এক দুঃখিনী মায়ের গগণবিদারী আর্তনাদ ও একটি অনুরোধ
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:০৯:৫৬ সন্ধ্যা
বিধাতার অমূল্য দান এবং একজন সন্তানের অশেষ নেয়ামত ও জান্নাতের ঠিকানা হলো মা। একজন আদর্শবতী ও গুণবতী মায়ের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট হলো নিজের সন্তানকে সর্বাবস্থায় বুকে আগলিয়ে রেখে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে শয়নে-স্বপনে, নিদ্রায়-জাগরণে, চলনে-বলনে, চিন্তা-চেতনায়, কর্মে-আহারে, আনন্দ-বেদনায়, সুখে-দুঃখে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তানের মঙ্গল কামনা করা। সেইসাথে নিগূঢ় স্নেহ ভালবাসায় আর গভীর মমতায় হৃদয়ে লালন করে সন্তানের অনাবিল অনন্ত অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
এই স্বপ্ন পূরণে একদিন কঠিন সময়ের দারপ্রান্তে উপনীত হয়ে অল্প বয়সেই হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে অকুল দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে শুরু করেন। আকস্মিক ভাবে স্বামী স্ট্রোকে মারা গেলে শ্বশুরালয় থেকে বিতাড়িত হয়ে ছোট ছোট তিন সন্তানের জননী সন্তাদের লালন পালনে চোখে সরিষার ফুল দেখতে শুরু করেন। মৃত স্বামী ও তাঁর নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত হন। অবশেষে অনেক ছুটাছুটির পর একটি সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন।
তারপর বাস্তবতার কঠিন সংগ্রামে ব্রতী হয়ে সমস্ত প্রতিকূলতাকে পদদলিত করে অমানুষিক পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ সাধনাবলে তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ ইমারত গড়ে তোলেন। এমনিভাবে অপরিসীম মনোবল আর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের উপর অবিচল আস্থা রেখে তাঁকে প্রতিটি পদক্ষেপে আপনজনের সৃষ্ট জঘন্য কুমতলব, শ্বশুরবাড়ির দুশমন, সন্তানদের দেখাশুনা, চাকুরী স্থলে সৃষ্ট জটিলতা মোকাবিলাসহ বিভিন্নমুখী পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পথ চলতে হয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুই মেয়েকে সফল চিকিৎসক এবং এক ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। স্বপ্নের ডানায় ভর করে সোনালী দিনের সুখের হাতছানি দেয় তাঁকে। মেয়েদেরকে ভালো ঘর এবং বংশে বিয়ে দেয়ার পর স্বস্তি আর তৃপ্তির শ্বাস ফেলেন তিনি।
মায়া-মমতার টানে সন্তানের সাথে জীবনের শেষ দিনগুলো সুখে শান্তিতে অতিবাহিত করবেন এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে ছেলে এবং ছেলের বউসহ কল্পনার জগতে ডানা মেলে পাড়ি জমান সুদূর আমেরিকায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে মুখামুখি হলেন আরেক অপরিচিত বৈরী জগতের সাথে যা কোনদিন সে ভাবতেও পারেননি। বৃদ্ধ বয়সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, কাপড় ধোয়া আয়রণ, রান্নাসহ যাবতীয় ঘরের কাজের দায়িত্ব ছিল তাঁরই। ছেলের বউ শুরুতেই ছাপ ছাপ জানিয়ে দিয়েছে গৃহস্থলির কাজকর্ম করা তার পক্ষে সম্ভব নয় যা কোনদিন সে তার বাবার বাড়ীতে করেনি। প্রথমে সে ব্যাপারটা সহজভাবেই নিয়েছিল সন্তানের সুখী জীবনের আশায়। তারপর দিনে দিনে বাড়তে থাকে অসম্মানজনক আচরণ, অবজ্ঞা আর অবহেলা। পালাক্রমে তাঁর জীবনে নেমে আসে কলঙ্কময় অবিশ্বাস্যকর নিষ্ঠুর আচরণ।
নিজের পেটের সন্তানকেও মনে হোল সম্পূর্ণ অচেনা। মাকে নিয়ে তার সেই আগের আবেগ, উচ্ছ্বাস, উল্লাস তো দুরের কথা একজন মানুষ হিসাবেও তার সম্মান ছিল ভূলুণ্ঠিত। প্রতিদিন অসহ্য অসহনীয় তির্যক কথার তীর তার বক্ষকে ক্ষত-বিক্ষত করতো সে কষ্টের যন্ত্রণা কেবল একমাত্র জননীর হৃদয় ছাড়া আর কেহই উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। একান্ত আপনজনের কাছ থেকে নিগৃহীত লাঞ্ছিত হয়ে রোজই ফজর থেকে শুরু করে এশার নামায পর্যন্ত তাঁর দু’চোখের পাতা থাকতো ভেজা। সারাক্ষণই সে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো না জানি কোন ভুলের জন্য কি কথা শুনতে হবে! সেটা যে কতটা মর্মান্তিক আর হৃদয়বিদারক তা কেবল একজন ভূক্তভোগীই আঁচ করতে পারেন।
এমনি স্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় সে নতুন করে গভীর দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনায় পড়ে যায়। শারীরিক অসুস্থতা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশে ফিরে কীভাবে নিজের রুটি রুজির ব্যবস্থা করবে, আত্মীয় স্বজন ও সমাজের মানুষের কাছেই বা কি উত্তর দিবে! ইত্যাদি ভেবে ভেবে সে পেরেশান হয়ে নির্জনে নিবিষ্ট চিত্তে সম্মানজনক সমাধানের জন্য একাগ্র সাধনায় নিজেকে সপে দেন আল্লাহ্র কাছে। তাঁর সারা জীবনের আয় রোজগার এমনকি পেনশনের টাকা সবই সে ব্যয় করেছে এই সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে তাদের সুখের কথা ভেবে। আজ তাঁর হাতে কিছুই অবশিষ্ট নেই নিজের জন্য। অসহায় জনম দুঃখিনী মায়ের বুক ফাটা গগণ বিদারী কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যেত। সমাজ সংসারের ভয়ে সব লজ্জা অপমান সে নীরবে নির্বিবাদে হজম করতো। কিন্তু মাঝে মাঝে সে দিশাহীন বোবা হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো। দু’চোখ মনে হতো রক্ত জবা ফুল, ফুলে ফেপে ঢোল হয়ে থাকতো। কারণ সেখানে সে এক কথায় কাজের মেয়ের চেয়েও জঘন্যতম আচরণের স্বীকার হতো যা কারো কাছে প্রকাশ করার উপায়ও ছিল না তাঁর। এমনি এক দমবন্ধ পরিবেশে অবশেষে একদিন প্রতিবেশীর আন্তরিক সাহায্য ও সহযোগিতায় আবারও ফিরে যান আপন ঠিকানায় বাংলাদেশের মাটিতে। শুরু হয় বেঁচে থাকার আরেক সংগ্রাম!!! সাথে থাকে শুধু এক বুক নিদারুণ জ্বালা, দীর্ঘশ্বাস, আর্তনাদ আর হাহাকার!!!!
.............................................................................................
সন্মানিত পাঠকবৃন্দ, হে আমার ভাই-মা-বোনেরা, আপনাদের মধ্যে যাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনও আছে তারা সন্তানদের দু’নো জাহানের ভয়াবহ পরিণতির কথা ভেবে ইসলামী শিক্ষা এবং জ্ঞানদানে সতর্ক ও সচেষ্ট হোন যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদেরকে ধর্মীয় শিক্ষাদান তাই ইসলামে সর্বোত্তম এবাদত হিসাবে পরিগণিত। আমাদের সন্তানরা যেন অঢেল ধনসম্পদ ও ভোগবিলাসে নিমজ্জিত হয়ে উচ্চ শিক্ষার নামে কুশিক্ষিত হয়ে জাহান্নামী না হয়, এরা জীবিত হয়েও যেন মৃত বিবেকসম্পন্ন মানুষের মত আচরণ না করে সেজন্য দ্বীনের আলোয় তাদেরকে গড়ে তুলুন। এরা যেন বাবা মাকে তাদের হক থেকে বঞ্চিত করে দুনিয়া ও আখেরাতের সঠিক পথ না হারায় সেজন্য পরিপূর্ণভাবে খাছ ও ব্যাকুল চিত্তে সন্তানদের জন্য দোয়া করুণ। ছোটবেলা থেকেই দ্বীনি জীবনের সাথে অভ্যস্থ করুণ। তারা যেন দুনিয়ার জীবনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে আখেরাতকে ভুলে না যায়। তাদের অনাগত জীবন যেন হয়ে উঠে আলোকময়, জ্যেতিস্মান। আর তা না হলে আমরা হবো কলঙ্কিত অভিশপ্ত জাহান্নামী অনন্ত কালের জন্য। পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে হেফাজত করুণ। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লেখাতে সুন্দর একটা আকর্ষন আছে। আপনার শেষ প্যারার আহবানটা ভালো লেগেছে লিখতে থাকুন বেশি বেশি। যাজাকাল্লাহু খাইর।
এই সিলসিলা পৃথিবীর শুরু থেকেই চলে আসছে ।
মেয়েরাই মেয়েদের সাথে ক্লিকবাজী করে আর ফাঁপড়ে রাখে ছেলেদের ।
এখানে খিয়াল করুন, আপনি চার জনকে জবাব দিয়েছেন ৩নং মন্তব্যর 'অনেক পথ বাকি' জবাব দেখতে পেছেয়েন
াআর কেউ জানেনা আপনি জবাব দিয়েছেন ।
ধন্যবাদ শুভ ব্লগিং ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন