আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫৬:২৪ রাত
ভাষার মাসে আমাদের একটু ভাষা প্রীতি বৃদ্ধি পায়। ২১ শের রাতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো,আর দিনের সারাটা সময় নেতা নেত্রীর জ্বালাময়ী ইংলিশ বাংলিশ বকবকানি এবং মাইকে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারিগান , পাশাপাশি প্রয়াত নেতাদের বক্তব্য (যেমন হারানো দিনের গান) শুনে ভাষা প্রীতির যবনিকাপাত ঘটাই। সাথে এদিনকে নিয়ে দু'একদিন আবার পত্র পত্রিকায় বিশাল বিশাল কলাম চোখে পড়ে। অনেক আক্ষেপ, অনেক চাওয়া পাওয়া, ভাষার চেতনা নিয়ে অনেকেই লিখেন। অনেকেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় করনীয়, কিভাবে অমর্যাদা হচ্ছে তাও বিষদ ভাবে আলোচনা করেন। কিন্তু সব আলোচনা পর্যালোচনা, সমস্যা সম্ভাবনা, করনীয় বর্জনীয় দু'একদিনের মধ্যেই শেষ। বাকি এগারটি মাস আর কোন খোজ খবর নেই। তাই দু'একদিনে যে বিষয় গুলো ফুটে উঠে বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতিতে, বিভিন্ন জনের লেখনিতে সে বিষয়গুলোর আর কোন সুরাহা হয়না।
বছরের বাকিটা সময় এই নিয়ে কোন আলোচনা হয়না বলে আমাদের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে রায় দেয়া হয় উপনিবেশিক ভাষা ইংলিশ দিয়ে।সুপ্রিমকোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক ফাঁসির আসামি বুঝলই না তার ফাঁসি হলো কেন! শিরোনামে একটা কলাম লিখেছেন, খুব ভালো লেগেছে তার লেখাটা পড়ে।কিন্তু প্রশ্ন হলো বছরের বাকিটা সময় কি এ নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করা যায়না ? আমরা সবাই শহীদ মিনারে ছুটে চলি,কিন্তু কেন যাচ্ছি আমরা অনেকেই জানিনা। এই দিনে কি হয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও বলতে পারেনা। পারেনা, কারন বছরের বাকিটা সময় ভাষা নিয়ে কোন আলোচনা হয়না। আলোচনা হয়না এই দিনকে নিয়ে, এই দিনের আত্বদান কারী মানুষদের নিয়ে।
নতুন প্রজন্মের ৬০ ভাগেরও বেশি ছাত্র ছাত্রী সালাম বরকত রফিক জব্বারকে চিনেনা। আর কিভাবে চিনবে ? ৮/১০ বছর বয়সের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ের পড়া কি বড় হওয়ার পর আমাদের মনে থাকার কথা ! তাছাড়া ,বলা যায় আমাদেরকে জানানোও হচ্ছেনা। ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে আমাদেরকে নিত্য নতুন বিষয় জানানো হচ্ছে। আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য যে, যখন যে দল ক্ষমতায় আসেন তখন তাদের মত করে ইতিহাস তৈরী করা হয়। আর এতে করে মুক্তিযুদ্ধা হয়ে যান রাজাকার বা পাকিস্তানের চর, রাজাকার হয়ে যান মুক্তিযুদ্ধা।
আমার আজকের এই শিরোনামটিও একটি বিকৃত শিরোনাম। তাই বলে আমাকে আবার কেও মখা ভেবে নিজে প্রতারনার শিকার হবেন না। একটু সময়ের জন্য আপনিও এই শিরোনামের সাথে একমত হয়ে যান । তারপর আসুন দেখি এই নব্বইউর্ধ্ব মানুষটিকে আওয়ামীলীগ ও তার সরকার আজকের এই দিনে কি করে। অধ্যাপক গোলাম আযম একজন ভাষা সৈনিক হিসাবে সর্ব মহলে পরিচিত। তাই এব্যাপারে আমি কোন আলোচনায় যাচ্ছিনা। আসুন আমরা দেখি একজন ভাষা সৈনিক (ভুয়া নয়,যেমন অনেক ভুয়া মুক্তিযুদ্ধা আছেন) যিনি আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা,তাকে আজ আওয়ামীলীগ ও তার সরকাররের পক্ষ থেকে কি করা হত।
এক. ভাষা দিবসের সকল আলোচনার প্রাণকেন্দ্র হতেন অধ্যাপক গোলাম আযম। শেখ হাসিনার পাশে সর্বোচ্চ একটি চেয়ার সাজিয়ে রাখা হত অধ্যাপক গোলাম আযমের জন্য। বয়সের ভারে ন্যুজ অধ্যাপক আযমকে আজকের প্রোগ্রামে প্রয়োজনে কাধে করে হাজির করা হত । কেননা তিনি যে একজন সত্যিকার ভাষা সৈনিক।
দুই. প্রতি বছর অধ্যাপক গোলাম আযমকে একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পদক সহ যত ধরনের পদক পাদক আছে তা দেয়ার জন্য আওয়ামীলীগ নানারকম উপায় বের করতো।
তিন. এধরনের একজন ভাষা সৈনিকের লিখিত বই একুশে বই মেলায় সর্ব বৃহত বইয়ের স্টল করে বিক্রির ব্যবস্হা করা হত। কেননা তিনি যে ভাষা সৈনিকের পাশাপাশি একজন সাহিত্যিকও।
চার. তিনি যেহেতু বয়সের ভারে ন্যুজ তাই হয়তো কোনো অবস্হায়ই তাকে সরকারি বা দলীয় প্রোগ্রামে হাজির করা যায়নি, এই অবস্হায় অধ্যাপক আযমের বাড়িতে যেয়ে আওয়ামী প্রধান থেকে শুরু করে সকল নেতা কর্মীরা শুভেচ্ছা জানিয়ে আসতেন।তার শারিরিক খোজ খবর নিতেন।
পাঁচ. সাংবাধিকরা আজ অধ্যাপক গোলাম আযমকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে দাড়িয়ে থাকতেন তাদেরকে ভাষার কিসসা কাহিনী শুনানোর জন্য যাতে করে পত্রিকার পাতা ভরা যায়।
ছয়. জাতীয় সকল পত্রিকায় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিশাল এক ছবি এবং বিশাল বিশাল শিরোনামের কলাম শুভা পেত।
সাত. এই বয়েসী একজন ভাষা সৈনিকের কাছে প্রতিতযশা সাংবাধিক ও কলামিষ্ট ছুটে যেতেন ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে এবং ভাষা নিয়ে তাদের লেখার রশদ যোগাতে।
আট. কলেজ ভার্সিটির শিক্ষকমন্ডলি ও নানা পেশার মানুষ ছুটে যেতেন শুধুমাত্র একজন ভাষা সৈনিককে শুভেচ্ছা জানাতে।
নয়. অনেকেই অনেক ভাবে অধ্যাপক আযমের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করতেন।
দশ. সর্বোপরি আজকের বাংলাদেশে একজন ভাষা সৈনিক হিসাবে অধ্যাপক গোলাম আযমকে নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হত। পাঠ্যসূচীর অন্তরভূক্ত হত অধ্যাপক আযমের জীবনি।
তবে, তবে এর জন্য অধ্যাপক গোলাম আযমকে হতে হত শেখ হাসিনার পরম এবং চরম আনুগত্যশীল কর্মী।
বিষয়: রাজনীতি
২৯৫৮ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
এই জিনিসটা কি ? টুটতা তাঁরা ?
ধন্যবাদ।
রফিক সালাম শফিক জব্বার
ওরে বরকত তোমরা কোথায়রে
পদে পদে লাঞ্ছিত আজ
মোদের বাংলাভাষারে..।
আপনার সাথে আমি কোন বিতর্কে জড়িত হতে চাইনা বলে আপনার তির্যক মন্তব্যের সহজ জবাব দিয়েছি তবে কেন আপনি.........
এতেই বুঝা যায় আপনার উদ্দেশ্য মোটেও ভালো না।
তা না হলে এমন তুলনা করতেন না।
কারণ ইসলামের কথা শুনলে অনেকের মাথা ব্যাথা লাগে।
এই তুচ্ছ ভাষা সৈনিকের পদকের লোভ তার নাই এবং ছিলও না।
ধন্যবাদ।
তুচ্ছ ভাষা সৈনিকের পদকের চেয়ে আখেরাতে সর্বোচ্চ পুরষ্কারই হবে তাঁর জন্য সর্ব্বোচ্চ পাওনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন