কোথায়, কিভাবে, কেন আমরা প্রতারিত হইঃ স্বরূপ উন্মোচনের ব্যার্থ চেষ্টা - ১
লিখেছেন লিখেছেন সাদাচোখে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৪১:৪৫ সকাল
বিস্মিল্লাহির রহমানুর রাহিম।
আস্সালামুআলাইকুম।
আমার সাথে ইন্টার-এ্যাকশান হয় এমন ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও আমার জানা-শোনা আলেম ওলামাদের বেশির ভাগ (সবাই নয়), কোন এক অদ্ভুত কারনে ইসলামের দোহাই দিয়ে আমাকে বোঝায়, বোঝাতে চায় যে, দুনিয়াটা হেলা ফেলার বিষয় নয়। দুনিয়ার মান-মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা ফেলনার বস্তু নয়। ওনারা আমাকে মূলতঃ যেটা বোঝাতে চায় সম্ভাব্য অর্জনযোগ্য দুনিয়াবী ধন দৌলত, মান-সন্মান, চাওয়া-পাওয়াকে ইগনোর করা অনৈসলামিক (এই শব্দটা ঠিক ব্যবহার করেনা - সিম্পলী মিন করে)।
শিক্ষা, বুদ্ধি, সুবিধাজনক পজিশান ইত্যাদির কারনে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাকে পায়ে ঠেলে দেওয়া দুনিয়াবী সেন্স এ বোকামি, আহম্মকি, পাগলামী এবং ইসলামী সেন্স এ মুসলমানের শৌর্যবির্য, অহংকার, দৃষ্টান্ত ইত্যাদি সৃষ্টি না করায় একধরনের ইসলামের অ-খেদমত। উদাহরন দিতে গিয়ে বলেন ইয়াহুদীখৃষ্টানরা যেখানে ম্যাকডোনাল্ডস্, কোকাকোলা, সিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড, নোবেল লরেট ইত্যাদি অর্জন করে দুনিয়ার বুকে মাথা উচু করে আছে সেখানে মুসলমান হয়ে অমন অনীহা দেখানোটা ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, বৈশ্বিক, অর্থনৈতিক, ডিপ্লোম্যাটিক ইত্যাদি ইত্যাদি সব সেন্স এ - ই - ইসলামের নিশানা দুনিয়ায় উড়ানোর বিরোধী। মুসলমান হিসাবে নিজের এবং আশে পাশের মুসলমানদের মধ্যে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার চেষ্টা না করা, সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে কাজ না করা - একজন মুসলমানের জন্য ইসলামিক সেন্স এ ইসলামের ক্ষতি করার শামিল।
অন্যদিকে আমার নফস্ তো এমনিতেই এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে দুনিয়াকে পাওয়ার জন্য, দুনিয়াতে নিজের নাম, নিজের পরিবার পরিজনের নাম, সমাজের নাম, রাষ্ট্রের নাম এবং বিশ্বে নিজের ধর্মের ঝান্ডা উড়াবার খেয়ালে। আমার বন্ধুবেশী চিরশত্রু শয়তান ও তার ওয়াসা-ওয়াসা প্রদান করতে কখনোই কার্পন্য করে না দুনিয়ামুখী কোন কিছু করতে দিতে, ঐ কাজে রাত বিরাত এ বের হতে দিতে কোন বাঁধা নেই, দিনে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে দিতে ও না নেই। সুযোগ-সুবিধা দেখা মাত্রই তা পেতে / চেষ্টা করতে প্ররোচিত করে। অনেকটা ক্ষুধার্থ মাছের 'বর্শী দেখা মাত্র' গিলতে যাওয়ার মত। দুনিয়ার নাম, যশঃ, খ্যাতি, টাকা পয়সা, ধন দৌলত, বাড়ি, গাড়ী - সম্ভাবনা দেখলেই চোখ চিক্ চিক্ করে উঠে, মন স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়, মোহে কাতর হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা আল্লাহ সূরা কাহাফের ৭ নং আয়াতে বলেছেন, ''নিশ্চয়ই, আমরা দুনিয়ায় বিস্তৃত বিষয়াদিকে (বড় বেশী) মোহনীয় (আকর্ষনীয়) করেছি ------''।
আমার জানাশোনা অনুযায়ী তথাকথিত আখেরাতমূখী তথাকথিত বোকা মুমিন-মুসলমান বাদে আর সব মানুষই বিভিন্ন লেভেল এ কম বেশী নিজের কিংবা সমাজের কিংবা রাষ্ট্রের কিংবা উম্মাহর 'দুনিয়ার সাকসেস' নিশ্চিত করার কিংবা পাবার নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন এবং অহর্নিশ কোরান ও হাদীসকে বিভিন্নভাবে জোড়া তালি দিয়ে কোট আনকোট করছেন, ব্যাখ্যা বিশ্লেষন দাঁড় করছেন এবং অপরকে প্ররোচিত করছেন।
এ নিমিত্তে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় সূরা জুমাহ্ র ১০ নং আয়াত। যেখানে আল্লাহ বলছেন, 'যখন সালাহ শেষ হয়, ভূখন্ডে ছড়িয়ে পড়, এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর, এবং আল্লাহকে যতবেশী পার - স্মরন কর, যে কারনে - হয়তো তুমি সাফল্যমন্ডিত হবে'।
কিন্তু এ আয়াতের আগের ও পরের আয়াত দুটিকে এক করে পড়লে ও তার মধ্যস্থিত ইংগিত গুলো নিয়ে ভাবনা চিন্তা করলে - দুনিয়ায় পাবার নিমিত্তে পরিচালিত প্রচেষ্টা কেন্দ্রিক যুক্তিটি আদৌ টেকে না। বরং উল্টো আল্লাহতে ডিফেন্ডেন্সী, আল্লাহর ধর্ম প্রচার, আদেশ নিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি ও আখেরাত মুখী হওয়া, বেশী বেশী ইবাদত বন্দেগী করা ইত্যাদি মূখ্য হয়, দুনিয়া নয়। দূর্ভাগ্যক্রমে এই আয়াত এর পাশাপাশি সংলগ্ন আয়াতের উদ্ধৃতি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষন প্যারালালী প্রচার প্রফাগেশান হয় না, যা কতটুকু হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় বড় বেশী অপ্রতুল, ঋনাত্মক। স্বভাবতঃই আমরা অর্ডিনারী মানুষ জন গোঁ ধরে দুনিয়ার পেছনে দৌড়ে মরি, মরতে থাকি। দুনিয়াকে পেতের ৮ ঘন্টা জব করি, কেউ কেউ একটার উপর দুটো জব করি, সাইড বিজনেস করি, স্পোর্টস করি, জগিং করি, আড্ডাবাজি করি, লিখালিখি করি, বিভিন্ন সংগঠনের পজিশান হোল্ড করি, আরো কত কি।
এই অবস্থায় আমার পরিচিত জনরা কেউ কেউ ইব্রাহীম ও ইসমাইল আঃ এর ঐতিহাসিক দোয়াটির অবতারনা ও করেন। জানতে চান আল্লাহ কেন এই দোয়াটি আমাদের শিখিয়েছেন, 'রাব্বানা আ'তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাওঁ ওয়াকেনা আজাবান নার।
তাহলে দুনিয়াতে হাসানা - চাওয়াতে অন্যায় কোথায়? আপনাকে তো চুরি করতে, ঘুষ করতে বলা হচ্ছে না। আপনি আপনার মেধা ও যোগ্যতা, আপনার পড়ালিখা ও ক্যাপাসিটির (কেউ বলতে চায়না আসলে এ সব এর একটাও আমার না - সবই আল্লাহর দেয়া আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার করার জন্য) ব্যবহার করবেন আর তাতে আল্লাহ আপনাকে ধন দৌলত দেবেন, আপনাকে ঐশ্বর্য দেবেন, আপনার শিল্পকারখানা হবে, মানুষজন তাতে কাজ কর্ম করবে, জাকাত দেবেন তাতে গরীবি হটবে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দান করবেন - মানুষ ব্যাপক ভাবে উপকৃত হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনি যদি তখন বলতে চান এই দুনিয়ার হাসানা মানে আমার ভোগ বিলাস, আমার সমাজের উন্নতি চাকরি বাকরি সৃষ্টি নয় বরং এই হাসানা মানে এমন সব কিছু (আলী রাঃ এর মতে নেককার স্ত্রী, অন্য এক স্কলারের মতে উপাশনার উপযোগী স্বাস্থ্য ইত্যাদি) যার মাধ্যমে আমার আখেরাত নিরাপদ হবে, সমৃদ্ধ হবে।
যদি বলেন এই দুনিয়ার ভিতরে যা কিছু কাজ কর্ম একজন মুসলমান করবে তাতেও আখেরাতই মূখ্য, দুনিয়া নয়। দুনিয়া মূখ্য হতেই পারেনা - যেখানে রাসুল সঃ বলছেন এটা সিম্পলী বড় জোর একটা ট্রানজিট সমতুল্য। বলেছেন এটায় আমরা মুসাফির। বলেছেন (আমার ভাষায়) গরীবরা বেহেস্তে অধিকসংখ্যক হবে, বলেছেন যত কম সম্পদ তত তাড়াতাড়ি বেহেস্তে যাওয়া যাবে, বলেছেন সর্বোচ্চ একটা উটের সমান সম্পদের লিমিটেশান এর কথা, বলেছেন ধনী আবদুর রহমান ইবনে আউফ যিনি একজন 'বদরী (দ্যা বেস্ট অব মোহাম্মদস্ উম্মাহ' তিনি বেহেস্তে ক্রল করে (লিটারেলী হামাগুড়ি দিয়ে) বেহেস্তে প্রবেশ করবেন, ধনী ওসমান রাঃ যেখানে রাসুলের সঃ এর কাছে দোয়া চেয়েছেন গরীব হবার প্রত্যাশায়, আবু দার গিফারী রাঃ যেখানে কাফনের কাপড়ের অভাব নিয়ে ছিলেন, ওমর রাঃ যেখানে অর্ধ পৃথিবীর খলিফা মৃত্যু শয্যায় ঋনী ছিলেন, যেখানে আল্লাহর রাসুল সঃ কপর্দকশূন্য হয়ে মারা গেছেন, যেখানে আল্লাহর ঘোষনা মতে পৃথিবীর জীবনটা লিটারেলী এক মূহুর্ত মাত্র - সেখানে কেন আমরা এ পৃথিবীতে আমাদের সাকসেস চাইবো? কেন আমরা রাসুল সঃ এর অনুসারী হিসাবে দাওয়াত /তাবলীগ এ ব্রত হব না? কেন আমাদেরকে খৃষ্টান-ইয়াহুদীর ন্যায় টাকা পয়সায় যশকৃতিতে যেতেই হবে? বরং কেন আমরা তাদেরকে দোযখ থেকে বাঁচাতে কাজ করবো না - যা রাসুল করেছেন, সাহাবীরা করেছেন।
না তাতে কাজ হয় না। কেউ বুঝতে চায় না আল্লাহ সূরা কাহাফের ৭ নং আয়াতের শেষাংশটুকুতে যখন পরিষ্কার করে বলেছেন ও, ''---------- এই জন্য যে, তাদের মধ্যে কে (সৎ) কর্মে সেরা, আমরা তা পরীক্ষা করতে পারি''।
ব্যক্তি পরিসরে আমরা যেমন ব্যক্তি ইস্যুসমূহ নিয়ে এমন কোরান হাদীস ও আর্গুমেন্ট এর ডামাঢোলের টেম্পটেশান এ পড়ছি, কনফিউজড হচ্ছি, প্রায়োরিটি সেট করতে হিমসিম খাচ্ছি - মেক্রো ইস্যুতেও প্রায় অনুরূপভাবে কনফিউজড হয়ে আছি, টেম্পটেশান এ ভুগছি, প্রায়োরিটি সেট করতে পারছি না, উদ্ভট সব টার্গেট ও স্বপ্ন সেট করেছি - যা অবাস্তব, বাস্তবতা বিবর্জিত এবং যার কারনে উম্মাহ বানের স্রোতের ন্যায় ভেসে যাচ্ছে, ঈমান হারা হচ্ছে, শির্ক, বেদাত এ জড়াচ্ছে, মারামারি খুনোখুনি ও ঘেন্নার ছড়াছড়ি বাড়ছে - কি না হচ্ছে, কি হতে আসলে বাকি আছে - এটাই বরং প্রশ্ন?
Part - 2
বিষয়: বিবিধ
১২৬৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/detail/5064/dishaastha/73048#.VoWotlK8psY
মন্তব্য করতে লগইন করুন