বাসার কাজের লোক =============
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৩১:৫২ সকাল
"রসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে ,অন্যের জন্যেও তাই পছন্দ করে" ---সম্ভবত বুখারী বর্ণিত..
আমরা প্রায়ই কাজের লোকর উপর অত্যাচারের কাহিনী শুনি, তাদের বিষাদময় জীবনের কাহিনী শুনি আবার কাজের লোক কর্তৃক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও অনেক রয়েছে। কিন্তু ঘটনাগুলোকে অনেককাংশেই কমিয়ে আনা যায় যদি আমাদের সদিচ্ছা থকে। উপরোক্ত হাদীসের বাস্তবায়ন হলে এই ঘটনা খুবই সাফল্যজনকভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।
বহু কাজের লোক আছে , যারা গ্রাম থেকে ঢাকা,চিটাগং শহরে আসে কিন্তু কিছুদিন পর তারা চলে যায়। অথবা বাড়ি ফিরে যাবার জন্যে উদগ্রীব হয়। কখনও পালিয়েও যায়। এর পেছনে কিছু কারন রয়েছে। এরা গ্রামের উম্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠেছে, শহরের মুরগীর খাচার মত বাসার ভেতরে এদের ভালো লাগেনা। কিন্তু এটা মিনিমাইজ করা যায়। কারন মানুষ একন প্রানী যার সহনশীলতা রয়েছে এবং তা বৃদ্ধি করা যায়।
১. যখন তারা শহরে আসবে, তাদের প্রথম দিনেই কাজের প্রতি আকৃষ্ট করা যাবেনা। বরং প্রথম দিন তাদেরকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে হবে। কারন এসব গরিব মানুষের সন্তান ভালো কাপুড় পায়না। এদেরকে প্রথমদিন বাজারে নিয়ে গিয়ে বেশ মানসম্মত কাপুড় কিনে দিতে হবে,যা সে পছন্দ করে। আর যদি আমরা মুত্তাকী হই, তবে নিজের জন্যে যে মানের কাপুড় কিনি এবং যেমন কাপুড় নিজের স্ত্রী,বোন,মা এদের জন্যে পছন্দ করি, ঠিক তেমনই কাপুড় সেই মেয়েটির জন্যে পছন্দ করব। এটাই উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে। এটা করলে প্রথম দিনেই সেই মেয়েটি(সাধারনত মেয়েরাই কাজ করে বাসায়) উক্ত বাসার কর্তা,কতৃ সম্পর্কে বিশাল একটি ধারনা লাভ করবে এবং তার মন সাই দেবে এই বাসায় কাজ করতে।
২. এরপর মেয়েটিকে ভালো ও মানসম্মত খাবার খাওয়াতে হবে। যদি নিজেরা বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খাই(নিজেদের সঙ্গতি অনুসারে কোনো রেস্টুরেন্ট) তাহলে সেই মেয়েটিকে পাশাপাশি একই চেয়ারে বসিয়ে পরিবারের সদস্যের মত করে একই রকম খাবার খাওয়াতে হবে। এটাই সুন্নাহ। এটা করলে সেই মেয়েটি নিজেকে পরিবারের দায়িত্বশীল একজন ভাববে এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিজের উপর কর্তব্য মনে করবে। সে হবে কর্যানকামী।
৩. এরপর অত্যন্ত সুআচরনের সাথে তাকে রাখতে হবে। প্রথমদিন শপিং শেষে বাসায় ফিরে তাকে পুরো ঘরবাড়ির সবস্থান দেখাতে হবে। এরপর তার থাকার স্থানটি দেখাতে হবে এবং তার বাথরুমে নতুন ব্রাশ,পেস্ট,সাবান এসব রাখতে হবে। এটা পাওয়া তার হক। তার থাকার স্থানটি যেমনই হোক অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। এটা তার মানুষিকতাকে সুন্দর করবে এবং পরিবারের স্বাস্থ্যও এর ভেতর রয়েছে।
৪. তারসাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করতে হবে। তার পরিবার,পরিবেশ সকল বিষয়ে জানতে হবে। তার ভালোলাগা মন্দলাগা এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। এতে তার সম্পর্কে যেমন বালো একটি ধারনা তৈরী হবে, তেমনি সেও বাড়িওয়ালা থেকে একটা ধারনা পাবে। আর মনেযোগ নিয়ে তার কথা শোনার কারনে সে নিজেকে ভাগ্যবান ভাববে। আর এভাবে সে খুশী মনে সার্ভিস দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হবে। নিজেই জানতে চাইবে তাকে কি কি করতে হবে।
৫. তার ছবি তুলে রাখতে হবে। এবং তাকে সুন্দর করে বলতে হবে, যে দেশের আইন হল যারা ডমেস্টিক হেলপার বা গৃহকাজে সহায়তাকারী(কাজের মেয়ে শব্দটি একটি খারাপ অর্থ প্রকাশ করে,সুন্দর শ্বদচয়ন করতে হবে) তাদের এক কপি ছবি স্থানীয় থানায় জমা রাখতে হয়,তাই আমরা আইন অনুসরন করছি। এটা তোমার নিরাপত্তার জন্যেই। এতে তার মনের গহিনে কোনো কু চিন্তা থাকলে সেটা সে নিজেই দমন করবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। কারন মানুষ সুযোগ পেলে অনেকসময় তার খারাপ স্বভাব চরিতার্থ করে।
৬. এরপর সেদিনের মত তাকে বিশ্রাম দিতে হবে। সে ভালোকরে বিশ্রাম করবে।
৭. পরের দিন তাকে তার কাজ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। এবং প্রত্যেকটি কাজ আমি যেভাবে চাই বা যেভাবে করা উচিৎ সেটা বুঝাতে হবে সুন্দর করে। তাহলে সে কাজ শিখবে এবং ভুল কম করবে। তাকে খুশী রাখতে হবে।
৮. এই পয়েন্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে যখন কোনো কাজ করবে, সেটা মোটামুটি ভালো হলেই তাকে অনেক প্রশংসা করতে হবে। তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। আবার তার উপর অতিরিক্ত বোঝা না চাপে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
৯. তার পরিবারের লোকেদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ঈদের সময়গুলোকে তাদের বখশিশ দিতে হবে এবং বাড়িতে যেতে দিতে হবে। সে সময় তার পিতা-মাতা,ভাইবোনদের জন্যে কিছু উপহার দিলে, সেই মেয়ে খুব কৃতজ্ঞ থাকবে। যদিও আইন অনুযায়ী এটা তার ব্যক্তিগত খরচ, কিন্তু গৃহকর্তা এটাকে সহযোগীতা করলে তার ফলাফল হবে অনেক ভালো।
১০. পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেলে তাকেও নিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে তাকে বাইরে কোনো পার্কে নিয়ে যেতে হবে। এতে তার একঘেয়েমী ধুর হবে।
মনে রাখতে হবে সে একজন আল্লাহর বান্দা/বান্দী। রসূল(সাঃ) বলেছেন,,সাবধান..তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল,,পিতা তার পরিবারে দায়িত্বশীল। ......তোমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে অধিনস্তদের ব্যাপারে। আরেক হাদীসে বলা হয়েছে আখিরাতে দায়িত্বশীলদেরকে শেকল পরিহিত অবস্থায় উঠতে হবে, অনিস্তরা তার ব্যাপারে অভিযোগ প্রত্যাহার করলে বা ভালো রিপোর্ট দিলেই কেবল ছাড়া হবে।...
অন্যের দায়িত্ব গ্রহন করা মানে ফাসির দড়ি গলায় পরা। ফলে সেই অধিনস্তদের সাথে অবশ্যই ন্যায় বিচার করতে হবে। এর ফলাফল দুনিয়াতে কর্যান এবং আখিরাতেও কল্যান। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন !
বিষয়: বিবিধ
১২৬৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তেমনি , কাজের লোকেদের শুরুতেই শপিংয়ে নিয়ে গেলে তাদের নাঁক উঁচু হয়ে যাবে । সে কিসের জন্য এখানে এসেছে সেটা ভুলে যাবে ।
একটা সীমা তার ও গৃহস্থের মাঝে যে আছে সেটা বুঝিয়ে রাখতে হবে , তবে সেটা আচরণে ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে।
কাজের লোকদের দেখা যায় বাড়ির কেয়ার টেকারের সাথে সময় ও সুযোগ পেলেই গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করতে । এক্ষেত্রে কেয়ার টেকারের কাজই হল কাজের লোককে অন্য বাসায় কাজ করবে কি না ( ভাল বেতনে) সেটার জন্য ফুসলানো। এটাতে ভালই টোপ গেলে কাজের লোক এবং তাতে সংশ্লিষ্ট গৃহস্থের দফারফা ।
বর্তমানে গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার হওয়ায় এবং মহিলারা ঘরের কাজের চেয়ে টিভি সিরিয়ালের কাজ বা বাইরের কাজের প্রতি বেশী মনোযোগী হওয়ায় বাসার কাজ তথা ঘর সংসার রক্ষনাবেক্ষনের কাজ কাজের লোকের উপরেই ন্যস্ত করা লাগে । অথচ ঘর সংসার দেখভাল করার কাজ বাড়ির মহিলাদের উপরই ন্যস্ত হবার কথা । তাদেরই দ্বায়িত্ব তাদের স্বামীর সংসারের হেফাজত করা (স্বামীর অবর্তমানে ) আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে।
আগেরকার মহিলারা তাদের স্বামীর সংসারে এটা করতেন স্বতঃস্ফুর্তভাবেই এবং সেটা তাদের মেয়েদেরকেও শেখাতেন , সেভাবে গড়ে তুলতেন।
কাজের লোকদের মাধ্যমে ছেলে মেয়েদের লালন পালন করা আর নিজে লালন পালন করার মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?
[অফ দ্যা টপিক : রাসূল (সাঃ)এর আমলের গৃহ পরিচারিকা আর আমাদের আমলের গৃহ পরিচারিকাদের মধ্যে কি পার্থক্য আছে?]
মন্তব্য করতে লগইন করুন