একদিন যুবকটা জীবিকার উদ্দেশ্যে মক্কার গলি দিয়ে হাঁটছিলো

লিখেছেন লিখেছেন হানিফ খান ৩০ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৪২:২৭ সন্ধ্যা

একদিন যুবকটা জীবিকার উদ্দেশ্যে

মক্কার গলি দিয়ে হাঁটছিলো। হঠাৎ

চোখে পড়লো, একটা সোনার হার পড়ে

আছে। আশেপাশে আর কেউ নেই

দেখে হারটা উঠিয়ে নিলো।

মালিকের খোঁজে হেরেমে এলো।

এমন সময় একটা ঘোষণা গোচরীভূত

হলো:

-আমি একটা হার হারিয়েছি।

কোনও দয়ালু ভাই পেয়ে থাকলে,

আল্লাহর ওয়াস্তে ফিরিয়ে দেবেন।

যুবকটা বললেন: আমি এগিয়ে

গেলাম। বললাম:

-আপনার হারটা কেমম, বর্ণনা দিন তো?

.

বর্ণনা মিলে গেলে, হারটা হস্তান্তর করলাম। আশ্চর্য হয়ে গেলাম,

লোকটা হারখানা নিয়ে টু-শব্দও

করলো না। সোজা গটগট করে হেঁটে

চলে গেলো। সামান্য ধন্যবাদ টুকুও না।

আমি আল্লাহর কাছে বললাম:

-ইয়া আল্লাহ! আমি যদি এই সামান্য

কাজটুকু আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই

করে থাকি, আপনি আমার জন্য এর

চেয়েও ভালো প্রতিদান জমা করে রাখুন।

আমীন।

এরপর আমি রুজি-রোজগারের

উদ্দেশ্যে, জাহাজে চড়ে বসলাম।

তাকদীরের এমনই লিখন, জাহাজ

পড়লো ঝড়ের কবলে। পুরো জাহাজ

ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয় গেলো। হাতের

কাছে যে যা পেলো ওটা ধরেই

ভেসে রইলো।

.

আমিও ভাসতে ভাসতে একটা

দ্বীপে গিয়ে উঠলাম। ওখানে

দেখলাম একটা মসজিদ। মন খুশি হয়ে

উঠলো। মসজিদে গিয়ে নামায

আদায় করলাম। আমার তো যাওয়ার

আপাতত কোনও জায়গা নেই। ভবঘুরে।

মসজিদে একটা কুরআন শরীফ পেলাম।

বসে বসে ওটাই তিলাওয়াত করতে

শুরু করলাম।

আমাকে কুরআনখানা পড়তে দেখে

সবাই আমাকে চারপাশ থেকে

ঘিরে ধরলো। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো:

-আপনি কুরআন পড়তে পারেন?

-জ্বী, পারি।

তারা বললো:

-আমাদের কাছে এই কুরআন কারীম

অনেক দিন ধরে পড়ে আছে। আমরা

এটা পড়তে পারি না।

আমরা এটাকে পরম যত্নে রেখে দিয়েছি। এক নাবিকের কাছ থেকেই আমরা এটা কিনেছিলাম।

.

আমাদের এই দ্বীপে, আগে একজন ছিলেন, তিনি এই কুরআন পড়তে পারতেন। ঠিকঠাক করা ছিলো,

তিনিই সবাইকে কুরআন শিক্ষা দিবেন। এরপর তিনি হজ্জে গেলেন।

আর ফিরে আসেন নি। এখন আপনি

আমাদেরকে, আমাদের

সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষা দিন।

আমি দ্বীপের বাচ্চাদেরকে কুরআন

কারীম শিক্ষা দিতে লাগলাম।

তাদেরকে অন্যান্য লেখাপড়াও

শেখাতে থাকলাম।

কিছুদিন পর এলাকার মুরুব্বিরা

বললেন:

-আমাদের এলাকায় একজন ইয়াতীম

মেয়ে আছে। সর্বগুণে গুণান্বিতা।

আপনি কি তাকে বিয়ে করতে

রাজি হবেন?

.

-আমার কোনও আপত্তি নেই।

আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। বাসর

রাতে স্ত্রীর সাথে আমার প্রথম

দেখা। আমি তাকে দেখে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।

দেখলাম তার গলায় মক্কায় কুড়িয়ে

পাওয়া সেই হার ঝুলছে। জানতে

চাইলাম:

-এই হার তোমার কাছে কিভাবে এলো? নববধূ লাজুক মুখে উত্তর দিলো:

.

-আমার আব্বু সেবার হজে গেলেন।

দুর্ভাগ্যক্রমে হারটা হারিয়ে গেলো। কিন্তু এক মহৎ ব্যক্তির বদান্যতায় হারটা ফিরে পেলেন।

আব্বু সব সময় তার জন্য দোয়া করতেন:

আর বলতেন

“ইয়া আল্লাহ! আমার মেয়ের জন্য,

মক্কার এই মহৎ ব্যক্তির মতো এমন একজন

স্বামী মিলিয়ে দিন”

বিষয়: বিবিধ

১০৩৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

317683
০২ মে ২০১৫ রাত ০৪:০৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম! চমৎকার শিক্ষামূলক গল্পটির জন্য শুকরিয়া!

ইনসাফ এবং সততার পুরুষ্কার আল্লাহ এভাবেই উত্তম ভাবেই প্রদান করেন!

শুকরিয়া Good Luck
317725
০২ মে ২০১৫ দুপুর ০১:১৯
egypt12 লিখেছেন : এটা কি গল্প না বাস্তব?
317746
০২ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:১৫
শফিউর রহমান লিখেছেন : হৃদয়গ্রাহী এবং অনুপ্রেরণাদানকারী ঘটনা। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File