কষ্ট পাচ্ছে বা ঝামেলায় পরছে। আপনি ভাবতে পারেন আপনার সন্তান ভুল করলে আপনি তো তাদের বকা দিতেই পারেন তাহলে বউমা কেন বাদ যাবে। কিন্তু বউমা তো জন্মের শুরু থেকেই আপনাদের সাথে থাকেনি। আপনাদের রীতি-নীতি বুঝতে তার সময় লাগতেই পারে। তাই আপনি আপনার সন্তানদের বকা দিলে তারা যতটা না কষ্ট পাবে, বউমা কে দিলে সে শত-গুণ বেশি কষ্ট পাবে।
তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুনঃ আপনি যদি চান বউমা আপনার সাথে স্বচ্ছন্দবোধ করুক তাহলে আপনারই আগে এগিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে তাকে জানার সৎ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
তাকে কোন কিছু করতে দিলেঃ বউমাকে কোন কাজ করতে দিলে তাকে জিজ্ঞেস করে নিবেন তার হাতে কোন কাজ আছে নাকি। এমনটি হতে পারে সে নিজের কোন কাজে ব্যস্ত তবে আপনার কাজের কারণে তাকে সেই কাজটি ছেড়ে আসতে হয়েছে এবং সে লজ্জা/ভয়ের কারণে আপনাকে বলতে পারেনি সেই ব্যাপারে। এটিও খেয়াল রাখুন তার উপর কাজের চাপ যেন বেড়ে না যায়। পারলে তাকে সাহায্য করুন।
তার কাছ থেকে তার মা/পরিবারের খোঁজখবর নিনঃ মাসে অন্তত একবার হলেও বউমার কাছে তার মা বা পরিবারের সদস্যরা কেমন আছে জিজ্ঞেস করুন। সম্ভব হলে আপনি নিজেই তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। বউমার পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে আপনার বউমা আপনাকে আরও সম্মান করবে।
বউমা বাবার বাড়ি যেতে চাইলে তাকে যেতে দিনঃ বউমা যদি বাবার বাড়ি যেতে চায় তাহলে প্রশ্ন করবেন না “কেন”। তার মা-বাবা, ভাই-বোনকে তার দেখতে ইচ্ছে হতেই পারে। আপনার ছেলের যেরকম আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের প্রতি টান আছে, আপনার বউমারও সেরকম তার বাবার বাড়ির সদস্যদের প্রতি টান আছে।
বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বা আলোচনায় তার পরিবারকে নিমন্ত্রণ জানান।
মাঝে মধ্যে তাকে তার পছন্দের জিনিস গিফট করুনঃ বউমার কাছ থেকে বিয়ের পরদিন থেকেই তার পছন্দের/অপছন্দের জিনিসগুলো বের করে নিন। যখন তাকে কিছু গিফট করবেন তাকে বলুন সেটি কেনার সময় আপনার তার কথা মনে পড়েছিল।
তাকে আপনার এমন কোন জিনিস দিন যা সে সবসময় খুব প্রশংসা করেছেঃ হতে পারে আপনার এমন কোন শাড়ি বা গহনা বা ঘরোয়া সামগ্রী।
আপনার যদি মেয়ে থেকে থাকেঃ আপনার যদি নিজের মেয়ে থেকে থাকে তাহলে বউমা ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করবেন না। মেয়ের জন্য যদি কিছু কিনে আনেন, বউমার জন্যেও সেটি কিনে আনার চেষ্টা করবেন। এটি সম্ভব না হলে অন্তত বউমার সামনে মেয়েকে কিছু দিবেন না। এতে সে কষ্ট পেতে পারে। নিজের মেয়ের জন্য যা করবেন চেষ্টা করবেন বউমার জন্যও সেটি করতে।
বউমা ও ছেলের ঝগড়া হলে বউমার পক্ষ নিনঃ অবশ্যই কারণের মধ্যে। নাক গলিয়ে তাদের ঝগড়ার সমাধান করতে যাবেন না। তারা সমাধান চাইতে আসলেই পক্ষ নেবেন ও ঝামেলা ঠিক করার চেষ্টা করবেন।
তার সন্তানের দাদী হউন, মা নয়।
মাঝে মধ্যে তার প্রশংসা করুনঃ তার রান্না ভালো লাগলে সবার সামনে বলুন যে তার রান্নাটি ভালো হয়েছে অথবা তার কোন কাজে খুশি হলে সেই ব্যাপারটি তাকে জানান । তবে জাল প্রশংসা করতে যাবেন না। তার মধ্যে নিশ্চই কোন না কোন ভাল দিক আছে। সেটিই তার সামনে তুলে ধরুন।
তার/ অন্য কারও সামনে তার সমালোচনা করবেন নাঃ যদি সে খারাপ কিছু করে থাকে যতক্ষণ না এটি আসলেই কোন বড় ব্যাপার হয়ে থাকে ততক্ষণ নিজের মুখ সংযত রাখুন। যদি ব্যাপার খুব খারাপ হয়ে থাকে মুখ খারাপ না করে তাকে বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করুন।
তার জন্য দোয়া করুনঃ যখন পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করবেন তার কথা ভুলবেন না যেন। আপনার ছেলের সংসার যেন সফল হয় সেটির জন্য দোয়া করবেন। ঘরের কোণায় বসে বউমা যেন ব্যর্থ হয় সেই দোয়া কখনও করবেন না।
বিয়ে পারিবারিক ভাবে হোক বা ভালোবেসে হোক আপনার ছেলে ও ছেলের বউ যদি আপনার সাথেই থাকে তাহলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য আপনার উচিত হবে তাকে মেয়ের চোখে দেখা। আপনি নিশ্চই আপনার নিজের মেয়েকে কষ্টে দেখতে চান না। তাহলে বউকে অযথা কষ্ট দেয়ারও মানে হয় না। আপনি আপনার বউমাকে যত ভালোবাসবেন আপনার ছেলের চোখেও আপনি আরও ভালো মা হবেন এবং সে আপনাকে খুশি করার জন্য আরও চেষ্টা করবে। এমন যদি হয় আপনার ছেলের বউ আপনার মান পূরণ করছে না মনে রাখবেন বউমা আপনার জীবন নয়, আপনার ছেলের জীবন।
বিষয়: বিবিধ
১১০৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে এক জায়গায় একটু খটকা লাগলো কেমন যেন বউ-শাশুড়ী মিলে পুরূষ নির্যাতন নির্যাতন মনে হলো। স্বামী-স্ত্রীর জগড়ায় শাশুড়ী বউয়ের পক্ষ নিলে তো ঐ পুরূষ নির্ঘাত দুই নারী কর্তৃক মানসিক নির্যাতনের শিকার হবে।
এসব সিরিয়ালে নাকি কেবলই বউ-শ্বাশুড়ীর ঝগড়াই দেখায়। তাই এসব সিরিয়ালওয়ালীরা কি শ্বাশুড়ী কে মায়ের মতো আপন করে নিতে পারবে?
উভয় এর মধ্যে আছে দ্বিমুখি ভাব এবং যেটার অভাব সেটা হলো সদ্ভাব!
মন্তব্য করতে লগইন করুন