হালাল উপার্জন বনাম হারাম উপার্জন (পরবর্তী কিস্তি)।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৪৬:৫৬ বিকাল
আরো একটি বিষয় এখানে গভীর ভাবে ভাবার আছে। যে মানুষটি স্বাভাবিক ভাবে জীবিকা গ্রহণ করে ৮০/৮৫ বছর হায়াৎ নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে তার প্রভূর সাথে মিলিত হতে যাবেন, তাঁর মৃত্যুটা হতো সহজ স্বাভাবিক, বয়সজনিত স্বাভাবিক মৃত্যু। এটাও হাদিসেরই বাণী যে একজন মুত্তাকীর জীবন হরণ করতে আযরাঈল ফিরিশতা নমনীয়ভাবেই তা হরণ করেন, যাতে তাঁর কষ্ট না হয়। কিন্তু, যে ব্যক্তি তার স্বাভাবিক জীবিকা গ্রহণের পরিবর্তে অন্যায়ভাবে ৬০ বছরেই সব রিযিক একত্রে গ্রহণ করে নেয়, সেতো বৃদ্ধ হয় না। অন্যায় ভাবে ঘুষ খেয়ে বা পরের ধণ হরণ করে রোজ রোজ পোলাও কোর্মা খেয়ে সে তো তখন হয়ে পড়ে কোরবানীর গরুর মতো। তার গর্দান মোটা, পেট মোটা, ভূঁড়ি হয় তিনহাত উঁচু। অতএব কিভাবে স্বাভাবিকভাবে তার রূহ হরণ করবেন মৃত্যুদূত? তখন, তাঁকে অবলম্বন করতে হয় বাঁকা পথ। এই কোরবাণীর গরুটাকে বাগে আনতে তাই তার জন্য পাঠানো হয় মরণব্যাধি ক্যান্সার অথবা সমজাতীয় অন্য কোন কঠিন রোগ। কারো জন্য বা পাঠানো হয় সড়ক/রেল/ জাহাজডুবি নামীয় দূর্ঘটনায় মৃত্যুর পরোয়ানা, কারো জন্য পাঠানো হয় শত্রুর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে (কোরবাণীর গরুর ন্যায় জবাই) নিহত হবার ঘটনা।
এই ছোট্ট জীবনে ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা অনেক দেখেছি। (তাই বলে কোন সাধু সজ্জনের যে এরূপ ব্যাধি হয় না তা নয়, সম্মানিত পাঠক পাঠিকাগণ বুঝতে ভূল করবেন না যেন)। আহা! কি করুণ, বেদনাদায়ক সেসব মৃত্যু। গলার ক্যান্সার হয়ে এমন অনেকে ২/৩ বছর বেঁচে থাকেন জীবম্মৃত হয়ে, ঘরের সবাই মজাদার সব খাবার খাচ্ছে তার সামনে আর তিনি গলায় ছিদ্র করে পাইপের মাধ্যমে তরল বিস্বাদ খাবার গ্রহণে বাধ্য হন, দিনে দিনে নাদুস নুদুস চেহারা হয়ে পড়ে একবোরে কাষ্টখন্ডের মতো, মৃত্যুর আগে হয়ে পড়েন একটা নরকঙ্কাল যেন। নিজের কামাই নিজে খাবারো সুযোগ হয়না আর। এদিকে চিকিৎসকের ফি দিতে দিতে কিংবা ঘন ঘন চেক আপের জন্য সিংগাপুর, ব্যাংকক দৌড়াদৌড়িতে বিগত ২০/২২ বছরের অবৈধ কামাইয়ের প্রায় সবটুকুই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তখন হয়তঃ বেচারা বসে বসে আপন মনে ভাবে, হায় একি করলাম আমি। অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ হরণ করে নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স স্ফীত করে এই কি শেষ পরিণতি? এর চাইতে তো অর্ধ বেলা/ পুরোদিন উপোস করে হালাল রুজির উপর ধৈর্য্য ধারণ করে থাকাই তো ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু তার এই বোধদয় তখন আর কোন কাজেই আসেনা। নিজের মনে নিজেকে গালি দেন আর নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকেন।
হালাল পথে উপার্জন করলে আজকে তার যে অবস্থান হতো সমাজে বা পরকালে সেটা হতো ঃ
১) ৬০ বছরের স্থলে ৮০/৯০ বছর দীর্ঘ হায়াৎ পেতেন;
২) সমাজে পরিচিত হতেন একজন পরহেজগার মুত্তাকীরূপে;
৩) পরিবার পরিজনকেও গড়ে তুলতে পারতেন নিজের আদর্শের ছাঁচে;
৪) শেষ যাত্রা হতো হাজারো গুনমুগ্ধদের জানাজা পাঠের মাধ্যমে;
৫) বংশধরদের জন্য রেখে যেতে পারতেন একটা আদর্শিক পরিচয় (মূলধন); এবং
৬) সামান্য হলেও কিছু সম্পদ যার প্রতিটি বিন্দু হতে বেরুতো হালালের খুশবু, সামান্য হলেও বরকতের দিক দিয়ে হতো অকল্পনীয়ভাবে বিশাল।
৭) পরকালে বিনা বিচারে চলে যাবেন জান্নাতে।
কিন্তু হারাম উপার্জনের ফলে এখন তার যে পরিচয় /অবস্থান তা হলো:
১) আয়ু তার ২০/২২ বছর কমে গেল;
২) মৃত্যুটা হবে অতি কঠিন এবং চরম কষ্টদায়ক উপায়ে;
৩) সমাজে পরিচিত হবেন ধোঁকাবাজ, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ হিসেবে;
৪) নিজ পরিবার ও সন্তানদেরকেও সেই ধাঁচেই গড়ে তুলবেন;
৫) তাদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট রেখে যেতে পারলেন না; যা থাকবে তাও ঐ অপদার্থ অকর্মা সন্তানদের দ্বারা অচিরেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে;
৬) তার জানাজায় আসবে দু চারজন, যারা তারই সহযোগী/সহচর ছিল। ফলে জানাজাটা পর্যবসিত হবে একটি অর্থহীন অনুষ্ঠানে।
৭) পরকালে নিজেতো জাহান্নামে যাবেনই, সঙ্গে আরো অনেকের জাহান্নামে যাবার ব্যবস্থা করে গেলেন।
সুতরাং, আসুন আমরা সবাই সময় থাকতেই সাবধান হই। ধন্যবাদ সবাইকে।
বিষয়: বিবিধ
১৪২২ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অাল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা অান হারামিকা ওয়াগনিনি বিফাদ্বলিকা অাম্মান সিওয়াক
মন্তব্য করতে লগইন করুন