শাপলায় ‘গণহত্যা’ হয়েছে কোনো সন্দেহ নেই: আল্লামা শফী

লিখেছেন লিখেছেন আলোর দিশা ১৪ জুন, ২০১৩, ১০:২২:১৩ সকাল

চট্টগ্রাম: হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ৫ মে রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরে বুলেটের আঘাতে শহীদ হওয়া আলেম-ওলামার সংখ্যা যাই হোক না কেন, সেটা যে গণহত্যা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তিনি দাবি করেন, কেবলমাত্র স্বাধীনতার আগে পাক হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চের কালরাত্রে এমন বর্বর নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আল্লামা শফী একথা বলেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫ ও ৬ মে দেশে এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল, নির্বিচারে ঘুমন্ত, ক্লান্ত ও যিকিররত লাখ লাখ অভুক্ত আলেম-ওলামার ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষকে হতাহত করা হলো অথচ সরকার এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। উল্টো সরকার হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীসহ হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার করে, অসংখ্য মামলা দায়ের করে পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে।

হেফাজত আমির বলেন, সুস্থ অবস্থায় আল্লামা বাবুনগরীকে গ্রেপ্তারের পর ২২ দিন রিমান্ডে নিয়ে গুরুতর অসুস্থ করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে মুক্তি দেয়া হলেও তিনি এখনো গুরুতর অসুস্থ।

তিনি বলেন, এত বড় ঘটনার পর ওলামায়ে কেরাম ও হেফাজতকর্মীরা প্রতিশোধমূলক কোন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখে চরম ধৈর্যধারণ করলেও এখনো দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, সেদিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে তেমন কিছুই ঘটেনি এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকার হেফাজতের আন্দোলন দমন করে ফেলেছে, হেফাজতের ১৩ দফা দাবিও চাপা পড়ে গেছে।

আল্লামা শফী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেদিন শাপলা চত্বরে সরকার হেফাজতকে সরিয়ে দেয়ার নামে রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে যে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজার হাজার র্যা ব, বিজিবি ও পুলিশ নিয়ে যে বর্বর অভিযান চালিয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে আর কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। সেই রাতে বুলেটের আঘাতে শহীদ হওয়া আলেম ওলামার সংখ্যা যাই হোক না কেন, সেটা যে গণহত্যা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেবলমাত্র স্বাধীনতার আগে পাক হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চের কালরাত্রে এমন বর্বর নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল। এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে না, একটি গণতান্ত্রিক সরকারের একটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক অমানবিক নৃশংসতার দলিল হয়ে থাকবে।’

তিনি বলেন, এর দায় ও খেসারত বর্তমান ক্ষমতাসীনদের এখন থেকে যুগ যুগ ধরে বহন করতে হবে। আর সরকার নিরীহ লাখ লাখ আলেম-ওলামাকে অস্ত্রের মুখে হটিয়ে, মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে হেফাজতে ইসলামকে দমন করে ফেলতে পেরেছে মনে করলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আলেমরা যে ১৩ দফার জন্য রক্ত দিয়েছে, এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না, ইনশাল্লাহ।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে বলেও জানান আল্লামা শফী। বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমাদের এদেশে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনেই পূরণ হবে। কারণ হেফাজতের এই দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে এদেশের কোটি কোটি মানুষের।

তিনি বলেন, দেড় লক্ষাধিক বুলেট ব্যবহার করে কী নির্দয়ভাবে ৫ মে মধ্যরাতে হেফাজত কর্মী ও আলেম-ওলামাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। ওই রাতে কত আলেম-ওলামার প্রাণসংহার হয়েছে, কতজন শহীদ হয়েছেন, তা নিয়ে শুধু দেশবাসী নয়, পুরো বিশ্বই আজ উদ্বিগ্ন।

হেফাজত আমির বলেন, এক মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে এখনো পর্যন্ত কোনো বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। এটা চরম উদ্বেগ ও হতাশাজনক।

তিনি বলেন, ৫ ও ৬ মে নিয়ে শুধু হেফাজতে ইসলাম বা দেশের জনসাধারণ নয়, জাতিসংঘ, অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বও চরম উদ্বিগ্ন। তারাও জানতে চায়, সেদিন রাতে কী ঘটেছিল এবং কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

হেফাজত আমির বলেন, এত বড় ভয়াবহ ঘটনার পর একটা স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের নীরব ভূমিকা মানা যায় না। নাগরকিদের জান-মাল ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অথচ রাষ্ট্রই প্রতিবাদী নিরপরাধ জনগণকে শত্রু বিবেচনা করে সরাসরি গুলিবর্ষণ করে হত্যা করছে।

তিনি সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা নিজেদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার বলে দাবি করে থাকেন। ৫ ও ৬ মে গণতন্ত্রের কোনো ধারা প্রয়োগ করে নিরপরাধ নাগরিককে গণহত্যার শিকার করলেন? মুখে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের কথা বলবেন অথচ কাউকে কথা বলতে দিবেন না, লিখতে দিবেন না, প্রতিবাদ করতে দিবেন না, এভাবে কত দিন জনগণকে দাবিয়ে রাখবেন?’

বিবৃতিতে আল্লামা শফী বলেন, সরকারকেই বলতে হবে, সেদিন রাতে কতজন মানুষকে তারা হতাহত করেছে, কারা পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছে, সড়কের গাছ কেটেছে এবং লুটপাট চালিয়েছে। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই রাতে দেড় লাখের উপর গুলি খরচ করেছে। সরকার এর প্রতিবাদ করেনি। এই বিপুল গুলির লক্ষ্যবস্তু কী ছিল, তা জানানোর দায়িত্ব সরকারের।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের হাজার হাজার ক্বওমী মাদ্রাসায় সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ওলামায়ে-কেরাম বর্তমানে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সর্বস্তরের ওলামায়ে-কেরামের মতামত নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।

হেফাজতে ইসলাম শেষ হয়ে গেছে বা স্তিমিত হয়ে পড়েছে, এটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বিদা, দেশ ও জাতির যেকোনো দুর্দিনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে কখনো পিছপা হবে না বলেও দাবি করেন হেফাজতে ইসলামের এই আমির।

তিনি হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার করে নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আরটিএনএন

বিষয়: বিবিধ

১১১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File