ইসলাম শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী- পবিত্র কুরআন-হাদিসের রেফারেন্স
লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক ২৮ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৪৩:০২ বিকাল
০১. আয়াত: “যারা দ্বীনের ব্যপারে (ধর্মীয় কারণে) তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করেনি তাদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে আল্লাহ্ তোআদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়সঙ্গত আচরণকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত-৮)
শিা: অর্থাৎ যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয না বরং শান্তিপূর্ন সহাবস্থানে বিশ্বাসী তাদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ও ন্যায্য আচরণকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন। যারা শা্িন্তপ্রিয় অমুসলিমদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন না।
০২. আয়াত: “তারা (পৌত্তলিক মুশরিকরা) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে আহবান করে (অর্থাৎ যাদের উপাসনা করে) তাদেরকে তোমরা গালি দিও না। তাহলে তারা শত্র“তা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে..।” (সুরা আনআম-১৭)
শিা: অমুসলিমদের উপাস্য, দেবদেবী ও প্রতিমাদেরকে গালি দেওয়া বা তাদের প্রতি কটুক্তি করা ইসলামে নিষেধ। এজন্য পবিত্র কোরআনের কোথাও পৌত্তলিকদের উপাস্যদের গালি দেওয়া হয়নি। বরং সহস্তে তৈরি এসব বস্তুর উপাসনা যে অযৌক্তিক তা যুক্তির ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং ইসলামের সত্যিকার অনুসারীূ মুসলিম সমাজে অমুসলিম সম্প্রদায় ও তাদের উপাস্যরা নিরাপদ।
০৩. আয়াত: “বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের সন্তানদের উপর আর যা কিছুু দেয়া হয়েছে মুসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবীদেরকে তাদের পালনকর্তার প থেকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে পার্র্থক্য করি না। আর আমরা তারই অনুগত।” (সুরা আলে ঈমরান, আয়াত-৮৪)
শিা: আসমানী কিতাবধারী পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাপ্রদর্শণ মুসলমান হওয়ার জন্য ঈমানের অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। অতএব খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নবী ইসা (আঃ) ও ইহুদি সম্প্রদায়ের নবী মুসা (আঃ) মুসলমানদেরও পরম শ্রদ্ধেয় নবী। এজন্য তাদের প্রতি মুসমানরা কখনো কোন কটুক্তি করে না। সুতরাং ইহুদি-খ্রিস্টানদের পরম শ্্রদ্ধেয় নবীদের সম্ভ্রম ও সম্মান মুসলিম সমাজে সম্পূর্ণ নিরাপদ।
০৪. হাদিস: মহানবী সাঃ বলেছেন, মুসলিম সমাজে বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় কোন অমুসলিম নাগরিকের প্রতি যে ব্যক্তি জুলুম করবে অথবা তার ন্যয্য অধিকার থেকে তাকে কিছুমাত্র বঞ্চিত করবে অথবা তার সাম্ের্থর বাইরে কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে দিবে আমি কিয়ামতের দিনে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুকদ্দমা দায়ের করব।
শিা: মহানবী সাঃ কিয়ামতের দিন আ্ল্লাহর নিকট নালিশ করলে তার মুক্তি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ হাদিসটি জানা আছে ও পরকালে বিশ্বাস করে এমন কোন মুসলমানের পে অমুসলিম নাগরিকদের প্রতি নুন্যতম অন্যায় আচরণ করা সম্ভব নয়। বস্তুত মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসই অমুসলিমদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি। পুলিশের নিরাপত্তার চেয়ে “অমুসলিমদের প্রতি খারাপ আচরণ করলে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে”-এ বিশ্বাসই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এজন্যই আমি দেখে আসছি, বাংলাদেশে কোন আলেম, পীর, মসজিদের ইমাম-খতিব ও ধার্মিক ব্যক্তিদের কেউ কখনো অমুসলিমদের উপাসনালয়ে আক্রমন করে না। বরং তারা মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে এরূপ অপরাধ থেকে দুরে থাকার জন্য সাধারণ মুসলমানদেরকে আহবান জানায়। সুতরাং ইসলাম কোন সম্স্যা নয়, বরং ইসলাম না মানা ও ইসলামের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অবহেলাই মূল সম্স্যা।
উল্লেখ্য, যুদ্ধ, জিজইয়া, শান্তিচুক্তি সংক্রান্ত আয়াতগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে ভুল হবে। যুদ্ধের অনুমতি দিয়ে প্রথম যে আয়াত নাযিল হয়েছে সেখানে অনুমতি দেয়ার কারণ ও প্রোপটও বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “ যারা যুদ্ধ করছে তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে এ কারণে যে তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে।” আবার কাউকে জবরদস্তি করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার অনুমতিও দেয়া হয়নি। আল্লাহ বলেন, “ধর্মের মধ্যে কোন জবরদস্তি নেই ; ভ্রান্তপথ থেকে সঠিকপথ সুস্পষ্ট হয়ে গেছে (সূরা বাকার-আয়াত-২৫৬)। এরূপ বহু আয়াত রয়েছে যেখানে কাউকে ইসলামগহণের বাধ্য করার জন্য শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয়নি। সুতরাং একটি আয়াত বা হাদীস বিচ্ছিন্নভাবে উদ্ধৃত না করে বরং সকল আয়াত মিলিয়ে, আয়াতের আগে ও পরে কি বলা হয়েছে তার প্রতি ল্য রেখে, মহানবী সাঃ এর গৃহীত নীতি ও আদর্শ কী ছিল, সাহাবীদের নীতি কী ছিল তার আলোকে সামগ্রিকভাবে অমুসলিমদের প্রতি আচরণের েেত্র ইসলামের স্পিরিট ও নীতি দেখতে হবে। কিছু আয়াত আছে যেগুলো যুদ্ধের ময়দানের সাথে সম্পৃক্ত, কিছু আয়াত আছে যেগুলো যুদ্ধাবস্থার সাথে সম্পৃক্ত। আবার কিছু আয়াত আছে যেগুলো শুধু ইসলাম গ্রহণের কারণে নির্যাতনের শিকার মানুসকে মুক্ত করার সাথে সম্পৃক্ত। কিছু আয়াত আছে যেগুলো আল্লাহ ও পরকালে অবিশ্বাসী, আল্লাহ ও রাসূল প্রদত্ত হালাল-হারামের বিধান অমান্যকারী জালিম শাসক বা ইহুদী-খ্রীষ্টান জালিম শাসকদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার মানুষকে মুক্ত করার সাথে সংশ্লিষ্ট, কিছু আয়াত আছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ প্রচার নিশ্চিত করার সাথে সংশ্লিষ্ট, কিছু আয়াত আছে যেগুলো নিজ দেশের মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণকারী চরম উদ্ধত স্বৈরশাসক ও জালিমদের হাত থেকে নিপিড়িত মানুষকে মুক্ত করার সাথে সংশ্লিষ্ট যেমন “ তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে না এমতাবস্থায় যে, নির্যাতিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা ফরিয়াদ করছে- হে আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে এ জালিম শাসিত জনপদ থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাদের জন্য আপনার পে থেকে তত্ত্বাবধানকারী ও আপনার প থেকে সাহায্যকারী দান করুন (সূরা নিসা-৭৫)। এখানে নিপিড়িত মুসলমানদের কথা যেমন বলা হয়েছে তেমনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিপিড়িত সকল মানুষের কথাই বলা হয়েছে।
৫. ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে মহানবী সা. -এর কাছে মুসলিম পরিচয়ধারী ব্যাক্তি ও অমুসলিম ব্যক্তি নিজেদের বিরোদের বিচার করার জন্য উপস্থিত হলে তিনি তাদের উভয়ের বক্তব্য শুনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অমুসলিম ব্যাক্তির পে রায় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পািবত্র কুরআনের আয়াতও নাযিল হয়েছ্।ে অর্থাৎ বিচার করতে যেয়ে মহানবী সা. ব্যাক্তির ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনা করেননি। এরূপ বহু উদারণ রাসূলের সত্যিকার অনুসারী সাহাবী ও পরবর্তী যুগের খলিফা ও শাসকদের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় নাগরিকদের সাধারণ অধিকারের প্রাপ্তিতে কোনরূপ বৈষম্য ইসলাম সমর্থন করে না।
আসলে ইসলামের বিরোধীতাকারীদের অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূণাঙ্গ ধারণা না থাকার কারণে ইসলামের বিরোধীতা করেন। ইসলামের একটি বিষয় সম্পর্কে হয়ত তিনি জেনেছেন কিন্তু একই বিষয়ে আরো বহু আয়াত ও হাদীস তা তার জানা নেই। বদ্ধমূল নেতিবাচক ধারণা, অবিশ্বাস, ঘৃণা ও বিদ্বেষের চমশা পরিধান করে ইসলামকে দেখলে কখনো ভুল ভাঙবে না। যারা মুক্ত মনে সত্যকে খুঁজে পাওয়ার মানসিকতা নিয়ে ইসলামকে স্টাডি করবেন তারা আলোকিত জীবনের সন্ধান পাবেন। এরূপ মনের বহু মানুষই ইসলাম স্টাািড করতে করতে শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করেছেন। ইসলাম গ্রহণকারী নও মুসলিমদের কাহিনী পড়লে এমনটিই জানা যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন