আর করবি বিয়া ? ( একান্ত অনুভূতি )

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারর ২৬ জুলাই, ২০১৫, ০৪:৩৫:১৪ বিকাল



বিবাহিত মানুষের জীবন হছ্ছে শৃংখলিত জীবন । এমন এক অবস্থা ঠিক যেন দিল্লিকা লাড্ডু খাইলেও পস্তাইতে হয় না খাইলেও পস্তাইতে হয় । তাই এখানে বিবাহিতরা বলে না খাইয়াই পস্তানো ভাল আর অবিবাহিতরা পস্তাইলে খাইয়াই পস্তামু ।

গায়ক হায়দারের গানটা মনে পড়ে গেল।

আমি ফাইস্যা গেছি, আমি ফাইস্যা গেছি

আমি ফাইস্যা গেছি মাইনকার চিপায়

আমারও দিলের চোট বোঝে না কোন হালায়

আমি ফাইস্যা গেছি, আমি ফাইস্যা গেছি

আমি ফাইস্যা গেছি মাইনকার চিপায়।

কোন পাগলে পাইছিলো করছি সখের শাদী

খোমা তার যেমন তেমন ভাবে সাহজাদী

সকাল বিকাল রাইত দুপুর বউয়ে দেয় ঠ্যালা

কয় বউ পোষার মুরদ নাই তয় বিয়া করছস ক্যালা

আমি ইধারকা মাল উধার করি, সারাদিন পেজগি মারি

দিনের বেলায় আড়তদারি রাইতে চোরাকারবারী

দ্বীন-দুনিয়া সবই গেল জীবন ভেস্তে যায়

মাইয়া আমার চিজ একখান যেমন ফিলিমের নায়িকা

মাধুরী ঐশ্বরিয়া কাজলরে কয় অফ যা

পোলা আমার শিক্ষিত পড়ে দশ কেলাসের উপরে

হাত খরচা না দিলে ইংলিসে গাইল পাড়ে

মনে মনে কই আমি গাইলের আর হুনচচ কি

আমাগো গাইল হুনলে পরে খাড়াইবো মুরদা ভি

আমি হালায় কলুর বলদ খাইট্যা জীবন যায়

https://www.youtube.com/watch?v=V-92Ugnjdtg

আমার এক বন্ধু। সে বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী । ও আমার অনেক আগেই বিয়ে করেছিল । একরাতে আমি ওদের বাসায় ছিলাম । তখন রাত তিনটা হঠাৎ ও আমাকে ঘুম হতে ডেকে তুলল । আমি বললামঃ কি ব্যাপার এত রাতে ?

ও বললঃ মেডিক্যালের সামনে যেতে হবে ?

ঃকেন ?

ঃ তোর ভাবীর পেটে ব্যাথা। ঔষধ আনতে হবে ।

আমি আর কিছু না বলে কাপড় পড়ে হন্তদন্ত হয়েে ওর সাথে বের হলাম ।

রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে ও বার বার বলছিল আর করবি বিয়া ? আর করবি বিয়া ? আর করবি বিয়া ?

আমি ওর কথা শুনে আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । কারন ও বার বার যে কথা বলছে তা কোন বিবাহিত লোককে বলছে, কিন্তু এখানে আমরা মাত্র দুইজন । তার উপর আমি অবিবাহিত তাই ও কাকে বলছে এটা প্রশ্ন করতেই ও বললঃ চুপ কর শালা আমি আমাকেই বলছি । দেখছতাসনা এই শীতের রাইতে ঘুমের তেরটা বাজাইয়া বউয়ের ঔষধ আনার লাইগা দোকানে যাইতে হইতাছে ।

এক মৃত্যু পথযাত্রী পিতা মৃত্যু শয্যায় তার সব সন্তানকে ডাকল । সব সন্তান এল । পিতা সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বললঃ দেখ আমি মৃত্যু পথ যাত্রী । আর কিছুক্ষন পরে তোমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নেব। তোমাদের উদ্দেশে আমার শেষ অছিয়ত করার জন্য তোমাদের ডেকেছি । আমার বাবাও আমাকে এই অছিয়ত করেছিলেন। উনাকেও উনার বাবা করেছিলেন। মৃত্যু পথযাত্রী পিতার শেষ আছিয়ত শোনার জন্য সন্তানরা সবাই বাবার আরো কাছাকাছি হল। বাবা বললঃ আমার বাবা আমাকে বলেছিলঃ বাবা জীবনে যাই করিস না কেন কখনও বিয়ে করিস না । তাই আমিও তোমাদের বলছি জীবনে যাই কর কখনও বিয়ে কর না ।

বাবার শেষ অছিয়ত শুনে সন্তানরা সবাই সমস্বরে বললঃ ঠিক আছে বাবা আমরাও মৃত্যুর সময় আমাদের সন্তানদের এই অছিয়তই করে যাব।

আমার পিঠাপিঠি ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল ২০০৫ সালে । আমরা চট্টগ্রাম শহরে থাকি । ওর শ্বশুর বাড়ি

সাতকানিয়া । বউ আনতে আমাদের সাতকানিয়া যেতে হবে । ওখানকার বিখ্যাত “মনটানা” ক্লাবে বিয়ে হবে। বর যাত্রী ছিল প্রায় সাড়ে তিনশত । বেশির ভাগই গ্রামের আত্মিয় স্বজন ওরা ওখান থেকে বিয়ের ক্লাবে যাবে। শহর থেকে দেড়শর মত বর যাত্রী যাবে. তাই আমরা একটা বাস , দুইটা মাইক্রো ও দুইটা কার নিয়ে শুক্রুবার দিন সকাল এগারটায় রওয়ানা দিলাম । আমরা যখন নতুন ব্রিজের পর ক্রসীং পার হছ্ছিলাম তখন জুমার নামাযের সময় হল । রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে আমরা বরযাত্রী সবাই নামায পড়ে নিলাম । নামায পড়ার যখন গাড়ি ছাড়ল তখন দেখলাম আমাদের বড় যাত্রীর গাড়ির সংখ্যা আরও কয়েকটা বেড়ে গেছে । আমরা ভাবলাম হয়ত অন্য কোন বিয়ের বর যাত্রীও আমাদের সাথে আপাতত মিশে গেছে পরে হয়ত আলাদা হয়ে যাবে । কিন্তু আমরা দেখলাম ওরা আমাদের থেকে আলাদাত হলই না, বরং আমাদের সাথেই আমাদের ক্লাবে গাড়ি নিয়ে ঢুকল । গাড়ি গুলো বিয়ের ক্লাবে ঢোকার পর অচেনা বর যাত্রীরা বের হয়ে খাওয়ার টেবিলের দিকে না যেয়ে ক্লাব থেকে বের হয়ে গেল । আমরা ব্যাপারটা দেখে অবাক হলেও বিয়ের ঝামেলায় পরক্ষনেই ভুলে গেলাম । বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান শেষ করে শহরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল।

পরদিন সকালে পেপার হাতে নিয়ে দেখি গতকাল সাতকানিয়ার দুধর্ষ সন্ত্রাসী আহম্মদ প্রকাশ আহম্মইদ্দা র্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত । বিস্তারিত পড়ে অবাক হয়ে গেলাম। কারন র্যাবের সদস্যরা আমাদের বিয়ের গাড়ি বহরের সাথে বরযাত্রীর বেশে সাতকানিয়া প্রবেশ করেছিল।

তখন বুঝতে পারলাম আমাদের সাথে আসা সেই রহস্যময় যাত্রীরা ছিলেন র্যাবের সদস্য । উনারা এই অপারেশন করার জন্য আমদের অজান্তেই আমাদের বিয়ের ব্যাপারে যাবতীয় খোজ খবর নিয়েছেন অনেক আগে থেকে । আমি তখন ভাবলাম গতকাল এই দিনে একজন নারী তার জীবন সংগীর সাথে নতুন জীবন শুরু করেছে আবার এই বিয়ের আড়ালে আরেক নারী তার সন্তান হারাল । কি বিচিত্র এই পৃথিবী !!

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

331710
২৬ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:০৩
নাবিক লিখেছেন : বিয়া করুম
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:২৮
274300
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ।
ঘটক লাগান । বিয়ার দাওয়াতটা যেন পাই ।
331711
২৬ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:১১
আহমদ মুসা লিখেছেন : কারো কাছে বিষয়টা রহস্যজনক মনে হলেও আমার কাছে খুবই হৃদয়বিদারক মনে হয়েছে ঘটনাটি। এই ঘটনাটি প্রথমে আপনার মুখেই সরাসরি শুনেছিলাম। আজ ব্লগে লিখিতভাবেই পড়লাম।
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:২৯
274301
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। ভাল আছেন ? রহস্যজনক মনে হলেও ঘটনাটি সত্যি ।
331724
২৬ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আর করিবার চিন্তাও কেউ করিবেন না!!
331729
২৬ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৩
মু নূরনবী লিখেছেন : হাহাহা..বেশ মজা পেলাম...

তয় ভাইরে...এইটা খাইলৌ পস্তায়, না খাইলৌ পস্তায়...সো..না খাইয়্যা পস্তামু ক্যালা?
331807
২৬ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:১৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : চমৎকার উপদেশ, রঙ্গে ভরা দুনিয়া। ধন্যবাদ
331839
২৬ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:৪৭
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : কয় কি বিয়ে করবে নাহ্!
বিয়ে করলেই একটি জীবনের পূর্ণতা বিয়ে না করলে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া কঠিন।

আর বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়ায় নির্বোধরা!!

331846
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ১২:২৫
আফরা লিখেছেন : আপনার বন্দুর কাহীনিটা মনে আগে ও একবার লিখেছিলেন ভাইয়া ।ভাল লাগল ধন্যবাদ ভাইয়া ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File