রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম কায়েমের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধি ও গণতন্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:১৩:১৬ রাত
পূর্বের লেখা
বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সর্বোত্তম কর্মপদ্ধতির সন্ধান
ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষকে পরিশুদ্ধ করা ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও সওয়াবের কাজ -এতে কোনো সন্দেহ নেই। দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে এবং অনেক পীর সাহেবদের তাযকিয়া মূলক কাজের ফলে আমাদের সমাজে ব্যক্তি সংশোধনের এই কাজটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই হচ্ছে। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া এর সুফল ও ভালো দিকই বেশি।
ইসলামের আহকাম, বিধি-বিধান সম্পর্কে মুসলিমদেরকে সজাগ ও সচেতন করা, মুসলিমদেরকে তাদের প্রত্যাহিক দৈনন্দিন হালাল ও হারাম সম্পর্কে সম্যক অবগতি অর্জনের জন্য এবং আগ্রহীদেরকে কায়দা-আমপাড়া থেকে পর্যায় ক্রমে একেবারে সিহাহ সিত্তাহ এরপর ক্ষেত্র ভেদে ইফতা (ফতোয়ার উচ্চতর পিএচডি) তাফসীর (কুরআনের ব্যাখ্যার উপর উচ্চতর পিএচডি) উলূমুল হাদীস (হাদীস শাস্ত্রের উপর উচ্চতর পিএচডি) উলূমূল আরাবিয়্যা বা আল আদাবুল আরাবিয়্যা (এ্যারাবিক গ্র্যামার এবং এ সংক্রান্ত উচ্চতর পিএচডি) ইত্যাদির বিভিন্ন দূর্লভ ও কঠিন একাডেমিক নলেজকে সকল মুসলিমদের একেবারে দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কওমী মাদারেস গুলো যেই অকল্পনীয় অবদান আমাদের এই দেশে এবং একই সূত্র ধরে সারা পৃথিবীতে রেখে যাচ্ছে, তার কোনো বিকল্প আমার দৃষ্টিতে আজ পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারে নি। এমনকি এই উপমহাদেশে কুরআন ও সুন্নাহর টেক্সটকে হৃদয়ের গভীরে সজতনে ধারণ করা এবং দুনিয়াবী নানাবিধ স্বার্থ ও রঙিন স্বপ্নকে ধুসর করে হলেও ইলমে নববীকে সংরক্ষণ, সমৃদ্ধকরণ এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে ‘বাল্লিগু আন্নি’র এই আমানতকে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে দারুল উলূম দেওবন্দ এবং তার পর তার পরবর্তী কওমী মাদ্রাসা গুলোর অবদান নি:সন্দেহে এক বিশাল উচ্চতায় ছিলো, আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম সমাজে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যাপক আকারে কাজ করে চলা উপরোক্ত প্রকারদ্বয়ের নিজ নিজ ক্ষেত্র ও গন্ডির মধ্যে অবদান অসামান্য ও সীমাহীন হলেও প্রকৃত বাস্তবতা হলো এই কাজ গুলো সরাসরি ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। পারবে না এবং এটা তাদের কাছ তেকে আশা করাও আমি মনে করি বোকামী ও অযৌক্তিক।
কারণ, একটি সমাজে ও রাষ্ট্রে জনমানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থাকে। একেকজন মানুষের একেক প্রয়োজন পূরণ ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন। প্রত্যেকের কাজ ও অবদান তার ক্ষেত্র ও গন্ডিতে অবশ্যই বিশাল ও প্রশংসার যোগ্য। তাই বলে প্রতিটি ক্ষেত্রের লোকদের কাছে অন্য ক্ষেত্রের খিদমত কামনা করা বা সেজন্য তাদেরকে তিরস্কার করা বোকামির সমতুল্য বৈ কি।
যেমন একটি রাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সেই দেশেরই সামরিক সেক্টরে কিংবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অর্ডার সরবরাহ চাইলে উভয় ক্ষেত্রের কাজই সমান গুরুত্ববহ হওয়া সত্ত্বেও এটা যেমন অযৌক্তিক ও হাস্যকর বলে প্রতীয়মান হবে একইভাবে এক বিষয়ে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অন্য বিষয়ে অদক্ষতা বা অসম্পূর্ণতাও দোষণীয় নয় বলেই সকলে মেনে নিবেন। বরং প্রত্যেককে তার নিজ ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ শ্রম ও মেধার ব্যবহার করার উপর উৎসাহ দিবেন। অবশ্য যদি কেউ এমন দক্ষতা অর্জন করেন বা করতে পারেন যিনি একইসাথে একাধিক মন্ত্রণালয় ও একাধিক বিষয়ে যোগ্য ও পারঙ্গম তবে এটি প্রশংসাযোগ্য হতে পারে।
একইভাবে ইসলামের মতো একটি সুবিশাল ও বিস্তৃত দীনের অনেকগুলো শাখা-প্রশাখার মধ্যে ব্যক্তি সংশোধন, ব্যক্তি উন্নয়ন, মুসলিমদের দীনী আকীদা, আমল, আখলাক সম্পর্কিত বিধি-বিধান ইত্যাদির উপর দক্ষ নাগরিক তৈরীর প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে এগুলো জিহাদ নয়। এগুলোই কিতাল নয়। একইভাবে এগুলো পরোক্ষভাবে ইসলামিক রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় ও আবশ্যক সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু নয়। আর এগুলোর কোনোটি জিহাদ না হওয়া এবং ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ও উপাদান ও উপলক্ষ্য না হওয়াও এগুলোর নিজস্ব প্রয়োজন ও গুরুত্বকেও কখনোই হ্রাস করে না। কেননা এগুলোর অপরিহার্যতার জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদীসে স্বতন্ত্র দিক-নির্দেশনা এসেছে। এগুলোর সওয়াব ও ফজীলতের জন্যও এসেছে অনেক বর্ণনা। তাই এগুলোর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে যেমন অন্য কোনো আমলের আয়াত-হাদীস নিয়ে আসার চেষ্টা বাতুলতা ও শারঈ বিধানাবলী সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অনুপস্থিতিকেই প্রকাশ করে তেমনি এগুলো ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হলো না কেন বা এগুলোকে জিহাদের প্রতিপক্ষ মনে করে গোঁড়ামী করারও কোনো অবকাশ ইসলামে এবং বিবেকবান মুসলিমদের কাছে নেই। উম্মাহর চাহিদা ও প্রয়োজন ভেদে এই সকল ক্ষেত্রের কোনো কোনো আমলের বেলায় সওয়াবের তারতম্য হলেও এগুলো অবশ্যই নির্দিষ্ট ক্ষেত্র সেক্টরের আমল ও বিষয়। বিষয়টি নিয়ে একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এবং ভাবলে আশাকরি সহজেই বোধগম্য হবে।
এছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলাম কায়েমের কথাও অনেকে বলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের মূলগত বিষয়গুলো যদি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের অসারতা সম্পর্কে কারো আর সন্দেহ থাকার কথা নয়।
গণতন্ত্রের আর সকল বিষয় বাদ দিলেও এর মূলগত এই তিনটি বিষয়কে আপনি কিভাবে এড়িয়ে যাবেন যেখানে বলা হচ্ছে-
১. জনগণের ভোটে-
২. জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা-
৩. জনণের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন।
অথচ ইসলাম তার অনুসারীদের জন্য এটি হারাম করেছে। আইনদাতা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা।
গণতন্ত্রের ছোট-খাটো অনেক অসঙ্গতি সম্পর্কে দৃষ্টি অবনত রাখলেও এই মূলগত বিষয়ে আপনি কিভাবে আপনার আকীদা থেকে বিমুখ থাকবেন যেখানে গণতন্ত্র মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং যে কোনো মত যে কোনোভাবে প্রকাশের স্বাধীনতা দিচ্ছে।
পক্ষান্তরে ইসলাম কখনোই তার অনুসারীদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা দেয় না। চাইলেই যে কোনো মুসলিমের জন্য অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করা বা ইসলাম ত্যাগের কোনো অনুমতি নেই। ইসলাম গ্রহণের আগে একজন মানুষ স্বাধীন হলেও যখন সে বুঝে শুনে ইসলাম গ্রহণ করবে তখন কিন্তু আর তার জন্য ইসলাম ত্যাগ বৈধ নয়।
একইভাবে ইসলাম পশ্চিমাদের মতো মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার নামে ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী সম্পর্কে যাচ্ছে তাই মন্তব্য করা ও বাকস্বাধীনতার নামে ইসলাম ও মুসলিমদের মূলগত বিষয়াবলীর উপর যথেচ্ছ হস্তক্ষেপের যে অবাধ সুযোগ দিয়ে রেখেছে তাকেই বা আপনি কিভাবে ইসলামের সাথে মেলাবেন?
এছাড়াও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বার্বভৌমত্ব হবে মানুষের।
ইসলামে স্বার্বভৌমত্ব আল্লাহর।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষ আইন প্রণয়ন, স্বার্বভৌমত্ব ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর সাথে সরাসরি বিদ্রোহ করার সুযোগ পায়। এগুলোকেই বা কিভাবে ইসলামাইজড করা যাবে?
আসলে ইসলামের পুরো রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর মধ্যকার কেবলমাত্র শূরা সিস্টেমটাকে গণতন্ত্রের নির্বাচনের সাথে গুলিয়ে দিয়ে জনগণকে বোকা বানাবার একটি পুরাতন প্রয়াস অতীতেও হচ্ছিলো এখনও চলছে। এ যেনো ট্রাকের ইঞ্জিন বিমানে প্রতিস্থাপনের অপচেষ্টা!
ইসলাম ও গণতন্ত্রের সাংঘর্ষিকতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে বিস্তারিত কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। এ সম্পর্কে আগ্রহী গণ আমাদের ইসলাম ও গণতন্ত্র বইটি পড়ে দেখতে পারেন। এছাড়াও রাসূল এলেন মদীনায় বইতেও এ বিষয়ে খানিকটা আলোচনা করা হয়েছে। তাই এখানে আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। তবে গণতন্ত্রের কনসেপ্ট আমাদের মাঝে অনুপ্রবেশের পেছনে অনেক দিন যাবত মুসলিমদের নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা ও এর কাঠামোর অনুপস্থিতি এবং এর ফলে সৃষ্ট মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক পশ্চাৎপদতা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করি।
পাশ্চাত্যের জাগতিক উন্নতি দেখে অনেক আধূনিক বা মডারেট মুসলিম তাদের পরাজিত মন-মানসিকতা থেকেই ইসলামকে আধূনিক বানানোর হাস্যকর এক চেষ্টায় মেতে ওঠে। তাদেরই অনেকের উর্বর মস্তিস্ক হতে এই গণতান্ত্রিক ইসলাম বা ইসলামী গণতন্ত্রের কনসেপ্ট সমাজে ছড়িয়ে পরে। যেমনটি কম্যুনিষ্ট রাশিয়ার উত্থান ও জোয়ার থাকা অবস্থায় অনেকে সমাজতন্ত্রকে ইসলাম দ্বারা সার্টিফাইড করার হাস্যকর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিলেন। ‘আল ইশতিরাকিয়্যাতু ফিল ইসলাম’ বা ইসলামে সমাজতন্ত্র নামে তারা অনেকে বইয়ের পর বইও লিখে ফেলেছিলেন। কিন্তু যখন সমাজতন্ত্রের পতন হলো তখন তাদের অনেকেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। অনেকে কুন্ঠিত হলেও বাকিরা অবশ্য তখন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে সমাজতন্ত্রকে ইসলাম দ্বারা সার্টিফাইড করার চেষ্টা তাদের ভুল ছিলো।
ইনশাআল্লাহ নিকট ভবিষ্যতে যখন গণতন্ত্রেরও পতন হবে, তখন আজকের গণতন্ত্রকামী আধূনিক মুসলিমরাও অবশ্যই স্বীকার করবেন যে তাদের বর্তমান প্রচেষ্টা ভুল ছিলো।
গণতান্ত্রিকভাবে যে ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, সাময়িক সময়ের জন্য অনেক কষ্টে ক্ষমতায় গেলেও যে টেকা যায় না, একটু একটু করে রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েমও সুফলের পরিবর্তে সমস্যাই বেশি জন্ম দেয় তার অনেক উদাহরণ নিকট অতীতের আমাদের বিশ্বপ্রেক্ষাপটে বিরাজমান।
সুতরাং এ বিষয় নিয়ে আর আলোচনা দির্ঘায়িত করছি না।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৫২৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যদিও আপনার বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারছি না।
আপনিও লিখুন। আপনার কাছ থেকেও হয়তো আমরা অজানা অনেক পয়েন্ট এবং উপকারী কোনো বিষয় পাবো।
তবে আইন প্রনয়ন বিষয়ে আপনার গনতন্ত্রের সরলীকৃত ব্যাখ্যাটির বিষয়ে আমার পরিপুর্ন দ্বিমত রয়েছে। আইন প্রনয়ন অর্থ আল্লাহর বিধান কে অস্বিকার করা নয়। যদি প্রকৃতই ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয় তাহলে কি একেবারে প্রয়োজন হবেনা ইসলামি বিধানের যুগোপযুগি ব্যখ্যার। আবার দেখা যায় বিভিন্ন মুজতাহিদ একই বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা দিয়েছেন। সেগুলির মধ্যে কোনটাকে গ্রহন করা যায় তা নিয়েও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে। গনতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে জনগনের নির্বাচিত শাসক দ্বারা দেশ পরিচালনা। এর সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নাই।
ইসলামের অনেক কিছুই গণতন্ত্রের সাথে মিললেও আসলে প্রকৃত প্রস্তাবে মৌলিক গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের তুলনা বা দু'টোকে এক সাথে গ্রহণ করা যায় না।
বিস্তারিত পরে কখনো লেখার ইচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন- জাযাকাল্লাহ..
আমরা সচেতন সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চিন্তা গবেষণা করে চলেছি এবং কার্যকর উপায় ও প্রক্রিয়া তালাশ করছি- এটাই বড় কথা! আলহামদুলিল্লাহ...
তবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বের সমসাময়িক শীর্ষ উলামা/ফুকাহা-ই-কিরাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেননা, এমন বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানী অধ্যয়ন ছাড়া সিদ্ধান্তমূলক মতপ্রকাশ করা সচেতন ব্যক্তির জন্য অনুচিত মনে করি!
বরং এভাবে বলা যেতে পারে-
"আমার জ্ঞানমতে এই এই বিষয় আপত্তিকর/সাংঘর্ষিক মনে হয়- চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আরো গবেষণার প্রয়োজন"
*******
আমার মন্তব্য করার আগে এটা নিশ্চিতভাবে আগেই জানিয়ে দিই যেন আপনার জন্য ভুলবুঝা থেকে মুক্ত থাকতে সুবিধা হয়-
আমি গণতন্ত্রে পক্ষেও নই, বিরোধীও নই, বরং মনে করি এতে [দুনিয়াজুড়ে প্রচলিত বৈচিত্রময় গণতন্ত্রে] এমন কিছু কিছু বিষয়/উপাদান আছে যার সাথে ইসলামের বৈরিতা নেই, বা থাকলেও সেগুলো দূর করা সম্ভব হতে পারে! আর কিছু কিছু উপাদান অবশ্যই বর্জ্য- সেগুলোর সাথে ইসলামের বৈরিতা চিরস্থায়ী!
এবারে আমার কথা:
==========
আপনি বলেছেন-
গণতন্ত্রের আর সকল বিষয় বাদ দিলেও এর মূলগত এই তিনটি বিষয়কে আপনি কিভাবে এড়িয়ে যাবেন যেখানে বলা হচ্ছে-
১. জনগণের ভোটে-
২. জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা-
৩. জনণের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন।
অথচ ইসলাম তার অনুসারীদের জন্য এটি হারাম করেছে। আইনদাতা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা।
আমার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য
====================
আপনার এ প্রশ্ন তিনটির মধ্যেই তথ্যগত ত্রুটি বা অস্পস্টতা রয়ে গেছে মনে করি!
যেমন-
১.জনগণের ভোটে-
*জনগণ জমিনে আল্লাহর খলিফা- একথার ব্যাখ্যায় জনগণের মর্যাদা ও অধিকার বিবেচ্য
*ইসলামে জনমত এর প্রয়োজন কতখানি?
*জনমত যাচাইএর ইসলামসম্মত পদ্ধতি কী/ কি কি?
*সারা দুনিয়ায় প্রচলিত "জনগণের ভোটে"র অসংখ্য পদ্ধতি- সবগুলো পদ্ধতি কি পাশাপাশি তূলনা করেছেন?
আপনি আড়ো বলেছেন-
"আগ্রহীগণ আমাদের(??) ইসলাম ও গণতন্ত্র বইটি পড়ে দেখতে পারেন।"
এটি কোন বই? আমার সেটা পড়া আছে কিনা বুঝতে পারছিনা! কার লেখা/প্রকাশিত? নেটে কি পাওয়া যাবে?
২.জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা-
*দেশের শীর্ষস্থানীয় ফকীহ(গণ)ও "জনগণের মধ্য থেকে" নন কি? তিনি/তাঁরাও তো নির্বাচিত হতে পারেন!
*নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উত্তম বা কমপক্ষে নিষিদ্ধ নয় তা এখনো গবেষণার বিষয়!
এটা নিয়ে তর্ক করলে "আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই স্রষ্টার স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন" এমন অবস্থা হবে!
৩.জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন।
*ফুকাহায়ে কিরাম তো এটাই করে থাকেন! আল্লাহতায়ালার নির্দেশও এমনটাই!
অথচ ইসলাম তার অনুসারীদের জন্য এটি হারাম করেছে।
আইনদাতা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা।
এমন মোটাদাগে স্থূল কথা আপনার কলম থেকে বেরিয়েছে - এটা আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা!
সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য যত খুটিনাটি বিধিবিধান ও সমস্যা, তার কয়টাই-বা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহতে আছে? তাহলে সমাধান দেবে কে?
যাহোক, আমার অভিমত-
(পরামর্শ দেবার যোগ্যতা ও ধৃষ্টতা- কোনটাই নেই):-
নির্দিষ্ট মতের অনুকুলে বা প্রতিকুলের চিন্তা এবং পূর্বধারণার সীমানার ভিতরে অবস্থান করে আর যত জ্ঞানচর্চাই হোক- কোন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার মত গবেষণা সম্ভব হয়না!
এটা করতে হলে সর্বপ্রথম সকল বিদ্যমান চিন্তা-ধারণার উর্ধে উঠে তৃতীয়নয়নে দেখতে ও বিশ্লেষণ করতে হয়! সমসাময়িক জটিল বিষয়ের গবেষণার কাজটা তাঁদেরই জন্য- যাঁরা এমন অবস্থানে নিজেকে স্থির রাখার দৃঢ়সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন!
আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রাজনৈতিক পদ্ধতিগত বিভ্রান্তি ও বিতর্কের এ গোলকধাঁধা থেকে উদ্ধার করুন!! আমীন
এ বিষয়ে আরো অনেক গবেষণা প্রয়োজন। আপতত: অনেক কাজের চাপের কারণে আপনার মন্তব্যের ব্যাপারে বিস্তারিত লিখতে পারছি না।
তবে আমার আজকের লেখাটিতে আপনার মন্তব্য চাচ্ছি।
যে বিষয়টা নিয়ে আপনি প্রান্তিক মন্তব্য করলেন। তার সামাধন কী?
দেওবন্ধী হাজারাত বিগ শতাব্দীতে কোন দৃষ্টান্ত দেখাতে পেরেছেন কী।
বা বিকল্প ব্যবস্থা সাহিত্যে রেখেছেন কী?
বলা সহজ এটা হারাম ওটা নাজায়েজ। কিন্তু
বিকল্প কী?
প্লিজ আপনার মত ব্লগার থেকে আরো চিন্তা ও মৌলিক গবেষনামূলক লেখা চাই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি আমার অভিজ্ঞতা ও লব্ধ বিষয়টি শেয়ার করতে চাচ্ছি। এতে দ্বিমত পোষণকারীদের মতামতকেও আমি শ্রদ্ধা করি।
আমার আজকের লেখাটিতে আপনার মন্তব্য চাচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন