আধাঁরের আলো (পর্ব ১২)
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৮:০৫ রাত
শুক্রবার সন্ধ্যায় একটা রেষ্টোডেন্ট এ হাসিন ও মোনার শুভ বিবাহের আয়োজন করা হয় ।আল্লাহর রহমতে সব কিছু সুষ্ট ভাবে সুসম্পন্ন হয়।
বিদায় বেলা মোনার মা মোনাকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তার মাঝেও তিনি বলেন ,মা যে ঘরে যাচ্ছ সেই ঘর আজ থকে তোমার নিজের ঘর তবে সে ঘরের সব কিছুই তোমার মনের মত হবে না আর তুমি চাইলেও সব কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না তাই সব কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা না করে তুমি নিজেকে পরিবর্তন করে সেই ঘরের উপযোক্ত করে নিও সেটা তোমার জন্য সহজ হবে ।
জামান সাহেব মোনার হাত হাসিনের হাতে তুলে দিয়ে কান্না জরানো কন্ঠে বলেন বাবা হাসিন মোনা আমার অনেক আদরের মেয়ে তাকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম তুমি সুখে দুঃখে তার পাশে থেক,কখনো তাকে দুরে ঠেলে দিও না।
হাসিন মুখে কিছুই বলে না শুধু মনে মনে বলে নয় বছর এত পাশা পাশি থেকেও যে হাত একটু স্পর্শ করতে পারিনি সেই হাত যখন একবার ধরেছি মৃত্যু ছাড়া এহাত আমি ছাড়ব না ইনশা আল্লাহ হাসিন মোনার হাতকে আরো শক্ত করে ধরে।
হাসিন গাড়ী থেকেই নেমেই মোনার হাত ধরেই সরাসরি নিজেদের রুমে ডুকে মোনাকে খাটে বসিয়ে দুহাত দিয়ে মোনার মুখটা উচু করে ধরে আপি আজকে নিজেকে খুব সুভাগ্যবান মনে হচ্ছে,মোনা লজ্জা মেশানো মুচকি হেসে কেন ?
হাসিন : আপি মনে কিছু নিও না,তুমি এটা কখনো ভেব না আমি তোমার রূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তোমার প্রেমে পাগল হয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি।না আপি না আমি তোমাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে রাসল (সাঃ) এর দুইটা হাদীসকেই প্রাধান্য দিয়েছি,রাসুল (সাঃ) বলেছেন,"কনে বাছাইয়ের সময়ে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে ,তাহার ধন-সম্পত্তি, বংশ মর্যাদা,রূপ সৌন্দর্য এবং তাহার ধার্মিকতা ও ধর্ম পালন প্রবনতার জন্য ।অতএব তুমি অন্য সব দিক বাদ দিয়ে কেবল মাত্র ধার্মিকতা ও দ্বীন পালনকারী মেয়েকে গ্রহন করিয়াই সাফল্য মণ্ডিত হও ।
তোমার প্রতি আমার যে ভাল লাগা বা ভালবাসা সেটা তোমার ধার্মিকতা তোমার আল্লাহ ভীরুতা দেখেই আমি তোমাকে বিয়ে করার সিন্ধান্ত নিয়েছি ,কিন্তু আমি সাথে অন্য তিনটাও পেয়েছি কাজেই আমি আরো বেশী সাফল্যমন্ডিত হয়েছি।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, " গোটা দুনিয়টাই হচ্ছে সম্পদ। আর দুনিয়ার শ্রেষ্ট সম্পদ হচ্ছে সতীসাধ্বী নারী"।
আপি তোমার আমার মেলা মেশার ব্যাপারে তোমার পরিবার বা আমার মা বাবার মনেও হয়ত সন্দেহ শুরু হয়েছিল কিন্তু আমি তো জানি আপি তুমি কি ভাবে আমার সাথে মিশেছ।এত পাশা পাশি এত কাছা কাছি থেকে তুমি ভুল করেও কখনো তোমার হাতটি লাগতে দাও নি আমার হাতে ।দুনিয়ার শ্রেষ্ট সম্পদ যদি সতীসাধ্বী নারী হয় তো আমি দুনিয়ার শ্রেষ্ট সম্পদ পেয়ে গেছি আমি আর কিছু চাই না আপি।
আরেকটা কারন হচ্ছে নিজের চরিত্রকে হেফাজত করা ।এই সমাজে বাহিরে বের হলেই অনিচ্ছা সত্বেও চোখের সামনে এমন কিছু দেখতে হয় তখন নিজেকে কন্টোল করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পরে । হাসিন মুচকি হেসে সো আজকে থেকে সেই সমস্যা আর থাকল না।এখন আমি আমার চরিত্রকে পুরো পুরি হেফাজত করতে পারব।এই সব কিছু মিলিয়ে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। মোনা এতক্ষন মুগ্ধ নয়নে হাসিনের দিকে তাকিয়ে হাসিনের কথাগুলো শুনছিল আর অবাক হয়ে হাসিন তুমি এভাবে ভেবেছ আমার খুব ভাল লাগছে নিজের কাছে খুব গর্ব হচ্ছে তোমাকে স্বামী হিসাবে পেয়ে আনন্দে মোনার চোখ দিয়ে দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে ।হাসিন তারা তারি মোনার চোখের পানি মুছে দিয়ে মোনাকে জড়িয়ে ধরে আপি কাঁদবেনা তো তোমার চোখে পানি দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয়।
এটা তো আমার কোন কষ্টের পানি নয় ।এটা আমার অনেক আনন্দের পানি তোমাকে জীবন সাথী হিসাবে পেয়ে সত্যি অনেক আনন্দিত ।নিজের কাছে নিজেকেই অনেক ধন্য আর গর্বিত মনে হচ্ছে তোমাকে স্বামী হিসাবে পেয়ে।
থ্যাংক ইউ আপি থ্যাংক ইউ সো মাচ !মোনা দুষ্টামীর হাসি দিয়ে হাসিন থ্যাংক ইউ লাগবে না তোমার মত ধনী বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান,ব্রিলিয়ান্ট ষ্টোডেন্ট ,হ্যানসাম স্মার্ট ইয়ং স্বামী পেলে কে না খুশী হবে।হাসিন মোনার নাক চেপে ধরে আপি দুষ্টামী কর নাতো আজকের রাত ভালবাসার রাত শুধু ভালবাসার রাত।
মোনা আল্হাদী কন্ঠে হা..সি..ন তুমি আর আমাকে আপি বল নাতো আমার নাম ধরে ডাকবে। না আপি আমি তোমাকে আপি বলেই ডাকব আমিতো কখনো তোমাকে আমার বোন মনে করে আপি ডাকিনি, আমি যে দিন তোমাকে প্রথম আপি ডাকি সেদিনতো আমি জানতামই না আপি মানে কি! আমার কাছে ভাল লেগেছে আপি ডাক সে জন্য আমি তোমাকে আদর করে আপি ডাকি আর সারা জীবন তোমাকে আদর করে আপিই ডাকব।হাসিন মোনাকে আরো কাছে টেনে নেন।
সকালে নাস্তার টেবিলে আনজোম হাসিন ও মোনাকে উদ্দেশ্য করে বিয়ের ঝামেলা তো শেষ আর তোমাদের দুই জনেরই ছুটি আছে এই সুযোগে তোমরা হানিমুন করে এস ।
আহনাফ তোমরা কোথায় যেতে চাও,কতদিন থাকতে চাও তোমরা দুজনে সিন্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানাও আমি টিকিট,হোটেল এগুলো বুকিং দিয়ে দিচ্ছি।
হাসিন কিছু বলার আগেই মোনা হানিমুনে গিয়ে মানুষ কি করে ?
আনজোম বোকা মেয়ে !তোমারা দুজনে নিরিবিলি থাকবে,বেড়াবে,আনন্দ করবে শুধু তোমরা দুজন থাকবে।
মোনা : মা তুমি আর বাবা সকালে চলে যাচ্ছ ফিরছ বিকালে এই তিন তালা বাড়িটাতে সারা দিন থাকছি হাসিন আর আমি এর চেয়ে নিরিবিলি আর কোথায় পাব আর প্রতিদিন বিকালে বেড়াতেও যাচ্ছি।শুধু শুধু পয়সা খরচ করব কেন !মা আমাদের বিয়েতে আমি হাসিন খুশী হয়েছি,তুমি বাবা খুশী হয়েছ ,আমার ফ্যামেলীর সবাই খুশী হয়েছে সবার এই খুশীতে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী শুকরিয়া করা উচিত নয় কি !মা ,বাবা আজকে ফিলিস্তিনে যুদ্ধু হচ্ছে সেখনে আমার মুসলমান ভাই বোনেরা মেডিসিনের অভাব খাবারের অভাবে কত কষ্ট পাচ্ছে,সোমালিয়ায় যুদ্ধ আর দূভির্ক্ষে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে এরকম আরো বিভিন্ন মুসলিম দেশে মুসলমানেরা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে ,আমাদের কি তাদের সাহায্য করা উচিত নয়।আমি হাসিনকে নিয়ে এখানেই অনেক আনন্দে আছি তাই মা,বাবা তোমরা এ টাকা গুলো মসজিদে যে ফান্ড খোলা হয়েছে ওখানে দিয়ে দাও। এটা আমার মত তবে আমি অবশ্যই হাসিনের মতকে প্রাধান্য দিব হাসিন যা বলবে আমি তাই করব।
এতক্ষন তিন জনই মনোযোগ দিয়ে মোনার কথা শুনছিল মোনার কথা শেষ হতেই হাসিন মোনার গালে হাত দিয়ে আদর করে এই না হলে আমার আপি।You are right.Thank you very much.আপি ।তুমি সত্যি আমার লক্ষী আপি হাসিন এত বেশী excited হয়ে যায় যে বাবা মায়ের সামনেই মোনকে জড়িয়ে ধরে..................।
চলবে....................।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন