মাননীয় স্পিকার রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনঃ
লিখেছেন লিখেছেন নির্বোধ১২৩ ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৩:০০:২৮ দুপুর
বড়ই দুঃখজনক ও অশোভন ঘটনা -
জাতীয় শোকের দিনে দেশের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে নেতৃবৃন্দ বঙ্গভবনে শোক জানাতে এসেছেন। কিন্তু নেতৃবৃন্দ কেউ কারো মুখ দেখাদেখি দূরে থাক ন্যূনতম সৌজন্যতা দেখানোর আগ্রহও বোধ করেননি। এমন শোকের দিনেও নেতা নেত্রীগণ তাঁদের হীনতার দীনতাকে অতিক্রম করতে পারেননি! তাঁদের কাছে জাতি আর কী আশা করতে পারে? সরকার প্রধান হিসাবে জাতীয় শোকের দিনেও প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানাননি। তিনি তাঁর আসার খবরও জানতেন অথচ তাঁকে কেউই অভ্যর্থনাও জানায় নি। রাষ্ট্রপতির দলীয় পরিচয় যা ই থাকুক না কেন তিনি রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রতীক! বিরোধী দলীয় নেত্রী যথার্থ কাজটিই করেছেন – কেউ আমন্ত্রণ জানাক বা জানাক তিনি আপন গরজেই উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি অনাহুত অচ্যূত থেকেই মরমে জ্বলতে জ্বলতে মাত্র ৪০ মিনিটে কোন রকম দায়িত্ব পালন করে নীরবে স্থান ত্যাগ করেছেন! অতঃপর; আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি; আজকের বিরোধী দলীয় নেত্রী ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কি করবেন!
সবাই জানি; সৌজন্যতা - সম্প্রীতির জন্ম দেয় আর হিংসা - বিদ্বেষের জন্ম দেয়। আমাদের নেতৃবৃন্দের প্রজ্ঞা মানসিকতা ও রুচীবোধ বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। নেতৃত্বের জন্য যে মহত্ন বা উদারতার প্রয়োজন নেতৃবৃন্দের কারো তা আছে বলে জানা নেই। মানে - আমরা দেখতে পাইনা। সবাই নিজ নিজ স্বার্থেই জনগনকে ব্যবহার করে ক্ষমতার মসনদে চড়াও হয়ে জনগনেরই মাথায় ছড়ি ঘোরায়, জনগনকেই বোকা বানায়। আমাদের দূর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়েও আমরা কোন দেশপ্রেমিক সৎ ও যোগ্য মহান নেতৃত্ব পাইনি। জাতি হিসাবে আমরা কি এতটাই নিঃস্ব যে, দেশে দেশপ্রেমিক সৎ বা যোগ্য মহান নেতৃত্ব দেবার মত মানুষের অভাব? তা মোটেও না, নেতৃত্ব দেয়ার মত বহু ব্যক্তিত্বই আছেন কিন্তু তাঁদের একটা জিনিসেরই অভাব তা হলো; তাঁদের হাতে টাউট চামচা নেই আর নিজেরাও শঠতা জানেন না। তাই তাঁরা নির্জীবের মতই কোনঠাসা হয়ে থাকেন। তাঁদের কথা কেউ শোনেনা বা শোনানোর মত দক্ষ টাউট চামচা তৈরী করতে তাঁরা ব্যর্থ। তাই এ যাবত যত নেতাই এসেছেন – দলীয় প্রপাগান্ডায় তাঁকে যতই মহান বানানোর চেষ্টা করা হোক না কেন কেউই প্রশ্নাতীত নন।
একজন পরিবার প্রধানের মৃত্যু হলে সে পরিবারের সদস্যরা বিবাদ বিসম্বাদ ভুলে গিয়ে সবাই অভিন্ন শোক পালন করে, সেই সুবাদে নিজেদের মধ্যকার দূরত্বও কমে আসে। সেই উপলক্ষে বিবদমান সদস্যদের বিবাদ নিরসনের একটা সুযোগও আসে। আমাদের জাতীয় জীবনে এবার তেমন সুযোগই এসেছিল কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য; নেতৃবৃন্দের সংকীর্ণ মানসিকতার দরুণ এমন সুযোগটাও ফসকে গেল। ভেবে দেখুন; বর্তমান সংঘাতময় রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সময়টায় এমন সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতার দায় কার, আর তার মাসুল কে গুনবে? সূতরাং আমাদের সামনে কেবলই অন্ধকার; ভবিষ্যতে আরো দূর্যোগের অপেক্ষায়ই থাকতে হবে। ভাবতে বা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে সংঘাত আরো বাড়বে, আরো রক্ত ঝরবে, জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হতে হতে সম্পদ মেধায় ক্রমেই আমরা আরো পিছন দিকে সরতে থাকব। সবাই জানি; কোন গ্রহনযোগ্য মুরুব্বীর কথাই আমাদের বেয়াদব নেতারা শুনবেন না। তাই সম্মানের ভয়েতে কেউই এগিয়ে আসতে চান না। অথচ সংলাপের জন্য হাইকোর্টে পর্যন্ত রীট হয়! স্বার্থের জন্য নেতারা বড় তালগাছ আঁকড়ে পড়ে থাকেন নিজেদের গোঁ বজায় রাখেন - এদিকে সমানে জনগনের রক্ত ঝরে, জীবন ও জাতীয় সম্পদের হানী ঘটতেই থাকে।
সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় একজন রাষ্ট্রপতি যেমন পরিবার প্রধান তেমনি একজন স্পিকার ও দ্বিতীয় প্রধান। তাঁরা দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হলেও রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় নিরপেক্ষ মুরুব্বীর প্রতীক। দু'জনই তো সরকারের নিজস্ব লোক, আবার নিরপেক্ষতার প্রতীকও! তারাও কি চান না যে; নেতানেত্রীর মধ্যকার তিক্ততার নিরসন হয়ে সমঝোতা ও সৌহার্দ্রতার একটা স্থিতিশীল শান্তির সুবাতাস বহমান থাকুক? তাহলে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূতে কোন্ নেতা এগিয়ে এলেন আর কে গাল ফুলিয়ে থাকলেন তা আমাদের জানতে হবে কেন? মাননীয় স্পিকার বা রাষ্ট্রপতিই তো যথেষ্ট। তাঁরা দুই পক্ষকে ডাকলে কারো কি না বসে উপায় আছে? এই সহজ বিষয়টা কেন পরিবার প্রধানদের মাথায় আসে না তা বুঝিনা। তা হলে একথাও কি বিশ্বাস করতে হবে যে তারাও দলীয় প্রধানের ‘রিমোটে’ই হাঁটা-চলা করেন? তাঁরা তো সাম্য নিরপেক্ষতা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক! পরিবার প্রধান আন্তরীক হলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার বিবাদ বিসম্বাদ তিনিই দূর করতে পারেন, নিদেন পক্ষে উদ্যোগ নিতে পারেন তা হলেই তো আর আদালত পর্যন্ত যেতে হয়না! এমন বিষয় আদালতে মিমাংশা হলে কি পরিবার প্রধানের মর্যাদা আদৌ বাড়বে না কমবে?
আজ রাষ্ট্রপতি নেই, তাই বলে জাতি অভিভাবকহীন নয়। স্পিকার পদাধিকার বলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে আছেন। সূতরাং মাননীয় স্পিকার রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন – রাষ্ট্রের প্রধান স্তম্ভ হিসাবে আপনার পরিবারের সদস্যদের বিবাদ মিটিয়ে দিন। নেতানেত্রী তো করবেনই না আর কেউই তা পারবেও না। এমন দুঃসাধ্য কাজ আপনার পক্ষেই সম্ভব তা একমাত্র আপনাকেই শোভা পায়। জাতির অভিভাবক হিসাবে একমাত্র আপনিই পারেন জাতিকে সম্ভাব্য সংঘাতের হাত থেকে বাঁচাতে। এমন দুঃসাধ্য কাজের জন্য ইতিহাসে আপনার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন