রোজা সম্পর্কে ব্লগার কেমানিক এর লেখার জবাব
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৪:০৬:১৪ বিকাল
ভাই কেমানিক, আপনি আসলে কোন পক্ষের লোক বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। তবে আপনার লেখা থেকে একটি বিষয় আমার কাছে বেশ স্পষ্ট অবশ্য অন্যদের কাছে তা মনে নাও হতে পারে। আপনাকে একজন টপ ক্লাস ধান্দাবাজ বলে মনে হচ্ছে। যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি দুঃখিত।
যেহেতু আপনি আপনার গুরুজীর কথা বলেছেন তাই বলছি। উনি কোন চরিত্রের লোক সেটা আপনি না জানতে পারেন কিন্তু দেশের মানুষ কম বেশি জানে। উনি তথ্যকণিকা'র নামে সেখানে পবিত্র কুরআনের আয়াত ছেপে এক সময় বিলি করেছেন। কিন্তু সকল উলামায়ে কেরাম সে অনুবাদের মধ্যে মনগড়া শব্দের প্রয়োগ লক্ষ্য করেছেন যা মূল অর্থকে পরিবর্তন করে দেয়। আপনি সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতের যে অর্থ করেছেন এমন 'লিপিবদ্ধ' শব্দের প্রয়োগ আর কোনো অনুবাদে আমার চোখে পড়েনি।
আপনাকে আমি একজন সুস্থ বিবেকবান বলেই ভাবতে চাই। সে মোতাবেক আপনাকে ছোট্ট একটি প্রশ্ন করতে চাই। ধরুন, আপনি একটা বাড়ি বানাবেন। শুরুতেই যথাযথ কর্তৃপক্ষ (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) থেকে প্ল্যান পাশ করাতে হবে। এজন্য আপনার একজন প্রকৌশলীর প্রয়োজন। আপনি তাঁর কাছে আপনার চাওয়া বুঝিয়ে বলবেন। তখন তিনি তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা দিয়ে আপনার জন্য সুন্দর একটি ডিজাইন তৈরি করে দেবেন। এটাই নিয়ম। এখন যদি আপনি একজন প্রকৌশলীর কাছে না গিয়ে ডাক্তারের কাছে যান তাহলে কী আপনি কাঙ্খিত ডিজাইন পাবেন? কিংবা আপনার ভীষণ অসুখ হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আপনি গেলেন একজন ল ইয়ারের কাছে। কোনো লাভ হবে? হবে না। যার যে কাজ অর্থাৎ যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ সে কাজের জন্য আপনাকে তার কাছেই যেতে হবে।
এখন কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যার জন্য আপনাকে একজন আলেম ব্যক্তির কাছেই যেতে হবে। কোনো গায়রে আলেমের কাছে গেলে ফল উল্টো হবে। আপনার গুরুজী কুরআন-হাদীস ব্যাখ্যা করার কতটুকু যোগ্যতা রাখে? আর মুত্তাকী কারা সে সম্পর্কে উনি সুন্দর মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যে বিষয়ে আল্লাহর দেয়া ব্যাখ্যা আছে সে বিষযে অন্য কারো বিশেষ করে কোনো গায়রে মুয়াল্লিমের ব্যাখ্যা নেয়ার প্রশ্নই আসে না। বিশেষ করে তাঁর মতো ভন্ড লোক যে কিনা সারাজীবন হস্তরেখাবিদ হিসেবে কাজ করেছে।
কারা মুত্তাকী জানার জন্য কষ্ট করে সুরা বাকারা'র ২-৫ নম্বর আয়াতগুলি পড়ুন। আল্লাহ পরিষ্কারভাবে সব বলে দিয়েছেন।
যারা রোজার নামে ভন্ডামী করছে আপনি তাদের কাজকে সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু আল্লাহর দেয়া বিধান নিয়ে ঠাট্ট-মশকরা করতে পারেন না।
আপনার লেখার শুরুতেই আপনি রাসুল (সঃ) শুধুমাত্র মহম্মাদ বলে সম্বোধন করেছেন। এ লেখা যদি আপনার গুরুজীর হয়ে থাকে তবে লক্ষ্য করুন কত বড় বেয়াদপ ও উদ্ধত হলে মানুষ এভাবে অসম্মান করে কথা বলতে পারে। যেখানে জীবরাইল (আঃ) বলেছেন, রাসুল (সঃ) নাম শুনার পর যদি কেউ দরুদ না পড়ে তাহলে সে জাহান্নামী হবে আর রাসুল (সঃ) আমীন বলে তা সমর্থন করেছেন, সেখানে তিনি কীভাবে অশোভনভাবে বলছেন?
আর ১ বেলা খাওয়া কমিয়ে দান-খয়রাতের কথা বলছেন? আপনার গুরুজীকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তো প্রতিবছর 'মাটির ব্যাংক' থেকে ১৫ কোটি টাকার ওপর কালেকশন হয়। উনি কয়জনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন? হয়ত বলবেন, লামা'তে সে এতিম খানার কথা। আপনি কী জানেন কেন সেখানে তিনি এতিম খানা করলেন? কখনো কী আপনার মনে এসেছে? সারা দেশে এত জায়গা থাকতে লামা'র মতো গহীন জায়গায় কেন? সেখানে তো উনারও বাড়ি নয় কিংবা উনার শ্বশুড় বাড়িও নয়। আগে জানুন...।
আর ১ বেলা খাওয়া কমিয়ে তা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু ইসলামে কোথাও কী এমন কথা বলা হয়েছে? আপনাকে অবশ্যই দান-খয়রাত করতে হবে, যাকাত দিতে হবে। আপনার মালে গরীবের হক রয়েছে, যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সে মাল হালাল হয়, পবিত্র হয়। খোঁজ নিয়ে দেখুন তো আপনার গুরুজী কত টাকা যাকাত দেন?
ভাই কেমানিক, বেশি বেশি করে ইসলামী ব্ই পড়ুন। প্রকৃত আলেমের লেখা বই পড়ুন। তারপর ঠান্ডা মাথায় সব নিয়ে চিন্তা করুন। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা আপনার সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবেন। কোনো ভন্ড লোকের লেখা পড়ে নিজে বিভ্রান্ত হবেন না, অন্যকে বিভ্রান্ত করবেন না। সর্বোপরি নিজের ঈমানকে নষ্ট করবেন না। আমি আল্লাহর কাছে আপনার হেদায়েতের জন্য দোয়া করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯১ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে শাব্বির ভাইয়ের এরকম ভদ্রোচিত জবাব-পোষ্ট আমি সমর্থন করি, কেননা এতে করে যারা এদের ব্যাপারে এখনো জানেন না, তারা কিছুটা হলেও এ ধরনের পোষ্ট থেকে জানতে পারবেন এবং সাবধান হতে পারবে।
তবে শাব্বির ভাইয়ের এরকম ভদ্রোচিত জবাব-পোষ্ট আমি সমর্থন করি, কেননা এতে করে যারা এদের ব্যাপারে এখনো জানেন না, তারা কিছুটা হলেও এ ধরনের পোষ্ট থেকে জানতে পারবেন এবং সাবধান হতে পারবে।
সেখানে আমি বাকারাহ এর ১৮৩ নাম্বার আয়াতের পাশাপাশি বাকারাহ এর ১৮৫ নাম্বার আয়াত দিয়েও ওর সাথে আলোচনা করেছি – ১৮৫ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট লেখা আছে – অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ এ মাস পেলে, রোজা রাখবে; অসুস্থ বা সফরে থাকলে পরে ...। ১৮৫ আয়াতের এ আদেশটা অবশ্য-পালনীয় নাকি ঐচ্ছিক এটা জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দিয়েছে – এটা অবশ্যপালনীয় বা ফরজও না, আবার ঐচ্ছিকও না, কি ভান্ডামী-মার্কা উত্তর খেয়াল করেছেন?
সেখানে আরও অনেক ভন্ডামী-মার্কা কথাবার্তা বলেছে; কোন সদুত্তর দিতে পারে নাই – খালি বলে রোজার উদ্দেশ্য মুত্তাকী হওয়া, আর মুত্তাকী হইলে আর রোযা লাগে না! আর মুত্তাকীর সার্টিফিকেট নাকি আল্লাহ ওকে দুনিয়াতে দিয়ে দিছেন, তাই যারা ওর মতো তথাকথিত মুত্তাকী হয়ে গেছে তাদের আর রোযা লাগবে না ওর মতে – এটাও বলেছে আমাকে।
ঠিকই বলেছেন উনি। মুত্তাকী যারা হয় তাদের আর রোযা রাখতে হয় না। ঠিক যেন দেওয়ানবাগীদের মতো। আমাদেরই দূর্ভাগ্য যে এখনও মুত্তাকী হতে পারলাম না।
এসব ভন্ডরা রাসুল (সঃ) এর চেয়েও বড় মুত্তাকী হয়ে গেছে (নাউযুবিল্লাহ)। ভুলে যাবেন না আল্লাহ তায়ালা এদের সম্পর্কে বেশ ভালো করেই জানেন। এ ধরণের কিছু ভন্ড না থাকলে জাহান্নামের খড়ি হবে কে?
আশাকরি ব্লগের সবাই সাবধান হয়েছে।
আর এ কোনদিন ফিরবে বলে আমার মনে হয় না।
সুম্মুম বুকমুন উমইয়ুন ফাহুম লা ইয়ারজিউন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন