বদরের প্রান্তর মুমিনের প্রেরণার বাতিঘর
লিখেছেন লিখেছেন স্বাধীন কন্ঠ ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০৩:১১:৩৮ রাত
দ্বিতীয় হিজরি ১২ ই রমযান মদিনা রাষ্ট্রের শাসক রাসুল (স.) তিন শতাধিক লড়াকু সৈনিক সাথে নিয়ে ( ৮৬ মোহাজের, ১৭০ খাঁজরাজি এবং ৬১ আওসী - মোট = ৩১৭ জন, যদিও সাধারন ভাবে প্রচলিত সংখ্যা ৩১৩ জন ) বদরের দিকে রওয়ানা হলেন। অপর পক্ষে শত্রুবাহিনীর যোদ্ধা সংখ্যা ছিল এক হাজার । এর মধ্যে ছয় শত ছিল বর্ম পরিহিত ও একশত সাওয়ারি ছিল। তাদের সাথে ছিল অজস্র উট , বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ। এদের মোকাবেলায় তিনশোর কিছু বেশি
সহায় সম্বলহীন লোককে নামিয়ে দেয়া ছিল এক অকল্পনীয় দুঃসাহসিকতা। রাসুল (স.) ভাল করেই জানতেন , তিনি যে মোজাহিদদেরকে তিনজনের মোকাবেলায় একজন অনুপাতে নামাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে নিজ নিজ মতাদর্শের সত্যতা ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে অবিচল আস্থা এবং তারা সাংগঠনিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তায় শ্রেষ্ঠতর । সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্যের উপর ছিল তাদের অখন্ড বিশ্বাস। তাদের মধ্যে এই চেতনা ছড়িয়ে আছে যে , এই যুদ্ধের উপর নির্ভর করছে মদিনা রাষ্ট্র ও ইসলামী আন্দোলন ঠিকে থাকবে না ধ্বংস হয়ে যাবে । এ যুদ্ধে পিতাপুত্র, চাচাভাতিজা, ভাই ভাই , শ্বশুরজামাতা - সবাই রক্তের সম্পর্ককে ভুলে গিয়ে নিজ নিজ জীবনাদর্শের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। এটা ছিল এক সুকঠিন পরীক্ষা। রাসুলের সাহাবীরা এ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রমান করে দিলেন তারা ইসলামী আন্দোলনের সাচ্চা ও নিঃস্বার্থ পতাকাবাহী। ১৭ রমযান বদরের প্রান্তরে বিপুল সংখ্যক কাফেরদের মোকাবেলায় অল্প সংখ্যক ইমানদার মোজাহিদদের এক অসম লড়াই শুরু হল। ইসলামী বাহিনীর ২২ জন বীর যোদ্ধা নিজের আদর্শের জন্য প্রান বিলিয়ে দিয়ে প্রমান করলেন , তারা শ্রেষ্ঠতম সত্যের একনিষ্ঠ সাক্ষী।
অপরদিকে তারা শত্রুর ৭০ জন যোদ্ধাকে হত্ত্যা করলেন , ৭০ জন কে করলেন গৃহ বন্ধী। উতবা , শায়বা, আবু জাহল, আবুল বুসতারি, যাময়া ইবনুল আসয়াদ, আস বিন হিশাম প্রমুখ নামকরা কুরাইশ সর্দার মুসলিম মোজাহিদদের তরবারির গ্রাসে পরিনত হলো।
এই যোদ্ধে পরাজিত হয়ে কুরাইশ কাফেরদের শক্তির দম্ব চূর্ণ হয়ে গেল আর ইসলামী আন্দোলন সহসা মাথা উচু করে ভবিষ্যতের নতুন জগতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপের যোগ্যতা অর্জন করলো।
ধীরে ধীরে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল সত্যের আলো আর দূরীভূত হতে লাগলো গাঢ় আমানিশার আন্ধকার। তাইতো আল কুরআনে এই যুদ্ধ কে বলা হয়েছে ' ইয়াওমুল ফুরকান' বা হক ও বাতিলের বাছাইয়ের কৃষ্টি পাথর ।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ' স্মরণ কর ঐ সময়টাকে , যখন তোমরা সংখ্যায় ছিলে খুবই কম। পৃথিবীতে তোমাদের দুর্বল মনে করা হতো এবং তোমরা শঙ্কিত থাকতে যে, লোকেরা তোমাদের নিশ্চহ্ন করে দিতে পারে। তার পর আল্লাহ তোমাদের আশ্রয় যোগাড় করে দিলেন, নিজের সাহায্য দ্ধারা তোমাদেরকে সবল করলেন এবং তোমাদের উত্তম জীবিকা দিলেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর' ( সুরা-আনফাল-২৬)।
আজও চলছে তারই ধারাবাহিকতা । এখনো আবু জাহেলের উত্তরসুরীরা আঘাত পর আঘাত হানছে ইসলামী রেনেসাঁর কর্মীদের উপর। বিশাল শক্তি সামর্থ্য নিয়ে ক্রমাগত চেষ্ঠা চালিয় যাচ্ছে সত্যের ঠুঠি চেপে ধরতে। কিন্তু বদরের চেতনায় অল্প সংখ্যক ঈমানদার যখন আল্লাহর উপর ভরসা রেখে দাড়িয়ে যায় সাহসের সাথে তখন মিথ্যার দজ্জাধারিরা পালিয়ে যাবার পথ খুজে পায় না।
আর এবাবেই ঠিকে আছে সত্য , ঠিকে থাকবে অনাধিকাল পর্যন্ত।
কুরআন - হাদিসের প্রকৃত শিক্ষাকে আকড়ে ধরে ধৈয্য ও সাহসিকতার সাথে পথ চলা নিশ্চিত করতে পারলেই, সকল জড়বাদী জঞ্জাল দূরীভূত হয়ে গড়ে উঠবে তাওহীদের সুউচ্চ মিনার। যেখান থেকে কেবল মাত্র ধ্বনিত হবে আল্লাহু আকবার , যে আওয়াজ শুনে মানুষের শরীর থেকে খসে পড়বে শয়তানের লেবাস। ভেঙ্গে পড়বে গৌড় গোবিন্দের মজবুত ইমারত।
বিষয়: বিবিধ
১৭৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন