তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও৷

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৩ মার্চ, ২০১৪, ১০:০২:৪৫ সকাল



১৪) হে ঈমানদাগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও৷ ঠিক তেমনি, যখন ঈসা ইবনে মারয়াম হাওয়ারীদের ১৯ উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন : আল্লাহর দিকে (আহবান করার ক্ষেত্রে) কে আমার সাহায্যকারী? তখন হাওয়ারীরা জবাব দিয়েছিলো : আমরা আছি আল্লাহর সাহায্যকারী৷ ২০ সেই সময় বনী ইসরাঈল জাতির একটি দল ঈমান আনয়ন করেছল এবং আরেকটি দল অস্বীকার করেছিল৷ অতপর আমি ঈমান আনয়নকারীদেরকে তাদের শত্রুদিগের বিরুদ্ধে শক্তি যোগালাম এবং তারাই বিজয়ী হয়ে গেল৷২১

১৯. হযরত ঈসা (আ) সংগীদের জন্য বাইবেলে সাধারণত 'শিষ্য' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । কিন্তু পরবর্তীকালে খৃস্টানদের মধ্যে তাদের জন্য রসূল() পরিভাষাটি চালু হয় । তবে তারা আল্লাহর রসূল ছিল এ অর্থে তাদেরকে রসূল বলা হতো না, বরং তাদেরকে রসূল বলা হতো এ অর্থে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের পক্ষ থেকে তাদেরকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে মুবাল্লিগ হিসেবে পাঠাতেন । যেসব লোককে হাইকলের জন্য চাঁদা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো হতো তাদের জন্য এ শব্দটির ব্যবহার ইহুদীদের মধ্যে পূর্ব থেকেই ছিল । পক্ষান্তরে কুরআন মজীদে এর পরিবর্তে হওয়ারী পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে যা এ দুটি খৃষ্টীয় পরিভাষা থেকে উত্তম । এ শব্দটির মূল হলো() যার অর্থ শুভ্রতা । ধোপাকে হাওয়ারী বলা হয় । এ জন্য যে, সে কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার ও সাদা করে দেয় । খাঁটি ও নিখাদ জিনিসকেও হাওয়ারী বলা হয় । চালুনি দিয়ে চেলে যে আটার ভূষি ও ছাল বের করে আলাদা করা হয়েছে তাকে হাওয়ারা বলে । এ অর্থে অকৃত্রিম বন্ধু ও নিঃস্বার্থ সাহায্যকারীকে বুঝাতে ও এ শব্দটি ব্যবহার করা হয় । ইবনে সাইয়েদ বলেনঃ যেসব ব্যক্তি কাউকে অধিক মাত্রায় সাহায্য করে তাকেও ঐ ব্যক্তির হাওয়ারী বলে । (লিসানুল আরব) ।

২০. যারা আল্লাহর দীনের দিকে মানুষকে আহবান জানায় এবং কুফরের মোকাবিলায় আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্টা-সাধনা করে কুরআন মজীদের যেসব জায়গায় তাদেরকে আল্লাহর সাহায্যকারী বলা হয়েছে এটি তার মধ্যে সর্বশেষ জায়গা । ইতিপূর্বে সূরা আলে ইমরানের ৫২ আয়াত, সূরা হজ্জের ৪০ আয়াত , সূরা মুহাম্মাদের ৭ আয়াত, সূরা হাদীদের ২৫ আয়াত এবং সূরা হাশরের ৮ আয়াতে এই একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাফহীমুল কুরআনে সূরা আলে ইমরানের ৫০ নং টীকা, সূরা হজ্জের ৮৪ নং টীকা , সূরা মুহাম্মাদের ১২নং টীকা এবং সূরা হাদীদের ৪৭ নং টীকায় আমরা এর ব্যাখ্যা পেশ করেছি । তাছাড়া সূরা মুহাম্মাদের ৯নং টীকায়ও এ বিষয়টির একটি দিক সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে আলোকপাত করা হয়েছে । এসব সত্ত্বেও কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা যখন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী , সমস্ত সৃষ্টির কারো উপরই নির্ভরশীল নন, কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সবাই তারই মুখাপেক্ষী তখন তার কোন বান্দা কেমন করে তাঁর সাহায্যকারী হতে পারে৷ এই খটকা এবং সন্দেহ -সংশয় দূর করার জন্য আমরা বিষয়টির আরো কিছু ব্যাখ্যা এখানে পেশ করেছি ।

এসব লোককে আল্লাহর সাহায্যকারী মূলত এজন্য বলা হয়নি যে, কোন কাজের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর কোন সৃষ্টির মুখাপেক্ষী (নাউযুবিল্লাহ) । বরং তাদেরকে আল্লাহর সাহায্যকারী এ জন্য বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা মানুষকে জীবনের যে গণ্ডতিতে কুফর ও ঈমান এবং আনুগত্য ও নাফরমানীর যে স্বাধীনতা দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর অজেয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জোর করে মানুষকে মু'মিন ও অনুগত বানান না । বরং নবী-রসূল ও কিতাবের সাহায্যে তাদেরকে উপদেশ দেন, শিক্ষাদান করেন এবং বুঝিয়ে সুজিয়ে সঠিক পথ দেখানোর পন্থা অবলম্বন করেন । যে ব্যক্তি এই উপদেশ ও শিক্ষাকে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে, গ্রহণ করে সে মু'মিন; যে কাজে পরিণত করে সে মুসলিম, অনুগত ও আবেদ; যে আল্লাহভীতির নীতি অনুসরণ করে সে মুত্তাকী , যে নেকীর কাজে অগ্রগামী হয় সে 'মুহসিন' এবং এ থেকে আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে যে এই উপদেশ ও শিক্ষার সাহায্য আল্লাহর বান্দাদের সংস্কার ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে এবং কুফর ও পাপাচারের স্থলে আল্লাহ আনুগত্যের বিধান কায়েম করার জন্য কাজ করতে শুরু করে আল্লাহ তা'আলা তাকে তাঁর সাহায্যকারী বলে আখ্যায়িত করেন । যেমন উপরোক্ত আয়াতের কয়েকটি স্থানে স্পষ্ট ভাষায় এ কথাটিই বলা হয়েছে । যদি আল্লাহর সাহায্যকারী না বলে আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী বলা মূল উদ্দেশ্য হতো তাহলে () না বলে () বলা হতো, () না বলে () বলা হতো এবং () না বলে () বলা হতো । একটি বিষয় বলার জন্য আল্লাহ তা'আলা যখন এ কথাই প্রমাণ করে যে, এ ধরণের লোকদের আল্লাহর সাহায্যকারী বলাই এর মূল উদ্দেশ্য । তবে এই সাহায্য নাউযুবিল্লাহ এ অর্থে নয় যে, এসব লোক আল্লাহ তা'আলার এমন কোন প্রয়োজন পূরণ করেছে যার তিনি মুখাপেক্ষী । বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলার যে কাজ তাঁর জবরদস্ত শক্তির জোরে না করে তাঁর নবী -রসূল ও কিতাবের সাহায্যে করতে চান এসব লোক সেই কাজে অংশগ্রহণ করছে ।

২১. ঈসা মাসীহর প্রতি ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী বলতে ইহুদী এবং ঈমান গ্রহণকারী বলতে খৃষ্টান ও মুসলমান উভয়কে বুঝানো হয়েছে আর এই দুই জাতিকেই আল্লাহ তা'আলা ঈসা মাসীহর অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেছেন । এখানে একথাটি বলার উদ্দেশ্য মুসলমানদের এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া যে, হযরত ঈসার অনুসারীরা ইতিপূর্বেও যেভাবে তাঁর অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন এখনও তেমনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের অনুসারীরা তাঁর অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবেন ।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

185934
০৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৩
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগল লেখাটা
০৩ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
137845
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আপনার ভাল লাগা প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ।
186168
০৩ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
০৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০৩
138186
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
186375
০৪ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:৪০
ভিশু লিখেছেন : Praying Praying Praying
Happy Happy Happy
Good Luck Good Luck Good Luck
Rose Rose Rose
186466
০৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০৪

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File