বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একদল আদর্শহীন দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন লম্পট তৈরী হবে
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ১১:২৪:৩৪ সকাল
বাংলাদেশ দু’বার স্বাধীনতা লাভ করেছে কিন্তু স্বাধীন দেশের গণমানুষের আদর্শ, বিশ্বাস, চিন্তা, চেতনা অনুযায়ী সর্বজনগ্রাহ্য কোন শিক্ষাণীতি আজ পর্যন্ত প্রণয়নই হয়নি। গণ আন্দোলনের মূখে ইংরেজরা যখন পলায়ণপর তখন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন বলেছিলেন ‘‘ আমার চলে যাচ্ছি তবে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা রেখে যাচ্ছি, যে শিক্ষায় শিক্ষিতরা দেহ কাঠামোতে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তা, চেতনায় এবং আদর্শে হবে সম্পূর্ণ ইউরোপীয়’’ ইংরজেরা চলে গেছে কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত সেই শিক্ষাব্যবস্থাই বর্তমানে চালু রয়েছে। অবশ্য এর মান অনেক কমে গিয়েছে। সেই ব্যবস্থার সাথে জবষরমরড়ঁং ওহংঃৎঁপঃরড়হ এর নামে দ্বীনিয়াতে সংযোগও ইংরেজ অনুকরণ মাত্র। বরং বলা যায় ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর নামমাত্র দ্বিনীয়াত সংযোজন করে যতটুকু নৈতিকতা ও আদর্শ ধরে রাখার চেস্টা করা হয়েছিল বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা মন্ত্রী তাও ঝেটে বিদায় করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম, জসিম উদ্দি, মোতাহার হোসেন, সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ইবরাহীম খার মতো লেখকদের যে সব কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ছিল তা বাদ দিয়ে সংযোজন করা হয়েছে ‘আবোল তাবোল সব কবিতা-গল্প’ অস্টম শ্রেণিতে পাঠ্য করা হয়েছে যৌন শিক্ষা, জাতির অধপতনের জন্য আর বাকী থঅকে কি? পরীক্ষা পাশের জন্য এখন আর পড়তে হয় না, পরীক্ষার আগের রাতে সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রশ্ন সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপরও যারা লিখতে পারছে না, শতভাগ পাশের কৃতিত্ব নেয়ার জন্য সরকারী নির্দেশে তাদের পাশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশ্চাত্য দেশসমূহে দর্শন, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, অংক ইত্যাদি শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে যে প্রকারের দৃষ্টি-ভঙ্গি সৃষ্টি করা হয় এবং জগত ও জীবন সম্বন্ধে যে ধারণা জন্ম লাভ করে, বিশ্বাস ও জ্ঞান সে পথে ধাবিত হয়। আমাদের দেশে এর ব্যক্তিক্রম হওয়ার কোনই কারণ নেই।
বিশাল শিক্ষা বৃক্ষকে যদি ইসলামের জীবন-দর্শন হতে নিরপেক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে সে শিক্ষা-বৃক্ষের কান্ডের সাথে দ্বীনিয়াতের আলাদা কলম ঁেবধে দিলে যে কি পরিণাম হয়, তার অভিজ্ঞতা আমাদের বহুবার হয়েছে। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকালে এই পরিকল্পনায়ই স্থাপন করা হয়েছিল। পাশ্চাত্য জীবন-দর্শনের ভিত্তিতে সবকিছু শিক্ষা দিবার আগে দ্বীনিয়াতের অস্বাভাবিক সংযোগ সেখানেও ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মানুসারেই এরূপ ব্যবস্থা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এক প্রকার জীবের শরীরে অন্য জীবের অংশ বিশেষ জুড়িয়া দিলে যে কি অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহা বেশী ব্যাখ্যা করা নি®প্রয়োজন।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় পার্থিব সকল শাস্ত্র এমনভাবে শিক্ষা দিবার ব্যবস্থা হইতেছে ও বাস্তব ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করে দেখান হয়েছে যে, এ বিশাল বিশ্বের কোন স্রষ্টা নাই। ইহা নিজে নিজেই চলছে এবং সাফল্যের সাথে নিয়মিত ও সুষ্ঠুভাবেই চলছে। সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক বিধান শিক্ষা দেওয়ার ভেতর দিয়া ছাত্রদের মগজে এ ধারণাই জন্মাইতেছে যে, আল¬¬াহ, রাসূল, অহী, কুরআন ইত্যাদি ব্যতীত জগত উন্নতি লাভ করছে। জাগতিক উন্নয়নের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই। আর তাই যারা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সনদ লাভ করছে তারা নিজেদেরকে কেউ ধর্ম নিরপেক্ষ, কেউ, ধর্মহীন, কেউ নাস্তিক, কেউবা একটু আধুনিক শব্দ যোগ করে উদারমণা পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করে। এ কারণেই তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার, থাবা বাবা ওরফে রাজীব হায়দার, আসিফ-এর মতো কুলাঙ্গার তৈরী হচ্ছে। সমগ্র শিক্ষার মাধ্যমে গোটা জীবন ব্যবস্থা সম্বন্ধেই তাহারা স্রষ্টা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী লাভ করতেছে। এমতাবস্থায় তাদেরকে যখন হঠাৎ দ্বীনিয়াত শিক্ষা দেয়া হয় তখন আল¬¬াহ, রাসূল, আখেরাত, অহী ইত্যাদির কথা প্রথম প্রথম তাদেরকে অবাক করে। অতপর এ সকল বিষয় তাদের বিদ্রুপের জিনিস হয়ে দাঁড়ায়।
এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মকে হেয় মনে করা, ধর্মকে অবৈজ্ঞানিক অযৌক্তি ও অপ্রয়োজনীয় বলে বিশ্বাস করা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই ধরনের ব্যবস্থায় বড় জোর ধর্মকে শুধু একটি নিষ্ক্রিয় বিজ্ঞান হিসেবে কিছু লোকের পক্ষে স্বীকার করা সম্ভব হইতে পারে। কিন্তু জীবনকে ইসলামের ভিত্তিতে পরিচালিত করার যোগ্যতা কিছুতেই সৃষ্টি করবে না। এ ধরনের শিক্ষার ফলে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জীবনে ইসলাম মাত্র একটি অপ্রয়োজনীয় পরিশিষ্ট হিসেবে স্থান পাবে।
ইসলাম এমন কোন ধর্মের নাম নয় যে, মানুষকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যাবতীয় কাজ করিবার অনুমতি দিবে, আর সেই সঙ্গে কিছু কর্মহীন বিশ্বাস ও প্রাণহীন অনুষ্ঠানের পরিশিষ্ট জুড়ো দিলেই ইসলাম মানুষের কাছে যা দাবী করে তা পূরণ হয়ে যাবে। কারো গড বা ভগবান হয়তো বা ইহাতে রাজী হইতে পারে যে গীর্জা ও মন্দিরে তাহাকে ডাকলেই সে সন্তুুষ্ট হইবে এবং জীবনের অন্যান্য যাবতীয় ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও কর্মে তাকে ত্যাগ করিলে কোন আপত্তি করবে না। কিন্তু আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি কারো সাথে আপোষ করিতে রাজী নন। এ কারণেই তিনি মুমিনদের “সম্পূর্ণরূপে ইসলামে দাখিল হও” বলে আহ্বন জানিয়েছেন। (সূরা আল বাকারাহ- ২০৮ আয়াত)
আমরা এটাকে অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক মনে করি যে, আল¬ল্লা আছেন বলে মানিব, অথচ তিনি পার্থিব জীবনে আমাদের পথ প্রদর্শক হইবেন না? । যে আল্ল¬¬াহ দুনিয়ায় চলার পথে আমাকে সঠিক হিদায়াত দেন না তাহাকে শুধু মসজিদে মানিয়াই বা লাভ কি? (নাউযুবিল্লাহ)
সুতরাং ইসলাম সম্বন্ধে যে শিক্ষার মাধ্যমে এরূপ ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয় নিশ্চয়ই তা বিশুদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা। এর সাথে দ্বীনিয়াতের শিক্ষাকে জুড়ে দিয়ে ইসলামকেও একটি অনুষ্ঠান সর্বস্ব নির্জীব ধর্মেই পরিণত করা হয়েছে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান অতএব গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা এর আলোকেই সাজাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আরো নতুন উপাদান যোগ করা হয়েছে যার নাম ‘সমাজতন্ত্র’ সমাজতন্ত্র রাশিয়া থেকে বিদায় নিলেও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নাস্তিকতা, চরিত্রহীনতা,লজ্জাহীনতা এবং লাম্পট্য সহকারে ফেরত এসেছে। এ ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থায় একদল ধর্মহীন, আদর্শহীন দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন লম্পট ব্যতীত কিছুই পাওয়া যাবে না।
বিষয়: বিবিধ
১১১২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এভাবে চলতে থাকলে দেশের মুসলমানদের ভবিসষ্যৎ অন্ধকার, তাই এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে এর প্রতিকার করা অবশ্যকীয় কর্তব্য। আল্লাহপাক মুসলমানদের বুঝার ও প্রতিকার করার তাওফীক দান করুক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন