ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানরে সর্বোচ্চ নেতা "হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী'র হজ্জবাণী":-
লিখেছেন লিখেছেন বুসিফেলাস ০৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১৭:১৮ সকাল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ওয়ালহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদিউ ওআলিহিত তাহিরিন
আপনারা যারা কুরআনের আহ্বানে লাব্বায়িক বলার মতো এবং আল্লাহর ঘরের আতিথ্য বরণ করার মতো সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তাঁদের প্রতি রইলো আন্তরিক সালাম ও দরুদ। সবকিছুর আগে বলবো আপনারা এই মহান নিয়ামতের গুরুত্বটা উপলব্ধি করবেন। হজের মতো অনন্য একটি বিধানের আন্তর্জাতিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত দিকগুলো নিয়ে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করবেন এবং হজের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। এজন্য এই হজের আয়োজক সর্বশক্তিমান এবং মহা দয়ালু আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করবেন।
আমিও আপনাদের সুরে সুর মিলিয়ে আপনাদের অন্তরের সাথে অন্তর মিলিয়ে সেই গাফুর ও মান্নান আল্লাহর কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি তিনি যেন তাঁর পূর্ণ নিয়ামত আপনাদের দান করেন। তিনি যেহেতু আপনাদের হজ করার মতো যোগ্যতা দিয়েছেন সেই হজ পরিপূর্ণভাবে আদায় করার তৌফিকও তিনি দান করুন। আল্লাহ আপনাদের হজ কবুল করুন এবং আপনারা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ ক্ষমা লাভ করে ভরা হাতে নিজ নিজ এলাকায় যেন ফিরে যেতে পারেন ইনশাআল্লাহ, সেই দোয়া করছি।
নজিরবিহীন এবং জ্ঞানগর্ভ এই হজ অনুষ্ঠানের মৌলিকতম ও শ্রেষ্ঠ অর্জন যদিও আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ করা, তবু তার পাশাপাশি হজের এই সুবর্ণ সুযোগে মুসলিম বিশ্বের সমস্যাগুলোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। মুসলিম উম্মাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় আশয়গুলোর ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে দৃষ্টি দেওয়াও হজপালনকারীদের অন্যতম দায়িত্ব।
আজকের দিনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয়টি হলো মুসলমানদের ঐক্য এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভেদ সৃষ্টির গ্রন্থিগুলো উন্মোচন করা। হজ হলো ঐক্য, সংহতি, ভ্রাতৃত্ব এবং পারস্পরিক সহযোগিতার অনন্য প্রতীক। হজে সবার উচিত অভিন্ন বিষয়গুলোর ওপর দৃষ্টি দেওয়া এবং নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ও মতপার্থক্য মুছে ফেলা।
ঔপনিবেশিক রাজনীতির ধারকরা সেই প্রাচীনকাল থেকেই তাদের ঘৃণ্য লক্ষ্য হাসিল করার জন্য বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদের মতো নোংরামিপূর্ণ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু আজ ইসলামি জাগরণের বরকতে মুসলিম দেশগুলো ইহুদিবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী শত্রুগুলোকে ভালোভাবে শনাক্ত করতে পেরেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মুসলমানদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির নীতি এখন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
ধূর্ত শত্রুরা মুসলমানদের মাঝে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দিয়ে প্রতিরোধ ও জিহাদের স্পৃহাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চাইছে যাতে মুসলমানদের প্রকৃত শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদীরা নিরাপদ থাকতে পারে। এই গাদ্দারি নীতির আলোকেই পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে। এটি আমাদের সবার জন্য সতর্কবার্তা। মুসলিম ঐক্যকে আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব দায়িত্বের শীর্ষে স্থান দিতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ফিলিস্তিন ইস্যু। দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পার হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ ইস্যুতে নানা চড়াই-উতরাই শেষে বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর রক্তাক্ত ঘটনাবলীর পর দু’টি বিষয় এখন সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে:
এক- ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষকরা নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা এবং নৈতিকতা ও মানবিকতা পদদলিত করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সীমা-পরিসীমা মেনে চলে না। তারা সব ধরনের অন্যায়-অনাচার, জাতিগত নিধনযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ, নারী-শিশু ও আশ্রয়হীনদের হত্যাসহ সব ধরনের নৃশংসতা ও জুলুমকে নিজেদের জন্য জায়েজ বলে মনে করে এবং তারা এ জন্য গর্ব করে। ৫০ দিনের সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধের কান্না উদ্রেককারী নৃশংস দৃশ্যগুলো তাদের ঐতিহাসিক অপরাধযজ্ঞের সর্বশেষ উদাহরণ। অবশ্য গত অর্ধ শতাব্দীতে তারা এ ধরনের ঘটনা বারবারই ঘটিয়েছে।
দ্বিতীয় বাস্তবতা হচ্ছে- চরম পাশবিকতা ও নৃশংসতার মাধ্যমেও দখলদার ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি বরং দুষ্টু রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের নির্বুদ্ধিতামূলক কর্তৃত্বকামী প্রত্যাশার বিপরীতে দখলদার ইসরাইল প্রতিদিনই ক্রমেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সর্বশক্তির মোকাবিলায় অবরুদ্ধ ও আশ্রয়হীন গাজাবাসীর ৫০ দিনের প্রতিরোধ, গাজার অধিবাসীদের কাছে দখলদারদের পরাজয় ও পশ্চাদপসারণ এবং প্রতিরোধ সংগ্রামীদের শর্তগুলোর কাছে দখলদার শক্তির নতি স্বীকারের মধ্যদিয়ে তাদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার প্রকাশ্য প্রদর্শনী হয়ে গেছে। এর অর্থ দাঁড়ায়- ফিলিস্তিনি জাতিকে এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আশাবাদী হতে হবে, ইসলামিক জিহাদ ও হামাসের যোদ্ধাদেরকে চেষ্টা-প্রচেষ্টা, উদ্যম ও দৃঢ়তা জোরদার করতে হবে এবং পশ্চিম তীরকে তাদের সদা গৌরবোজ্জ্বল পথ আরো শক্তি ও দৃঢ়তার সঙ্গে পাড়ি দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। আর সরকারগুলো যাতে ফিলিস্তিনের প্রতি আন্তরিক ও প্রকৃত সমর্থন দেয়, সে জন্য মুসলিম জনগণের পক্ষ থেকে জোর দাবি তুলতে হবে এবং মুসলিম সরকারগুলোর পক্ষ থেকেও এ ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থহীন পদক্ষেপ নিতে হবে।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে,মুহাম্মাদি ইসলামের সঙ্গে আমেরিকান ইসলামের পার্থক্যের দিকে মুসলিম বিশ্বকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এ দুই ইসলামের পার্থক্য যেমন তাদের নিজেদের বুঝতে হবে তেমনি অন্যদের বোঝাতে হবে যে,এই দু'টিতে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। আমাদের মরহুম ও মহান ইমাম প্রথমবারের মতো এ দুই ইসলামের পার্থক্য তুলে ধরার সাহসিকতা দেখান এবং বিষয়টিকে মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। মুহাম্মাদি ইসলাম হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা ও প্রশান্তিদায়ক ইসলাম,খোদাভীরু ও জনগণের শাসনের ইসলাম এবং 'আশিদ্দাউ আলাল কুফফার ও রুহামাউ বাইনাহুম'অর্থাৎ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোরতা ও নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতার ইসলাম। অন্যদিকে আমেরিকান ইসলাম হচ্ছে বিজাতীয়দের হীন অনুচরবৃত্তির গায়ে ইসলামের লেবাস পরিয়ে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে শত্রুতা করা।
যে ইসলাম মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ উস্কে দেয়,যে ইসলাম আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি ভরসা না করে আল্লাহর শত্রুদের ওপর নির্ভর করতে শেখায়,যে ইসলাম সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং যে ইসলাম নিজ জাতি বা অন্যান্য জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমেরিকার সঙ্গে জোট গঠন করতে শেখায় তা আসলে ইসলামই নয়। এটি এমন এক বিপদজনক ও মারাত্মক ভণ্ডামি যার বিরুদ্ধে প্রতিটি নিষ্ঠাবান মুসলমানের লড়াই করা উচিত।
যে কোনো সত্য অনুসন্ধানী ব্যক্তি দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা নিয়ে মুসলিম বিশ্বের এ গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতার দিকে তাকালে সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে যাবেন এবং দ্বিধাহীন চিত্তে নিজের কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারবেন।
পবিত্র হজ,এর আনুষ্ঠানিকতা ও দোয়াগুলো আমাদেরকে সেই দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা অর্জনের চমৎকার সুযোগ এনে দেয়। আশা করছি,আপনারা, সম্মানিত হাজিগণ আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামতের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করবেন। আপনাদের সবাইকে মহান আল্লাহর হাতে সমর্পণ করছি এবং আল্লাহর দরবারে আপনাদের হজ কবুলের জন্য দোয়া করছি।
ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী
বিষয়: বিবিধ
১৫০৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারণ এই বক্তব্যে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান নাযুক অবস্হা এবং তা হতে মুক্তির পথ সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
"আশিদ্দাউ আলাল কুফফারি ওয়া রুহামাউ বাইনাহুম"এর প্রতিচ্ছবি মুসলিমদের মাঝে ফুটে না উঠলে মুসলিমরা নির্যাতিত হতেই থাকবে।
বিশ্ব মুসলিম কে মহান আল্লাহ সঠিক পথ চেনার তাওফিক দান করুন, আমিন।
উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে........।
খুব সুন্দর বিষয়টি শেয়ার করেছেন। এজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাতেই হচ্ছে।
পড়লাম। অনেক ভালো লাগলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
এক কথায় অসাধারণ!!
বিশ্ব মুসলিম কে মহান আল্লাহ সঠিক পথ চেনার তাওফিক দান করুন, আমিন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন