ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর গুণাগুণ গণনা করা সম্ভব নয়।
লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ২৬ জুন, ২০১৪, ০৯:৩৯:৩৮ সকাল
আহমদ মক্কী খাওয়ারেযিমী (রহ.) এর বাণী, তিনি কবিতাকারে বলেন, হে নোমানের পাহাড়দ্বয়! তোমাদের পাথরকণাগুলো গণনা করা সম্ভব,
কিন্তু নোমান ইবনে সাবেত, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর গুণাগুণ গণনা করা সম্ভব
নয়।
শাদ্দাদ বিন হাকীমের বাণী,
তিনি বলেন, হযরত আবু হানীফা (রহ.) থেকে আমি অন্য কোন বড় আলেম এ
দুনিয়ায় আর কাউকে দেখি নি।
মক্কী ইবনে ইব্রাহীমের বাণী,
তিনি বলেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) স্বীয় যুগের সবচেয়ে বড় আলেম
ছিলেন।
ইবনে জুরাইজের বাণী,
তিনি হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মৃত্যুর সংবাদ
শুনে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন পড়ার পর বললেন, তাঁর
মৃত্যুতে দুনিয়া থেকে ইলমের বড় অংশ দাফন হয়ে গেল।
আব্দুল্লাহ ইবনে দাউদের বাণী,
তিনি বলেন, হাদীস বা আসার জানতে হলে হযরত সুফিয়ানের কাছে যাও। আর
হাদীসের তত্ত্বজ্ঞান ও খুঁটি-নাটি বিষয় জানতে হলে হযরত আবু হানীফার
কছে যাও। তিনি আরও বলেন, প্রতি নামাজের পর হযরত আবু হানীফার জন্য
দোয়া করা সকল মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। কারণ তিনি মুসলমানদের
স্বার্থে হাদীস ও সাহাবাগণের বাণীকে হিফাযত করেছেন।
ইমাম আহমাদ ইব্নে হাম্বল (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, ইমাম আবু হানীফা (রহ.), ইলম, তাকওয়া, দুনিয়াত্যগী ও আখেরাত
গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে ছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) এর বাণী ,
তিনি বলেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ব্যতীত অন্য কারো অনুসরণ
করা ঠিক নয়। তিনি সবার চেয়ে অনুসরণের বেশী হকদার। কারণ,
তিনি মুত্তাকী ও পরহেজগার, আলেম ও ফকীহ ছিলেন। কুরআন ও হাদীসের
ইল্মকে তিনি এমনভাবে খুলেছেন যা অন্য কেউ খুলতে পারেন নি।
খলফ ইবনে আইউব (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, আল্লাহ পাক থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইল্ম পেয়েছেন, আর তাঁর থেকে সাহাবাগণ, তাঁদের
থেকে তাবেঈনগণ, আর তাঁদের থেকে হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.)
পেয়েছেন। সুতরাং এ কথায় যার ইচ্ছা সে খুুশি হোক বা যার ইচ্ছা নারাজ
হোক।
সুফিয়ান সওরী (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, বাজ পাখির সামনে চড়ুই পাখির যে অবস্থা হয়, হযরত ইমাম আবু
হানীফা (রহ.) এর সামনে আমাদের অবস্থাও তেমন ছিল। নিশ্চয় তিনি সকল
আলেমগণের সরদার ছিলেন।
সুলাইমান (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, ﻢﻠﻌﻟﺍﺮﻬﻈﻳ ﻰﺘﺣ ﺔﻋﺎﺴﻟﺍ ﻡﻮﻘﺗﻻ অর্থ ঃ কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না ইলম প্রকাশ পাবে। এ হাদীসে ইল্ম দ্বারা এখানে হযরত ইমাম আবু
হানীফা (রহ.) এর ইল্মকে বুঝানো হয়েছে।
ইমাম শা’রানী মালেকী (রহ.) এর বণী,
মালেকী মাযহাবের ইমাম হযরত শা’রানী (রহ.) মিজানে কুবরা নামক
কিতাবে লিখেছেন। হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর অধিক ইলম,
খোদাভীতি ও তাঁর ইবাদত এবং সূক্ষ্ম দলীল দ্বারা মাসআলা বের করা সঠিক
হওয়া স¤পর্কে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ওলামাগণ একমত হয়েছেন।
ইব্রাহীম ইবনে ইকরামা মাখঝুমী (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, আমি আমার জীবনে হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.)
হতে বেশী পরহেজগার, বেশী দুনিয়াত্যাগী, বেশী ইবাদতকারী ও
বেশী ইলমধারী অন্য কোন আলেমকে দিখি নি।
শাকিক বলখী (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সমস্ত মানুষের
মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম, সবচেয়ে বেশী পরহেজগার,
সবচেয়ে বেশী ইবাদতকারী, সবচেয়ে বেশী সম্ভ্রান্ত ও দ্বীনের
ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী সাবধানতা অবলম্বনকারী ছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, আমি কুফা নগরীতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম এখানে সবচেয়ে বড়
আলেম কে? তখন সবাই বললেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.)। আমি বললাম,
সবচেয়ে বেশী পরহেজগার ব্যক্তি কে? সবাই বললেন, ইমাম আবু
হানীফা (রহ.)। বললাম, সবচেয়ে বেশী দুনিয়াত্যাগি কে? সবাই বললেন,
ইমাম আবু হানীফা (রহ.)। আবার বললাম, সবচেয়ে বেশী ইবাদতকারী ও ইলম
চর্চায় বেশী ব্যস্ত কে? সকলে বললেন, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)। মোটকথা উত্তম ও প্রশংসিত চরিত্র স¤পর্কে যত প্রশ্ন করলাম সকলে তার
উত্তরে বললেন, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এবং তারা বললেন তিনি ছাড়া অন্য
কেউ এ সব গুণের অধিকারী হয়ে পয়দা হয়েছেন বলে আমরা জানি না।
ইমাম শাফী (রহ.) এর বণী,
তিনি বলেন, ফিকাহ শাস্ত্রে সমস্ত মানুষ ইমাম হযরত আবু হানীফা (রহ.) এর
পরিবারের লোক। কারণ আমি তাঁর চেয়ে বড় কোন ফকীহ পাই নি। তিনি আরও
বলেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর কিতাব যে পড়বে না, সে ফকীহ
হবে না এবং সে গভীর ইলমে পারদর্শী হতে পারবে না।
ইমাম ওকী (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন, হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর চেয়ে বড় ফক্কীহ ও কোন ভাল
নামাযী ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় নি।
ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান (রহ.) এর বাণী,
হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) বলেন, আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ
আল কাত্তানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি মিথ্যা কথা বলছি না, হযরত
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর চেয়ে দ্বীন সম্পর্কে উত্তম রায় দাতা আমি অন্য
কাউকে দেখি নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর মতামতের উপর আমি আমল
করে থাকি।
ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) এর বণী,
তিনি বলেন, হযরত “হামঝা” (রহ.) এর কিরাত, আর হযরত ইমাম আবু
হানীফা (রহ.) এর ফিকাহ সবচেয়ে আমার ভাল লাগে।
মুহাম্মদ ইবনে বিশির (রহ.) এর বাণী,
“নাফেউল কাবীর” নামক কিতাবে খতীবে বাগদাদীর বরাত
দিয়ে লিখেছেন। হযরত মুহাম্মদ ইবনে বিশির (রহ.) বলেন, আমি হযরত ইমাম
আবু হানীফা ও হযরত সুফিয়ান সাওরীর দরবারে যাওয়া আসা করতাম। হযরত
আবু হানীফার দরবারে গেলে তিনি বলতেন কোথা হতে এসেছ? বলতাম,
সুফিয়ানের নিকট থেকে। তখন তিনি বলতেন, তুমি এমন ব্যক্তির দরবার
থেকে এসেছ, হযরত আলকামা ও হযরত আসওদ (রহ.) যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তাঁরাও তাঁর মুখাপেক্ষী হতেন। আর যখন সুফিয়ানের দরবরে যেতাম
তখন তিনি বলতেন, কোথা হতে এসেছ? বলতাম, আবু হানীফার নিকট থেকে।
তখন তিনি বলতেন, তুমি পৃথিবীবাসীর সবচেয়ে বড় ফকীহের নিকট
থেকে এসেছ।
সাহাল ইবনে আব্দুল্লাহ তাসতরী (রহ.) এর বাণী, তিনি বলেন, হযরত মূসা ও
ঈসা (আ.) এর উম্মতে যদি হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মত যোগ্য আলেম,
উজ্জ্বল বুদ্ধিমত্তা, সত্যনিষ্ঠ ও বাস্তবদর্শী মানুষ পয়দা হতেন,
তাহলে তাঁদের উম্মত ইয়াহুদী ও নাসারা হত না এবং এত জলদি গোমরাহ হত
না।
মুসইর ইবনে কুদাম (রহ.) এর বাণী,
ছয়টি সহী হাদীসের কিতাবে তাঁর থেকে হাদীস
নেয়া হয়েছে এবং তিনি হযরত সুফিয়ানসাওরী ও হযরত সুফিয়ান
ইবনে উয়াইনা (রহ.) এর উস্তাদ ছিলেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার ও তার
রবের মাঝে হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কে ওসীলা বানাবে এবং তাঁর
মাযহাবের অনুসরণ করবে, আমি আশা করি তাঁর কোন ভয় থাববে না।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নেকী করেছি তা আমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের উপর চলা, যিনি সৃষ্টির মধ্য হতে সেরা।
আর হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মাযহাব মত আমল করা।
আলী ইবনে আছেম (রহ.) এর বাণী,
ইবনে হাজার মক্কী (রহ.) বলেন, আলী ইবনে আছেম (রহ.) বলেন, হযরত ইমাম আবু
হানীফা (রহ.) এর ইলমকে অর্ধ পৃথিবীর মানুষের ইলমের সাথে ওজন করলে,
তার ইলম ভারী হয়ে যাবে।
ইয়াযিদ ইবনে হারুন (রহ.) এর বাণী,
তিনি বলেন,আমি হাজার ওস্তাদের কাছে পড়ে ইলম হাছিল করেছি। কিন্তু
হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর চেয়ে বেশী পরহেজগার,
বেশী মেধাবী এবং বেশী জ্ঞানী অন্য কাউকে পাই নি।
ইমাম শাফী (রহ.) এর অভিমত,
“খায়রাতুলহিসান” নামক কিতাবে আছে, হযরত ইমাম শাফী (রহ.) বলেন,
অধমের ধারণায় হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর চেয়ে বেশী বিচক্ষণ লোক
দুনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন নি।
ইমাম মালেক (রহ.) এর বাণী,
তারীখে ইবনে খালকান নামক কিতাবে আছে। হযরত ইমাম শাফী (রহ.) হযরত
ইমাম মালেক (রহ.) কে ইমাম আাজম হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.)
সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, আবু হানীফা এমন ব্যক্তি,
আপনি যদি তাঁর সাথে এই খুঁটি নিয়ে আলোচনা করেন, আর তিনি তা স্বর্ণের
প্রমাণ করতে চান, তাহলে অবশ্য তিনি সে খুঁটিকে দলীল দ্বারা স্বর্ণ
প্রমাণ করে দিবেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও তাঁর প্রশংসা সম্পর্কে কবিতা রচনা করেছিলেন।
দেশ ও জাতীকে দ্বীন দ্বারা সুসজ্জিত করা * ইমামুল মুসলিমিন আবু
হানিফা। সাজিয়েছেন তিনি হাদীস ও ফিকাহ দ্বারা * যেমন যবুর কিতাব আয়াত
দ্বারা। পূর্ব ও পশ্চিমে নেই তাঁর মত হিরা * দুনিয়াবাসি তাঁর মত কেউ নয় না কুফা। ইবাদাত করেন তিনি রাত্রি সারা * আল্লাহর জন্য সারাদিন রোজায়
হানিফা। কার আছে তাঁর মত এত উচু মর্যাদা * জাহেরে বাতেনে যিনি সকলের রাজা। বেওকুফরা করে তাঁর দোষ চর্চা * তাদের দলীলে আছে অসত্য ও দুর্বলতা। এ ফকীহকে কিভাবে বৈধ কষ্ট দেয়া * যার পবিত্র অবদানে এ পৃথিবী ভরা। তাঁর সম্পর্কে ইমাম শাফীর এমন কথা * সূক্ষ্ম বিষয়ে দিতেন সঠিক
ফায়ছালা । ফিকাহশাস্ত্রে সকলে তাঁর বাচ্চা * এ বিদ্যায় একক অধিকারী আবু হানিফা। বালু সম অভিসাপ পাবে তারা * আবু হানিফার ফতোয়া মানে না যারা।
এ সমস্ত বাণী “হাদায়েকুল হানাফিয়া” হতে গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে এর উদ্ধৃতি বর্ণিত রয়েছে। সংক্ষেপের জন্য এখানে তা উল্লেখ করা হয়নি
সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উক্তিগুলোর সাথে রেফারেন্স যোগ করলে আরও ভালো হতো, বিশেষ করে সমালোচনা কারীদের জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন