দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশে (৪র্থ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৫৮:২২ সন্ধ্যা



বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত বলে মাধবকুন্ডকে মনে করা হয়। মাধবকুন্ডের সুউচ্চ পাহাড় শৃঙ্গ থেকে এই জলপ্রপাতের শুভ্র স্ফটিক জলরাশি প্রায় ৮৫ মিটার/১৬২ ফুট উচু হতে পাথরের খাড়া পাড় বেয়ে শোঁ শোঁ শব্দ করে জলধারা নিচে আছড়ে পড়ছে। নিচে বিছানো সারি সারি পাথরের আঘাতে জলকনাগুলো মনের সুখে বাতাসে উড়ে উড়ে তৈরি করছে মোহময় শীতল কুয়াশা। এমনিতেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে প্রকৃতির সিক্ত আবহাওয়া উপভোগ করছিলাম। তার উপর সে জলকনার হিম আবহে শীতল মাতাল হাওয়ায় ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছিলাম।

জলরাশি নির্গত কুন্ডের ডান দিকে রয়েছে বিশাল গুহা। তবে কাটা তারের বেড়া মাড়িয়ে গুহার ভেতর প্রবেশ করে নতুন আমেজ নেয়া সম্ভব হলো না। ছড়া থেকে নেমে আসার পর জমে যাওয়া পানি অত্যন্ত নোংড়া তাই গোসল করতে নামলাম না।

পাশের মাধবেশ্বর মন্দিরের পুরোহিতের সংগে গল্প করে জেনে নিলাম পরীকুন্ডের রাস্তা। পরীকুন্ড কিছুটা দুরে বনের গভীরে অবস্থিত। ঝিরি পথে রাস্তা বেশ পিচ্ছিল ও রোমাঞ্চকর। অনেকটা বেয়ার গ্রিলস এর মত চ্যালেঞ্জিং অনুভুতি হয়। ছিমছাম নিস্তব্ধতায় জলের তোড়ে মেতে আছে পাহাড়ী ঝিরি। হরতালের জন্য কোন পর্যটক নেই, কেবল ঝুকি নিয়ে আসা আমরা তিনজন। নির্জন অচেনা পথ আর দুর থেকে বইয়ে আসা পাহাড়ী দুই জলকন্যা মাধবকুন্ড ও পরীকুন্ডের খিলখিল হাসি। কিছুটা ভয়ভয় করতে লাগল। মনে পড়ে গেল একদিন সবাইকে একা একা পাড়ি দিতে হবে অচেনা ওপারের সমুদ্র। সবাই একমুঠি করে মাটি দেবে আর বলবে . .

. .এই মাটি থেকে তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল

এই মাটিতেই তোমার প্রত্যাবর্তন . .

. . এবং এই মাটি থেকেই তোমার পুনরুত্থান করা হবে . .

''মিনহা খালাকনাকুম

ওয়া ফিহা নুইদুকুম

ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা।''

. . শিশির ভেজা খুব ভোরে

এই আরক্ত লাশকে

ধবধবে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে নিও;

চুপিচুপি লাল মাটির গহীনে ফেলে এস ,

ছোট্ট বকুলের ভাংগা একটা ডাল পুতে শুধু,

আর কিছু নয়;

অরণ্যের শ্বাপদ হোক বা কোন বিষাক্ত ভুজংগের পাশে ,

অজস্র পাহাড়ী ঢালে কিংবা স্রোতস্বিনীর

তটে হোক;

কি আসে যায়?

আমাকে তরুনের মত মৃত্যু দিও,

নেভানো মোমের মত নিকষ আঁধারে নয়,

চাঁপা কথার পাথর জমা বিষন্ন

বুকে সেই মোচড়ানো পুরনো কাগজের

ফিকে ধ্বনিতে নয় ;

নয় কোন অমাবশ্যার কুচকুচে কাল

বলিরেখার ভীড়ে,

কাক ও কোকিলের বিরক্ত শেষ বেলায় অথবা;

ভীরু কাপুরুষের অমরতায় বার্ধক্যের

বটবৃক্ষ হয়ে নয়;

কেবল টগবগে রক্তধারার মত অবিচল

তারুণ্যে,

শেষ নিঃশ্বাস নিতে দিও।

(মৃত্যু /১৬.০৮.১৪)

বিষয়: বিবিধ

১৭৪৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

275709
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:১৬
ফেরারী মন লিখেছেন : বাহ ভ্রমণ কাহিনীর শেষে কবিতা। সুন্দর হয়েছে। চালাতে থাকুন।
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৪০
219685
তরিকুল হাসান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। চলবে ইনশাআল্লাহ।
275711
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:২৫
সায়েম আহমেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৪১
219687
তরিকুল হাসান লিখেছেন : Good Luck Good Luck ধন্যবাদ।
275788
১৮ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
ঝিড়ি পথে হাটতে আসলেই খুব মজা। তবে নিরাপত্তার জন্য হাতে লাঠি রাখা ভাল। মাধব কুন্ডে জলপ্রপাত এর নিচের দিকে নামা নিষিদ্ধ তবুও অনেকে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং মৃত্য পর্যন্ত হয়। উপর থেকে পানি শান্ত মনে হলেও পানির নিচে বড়বড় পাথর থাকায় প্রচুর ঘুর্নি ও গোপন স্রোত থাকে সেখানে। যার টানে মানুষ ডুবে যায় এবং পাথরে বাড়ি খেয়ে মৃত্যুবরন করে।
১৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:৫৭
219730
তরিকুল হাসান লিখেছেন : আপনি একদম ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ।Good Luck
275932
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে ...
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৫
220496
তরিকুল হাসান লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ । অনেক ধন্যবাদ ।
275989
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৯
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আমি ঐ জেলার মানুষ হবার পরও আজও আপনার মত করে দেখা হয়নি। আপনাকে ধন্যবাদ। এবার যাবার নিয়ত করছি।
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৭
220497
তরিকুল হাসান লিখেছেন : দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া । অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File