জন্ম দিন পালন এর শুরু কখন থেকে ?মুসলমানদের জন্য কোন “ শুভ জন্ম দিন” অথবা “HAPPY BIRTH DAY” বলে আর কিছু নেই।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:২৫:২১ দুপুর
জন্ম দিনের সবচেয়ে পুরানো রেফারেন্স যেটা পাওয়া যায় তা হল বাইবেলে। বাইবেলে জন্মদিন সম্পর্কে বলা হয়েছে মাত্র দুই বার। প্রথম বার ওল্ড টেস্টামেন্ট এ (জেনেসিস ৪০:২০-২২) এবং ২য় বার নিউ টেস্টামেন্ট এ (ইসাইয়া ৪৭ঃ১৩-১৪) এবং এই দুই যায়গাতেই ফেরাউন এর জন্মদিন পালন সম্পর্কে বলা হচ্ছে।
মিসরিয় রা রাশিচক্রের মারাত্মক বিশ্বাসী ছিল আর রাশি গননার জন্য জন্মদিন জানাটা ছিল অপরিহার্য। আমারা অনেকেই মনে করি জন্মদিন খ্রিস্টানদের কাছ থেকে ধার করা, কিন্তু আসলে তা নয়। খ্রিস্টান দের বাইবেল এ জন্মদিন সম্পর্কে বলা হয়েছে মাত্র এই দুই বারই। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল বাইবেল কখনই জন্মদিন পালনের ব্যাপার এ বলে নি। জন্মদিন টা মূলত সেই সুপ্রাচিন কাল থেকে রাশি গননার একটা অনুষঙ্গ হিসেবে চলে আসছে। খ্রিস্টানদের মধ্যে ব্যাপারটাকে যীশু খ্রিস্ট বা ইসা (আঃ) এঁর জন্মদিন কে কেন্দ্র করে পালন করার প্রচলন গরে উঠে। আর আধুনিকায়ন এর উপ্রি পাওনা হিসাবে আমরা মুসলিমরাও তা সানন্দে গ্রহন করে নিয়েছি(!!!!)। বাহ! কি চমৎকার, তাই না ? আর মিলাদুন্নবির বিদআত এর বাপারে আর না হয় না ই বা বললাম।
জন্মদিনের ব্যাপারে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য দেই আপনাদের। ভাল করে খেয়াল করুনঃ
জন্মদিন পালন করার জন্য একত্রিত হওয়ার রীতিটা আসে কি ভাবে জানেন কি? না জানলে আমি বলে দিচ্ছি, আগে মনে করা হত যে, কারও জন্মদিনের দিন তার উপর খারাপ আত্মাদের আছর হবার ভয় থাকে। তাই সবাই মিলে, যার জন্মদি্ন, তার আশেপাশে লোকসমাগম করত এবং আনন্দ উৎসব করত যেন খারাপ আত্মারা তার কোন ক্ষতি করতে না পারে। সেই থেকেই জন্মদিনের কেক এর প্রচলন। আর কেক এর উপর মোম জালানর ব্যাপারটাতো পুরাই অগ্নি পুজা । আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন সেইটা আবার কিভাবে? তাহলে জেনে রাখুন, প্রাচিন গ্রিসের অধিবাসীদের ধারনা ছিল প্রাথনার সময় আগুন জ্বালানো হলে প্রাথনাগুলো আগুনের ধোঁয়ার সাথে উপরে দেবতাদের কাছে সরাসরি পৌঁছে যায়। আর প্রাথনার সময় মোমবাতি নিভানো হলে তা তাৎক্ষনিক ভাবে দেবতাদের নজরে আসে ও তা কবুল করে নেয়া হয়। সেই বিশ্বাস কালের প্রবাহে জন্মদিন এর কেক এর সাথে যুক্ত হয়ে যায়।তাহলে আবার চিন্তা করে দেখুন, একজন মুসলমানের জন্য কতখানি গুরুতর ঘটনা আশা করি তা আর ব্যাখ্যা করে বুজানুর প্রয়োজন নেই।
এ তো গেল শুরুর কথা। আসুন দেখি, আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) কুরআন ও সহিহ হাদিসে কি বলছেন,
প্রথমতঃ
নাসারা রা ইসা (আঃ) এর জন্মদিন পালন করে ও মনে করে যে ইসা (আঃ) আল্লাহ্র পুত্র। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।আস্তাগফিরুল্লাহ.........আর জন্মদিন পালন করা মানে পরোক্ষ ভাবে এরই সমর্থন কারা বুঝায়। কেউ যদি বলে ইসা (আঃ) আল্লাহ্র পুত্র, তাহলে তা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এর ইজ্জাত কে সরাসরি গালি দেয়ার শামিল। আল্লাহ্ যেন আমাদের হেফাজত করেন। সুরা মরিয়াম এ আল্লাহ্ বলছেনঃ-
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَـٰنُ وَلَدًا ﴿٨٨﴾ لَّقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا إِدًّا ﴿٨٩﴾ تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا ﴿٩٠﴾ أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَـٰنِ وَلَدًا﴿٩١
"তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। নিশ্চয় তোমরা তো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ। হয় তো এর কারণেই এখনই নভোমন্ডল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হবে। হয় তো এর কারণেই এখনই নভোমন্ডল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হবে।
এ কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান আহবান করে।" (১৯ঃ৮৮-৯১)
দ্বিতীয়ত ঃ
আসুন দেখি রাসুল্লুল্লাহ(সাঃ) এই ব্যাপারে কি বলেছেনঃ
"আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসুল্লুল্লাহ(সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ অবশ্যই অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকেদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরন করবে। এমনকি তারা যদি দবের(এক ধরনের সরীসৃপ/ গুইসাপ) এর গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল (সাঃ)! এরা কি ইয়াহুদি ও নাসারা ? তিনি বললেনঃ আর কারা ?"(বুখারি ৩৪৫৬, ৭৩২০; মুসলিম ২৬৬৯; আহমাদ ১১৮০০)
এবং তিনি আরও বলেছেনঃ
"আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন- যে অন্য কোন জাতির অনুকরণ করবে সে তাদের ই অন্তর্ভুক্ত।" (আবু-দাউদ, কিতাব আল-লিবাস ৪০২০)
সুতরাং শুধুমাত্র জন্মদিন নয়, এমন কোন কাজ... যা ইহুদি, নাসারা বা অন্য কোন ধর্মের অনুকরনে হয়ে থাকে তাহলে তা বর্জনীয়, বর্জনীয় এবং বর্জনীয়।
আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের যে শরীয়ত দিয়েছেন তা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এই শরিয়ার উপর অটল থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاء الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
إِنَّهُمْ لَن يُغْنُوا عَنكَ مِنَ اللَّهِ شَيئًا وإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ, "এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবে না। যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু। (সূরা আল জাসিয়া, ১৮-১৯)
দয়া করে কাউকে কোন বিশেষ দিনের শুভেচ্ছা জানাবেন না। আমরা না জেনে কত বড় অন্যায়ই না করে ফেলছি।
*** প্রিয় ভাই ও বোনেরা, মনে রাখবেন, আমি কার ও শত্রু নই। ইসলাম কে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করার জন্য শুধুমাত্র চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনারা সবাই শিক্ষিত বলেই ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু, আজ আমাদের দেশের সামরথবান প্রায় সবাই জন্মদিন পালন করছে।সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাবা মা না জেনে, না বুঝে, তাদের অবুজ শিশুদের হাতে জন্মদিনের কেক, মোমবাতি ও ছুরি তুলে দিচ্ছে।অথচ, এত টাকা খরচ করে, এত লোকজনদের খাওয়ানোর আয়োজন করে হচ্ছেন পাপের ভাগিদার। যারা আল্লাহ ও তার রাসুল ( সঃ) এর আদেশ অমান্য করে হিন্দু, ইহুদী, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান অর্থাৎ অমুসলিমদের অনুকরণ ও অনুসরণ করবে, তাদের হাশর ও ওই সকল হিন্দু, ইহুদী, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান অর্থাৎ অমুসলিমদের সাথেই হবে, মুসলমানদের সাথে হবে না। তাহলে, এবার আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, যদি হাশরের ময়দানে আপনাকে অমুসলিমদের কাতারে দাঁড় করানো হয়, তাহলে তাদের অনুকরণ ও অনুসরণ করে তো আপনি তাদের সাথেই জাহান্নামে যেতে হবে। মনে রাখবেন, জাহান্নাম খুব কঠিন জায়গা, সেখানে কারও কোন ক্ষমা নেই। তাই, আজ থেকে মনে রাখবেন যে, মুসলমানদের জন্য কোন “ শুভ জন্ম দিন” অথবা “HAPPY BIRTH DAY” বলে আর কিছু নেই।
আল্লাহ্ আমাদের বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৩৮১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন