রানা প্লাজা ধবংসের এক বছর পুর্তি।
লিখেছেন লিখেছেন মুহছিনা খাঁন ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:৫৫:৩৪ সকাল
ভিক্ষা করে খাওয়াবো তবুও গার্মেন্টেসের কাজে দেবোনা.
আজ রানাপ্লাজা ধবংসের এক বৎসর হলো।
২০১২ সালে নভেম্বরেও এভাবে বড় ধরনের ভয়াবহ
আগুনে পোড়ে মারা গিয়েছিলো অনেক গার্মেন্টস কর্মি ।তখন তাদের মা বোনরা আহাজারি করে বলেছিলো '' তাদের সন্তান অথবা ভাইদের ভিক্ষা করে খাওয়াবে তবুও তারা গার্মেন্টেসে কাজ করতে দিবেনা''।
তারা চায়না অনেক পরিশ্রম করে টাকা আনতে গিয়ে আগুনে পুড়ে লাশ হয়ে পংগু হয়ে ফিরে আসুক তাদের সন্তান অথবা ভাই বোন ।
ভিক্ষা করে খাওয়া কারো কাছে পছন্দ নয় তবুও এই নিরাপদ কাজটি বেছে নিতে চান এই হতদরিদ্র মানুষ গুলোর আদরের মা বোন।
আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেয়েছিলো আশুলিয়া গার্মেন্টস ফেক্টরী। সাথে সাথে পোড়ে গেছে এই গরীব শ্রমিক আর তাদের কপাল।
এর কিছুদিন পরেই আবার সেই কিয়ামত ঘটে গেলো রানাপ্লাজায় যা সারা বিশ্ব দেখে হতবাক আর বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলো।
এমনকি অনেকে সিদ্বান্ত নেয়েছিলো আর বাংলাদেশের তৈরী পোশাক পড়বেনা। এমনকি ড্যান মজিনার মা বলেছিলো বাংলার মানুষের লাশের বিনিময়ে যে পোশাক তৈরী হয় সে পোশাক আমি পড়তে চাইনা।
এই কথাটি ড্যান মজিনা বলেছিলো মিশিগানের একটি বক্তৃতায় আমি ছিলাম সেদিন উপস্থিত।
কি ভয়ানক বিভিষিকাময় এক একটি চিত্র যা ৭১ কেও হার মানায়।
সবচেয়ে হাসির বিষয় হলো দেশের নেতারা এই গুলোতেও বিজনেস খোঁজে এই অসহায় মৃত মানুষ আর তাদের নি:স্ব পরিবারকে নিয়ে রাজনীতি করে।
সেদিন দেখলাম একটি খবরে রানাপ্লাজায় কমড়ে ব্যথা পাওয়া এক কর্মী গিয়েছে সুপারভাইজারের কাছ থেকে
টাকা আনতে সে নাকি বলেছে কমড় ভাংগার জন্য কোন সাহায্য পাবেনা যাও হাত পা ভেংগে এসো তাহলে দেখা যাবে।
আজকের একটি রিপোর্টে দেখলাম এক পা কাটা এক বোন করুন এবং চরম হতাসা নিয়ে বলছেন, এর চেয়ে মরন ভালো ছিলো। কত খারাপ অবস্থা আর যন্ত্রনায় থাকলে একজন মানুষ তার মরন কামনা করে। সেদিন কেউ লাশ পেয়েছে, কেউ স্বজনদের জীবিত পেয়েছে, আর কেউ লাশ ও পায়নি জীবিত ও পায়নি। দিশেহারা হয়ে খুঁজছে ভাই, বোন আর সন্তানের লাশ ।
চোঁখের জল ফেলতে যেনো ভুলে গেছে শুকনো মুখগুলি । আর তার সন্ধানী চোঁখ খুঁজে ফিরছে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া কালো মুখ গুলোতে যদি কোনভাবে চেনা যায়।
আরেক মা রাস্তায় ওপাড়ে দাড়িয়ে বলছেন, আমি এখনো পাইনি আমার সন্তানকে ওরা অনেক লাশ নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে একটি মুখ ও দেখায়না।
প্রবাশে বসে টিভিতে দেখছি আর নিজের অজান্তেই চোঁখ জল ফেলছে অবিরাম। কি করবো আমি এত দুর থেকে ইচ্ছে হচ্ছে এই অসহায় মানুষগুলির পাশে যদি একটিবার দাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারতাম।
আর আরেকটি কাজ যদি করতে পারতাম তাহলে বড় শান্তি পেতাম। সে কাজটি হলো একটিবার গার্মেন্টসের মালিকদের সামনে গিয়ে যদি ওদের ডান হাতটি চেপে ধরে বাম গালে সজোড়ে একটি চড় দিয়ে জিগ্যেস করতে পারতাম, আর কতটি লাশ হলে তোমরা গরিবের পেটে লাথি মেরে সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠবে?
আর কত আগুন আর কতটি পরিবারকে নি:স্ব করলে তোমাদের হুশ ফিরে আসবে?
কেনো তোমরা এত আগুন এত লাশ দেখেও ফেক্টরী গুলোকে সুন্দর ব্যবস্থাপনায় রাখতে চাওনা?
যাদের শরীরের প্রতিটি রক্ত কনার বিনিময়ে তোমরা আজ কোটিপতি, বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত তাদের জন্য কি তোমাদের একটু ও মায়া হয়না?
যখন সারা দেশের গার্মেন্টস কর্মিদের পরিবার এই ভাবেই সিদ্বান্ত নেয় যে, ওরা আর তাদের পরিবারের কাউকে গার্মেন্টসের কাজে দিবেনা ভিক্ষা করে খাওয়াবে তাহলে তোমরা কি করবে, কেমন করে এত এত টাকা ক্যালকুলেট করবে?
একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, গার্মেন্টস হলো বাংলাদেশের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে আজ একসাথে জবেহ করে দিলেন।
কোথায় ছিলেন এই মন্ত্রী এতদিন? আগে কোনদিন কি
খোঁজ নিয়ে দেখেছেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস কোন অসুস্থতায় ভুগছে কিনা? এর মেরামত দরকার কিনা, সুন্দর সাস্থ্যময় পরিবেশে থাকে কিনা? কোন দুর্ঘটনা হলে নিজেকে বাঁচিয়ে বাইরে বের হতে পারবেকিনা?
নাহ্ তারা এইসব কোন কিছুরই খোঁজ কোনকালেও নেননি। তারা সব সময় দুর্ঘটনার পর লাশ গুনতে আসেন । আর তাদের প্রধান মন্ত্রী নিহতদের জন্য বিশহাজার করে আর আহতদের জন্য পাঁচ হাজার করে কেবিনেট ডেকে গর্বের সহিত ঘোষনা করেন।
এই হলো আমার সোনার বাংলার বিচার । একজন মানুষের জীবনের মুল্য টাকায় মাত্র বিশ হাজার যা পেয়ে এই হতদরিদ্র মানুষগুলি দেড়মাস একটু ভালো করে ডালভাত খেতে পারবে।
আর তাদের কপাল যেভাবে ছিলো সেভাবেই থাকবে ।
একদিন এই আলোচনাটাই ইতিহাসের পাতা থেকে খসে পড়বে।
তবে খুশির বিষয় হলো, এই আগুনে পোড়া দিনটিকে শোক দিবস হিসাবে পালন করতে ঘোষনা দিয়েছিলেন প্রধান মন্ত্রী । চোখের জলের সাথে যোগ হলো বেদনার শুকনো হাসিও ।
আরে এই একটি দিবসেই কি মনে রাখবে এই মানুষগুলো তাদের প্রিয় মানুষগুলিকে? তাদেরকেতো প্রতিনিয়তই তাড়া করবে এই বিভিষিকাময় মুহুর্তগুলি আর অভাব বার বার মনে করিয়ে দিবে এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া কালো বিবর্ণ মুখগুলিকে।
দু:খের বিষয় একটাই
একটিবার
ও প্রধান মন্ত্রীর মুখে শুনি নাই আমরা মালিক এবং সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে দেখবো এবং সঠিক বিচার করবো কেন তারা এত এত মানুষের কাজের জায়গাটিকে সুন্দর সুবিধায় রাখেননি। কেন তাদের অবহেলার কারনে এত গুলো মানুষকে জীবন দিতে হলো।
টাকার অংক সহজেই হিসাব করা যায় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মানুষের জীবন টাকার অংকে ফিরিয়ে আনা যায়না।
কারন টাকার চাইতে মানুষের মুল্য অনেক বেশী।
তাই বলছি উপড়ের সিড়িতে যারা বসবাস করেন তারা কখনো নিচের সিড়ির মানুষকে পদদলিত করার চেষ্টা করবেননা। ওরা নিচে বসে আছে বলেই তোমি এত উপড়ে বাস করছো আরামে।
একবার যদি ওরা উপড়ে ওঠার চেষ্টা করে তাহলে আপনাদের মত বড় বড় লোকদের গর্তে ফেলে দিতে তাদের একটু ও কষ্ট হবে না ।মনে রাখবেন ওদের খেটে খাওয়া হাত আর খেটে খাওয়া হাত অনেক শক্ত ও মজবুত হয়।
আগুনে পোড়া আর রানাপ্লাজা ধবংসে নিহত আর আহত সবার জন্য দোয়া করছি ।
আল্লাহ তোমাদের সহায় হোন । আমীন
বিষয়: বিবিধ
১১২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন