গণতন্ত্র ও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ [ধারাবাহিক]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:৫৪:১৫ সকাল
[গণতন্ত্র]
গণতন্ত্র, একটি শব্দ যার উৎপত্তিস্থল আমার জেনে লাভ নেই। কিভাবে এটি আসল আমাদের সমাজে তা সবাইকে জানাতেও পর্যাপ্ত জ্ঞান আমার ভিতর নেই, কারণ আমি ইতিহাসবিদ নই। আবার আমি গণতন্ত্রবিদ অথবা রাস্ত্রবিজ্ঞানী নই। তবে আমি একজন মানুষ যার মতামত দেবার ক্ষমতা আছে, স্বেচ্ছাচারিতার অধিকার নেই। নৈতিকতা মানুষকে স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বিরত রাখে।
গণতন্ত্র মানে জনগণের তন্ত্র। যে তন্ত্রের সাথে জনগণের সংযোগ আছে তাই গণতন্ত্র। এটুকুই ছোটবেলা থেকে বুঝে এসেছি। তবে আসলে গণতন্ত্র অত সহজ বিষয় নয়। গণতন্ত্র শুধু একটা শব্দ নয়, একটা পদ্ধতি নয়। গণতন্ত্রের বিস্তার আরো প্রকাণ্ড। আধুনিক যুগে গণতন্ত্র বলতে সবাই বোঝে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে, কিছু গণতান্ত্রিক দলকে। আসলে এই গণতান্ত্রিক সরকার বা দল পুরোটাই ধাপ্পাবাজি। এই ধাপ্পাবাজি চলে জনগণের সাথে। আর জনগণ এই ধাপ্পাবাজিকে গ্রহণ করতে বাধ্য কারণ তাদের সামনে আর কোন পথ নেই। যতগুলো পথ এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে তার ভিতর এটিই বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বেশী গৃহীত। তাহলে গণতন্ত্র কি আদৌ কোন সমাজে আছে? এর উত্তর হল না। আসলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। এটাকে একটা মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয় মাত্র। তবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করার কোন তত্ত্ব কবে আবিষ্কৃত হবে সেজন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আরো অনেক।
আগে রাজারা দেশ শাসন করত, এখন দেশ শাসন করেন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীরা। যেদিন জনগণ দেশ শাসন করতে পারবে সেদিনই গণতন্ত্র তার পূর্ণতা লাভ করবে। এটা অবাক লাগতে পারে কারো কাছে। কেউ বলতে পারেন এটা কি করে হয়! দেশের সবাই কিভাবে দেশ শাসন করবে? সবার মানুসিকতা কি এ কাজ করতে তাদের উদ্বুদ্ধ করবে। তবে কথা হচ্ছে, সব মানুষই শাসক হতে ভালোবাসে। কারো অধীনে থাকতে নয়। আবার শাসনকার্যে এত লোকের মতামত নিতে গেলে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অসম্ভব। এটাই হল সত্য কথা। আসলে গণতন্ত্র আদৌ রাস্ত্র ব্যবস্থার পূর্ণ সমাধান নয়। কারণ গণতন্ত্র একদল মানুষকে খুশি করে, অপরদল মানুষকে অখুশি করে। আর সমাজতন্ত্র বেশীরভাগ মানুষকে অখুশি করে কেননা এতে স্বাধীনতা কম থাকে।
আধুনিক যুগে মানুষ যত সচেতন হয়েছে, মানুষ যত স্বাধীন হয়েছে, পৃথিবীর জনসংখ্যা তার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক যুগের মানুষের একটাই বড় অর্জন, তা হচ্ছে স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতাকে বিস্তৃত করেছে পৃথিবীর মানুষের মানুসিকতা, বিশেষ করে শাসক শ্রেণীর মানুসিকতা। যুগে যুগে পৃথিবীতে বিভিন্ন শাসক এসেছে। তাদের ভিতর কেউ হয়েছে অত্যাচারী, কেউ নিষ্ঠাবান। কিন্তু মানুষ অত্যাচারীদের সাথে থাকতে পছন্দ করবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই নিষ্ঠাবান শাসকেরা ধীরে ধীরে পৃথিবীতে আসতে থাকে। যাদের কারনেই আস্তে আস্তে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ক্ষেত্র যত বিস্তৃত হচ্ছে, সাথে সাথে উৎপত্তি হতে থাকে পরাধীনতার সূত্র। এটা হয়তো এই কারনেই হয়েছে যে, মানুষ তার বর্তমান অবস্থায় সুখী থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তাই এই শতাব্দীতে মানুষ স্বাধীনতার মাত্রা অতিক্রম করতে যাচ্ছে। তারা চলে যেতে চাচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতায়। সেচ্ছাচারিতার স্বাধীনতা যেদিন উন্মুক্ত হবে সেদিন থেকে পৃথিবী এক বিরাট বিপর্যয়ের মুখমুখি হতে পারে। আর এই স্বেচ্ছাচারিতা মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা ও চর্চা থেকে বিরত রাখে।
তাই নতুন কোন তত্ত্ব এখন দাড় করানো খুব জরুরী হয়ে যাচ্ছে যা প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্রের উপর, নৈতিকতার উপর এবং ভবিষ্যতের উপর। গণতন্ত্র এমন একটি পথ যাতে নৈতিকতা নাও থাকতে পারে। একগ্রামে ৯০ ভাগ মানুষ চোর থাকলে, সেখানকার গণতান্ত্রিক নিয়ম হওয়া যুক্তিযুক্ত হচ্ছে, চুরি করা অপরাধ নয়। এখনকার পরাশক্তিদের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়, তারা সবাই পারমানবিক শক্তিতে অগ্রবর্তী তাই তাদের জন্য পারমানবিক শক্তি বৃদ্ধি করা বেআইনি নয়। কিন্তু অন্য সব দেশে বেআইনি। অথচ চোরেরাই এই আইন করেছে। আসলে নামীয় এসব গণতান্ত্রিক শক্তিতে চক্রান্তকারী শক্তি সবসময় সজাগ থাকে। তাই একে চক্রান্তকারিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বা চোরীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা বললেও ভুল হবে না।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকতে তাদের সর্বোচ্চ চক্রান্ত করে, এ চক্রান্ত হতে পারে নৈতিক কিংবা অনৈতিক। এ চক্রান্ত চলে পৃথিবীর সব নামীয় গণতান্ত্রিক দেশে, জনগণের বিরুদ্ধে হোক বা পক্ষেই হোক। কোথাও নিরবে, কোথাও সরবে।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন