জীবন থেকে নেয়া- রিযিকের মালিক আল্লাহ
লিখেছেন লিখেছেন মোতাহারুল ইসলাম ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫২:৫৯ সন্ধ্যা

২৫ বছর বয়সী অধিকাংশ যুবকের মত আমিও বিয়ে করার জন্য উদ্গ্রীব ছিলাম, যদিও আমার পকেটে দুটি কানাকড়িও ছিলোনা। আমার জন্য তখন খুবই কঠিন সময় যাচ্ছিল।
আমাদের বিয়ের প্রায় ছয় বছর গত হয়েছে। মাশাল্লাহ আমার স্ত্রী একটি খুবই বিত্তশালী পরিবার থেকে এসেছে, কিন্তু আমার অবস্থা সেরকম নয়।
আমার এই অবস্থার ব্যাপারে আমার স্ত্রী সম্যক আবহিত ছিল এবং বুঝত, তারপরেও সে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। আলাহামদুলিল্লাহ, ৫০০ পাউন্ডের খরচায় আমাদের বিয়ে হয় পূর্ব লন্ডনে। আমার শ্বসুর পক্ষের লোকেরা এ বিয়ে বয়কট করে, কারণ তারা তাদের ছোট্ট রাজকন্যার বিয়েতে যে মিলিয়ন ডলার শো এর স্বপ্ন দেখেছিলেন, এটা মোটেই তেমন ছিলোনা।
যাইহোক আমরা আমার পিতা-মাতার বাসস্থানে ফিরে এলাম, যেখানে আমরা পরবর্তি দুই বছর ছিলাম। আমি আগেই বলেছি আমার সঞ্চয় বলতে তেমন কিছু ছিলোনা, যার কারণে আমি একটি বিছানা কিনতে পারিনি। কিন্তু আমি এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে আমার পিতা –মাতার কাছে থেকে কোনও রকম সাহায্য নেবনা।
আমার ভাই এর একটি পরিত্যক্ত ব্যাবহৃত তোষক ছিল, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এর উপরই শয়ন করব, এমন কোনো রাত্রী গত হয়নি যখন তোষোকের স্প্রিং আমার পিঠে ব্যাথা দিতনা।
বিয়ের কিছুদিন পরেই আমার স্ত্রী অন্তস্বত্বা হয়ে পরে, সেই নয় মাস তার জন্য খুবই কঠিন ছিলো যেহেতু তোষকটি আরামদায়ক ছিলোনা। সে কখনোই অনুযোগ করেনি, কিন্তু আমি বুঝতাম, যদি এটা আমাকে ব্যাথা দেই তো ওকে মেরে ফেলছে। আমার মনে আছে ডেলিভারীর নিকটবর্তী সময়ে আমাদের পিঠের ব্যাথার জন্য আমরা কেউই ঘুমুতে পারতামনা, সে তখন বলত, “ইনশাআল্লাহ রুমাইসার জন্মের পর আমাদের এ অবস্থার পরিবর্তন হবে, সে এবং তার ভাই- বোনেরা তাদের রিযিক নিয়েই পৃথিবীতে আসবে।
আমার সুর্যমুখী রুমাইসার জন্ম হলো, এবং এর পরই আমার ভাগ্য রাতারাতি বদলে যেতে লাগলো। আমার ব্যবসা খুব ভালো চলছিল, আমি একটি বিছানা কিনলাম এবং তারপর আমার হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা হলো এবং অবশেষে আমরা নিজেদের জন্য আলাদা বাসা নিলাম।
এক বছর পর হাফসার জন্ম হলো। তার জন্মের আগে আমি নতুন আর একটি ব্যাবসা শুরু করি, সেটাও খুব ভালো চলছিল।
এর দুই বছর পর ইবরাহীমের জন্ম হলো সে ও তার রিযিক হিসাবে তৃতীয় একটি ব্যাবসা সাথে নিয়ে এলো।
আমি কেন এ গল্পটি বললাম?
অনেক সময় মানুষ ভুলে যায়, আল্লাহই রিযিক দাতা এবং তার ভান্ডার অফুরন্ত, আমাদের শুধু তার কাছে চাইতে হবে। আমি আল্লাহর রহমত স্বরূপ শিশুদের কথাও বলতে চেয়েছি, আমার যদি প্রতি নয় মাস অন্তর চারটি সন্তান হতো ! শিশুরা অবিশ্বাস্য আশীর্বাদ, আপনার অবস্থা যাই হোকনা কেন, তারা তাদের রিযিক নিয়েই পৃথিবীতে আসে। সুতরাং চিন্তা কিসের? তাদের শুধু আসতে দিন।
পরিশেষে ধার্মিক স্বামী- স্ত্রীকে বিয়ে করা এক পৃথিবী সমান পার্থক্য গড়ে, আমার স্ত্রী ১০টি বিছানার কারখানা দিতে পারত, কিন্তু সে তার পিতা-মাতার উপর নির্ভর্শীল হতে চায়নি এবং সে তার অবস্থার উপরে ধৈর্য ধারণ করেছিল। সুতরাং এমন কাউকে বিয়ে করুন, যে আল্লাহকে ভালোবাসে, ফলস্রুতিতে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।
পবিত্র কুরানের নিম্নের আয়াতটির দিক খেয়াল করুন এবং গভীর ভাবে ভাবুনঃ
এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
[সুরা তালাকঃ আয়াতঃ৩]
সৌজন্যেঃ আবু রুমাইসা [ ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]
ভাবানুবাদঃ মোতাহারুল ইসলাম
বিষয়: বিবিধ
২০২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন