প্রেম যেন এমনই হয়-২
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:৫৫:২৬ সকাল
যাহোক কি আর করার বনের মধ্যে বাঘের সামনে পড়লে কি আর করার থাকে। যা করার সবই বাঘই করে। সানজিদা বললেন ‘লিখতে শুরু করলে যে ?’ অনেক শান্তভাবে এতটা শান্তভাবে বলার কথা ছিল না। লিটন সাহেব বললেন ‘রাগ করলে ?’ সানজিদা বললেন ‘আমি বুঝি শুধুই রাগ করি।’
‘না না আমি তো তা বলিনি।’ জবাব লিটন সাহেবের। ‘তোমার রাগের থেকেই আমি অনেক ভালবাসা পাই। তুমি রাগলে এখনও ষোল বছরের মেয়ের মত সুন্দর লাগ। সত্যি করেই বলছি তোমাকে এত সুন্দর দেখে যে কোন যুবক ছেলেই ইভটিজিং করে ফেলবে। আর জেলেও যেতে পারে। ইভটিচিং এর মামলা অনেক কঠিন কিনা। তাও আবার ৪৫ বছর বয়স্কা একজনকে।’
‘ও আচ্ছা তাহলে তো রাগতেই হয়। তবে আজ আর রাগব না।’ রাগলেন না তিনি মোটেই। লিটন সাহেবকে খেতে ডেকে চলে গেলেন। শুধু এতটুকু বোঝা গেল টলটলে চোখ। বুঝলেন লিটন সাহেব লেখাটি পড়েই কষ্টের উদ্ভব ঘটেছে।
খাবার টেবিলে বসে লিটন সাহেব। সাথে সানজিদাও বসেছে তাদের সহযোগিতা করছেন রুনু। এই রুনুই এখন তাদের বার্ধক্যের সম্বল। রুনুর মা-বাবা কেউ নেই ছোটবেলা থেকেই তাকে লালন-পালন করছেন। এখন তার বয়স বার এর বেশি হবে না। নাড়ি ছেঁড়া ধন যখন ভূলে যায় মায়ার বাঁধন। তখন এই রুনুরাই হয় লিটন সাহেব আর সানজিদার মত লোকদের জীবনের অবলম্বন।
আসলে তাদের ছেলে-মেয়ে মোট চার। দুজন ছেলে দুজন মেয়ে। প্রথম যে সন্তানের মুখ থেকে তারা বাবা মা ডাক শুনেছে। সে তাদের বড় ছেলে তারেক। আর রাইসা ও রিদিতা নামে তার দু মেয়ে। দু নম্বর ও তিন নম্বর যথাক্রমে। সবচেয়ে ছোট হচ্ছে রতন।
প্রতিদিনের চঞ্চলা গৃহিনী সানজিদা আক্তার বেলী। আজ খাবার টেবিলে কোন কথা বলছেন না তিনি। লিটন সাহেব বুঝতে পারলেন আসল ঘটনা। রাতের খাবারের সময় কোন ছেলেমেয়ে পাশে নেই। তারা দুজনেই ঢাকার বাইরে থাকে। বিবাহিত দুজনেই। মেয়ের তো বাস্তবতা আর ছেলের ব্যস্ততা। তবে সবকিছুর আড়ালে আছে বাবা মাকে ছেড়ে বউকে নিয়ে একটু ঝামেলা মুক্ত থাকার প্রত্যাশা।
তবে যাদের নিয়ে বর্তমানে তারা বাস করছেন ঢাকায়। সেই রতন ও রিদিতা দুজনেই বাইরে। বড় হয়েছে কিনা! তাই রাতে দেরিতে বাসায় না ফিরলে তাদের বড়ত্ব থাকে না। রাতের পাখির মত ঘুরে বেড়ায় ওরা। বাবা চাইলেই তাদের আর আটকে রাখতে পারেন না। অনেক স্বাধীনভাবে তারাইতো সন্তানদের মানুষ করেছেন। রিদিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স শেষ বর্ষে। সাথে বিভিন্ন সাহিত্য, নাটক ইত্যাদি সংগঠনের সাথে জড়িত। অনেকটা বাম ঘেষা। আর রতন সে পরে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। বন্ধু সংখ্যা তার কত তা কেউ জানে না কিন্তু বান্ধবী অনেক। সবাই বলে লিটন সাহেবের ডিজুস রতন।
খাওয়ার মাঝখানে লিটন সাহেব হাকডাক দিয়ে উঠলেন। চিৎকার করে বললেন ‘এত হলুদ কি কেউ খায় ?’ তরকারিটা কে রেধেছেরে রুনু ? আর লবণ এত বেশি কেন?’ সানজিদা বুঝলেন তিনি নিশ্চুপ থাকাতেই এরকম হচ্ছে। তিনি ধীরে বললেন ‘রুনু রাতের বেলা হলুদ দেখার অভ্যাসতো এ বাসার লোকেদের আগে দেখিনি। আর নিজে থেকে পাতে লবণ নিয়ে যে কেউ লবণ লবণ করে চিৎকার করে তা তো আগে দেখিনি।’ রুনু মিটমিটিয়ে হাসছিল।
একেবারে বোল্ড আউট হয়ে লিটন সাহেব চুপচাপ খাওয়া সেরে উঠে গেল। শুধু বলল ‘আমার আকাশে মেঘ আমি দেখতে পারিনা।’ রুনু সানজিদা দুজনেই নিশ্চুপ। রাতে ঘুম থেকেই রতন সাহেব শুনতে পেলেন ছেলে-মেয়ে দুজনেই দেরি করে এসেছে। তাদের মা বোধহয় একারণে রাগ দেখিয়েছে। তাই তারা দুজনেই মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।
বিষয়: সাহিত্য
১১০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন