জান্নাতের মেহমান হতে পারার গোড়ার কথাঃ সাঈদ নুরসীর একটি ক্ষুরধার যুক্তি
লিখেছেন লিখেছেন তাজুল ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:০৪:৩৭ দুপুর
ঈমানের আলোয় আলোকিত হয়ে একজন মানুষ মর্যাদার সর্বচ্চ শিখরে পৌছাতে পারে। অর্জন করতে পারে জান্নাত লাভের মত মূল্যমান। অপরদিকে, কুফরীর অন্ধকারে পতিত হয়ে সে নেমে আসে তুচ্ছতমে। অতঃপর এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয় যা জাহান্নামের যথোপযোগী। ঈমান মানুষকে মহান স্রষ্টার সাথে বন্ধনে আবদ্ধ করে। এই বিচারে ঈমান আল্লাহর সাথে এক ধরণের সম্পর্কের নাম। আর ঈমানের দ্বারা মানুষ অর্জন করে এমন সুমহান মর্যাদা যেখানে তার মধ্যে বিম্বিত হয় খোদায়ী শিল্প এবং তার অস্তিত্বের পরতে পরতে বিকশিত হয় খোদায়ী নামের নিদর্শন। অপর পক্ষে, কুফরী এই সম্পর্ককে ছিন্ন করে এবং খোদায়ী শিল্প ঢাকা পড়ে যায় অন্ধকারে। ফলে মানুষের মূল্য তখন শুধুমাত্র তার আবয়বের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর অবয়ব যেহেতু সাময়ীক, ক্ষয়ীষ্ণু এবং ক্ষণস্থায়ী জীব জীবন, তাই কার্যতঃ এর কোনো মূল্য নেই।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে আমরা এই রহস্যের যবানিকাপাত করতে পারি।
শিল্পকর্মে ব্যবহ্রত উপাদান সমুহের মূল্য এবং মূল শিল্পকর্মের ও তার শিল্প-নৈপুন্যের মূল্য সবসময় একই রকম নয়। কখনো কখনো উভয়ই সমমূল্যের। আবার কখনো কখনো উপাদান শিল্প কর্মের চেয়ে বেশি মূল্যমান। হতে পারে পাঁচ টাকা মূল্যের একটি শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে পাঁচ পয়সা মূল্যের এক টুকরো লোহার বস্তুতে। এমনও হতে পারে এক দশ লাখ টাকা মূল্যের একটি অতি প্রাচীন শিল্পকর্ম যে উপাদান দিয়ে তৈরী তার মূল্য পাঁচ পয়সাও নয়। এমন একটি শিল্পকর্ম যদি কোনো শিল্প বাজারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানের অভিজ্ঞ শিল্পিরা জানতে পারেন যে এই শিল্পকর্মটি অতীতের কোন একজন অভিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ শিল্পির নিপুন হাতে তৈরী তাহলে হয়তো এক মিলিয়ন টাকায়ও এটি বিক্রি হতে পারে। অপর দিকে, এই একই শিল্পকর্ম যদি কোনো কামারদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে হয়তো এটি কিনতে কেউ আগ্রহ দেখাবে না অথবা লোহার দামে এটি বিক্রি করতে হবে।
মানুষ স্রষ্টা শিল্পীর এমনই এক অতিপ্রাকৃতিক সৃষ্টি। সেই আল্লাহর ক্ষমতার সবচেয়ে সুক্ষ ও সুউন্নত মু’জিযা যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সকল আসমাউল হুসনার প্রতিবিম্ব হিসাবে। মানুষকেই তিনি বানিয়েছেন তার সকল অলৌকিক সৃষ্টি নৈপুন্যের কেন্দ্রবিন্দু যেখানে বিম্বিত হয় তার স্রেষ্টত্বের মহিমা এবং তাকেই বানিয়েছেন সৃষ্টি জগতের জন্য ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত।
ঈমানের জ্যোতি যখন মানুষের অস্তিত্বে আসন করে নেয় তখন এই জ্যোতিই তার ভিতরের সকল শৈল্পিক সৌন্দর্য এমনভাবে উদ্ভাসিত করে তোলে যেন সেগুলো সহজ পাঠ্য। বরং এই জ্যোতিই যেন অন্যদেরকেও এই সকল শৈল্পিক সৌন্দর্য পড়তে আহ্ববান জানায়। ফলে একজন মুমিন সেগুলো পড়ে গভীর চিন্তার সাথে। এর মাধ্যমেই সে তার অন্তরে অনুভাব করে একধরণের পুর্নাংগ অনুভুতি। এই অনুভুতি থেকেই সে যেন বলে ওঠেঃ “আমি মহান এক শিল্পির শিল্পকর্ম এবং তারই সৃষ্টি। লক্ষ্যকরুন কিভাবে তার রহমত ও দয়া আমার ভিতর বিম্বিত হচ্ছে”। এভাবেই আরো ব্যাপক তাৎপর্যপুর্ন বানী মানুষের মধ্যে বিরাজমান খোদায়ী শিল্পকে তুলে ধরে।
তাহলে ঈমান – যা মূলত মহান স্রষ্টার সাথে একধরণের সম্পর্কের প্রত্যয়- মানুষের মধ্যকার সকল সুপ্ত শৈল্পিক সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটায়। মানুষের মূল্য ও গরুত্ব নির্ভর করে এই খোদায়ী শিল্প ও সেই অবিনশ্বর আয়নার প্রতিবিম্ব কতটুকু প্রকাশ পাচ্ছে তার উপর। এর মাধ্যমেই গুরুত্বহীন মানুষ লাভ করে সকল সৃষ্টির সেরা স্থান যেখানে সে উপযুক্ত হয়ে ওঠে খোদায়ী অভিভাষনের এবং সে লাভ করে এমন মর্যাদা যা তাকে জান্নাতে খোদায়ী মেহমানদারী লাভের উপযুক্ত করে তোলে।
বিষয়: বিবিধ
১২২৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন