রাজাকারের নাতির "গণনাটকমঞ্চ" দর্শন...!
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৩৫:১৭ রাত
আজ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় রাজাকার নানার অন্যতম নাতি ড. জাফর ইকবাল আমার দেখা গণজাগরণ মঞ্চ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছেন। তিনি সেই "গণনাটকমঞ্চে" কিভাবে সম্পৃক্ত হলেন তার বর্ণনা দিয়ে "সায়েন্স ফিকশান" আকারে কিছু কথা বলেছেন। তার সব কথা নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু নেই। কিন্তু যখন তিনি সেই নাটকের মঞ্চকে তথাকথিত "যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সুষ্ঠু" করার প্রধান অনুসঙ্গ হিসেবে অভিহিত করলেন তখন কিছু কথা বলতে হয়।
বিচার সুষ্ঠু করার প্রধান অনুসর্গ কি?
যে কোন বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার প্রধান অনুসর্গ হলো সাক্ষ্য। ঘটনা যিনি দেখেছেন, যিনি ভুক্তভোগী তিনি সত্য সাক্ষ্য দিয়ে বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগীতা করবেন- এটিই সকলের কাম্য। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন ড. জাফর ইকবাল। তাকে তার পিতার হত্যার বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছিল। বারবার তাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি যাননি। শেষ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল তাকে নিঃখোজ ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ জাফর ইকবাল ট্রাইব্যুনালকে সহযোগীতা করেনি।
বারবার ডাকার পরও জাফর ইকবাল ট্রাইব্যুনালে যান নি। কিন্তু তিনি নাকি তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন বিচারকে সুষ্ঠু করার জন্য এবং সেখানে গিয়েছেন ডাক ছাড়াই এবং সেই মঞ্চ নাকি, "যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য একটা সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্বটি পালন করেছিল"! বিষয়টি বুঝা গেল না। বিচার সুষ্ঠু করার জন্য একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে যাবেন আদালতে। তিনি সেখানে না গিয়ে শাহবাগে গিয়েছেন বিচার সুষ্ঠু করতে?! এটা কিভাবে সম্ভব?! তিনি কি বিচার চেয়েছিলেন না নাটক?
আসলে সম্ভব কারণ রাস্তায় সায়েন্স ফিকশন বলা যায় এবং তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে না বরং হাততালি দেয়। কিন্তু আদালতে সত্য বলতে হয় এবং যা বলা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন হয়, সত্যেতার প্রমাণ দিতে হয়। আমাদের স্বাধীনতার তথাকথিত চেতনাবাজ জাফর ইকবাল তো আসলে সত্য বলতে চান না, তিনি বলতে চান সায়েন্স ফিকশন। সে কারণে তিনি আদালতে না গিয়ে গিয়েছিলেন শাহবাগে!
গণনাটকমঞ্চ কি ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছে?!
এরপর তিনি সেই শাহবাগ নিয়ে সায়েন্স ফিকশান বলা শুরু করলেন। তিনি বলেছেন, "সুদীর্ঘ এক বছর এটি অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। অপ্রতিরোধ্য এই গণবিস্ফোরণকে ঠেকানোর জন্যে যুদ্ধাপরাধীর দল এমন কোনো কাজ নেই যেটি করেনি।" তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ কি ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছে?! র্যাব-পুলিশের সার্বক্ষণিক চার-পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা নিয়ে, সরকারী ভাবে খাদ্য সরবরাহ, বিনোদন সহ সকল ধরনের সহযোগীতা নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করা, মিছিল করার মধ্য ঘাত-প্রতিঘাত কোথায়?! সামান্য টায়ার ফাটার আওয়াজ শুনে ভয়ে যারা বাদাম ভাজার তেলের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে জ্বলসে যায় তারা ঘাত কখন ফেইস করলো, প্রতিঘাতও কোথায় করলো?! জাফর ইকবাল কি শাহবাগ নিয়েও সায়েন্স ফিকশান বলা শুরু করলেন?!
জাফর ইকবালরা কি সত্য প্রকাশের সাহস রাখেন?!
সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে জাফর ইকবালের পিতার হত্যাকান্ডের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই ব্যাপারেই সাক্ষ্য দিতে তাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যাননি। এরপর সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল সাঈদী সাহেব হত্যাকান্ডে জড়িত তো ছিলই না বরং জাফর ইকবালের আপন নানা ছিল রাজাকার এবং শান্তি কমিঠির চেয়ারম্যান। জাফর ইকবালের মা কখনো সাঈদী সাহেবকে অভিযুক্ত করেন নি। এখন ট্রাইব্যুনালে গেলে জাফর ইকবালকে নিজের মুখেই স্বীকার করতে হতো সাঈদী বা জামায়াত নেতারা কোন অপরাধ করেন নি। জাফর ইকবালরা মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত, সত্য প্রকাশে নয়।
আসলে জাফর ইকবালরা সত্য কখনো ফেইস করার সাহস রাখে না। ১৯৭১ সালের কিছু তথ্য জাফর ইকবালরা জানেন। শুধু জাফর ইকবাল নন, তার মা, বড় ভাই হুমায়ুন আহমদও জানতেন। আর তা হলো জাফর ইকবালের আপন নানা ছিল রাজাকার। ১৯৭১ সালের কারো অপরাধের তথ্য প্রকাশ করতে গেলে তা নিজের পরিবার থেকেই প্রকাশ করতে হয়। জাফর ইকবালরা এটাও জানে যে, জামায়াতের নেতারা ওই সময় কোন অপরাধ করেননি। তাই জাফর ইকবালরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে ভয় পান কারণ যখন ক্রসচেক করা হবে তখন তার রাজাকার নানার অনেক কথাও চলে আসবে, সাথে এটাও প্রমাণিত হবে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার মতো কোন কিছুই নেই।
"গণনাটকমঞ্চ" কি বাংলাদেশকে গ্লানিমুক্ত করেছে?!
জাফর ইকবাল বলতে চেয়েছেন, "বাংলাদেশকে গ্লানিমুক্ত করার প্রক্রিয়ায় তাদের (গণনাটকমঞ্চ) অবদানের কথা কেউ ভুলবে না"! জাফর ইকবালদের মতো জ্ঞানপাপীরা কি আসলে কোনটি আন্দোলন, কোনটি নাটক তা বুঝে না?! বুঝে, খুব ভাল ভাবেই বুঝে। পৃথিবীর কোন সংজ্ঞায় শাহবাগের নাটককে আন্দোলন বলা যায় না। বরং বলা যায় নাটক, সিনেমা বা সেই ধরনের কিছু। নাটক, সিনেমা দেখেও কান্না করার অনেক বেকুব মানুষ এখনও পাওয়া যায়। শাহবাগের গণনাটকমঞ্চকে যারা আন্দোলন বলবে তারা সেই নাটক, সিনেমা দেখে কান্না করার মতোই। গণনাটকমঞ্চকে এ জাতি মনে রাখবে মঞ্চনাটক হিসেবেই, কোন গঠনমূলক অবদানের জন্য নয়। কাদের মোল্লার মতো নিরপরাধ মানুষকে রাষ্ট্রীয় ও বিচারিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অনুসঙ্গ হওয়ার মধ্যে গ্লানিমুক্তির কিছু নেই বরং আছে গ্লানিযুক্ত হওয়ার।
জাফর ইকবাল তার কলামের শেষে একটি প্রশ্ন করেছেন, "ভবিষ্যতে আমরা তাদের কাছে আর কী প্রত্যাশা করতে পারি?"
যখন ভারতীয় বস্তা ভরা টাকার সাপ্লাই থাকবে না, গোপালগঞ্জী পুলিশ থাকবে না, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকার থাকবে না, তখন গণজাগরণ মঞ্চে নাটক দেখার জন্য ভাড়ায় যাওয়ার মতো কোন মানুষই শুধু থাকবে না তা নয়, মঞ্চের অভিনেতা, অভিনেত্রীরাও এমন ভাবে লুকিয়ে যাবে যেন গণনাটকমঞ্চ নামের কোন কিছুই কোন কালে ছিলই না। জাফর ইকবালরাও গণনাটকমঞ্চ নিয়ে সায়েন্স ফিকশান লিখবে না। ভবিষ্যতে জাতি তাদের কাছে এর বাইরে আর কিছুই প্রত্যাশা করে না।
বিষয়: বিবিধ
২৯৭৮ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আব্দুল কাদের মোল্লাকে বিচারিক হত্যা করার দায়ে বিচারকদেরকে যদি কেউ অভিযুক্ত করে তাহলে সমান অপরাধে অপরাধী হবে জাফর ইকবাল ও গণনাটক মঞ্চের তামাম অভিনেতা নেত্রীরা।
তখনই বুঝা যাবে গণনাটক মঞ্চস্থ করে এরা জাতিকে কত বড় ধোকা দিয়েছে।
জাফর ইকবাল নামের অপদার্থটির বেশ কিছু লেখা আমি পড়েছি। তার নিজস্ব কোন যোগ্যতা নেই নিজে কিছু সৃষ্টি করার। অন্যের সৃষ্ট জিনিসের অনুবাদ করে বাঙ্গালীর (প্রকৃতপক্ষে শাহবাদী মূর্খদের কাছে) গুরুজন বনে যাওয়ার দাবী করে।
জাফর ইকবাল কে পছন্দ করিনা, তার জীবন ধারা ঘৃণা করি। তার লেখার প্রচন্ড সমালোচক আমি। কিন্তু তাই বলে তার ব্যপারে এই সব কথা বললে সত্যের অপলাপ হবে। এরা প্রভাবশালি। আমাদের দু:খ, না আমরা এদের ধরতে পারি, না এদের অল্টারনেটিভ আমরা হই।
আমরা যারা কলমযোদ্ধা, ন্যায়বিচার কিন্তু আমাদের করা উচিৎ।
জাযাকাল্লাহু খায়রান
মেডাম আপনের এই কথা হুনে তো আমার পেটের গ্যাস্টিক মাথায় উঠবার চাহে! তাহলে সব কিছু সত্যের মানদন্ডে যাচাই বাচাই করেই সাঈদী সাহেবকে যথাযথ আইনি পয়েন্টগুলোর সদ্ধ্যবহার করেই ফাঁসি(!) আদেশ দেয়া হয়েছে? ওখানে সুলটানা কামাল চক্রবর্তী, শয়তান কবির, মুনতারি মামুনরা কি সব সত্য সত্য কথা বলেই সাক্ষ্য দিয়েছে? এবং তাদের সত্য! স্বক্ষ্যের উপর নির্ভর করেই বিচাপাতিরা রায় দিয়েছেন?
মাথায় তো গ্যাঞ্জাম নতুনভাবেই শুরু হয়ে যাচ্ছে আবার!!!
এখন বুঝা গেলো কেন সাক্ষী দিতে যাননি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ...
আল্লাহতায়ালা আপনার সকল বিষয়ে বারাকাহ দিন
গত ১০ ই ফেব্রুয়ারি সামুতে ব্লগার মনসৃর লিখেছেন,
"আমার একজন আত্মীয় আছেন- শাবিপ্রবিতে পড়েছেন, আপনার ছাত্র ছিলেন, একবার বললেন, ওখানকার ছাত্রমহলে নাকি আপনার সম্পর্কে প্রচলিত, আপনি লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করে আপনার দরবারে। সিন্নি দিয়ে যায়। ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি কথাগুলো। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার একজন পেইড এজেন্ট। ভিনদেশীদিনদিন আপনার লেখায় মতলবি অংশগুলো বেড়েই চলেছে। আপনার আজকালকার উপন্যাসগুলোতে সাহিত্যের চেয়ে মতলবই বেশি দেখা যায়। কেন স্যার? সিন্নির পরিমাণ কি বেড়ে গেছে? নিজের মতামত জানানোর অধিকার নিশ্চই সবার আছে। কিন্তু মনের কথাটা সরাসরি বলুন! এত ভেক ধরা কেন? এটা কিন্তু ঠিক না স্যার। মোটেই ঠিক না।
সম্প্রতি আপনি মুখোশ খুলতে শুরু করেছেন। এটা একটা ভালো সংবাদ। কিন্তু সেখানেও বুদ্ধিজীবী ভেক ধরে রাখার একটা চেষ্টা আছে। কিন্তু স্যার দালালির ভাষা বুঝতে সময় লাগে না। "....পুরটা এখানে
এই ভিনদেশী পেইড এজেন্টদের ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সজাগ তাকতে হবে ।
যাজ্জাকাল্ললাহ খায়ের
"আমার একজন আত্মীয় আছেন- শাবিপ্রবিতে পড়েছেন, আপনার ছাত্র ছিলেন, একবার বললেন, ওখানকার ছাত্রমহলে নাকি আপনার সম্পর্কে প্রচলিত, আপনি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার একজন পেইড এজেন্ট। ভিনদেশী লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করে আপনার দরবারে। সিন্নি দিয়ে যায়। ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি কথাগুলো। কিন্তু দিনদিন আপনার লেখায় মতলবি অংশগুলো বেড়েই চলেছে। আপনার আজকালকার উপন্যাসগুলোতে সাহিত্যের চেয়ে মতলবই বেশি দেখা যায়। কেন স্যার? সিন্নির পরিমাণ কি বেড়ে গেছে? নিজের মতামত জানানোর অধিকার নিশ্চই সবার আছে। কিন্তু মনের কথাটা সরাসরি বলুন! এত ভেক ধরা কেন? "ধন্যবাদ
জাফর ইকবালের গত কয়েক বছরের লিখা আর্টিকেল গুলোর ফ্যাক্টস ও ফিগার এর বিচার বিশ্লেষন পড়ে আমার কাছে সিম্পলী মনে হয়েছে উনি শুধু ব্যালেন্স ই হারান নি - মানুষিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে গেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে চমত্কার বিশ্লেষণ এর জন্য।
”যখন ভারতীয় বস্তা ভরা টাকার সাপ্লাই থাকবে না, গোপালগঞ্জী পুলিশ থাকবে না, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকার থাকবে না, তখন গণজাগরণ মঞ্চে নাটক দেখার জন্য ভাড়ায় যাওয়ার মতো কোন মানুষই শুধু থাকবে না তা নয়, মঞ্চের অভিনেতা, অভিনেত্রীরাও এমন ভাবে লুকিয়ে যাবে যেন গণনাটকমঞ্চ নামের কোন কিছুই কোন কালে ছিলই না। জাফর ইকবালরাও গণনাটকমঞ্চ নিয়ে সায়েন্স ফিকশান লিখবে না। ভবিষ্যতে জাতি তাদের কাছে এর বাইরে আর কিছুই প্রত্যাশা করে না।”
মন্তব্য করতে লগইন করুন