আজ বিশ্ব মা দিবস : যেভাবে দিবসটির আগমন
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ১১ মে, ২০১৪, ১০:১৮:৩৭ সকাল
পৃথিবীতে যতগুলো শব্দ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মধুর শব্দ মা। কবি কাদের নেওয়াজের ভাষায়-
“মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু যেন ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভুবনে নাই।”
মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রতিবছর বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক মা দিবস। সে হিসেবে আজ ১১ মে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মা দিবস। যে মহিয়সী নারীর কল্যাণে এ দিবসটির সূচনা হয় তিনি হলেন অ্যানা মেরি জারভিস। বক্ষমান লেখা মা দিবসের প্রবর্তক এ মহিয়সী নারীকে নিয়েই-
অ্যানা জারভিস ১৮৬৪ সালের ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ওয়েবস্টারে জন্মগ্রহণ করেন। অ্যানা ছিলেন ১১ ভাইবোনের মধ্যে নবম। তার মা'র খুব ইচ্ছা ছিল জীবিত এবং মৃত সব মায়েদের জন্য কোনো স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা। এজন্য অ্যানার মা নিজেই ‘মাদারস ফ্রেন্ডশিপ ডে' প্রচলনের ব্যাপারে উদ্যোগী ছিলেন। ১৮৬৫ সালে অ্যানা জারভিসের মা প্রুন্টিটাউনের কোর্ট হাউজে মাদারস ফ্রেন্ডশিপ ডে প্রচলন করেন এবং কয়েক বছরের মধ্যে এটা বার্ষিক এক উৎসবে পরিণত হয়। ১৯০২ সালে অ্যানার বাবা গ্র্যানভিল জারভিসের মৃত্যুর পর তার মা এবং বোন লিলি ফিলাডেফিয়াতে তার ভাই কডের সঙ্গে থাকার জন্য চলে যান। এর কিছু দিন পরই অ্যানা জারভিসের মাও মারা যান। ১৯০৫ সালের ৯ মে তার মা মিসেস জারভিস মারা গেলে অ্যানা জারভিস সিদ্ধান্ত নেন যে মা'র সম্মানে কিছু করবেন যা মায়েদের সম্মান বৃদ্ধিতে কাজ করবে। পরিশ্রমী এবং শিল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ পূর্ণবয়স্ক সন্তানই তাদের মাতা-পিতার প্রতি বেশ অবহেলা প্রদর্শন করে- এটা অ্যানা ল্য করেছেন তখন থেকেই। তিনি ঠিক করেন জাতীয় পর্যায়ে একটি মা দিবসের সূচনা করে মায়েদের প্রতি সন্তানদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসার চর্চাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবেন। জাতীয় মা দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যানা প্রচারণা চালাতে শুরু করেন ১৯০৭ সালে।
১৯০৭ সালের ১২ মে তার মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপল্েয অ্যানা তার এলাকার অ্যান্ড্রুজ মেথডিস্ট চার্চে এক ছোট স্মরণসভার আয়োজন করেন। সেই মুহ‚র্ত থেকেই অ্যানার সাধনা হয় মা দিবসকে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় আরো বড় আকারে। তার অকান্ত পরিশ্রমের সুবাদে এর পরের বছর থেকে ফিলাডেলফিয়াতে মা দিবস পালিত হতে শুরু করে। এই সময়ে অ্যানা এবং তার সমর্থকরা মন্ত্রী, ধর্ম প্রচারক, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের কাছে মা দিবস প্রতিষ্ঠার পে চিঠি লিখতে শুরু করেন। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সকলকে অনুরোধ করেন যেন তারা তাদের অবস্থান থেকে দিবসটি চালু করার জন্য সর্বাÍকভাবে সচেষ্ট হন। শেষ পর্যন্ত তার প্রচারণা সফল হয়। ১৯১১ সালে আমেরিকার প্রায় সবগুলো রাজ্যেই মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে ১৯১৪ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দেন যে, প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হবে আমেরিকায় এবং মায়েদের জন্য রবিবারকে উৎসর্গ করে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। অ্যানা সারাজীবন ধরে এমন একটি দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যয় করেন যে দিন সবাই মা'কে সম্মান করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস উদযাপন এমন একটা রূপ ধারণ করে যা দেখে তিনি দুঃখ পান। অ্যানা এমন একটি দিন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যেটি মানুষ আবেগ দিয়ে পালন করবে কিন্তু বাস্তবে সেটি মুনাফা লাভের একটি মাধ্যমে পরিণত হয়। তাই মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে সাংবাদিকদের দেয়া সাাৎকারে অ্যানা শেষ পর্যন্ত এ কথাও বলেন যে, মা দিবস প্রতিষ্ঠার কারণে তিনি সত্যিই দুঃখিত। অ্যানা জারভিস ১৯৪৮ সালের ২৪ নভেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
মা সম্পর্কে বিখ্যাতদের বাণী
আব্রাহাম লিঙ্কন : আমি যা হয়েছি বা যা হতে চাই তার সবটুকুর জন্যই আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী। আমার মায়ের প্রার্থনাগুলো সবসময়ই আমার সঙ্গে ছিল।
জর্জ ওয়াশিংটন : আমি যত ছবি মহিলাদের দেখেছি তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আমার মা। আমার সবকিছুর জন্য আমি মায়ের কাছে ঋণী।
বালজাক : মায়ের হৃদয় হচ্ছে এক গভীর আশ্রয়, যেখানে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন মার সুশীতল ছায়া।
এন্ড্রু জ্যাকসন : মায়ের স্মৃতি আর শিা এই পুঁজিটুকু নিয়ে আমি জীবন শুরু করেছিলাম। সেটুকু নিয়েই এত দূর এসেছি।
মার্ক টোয়েন : মা কৃশকায় এবং ছোট খাটো হলেও তার হৃদয়টা বেশ বড়। এতটাই বড় যে, সবার দুঃখ এবং আনন্দ সেখানে খুব সহজেই জায়গা করে নিতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
৩০১২ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মসজিদ থেকে আসার পড় রুটিন অনুযায়ী বকাঝকা করে কলা, চা , নাস্তা করতে দিলেন।
তাড়পর কিছু ঝাড়ি দিয়ে আমার জন্য দিবসটি শুরু করলেন।
আপনার পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ আবু আশফাক ভাইয়া ।
চরম ভালো লাগলো।
আমি মা দিবস মানিনা, মানিনা, মানিনা....
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন