" অমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ"
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৫৪:২৩ সকাল
(১)
“রক্ষীরা বলবে, তোমদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমানাদি সহ তোমাদের নবী আসেনি? তারা বলবে হাঁ৷ রক্ষীরা বলবে, তবে তোমরাই দোওয়া কর! বস্তুতঃ কাফেরদের দোওয়া নিঃষ্ফল হবে৷”
উপরের অনুবাদটি সুরা ‘আল মু’মিন’ এর ৫০ নং আয়াতের৷ আগের আয়াতে জাহান্নামের আগুনে অবস্থিত ভূক্তভোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নামের রক্ষক, ফেরশ্তাদের অনুনয় বিনয় করে আল্লাহর কাছে অন্ততঃ তাদের একদিনের শাস্তি লাঘব করার জন্য্ দোওয়া করতে বলায় রক্ষীরা এ জবাব দেবেন৷ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, ‘বস্তুতঃ কাফেরদের দোওয়া নিঃষ্ফল হবে৷
কাফের বলতে আমরা সাধারণতঃ অমুসলীমদেরই বুঝি৷ এটি সঠিক নয়৷ মুসলীম নামধারীদের মধ্যেও বহু কাফের রয়েছে, যারা জেনে বুঝে নামাজ তরক করল, তারা কুফরী করল, যারা কোন অভিযোগ ছাড়া তাগুতের আনুগত্য করল, তারা কুফরী করল৷ যারা আল্লাহর আইনে বিচার ফায়সালা করল না, তারা কুফরী করল৷ এ ছাড়া রসুল সঃ বলেছেন, যারা মালে ভেজাল দিয়ে বিক্রি করে, তারা আমাদের দলভূক্ত (মুমীন) নয়, যার প্রতিবেশী অনাহারে রাত্রীযাপন করে, তারা আমাদের দলভূক্ত (মুমিন) নয়৷
যেহেতু মুমিন নয় তবে হয় মুনাফেক নয় মুশরিক৷ গভীরে গেলে এরা সকলেই কাফের বলেই গন্য হবে৷ মুমিন ও মুসলীম শব্দ দুটি সমার্থক ও একের বদলে অন্যটি বব্যবহার হলেও এদের মাঝে সূক্ষ্ম একটু তফাৎ আছে৷ ইমান শুরু হয় অন্তরে আর শেষ হয় আচরণে৷ এ জন্যই বলা হয়েছে, ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুদ খুলু ফিস সিলমে কা ফ্ফা’৷ মুমিনদের পুরোপুরী ইসলামে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে৷ হীজরত পূর্ববর্তী মক্কার সাহাবীরা মুমিন হয়েছিলেন৷ তাদের মাঝে কোন মুনাফেক ছিল না৷ অপর পক্ষে, ইসলাম শুরু হয় আচরণে, শেষ হয় অন্তরে৷ মদীনার সাহাবীরা ছিলেন প্রথমে মুসলীম৷ আর তাই তাদের মাঝে মুনাফেকও ছিল৷ ‘বেদুইনরা বলে, আমরা ইমান এনেছি, বলুন, বরং তোমরা মুসলীম হয়েছো, তোমাদের অন্তরে এখনও ইমান প্রবেশ করেনি৷’অতএব, দুটোরই সমন্বয় প্রয়োজন৷ শুধু অন্তরে ইমান থাকাই যথেষ্ট নয়, বাহ্যিক আচার আচরণে ইসলাম থাকতে হবে৷ আবার শুধু বাহ্যিক আচার আচরণে ইসলাম থাকলেই হবে না অন্তরে ইমান থাকতে হবে৷
শুরু করেছিলাম সুরা আল মুমিনের আয়াত দিয়ে৷ পবিত্র কোরআনের ষষ্ঠ মঞ্জীলের ১৩টি সুরার চারটি, সুরা যুমার, সুরা মু’মিন, সুরা হা মীম আস সাজদাহ ও সুরা আশ শুরা, এর বিষয় বস্তু তৌহীদ৷ যার মধ্যে সুরা আল মু’মিনের অন্তর্নিহীত বিষয় বস্তু তৌহীদে আমলী দোওয়া৷ সেই দোওয়ার উপরেই কিঞ্চিত লেখার ইচ্ছা নিয়ে শুরু করেছিলাম৷
বহু দূর থেকে একজন মুসলীম মুসাফীর ক্লান্ত শ্রান্ত ধূলী ধুসরিত হয়ে ক্বাবায় এলেন, আকাশের পানে দু হাত তুলে দীর্ঘক্ষন আল্লাহর কাছে দোওয়া চাইলেন, অতঃপর ‘জাবলে রহমতের’ উপর উঠেও একই ভাবে দীর্ঘক্ষন দোওয়া চাইলেন৷ আল্লাহর নবী বললেন, তার দোওয়া কবুল হয়নি৷ কারণ তার পোষাকে আর যে খাদ্য খেয়ে তার শরীর গঠিত হয়েছে তাতে হারামের পয়সা আছে৷ এ ছাড়া দোওয়া ও ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত হল, ‘মুখলেসিনা লাহুদ্দীন’৷ ইবাদত ও দোওয়া তখনই গ্রহণ যোগ্য হবে যখন সমস্ত মন্দ হতে নিজেকে আলাদা করে একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য স্বীকার করবে৷
সূদ, ঘুষ, অন্যের হক মেরে, ফাঁকি দিয়ে, ইসলামকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করে, অর্জিত সম্পদে শরীর গড়ে, পোষাক পরে, তাগুতের আনুগত্য করে, আল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতি করে দোওয়া করলে সুফল আসবে কিনা তা আল্লাহই জানেন৷
আল্লাহ আমাদের ‘মুখলেসীনা লাহুদ্দীন’ হওয়ার পথকে সুগম করে দিক৷ আমিন৷
(২)
আমি কানাডার টরোন্ট শহরে থাকি৷ যাদের এ দেশে আমাদের ধর্মীয় অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নাই বা ভুল ধারণা আছে তাদের সামান্য ধারণা দিয়ে আসল কথায় আসব৷ আগেই বলে রাখি এটি একান্ত আমার নিজস্ব অবজার্ভেশন৷ কারও দ্বিমতও থাকতে পারে৷
এখানে জীবনের মূল্য দেওয়া হয়৷ ধনী গরীব, মালিক কর্মচারী, পুরুষ মহীলা, মুসলীম অমুসলীম ভেদাভেদ নাই৷ সাম্প্রদায়ীকতা থাকলেও সেটা তার অন্তরে, আইন স্বিকৃত নয়৷ কোন অপরাধে ক্ষমা নাই৷ আইনে ক্ষমা পেলে আলাদা কথা৷ বহু ক্ষেত্রে নগদ লেনদেন নাই৷ রাস্তায় পুলিশ জরিমানা করলেও তা নির্দিষ্ট অফিসে গিয়ে রিসিটের বিনিময়ে দিতে হয়৷
হাঁ, ধর্ম পালনে এখানে কারো কোন বাধা নেই৷ যেকেউ তার ধর্ম পালন করতে পারে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে, তাতে সরকারের তো নয়ই পরিবার থেকেও কোন বাধা আসে না, আর আসবেইবা কেমন করে? আমাদের মত এখানে পারিবারিক বন্ধন নেই৷পোষাকের ব্যাপরেও কোন বিধি নিষেধ নেই, যদিও কোন বাঙ্গালী লুঙ্গী পরে বাড়ির বাইরে যায়না৷ এটা নাকি তাদের লজজা দেয়৷ অন্যান্য জাতির এত লজ্জা নেই৷ বার্মীজ ও শ্রীলংকানদের কদাচিৎ লুঙ্গীতে দেখা যায়৷ বোরখা হিজাবে কোন বাধা নেই৷ মসজীদ বানাতেও বাধা নেই৷ বাধা আছে হৈ হল্লায়৷ হাজার হাজার গাড়ি রাস্তায় চলছে, কোন সাইরেন নাই৷ সাইরেন আছে শুধু ফায়ার, এ্যম্বুলেন্স ও ইমার্জেন্সী পুলিশের গাড়িতে৷ প্রকাশ্যে উচ্চ শব্দ ও মাইক নিষেধ, আর তাই মসজীদের বাইরে আজান হয় না৷ এখানে ইভটিজিং হয়না, তা মেয়েরা যে পোষাকেই যাক৷ তার কারণ এখানে আছে আইনের শাসন৷ অবৈধ পার্কিং এর জন্য মেয়র নেম প্লেট লাগানো কারও পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়৷ ষ্টেডিয়াম ভাড়া নিয়েও ঈদের নামাজ হয়৷ সেখানে স্থানিয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন, বাণী দেন৷
এখানে প্রায় সব দেশের লোকের বাস আছে৷ যার যার দেশের খাবার আমদানির ব্যস্থাও আছে৷ বাংলাদেশেরও শাক সবজী ফ্রোজেন মাছ, চানাচুর বিস্কুটেরও অভাব নেই৷ মুসলীমদের গ্রোসারী দোকান গুলোতে হালাল গোশ্তের সাইন বোর্ড থাকে৷ এখানে গ্রোসারীতে চাল ডাল তেল লবন, মশলার সাথে মাছ মাংস শাক সবজী মিষ্টি সবই পাওয়া যায়৷
অন্য মুসলীমদের খবর জানিনা, বাংলাদেশী মুসলীমদের হালাল হারামে বিচক্ষনতার কথা লেখার জন্যই এ লেখা৷
আমরা খুবই হালাল প্রীয় সচেতন মুসলীম৷ হালাল সাইন ছাড়া কোন দোকানের গোশ্ত কিনিনা৷ একবার আমার বাড়ি দাওয়াতে আসা হিজাব পরিহীতা মুরুব্বী আমার স্তীকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কোন দোকানের গোশ্ত কিনি৷ মাশাআল্লাহ, সচেতনতার প্রশংসা করতেই হয়৷ কিন্তু সমস্যা হল, খোঁজ নিয়ে জানাগেল, উনার স্বামী ক্যাশে কাজ করেন, আর ওয়েলফেয়ার খান৷ যারা কাজ করতে অক্ষম, অন্য কোন ইনকাম নেই, পেনশনেরও উপযুক্ত নয়, তাদের বেঁচে থাকার জন্য মাসোহারা কিছু খয়রাতী সাহায্য আছে, যাকে ওয়েল ফেয়ার বলে৷ সরকারের লিখিত পারমিশন ছাড়া এ দেশে কেউ বৈধ ভাবে কাজ করতে পারেনা৷ আর বৈধ ভাবে কাজের পারিশ্রমিক চেকে পরিশোধ হয়, তাতে মালিক কর্মচারী উভয়কেই ট্যাক্স দিতে হয়৷ আর ট্যাক্স দেওয়া মানেই কর্মচারীর নিজস্য ফাইল যা সরকারে কাছে আছে তাতে জমা হওয়া৷ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, বিশেষ করে এশিয়ান, অবৈধ ভাবে কাজ দিয়ে থাকে, সরকারের চোখ এড়িয়ে৷ এতে কেউ ট্যাক্স দেয়না৷ অবশ্য এতে বিশেষ ভাবে এ দেশে পড়তে আসা ছাত্র ছাত্রীদের উপকার হয়৷৷ কথা হল মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে,আইন অমান্য করে, অবৈধ কামাইকরে ও খয়রাতী সাহায্য নিয়ে হালাল মাংস খোঁজা বা খাওয়া কতখানি শরিয়ত সম্মত আমার জানা নেই৷ এমনই ক্যাশে কাজকরা সরকারী বাসায় বাস করা, ওয়েলফেয়ার নেওয়া সুস্থ সবল স্বামীর গৃহিনী বললেন, আপনার ভাই হালাল হারাম সম্পর্কে খুবই সচেতন৷ ওয়েল ফেয়ারের টাকা পেলেই ঘর ভাড়া দিয়ে দেয়, তা দিয়ে কোনদিন খাবার জিনিষ কেনেনা৷ এখানেও ঐ একই প্রশ্ন, হালাল কি শুধু খাবার কেনায়? আর অবৈধ পয়সা আলাদা পকেটে রাখলে কি বৈধ হয়ে যায়?
সরকারী বাসা হল, সরকারের নিজস্য অনেক বাড়ি আছে যা স্বল্প আয়ের ফ্যামেলীর জন্য৷ ইনকামের ৩০% টাকা ভাড়া বাবদ দিতে হয়৷ অনেক অবস্থা পন্য লোকেরা ইনকামে কারচুপি করে বা ক্যাশে কাজ করে ঐ ঘর নিয়ে থাকে৷ ট্যাক্সী চালালে ইনকাম কম দেখাবার যথেষ্ট সুযোগ আছে৷ তাই অনেক ট্যাক্সী চালকরাও সরকারী ঘরে থাকে৷ মজার বিষয় হল এরা কেউই হালাল গোশ্ত ছাড়া কেনে না৷ শুধু তাই নয় অনেকে ফতওয়াও দেন যে সরকারী পয়সা যে কোন ভাবে হোক নেয়া হালাল৷ অনেক নামাজী মুসুল্লী হুজুকেও এ গ্রুপে দেখা যায়৷ আল্লাহ এনাদের হালাল হারামের তমিজ দিক৷ আমিন৷
বিষয়: বিবিধ
২৮৫৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উপস্হপনার নান্দনিক সাবলীলতা পোস্টের 'আকারের দীর্ঘতা'কে ছাড়িয়ে গেছে! ভাল লাগার মুগ্ধ অনুভূতি শেষ পর্যন্ত বজায় রয়ে উপলব্ধিতা কে নতুন ভাবে তুলে ধরল!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে!
আল্লাহ যেন আমাদের কে হারাম-হালালের যাবতীয় সীমা মেনে চলে পুর্ণ মুমিন মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠার তৌফিক দেন!আমিন!
শ্রদ্ধেয় শেখের পোলা!মন্তব্যটা আমার অন্তর থেকেই!আবারো বড় মনের মানুষের যথার্থতা ফুটে উঠেছে প্রতিউত্তরে!
খুব ভাল লাগল ।
ইউরোপ, আমেরিকা , কানাডা রাষ্টিয় ব্যাবস্থা মনে হয় একই রকম ।মুসমানদের জন্য সত্যিকার মুসলমান হিসাবে বাস করা এসব দেশে অনেক কঠিন ।
আমাদের এখানে বর্তমানে যে সব বাংলাদেশী আছে এদের বেশীর ভাগ , ওল্ড হোম ,টেক্সি চালক ,রেষ্টোডেন্টের মালিক বা কাজ করে আর কিছু আছে ওয়েল ফেয়ারে ।অল্প কিছু আছে মানে হাতে গুনা কয়েকজন ভাল পজিশনেও আছে তবে আমরা যারা এখানে লেখা পড়া করছি মানে আগামী প্রজন্ম সামনে বেশীর ভাগই ভাল পজিশনে চলে যাব । ইনশা আল্লাহ ।
এখন চাচাজান উপরের চার শ্রেনীই একে আপরকে বলছে তার ইনকাম হালাল না ।
যে ওয়েল ফেয়ার খাচ্ছে সে বলছে রেষ্টোডেন্টে
মদ বেচা হয় এটা তাই এটা হারাম ,ওল্ড হোমে পর্দার খেলাপ হয় তাই এটা হারাম । আর টেক্সিতে ট্যাক্স ফাকি দেয়া এটা ও হারাম ।আমি ওয়েল ফেয়ার খাই এটা হালাল কারন আমার কাজ নেই আমি নাগরিক অধিকার হিসাবে এটা পাচ্ছি ।( তবে কেউ যদি কালো কাজ করে ওয়েল ফেয়ার নেয় তাহলে ভিন্ন কথা )
একবার একটা প্রগ্রামে একজন প্রশ্ন করেছিল ওয়েল ফেয়ার এর টাকা দিয়ে হজ্জ হবে কিনা ?
উনার নাম বল্লে হয়ত চিনবেন তাই আমি নামটা বলব না । উনি জবাব দিয়েছিলেন কেন হবে না । কষ্টের টাকা দিয়ে হজ্জ করলে সেটা আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহনীয় ।ওয়েল ফেয়ার থেকে আপনি যে টাকা পাচ্ছেন সেটা তো মিনিমাম জীবন ধারনের জন্য আপনাকে দেয়া হয়।সেখান থেকে আপনি কষ্ট করে টাকাটা হজ্জের জন্য জমা করেছেন ।
এরকম ভাবে একে অন্যের ইনকাম হালাল হারামের ফতুয়া দিচ্ছে ।
আসলে এগুলো নিয়ে আমি মাঝে মাঝে খুব বিভ্রান্তিতে বা চিন্তিত হই ।
চাচাজান আপনি এসব বিষয়ে একটু পরিস্কার করে বলবেন কি ।যদিও আমি কখনো এগুলোর সাথে জরিত হব না । ইনশা আল্লাহ
তবু আমার জানার খুব ইচ্ছা ।
আমাদের ইনকাম যদি হালাল না হয় আমাদের কোন ইবাদতই তো কবুল হবে না ।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন