সেই বাঁদী মেশক ও জাফরানের বাগিচায় লালিতপালিত হইয়াছে। ইয়াকুত ও মারজানের শাখাসমূহে খেলিয়াছে।
লিখেছেন লিখেছেন হানিফ খান ১২ জুলাই, ২০১৫, ০২:৩৩:৪৭ রাত
হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহঃ) একবার
বসরার গলি দিয়া যাইতেছিলেন। পথে
এক বাঁদী চাকর-নওকর লইয়া এমন
জাঁকজমকের সহিত যাইতেছিল যেমন
বাদশাহদের বাঁদী হইয়া থাকে। হযরত
মালেক (রহঃ) তাহাকে দেখিয়া
ডাকিয়া বলিলেন, হে বাঁদী!
তোমাকে তোমার মালিক কি বিক্রয়
করিবে?
বাঁদী এই কথা শুনিয়া (অবাক হইয়া
গেল) বলিতে লাগিল, কি বলিলে,
আবার বল।
তিনি আবার বলিলেন।
সে বলিল, যদি তিনি বিক্রয় করেনও;
তবে কি তোমার মত ফকির খরিদ
করিতে পারিবে?
তিনি বলিলেন, হ্যাঁ তোমার চাইতে
উত্তমকে খরিদ করিতে পারিব।
বাঁদী ইহা শুনিয়া হাসিয়া উঠিল
এবং খাদেমদেরকে হুকুম করিল, এই
ফকিরকে ধরিয়া আমাদের সহিত লইয়া
চল(অন্ততঃ কিছুটা হাসি-তামাশা
করা যাইবে)। খাদেমরা ধরিয়া সঙ্গে
লইয়া লইল।
বাঁদী যখন ঘরে ফিরিল, তখন সে তাহার
মনিবকে উক্ত ঘটনা শুনাইল। সেও শুনিয়া
অনেক হাসিল এবং তাহাকে তাহার
সম্মুখে আনিবার হুকুম দিল। যখন তাহাকে
সম্মুখে আনা হইল, তখন মনিবের অন্তরকে
এক প্রকার ভয় আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল।
সে বলিল, আপনি কি চান?
তিনি বলিলেন, তুমি তোমার
বাঁদীটি আমার নিকট বিক্রয় করিয়া
দাও।
সেও বলিল, আপনি কি উহার মূল্য দিতে
পারিবেন?
হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহঃ)
বলিলেন, আমার নিকট তাহার মূল্য
খেজুরের ছুড়িয়া ফেলিয়া দেওয়া
দুইটি দানা সমতুল্য। ইহা শুনিয়া সকলেই
হাসিতে লাগিল।
সে জিজ্ঞাসা করিল, তুমি এই মূল্য
কিসের ভিত্তিতে সাব্যস্ত করিয়াছ?
তিনি বলিলেন, তাহার মধ্যে অনেক
দোষ আছে।
সে জিজ্ঞাসা করিল, তাহার মধ্যে
কি কি দোষ আছে!?
'তিনি বলিতে লাগিলেন, যদি সুগন্ধি
ব্যবহার না করে, তবে শরীর হইতে দুর্গন্ধ
বাহির হইবে, যদি দাঁত পরিষ্কার না
করে, তবে মুখ হইতে দুর্গন্ধ আসিতে আরম্ভ
করিবে, যদি চুলে তৈল চিরুনী ব্যবহার
না করে, তবে উহা এলোমেলো ও
বিক্ষিপ্ত হইয়া যাইবে, উহার মধ্যে উকুন
পয়দা হইয়া যাইবে (এবং মাথা হইতে
দুর্গন্ধ আসিতে শুরু করিবে), সামান্য বয়স
বেশী হইয়া গেলে সে বুড়ী হইয়া
যাইবে (তাকাইয়া দেখিবারও উপযুক্ত
থাকিবে না), মাসিক হয়, পেশাব
পায়খানা করে, সবরকম দুর্গন্ধময় জিনিস
(থুথু, শ্লেষ্মা, লালা, নাকের ময়লা
ইত্যাদি) তাহার ভিতর হইতে বাহির
হইতে থাকে। দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও
মুসীবত আসিতে থাকে। এত বেশী
স্বার্থপরতা যে, শুধুমাত্র নিজের
স্বার্থের জন্যই তোমার সহিত মহব্বত
প্রকাশ করে। কেবল নিজের আরাম ও
সুবিধার জন্যই তোমার প্রতি ভালবাসা
দেখায়। (আজ যদি তোমার দ্বারা কোন
কষ্ট পায়, সমস্ত ভালবাসা শেষ হইয়া
যাইবে) চরম অকৃতজ্ঞ, কোন কথা বা
ওয়াদা পূরণ করে না। তাহার সমস্ত
ভালবাসা মিথ্যা। আগামীকাল
তোমার পরেই অন্য কাহারও পার্শ্বে
বসিবে। তখন তাহার সহিতও এইরূপ
ভালবাসার দাবী করিকে।
পক্ষান্তরে আমার নিকট ইহা হইতে
হাজার গুণ ভালো বাঁদী রহিয়াছে,
যাহার মূল্য ইহার চেয়ে অনেক কম।
তাহাকে কর্পুরের উপাদান দ্বারা
বানানো হইয়াছে, মেশক ও
জাফরানের সংমিশ্রণে সৃষ্টি করা
হইয়াছে, তাহার উপর মুক্তা ও নূর
জড়ানো হইয়াছে, যদি লবনাক্ত
পানিতে তাহার মুখের লালা ফেলা
হয়, তবে সমস্ত পানি মিঠা হইয়া
যাইবে। যদি সে মৃত ব্যক্তির সহিদ কথা
বলে, তবে মৃত ব্যক্তি জিন্দা হইয়া
যাইবে। যদি তাহার হাতের কব্জি
সূর্যের সম্মুখে ধরা হয়, তবে সূর্য
আলোহীন হইয়া গ্রহণ লাগিয়া যাইবে।
যদি সে অন্ধকারে আসিয়া উপস্থিত হয়,
তবে সমস্ত ঘর আলোকিত হইয়া যাইবে
এবং ঝলমল করিয়া উঠিবে। যদি সে
তাহার সাজ-সজ্জাসহকারে দুনিয়াতে
আসিয়া পড়ে, তবে সারা জাহান
ঘ্রাণে মোহিত হইয়া যাইবে, উজ্জ্বল
হইয়া যাইবে। সেই বাঁদী মেশক ও
জাফরানের বাগিচায় লালিতপালিত
হইয়াছে। ইয়াকুত ও মারজানের
শাখাসমূহে খেলিয়াছে। সর্বপ্রকার
নেয়ামতসমূহের তাঁবুতে তাহার মহল
রহিয়াছে। তাসনীম (জান্নাতের
ঝর্ণাসমূহের মধ্য হইতে একটি ঝর্ণা) এর
পানি পান করে, কখনও ওয়াদা ভঙ্গ করে
না। ভালবাসা পরিবর্তন করে না
(অন্যের প্রেমে মজে না)। এখন তুমিই বল,
মূল্য হিসাবে কোন বাঁদী বেশী
উপযোগী!??
সকলেই বলিল, ঐ বাঁদীই বেশী
উপযোগী যাহার কথা আপনি বলিলেন।
তিনি বলিলেন, ঐ বাঁদীর মূল্য সবসময় সব
জামনায় প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট মজুদ
রহিয়াছে।
লোকেরা বলিল, উহার মূল্য কি?
তিনি বলিলেন, এত বড় গুরুত্বপূর্ণ
আলীশান বস্তু খরিদ করিবার জন্য অত্যন্ত
সাধারণ মূল্য আদায় করিতে হয়। আর উহা
হইল, রাত্রের কিছু সময় অবসর করিয়া শুধু
আল্লাহ-তায়ালার জন্য কমপক্ষে (দুই
রাকাত তাহাজ্জুদ নামায) পড়িয়া
লওয়া। আর যখন তোমরা খানা খাইতে
বস, তখন কোন গরীব অভাবী লোককেও
শরীক করিয়া লও। আর আল্লাহ
তায়ালার সন্তুষ্টিকে নিজের
খাহেশের উপর প্রাধান্য দাও। পথে
কোন কষ্টদায়ক জিনিস যেমন কাঁটা, ইট
ইত্যাদি পড়িয়া থাকিতে দেখিলে
উহা সরাইয়া দাও। দুনিয়ার জীবনকে
সাধারণভাবে কাটাইয়া দাও।
নিজের চিন্তা-ফিকিরকে এই ধোকার
ঘর হইতে সরাইয়া চিরস্থায়ী ঘরের
প্রতি লাগাইয়া লও। এই সমস্ত বিষয়ে
এহতেমাম করিলে তুমি দুনিয়াতে
ইজ্জতের যিন্দেগী অতিবাহিত
করিতে পারিবে। আখেরাতে
নিশ্চিন্ত ও সম্মানের সহিত পৌঁছিবে।
অফুরন্ত নেয়ামতের ঘর জান
বিষয়: বিবিধ
১৭১৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন