খুনি ছাত্রলীগের আমলনামা!!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:২৮:৫০ সকাল
ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে এসে অতিমাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। দিন যত যাচ্ছে বেপরোয়া ছাত্রলীগের বর্বরতা আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের মেধাবী ছাত্রদের এখন তারা টার্গেট করে হত্যার মিশনে নেমেছ। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যবধি ছাত্রলীগের অপকর্ম একদিনের জন্য থেমে থাকেনি।
বিগত ৯ বছর সময়ের মধ্যে এমন দিন কমই খুঁজে পাওয়া যাবে যেদিন তারা কোনো অপকর্ম করেনি। প্রতিদিন রাজধানী, দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, থানা, ইউনিয়ন কিংবা গ্রামে খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী ধর্ষণের মতো কোনো না কোনো ঘটনা তারা ঘটিয়েই যাচ্ছে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ছাত্রলীগ এখন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়েও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পরই বেপরোয়া হয়ে উঠে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন-হত্যা আর নারী ধর্ষণ থামাতে ব্যর্থ হয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের দেখা-শোনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। আ’লীগের নেতারাও একাধিকবার বলেছিলেন তারা আর ছাত্রলীগের দায়ভার নিবেন না।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের শুরুতে ছাত্রশিবিরের ২ জন নেতাকে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রলীগ তাদের ক্ষমতা অপব্যবহারের যাত্রা শুরু করেছিল। ২০০৯ সালের ৯ মার্চ জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার শিবির সভাপতি হাফেজ রমজান আলীকে হত্যার পর ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারি মেধাবী ছাত্র শরিফুজ্জামান নোমানীকে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের হত্যা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল না। সে ছিল একজন দর্জি। ছাত্রলীগের সসস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরপরাধ বিশ্বজিৎও রক্ষা পায়নি। বিশ্বজিৎকে নৃশংসভাবে হত্যা করার দৃশ্য দেখে গোটা দুনিয়ার মানুষ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
এরপর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে হাতে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলী করার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন গুন্ডামী শিখানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় না। গুণ্ডাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত এই অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তারপর সিলেট এমসি কলেজের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসগুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সেখানে গিয়ে চোখের অশ্রু ফেলে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের মতো সুন্দরভাবে অভিনয় করে আসলেন। গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নাম প্রকাশের পরও আজ পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। কিছু দিন আগে আবারও নতুন করে তৈরি করা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ওদেরকে আইনের আওতায় না আনার কারণেই বার বার ছাত্রাবাসে হামলা-ভাঙচুরের দুঃসাহস দেখাতে পারছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি আগের চেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। তারা এখন ঘোষণা দিয়েই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে একটি ইসলামিক পেইজে লাইক দেয়ার কারণে মুহসিন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ৫ জন শিক্ষার্থীকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার বনী নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বার বার বলছে ‘আমাকে এক গ্লাস পানি দিন। তারপর আবার মারেন। না হলে আমি মারা যাব। প্রচণ্ড পানির পিপাসা লাগছে।’ কিন্তু, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পানি না দিয়ে উল্টো নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত কয়েকদিন আগেও শিবির সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ।
এসব নিয়ে এখন সর্বত্রই চলছে সমালোচনা। ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারি ও প্রতিমন্ত্রী পলকের নির্দেশের পরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কেউ কেউ বলছেন, ছাত্রলীগ যেভাবে প্রকাশ্যে আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে একের পর এক নিরপরাধ ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলে পড়ছে, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনই না থামালে অভিবাবকরা তাদের সন্তানকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্নই দেখবে না। এটা নিশ্চই একটা দেশের জন্য সুখকর হবে না।
উৎসঃ অ্যানালাইসিস বিডি
বিষয়: রাজনীতি
৮৪৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন