মাসিক আল-হুদা পত্রিকার মাধ্যমে আপনি যা জানতে চেয়েছেন- শেষ পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে ২৩ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪৪:০০ দুপুর

২.বিতর নামাযের নিয়মঃ

(ক) প্রথম পদ্ধতি: দুই রাকায়াত পড়ে সালাম ফিরাবেন। পরে এক রাকায়াত আদায় করবেন। শেষ রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা এখলাছ পড়ে রুকুতে যাবেন। রুকু হতে উঠার পর দুই হাত তুলে দোয়ায়ে কুনুত বা অন্যান্য দোয়া পাঠ করে সিজদা করবেন।

(খ) দ্বিতীয় পদ্ধতি: দুই রাকায়াত পড়ার পর তাশাহহুদ পাঠ না করে তৃতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে, সূরা ফাতেহা ও সূরা এখলাছ পড়ে রুকু করার পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করে সিজদা করে এক সালামে তিন রাকাত বিতর নামায পড়া যায়। এই দুইটি পদ্ধতি সহীহ আল-বুখারী’র হাদীসে বিতর নামাযের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। (রাসূল (সা.) প্রথম রাকায়াতে সূরা আ’লা এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা কাফিরুন পড়েছেন বলে হাদীসে দলীল পওয়া যায়)

ভারত উপমহাদেশে হানাফী মাযহাবের অনুসরণকারীগণ যে পদ্ধতিতে বিতর নামায পড়েন, সেটি বিশুদ্ধ কোন হাদীসে বর্ণিত হয়নি। অনেক অনুসন্ধানের পর যতটুকু পাওয়া গেল, তা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে নিম্নে আলোকপাত করা হলো:

হানাফী মাযহাব অনুযায়ী বিতর পড়ার পদ্ধতি: দুই রাকায়াতের পর বসে তাশাহহুদ পড়ে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকায়াতে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতেহার সাথে এখলাছ পড়ে তাকবীর বলে রুকুর আগেই দোয়া কুনুত পড়া।

হানাফী মাযহাবের দলীল হচ্ছে: মুস্তাদরাকে হাকেম উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সঙ্গে তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শেষ রাকাতে সালাম ফিরাতেন।

হানাফী মাযহাবের আরো একটি দলীল: আবুল আলিয়া হতে ইমাম তাহাবী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণ শিক্ষা দিয়েছেন; বিতর নামায মাগরিবের নামাযের মতই। পার্থক্য হলো, বিতরের তৃতীয় রাকাতেও আমরা কিরাত পড়ি, এটা রাতের বিতর আর মাগরিব হলো দিনের বিতর।

কিন্তু এই পদ্ধতিটির বিপক্ষে হাদীস বর্ণনা করেছেন মুস্তাদরাক হাকীমে। তিনি বর্ণনা করেন: ‘বিতরের নামায মাগরিবের নামাযের পদ্ধতিতে পড়ো না।’ এই হাদীস ইমাম বুখারী ও মুসলিম সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী ‘তালখীসে’বলেছেনঃ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুয়ী সহীহ। আর ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণনা করেছেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বিতরের নামায তিন রাকাত পড়লে মাগরিবের নামাযের মত করে পড়ো না। বরং পাঁচ রাকাত কিংবা সাত রাকাত অথবা নয় রাকাত, এগারো বা তেরো রাকাত পড়বে।’ আর উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ার কথা উল্লেখ নাই। সুতরাং তাঁর এই হাদীস দ্বারা পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতিতে বিতর পড়া প্রমাণিত হয় না। বরং এ কথা বুঝা যায় যে, একই সালামে তিন রাকাত পড়েছেন, তার মানে এ নয় যে দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করেছেন।

আর উপরে বর্ণিত প্রথমদ্বিতীয় পদ্ধতিতে বিতর নামায অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, সুতরাং আপনি প্রথম দুই পদ্ধতির যে কোন একটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

৩. মহিলাগণ পর্দা রক্ষা করে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করতে পারবে। তবে মহিলাদের জন্য আপন ঘরে নামায পড়াই উত্তম।

৪. ইন্ডিয়ার উত্তর প্রদেশ ইউপিতে অবস্থিত দেওবন্দ নামীয় স্থানে কাসেম নানুতুবী (র.)-এর তত্ত্ববধানে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা হতে যারা লেখা পড়া করে ফারেগ হন তাদেরকে দেওবন্দী বলা হয়।

৫. তাবলীগ জামায়াতের সদস্য না হলে, চিল্লা না দিলে, গাছলা না দিলে জান্নাতি হওয়া যাবে না, এই কথাগুলো মোটেও সঠিক নয়। এই ব্যাপারে কুর’আন ও সহীহ হাদীস হতে তারা একটি প্রমাণও পেশ করতে পারবেন না। সুতরাং এমন কথা বলা কুর’আন ও সুন্নাহ বিরোধী? আর চিল্লা দিলেই যদি সব শেখা যায়, তাহলে মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন কোথায়? এ কথাটিও এক প্রকারের ভ্রষ্টতা। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ জ্ঞান অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

৬. নিম্নে জানাযার নামায পড়ার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো: এই নামায চার তাকবীরে সমাপ্ত হয়। প্রথম তাকবীরের পর আউযুবিল্লাহ ও বিছমিল্লাহর পর সূরা ফাতেহা পাঠ করবে। দ্বিতীয় তাকবীরের পর রাসূলের উপর দরূদ পাঠ করবে। তৃতীয় তাকবীরের পর মৃতের জন্য দোয়া করবে। এবং চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফেরাবে। এই পদ্ধতিটি ইমাম শাফে’ঈ ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের। ইমাম মালেক (র.)-এর নিকট প্রত্যেক তাকবীরের পর দোয়া পাঠ করতে হয়। এবং ইমাম আবু হানীফার মত হলো; প্রথম তাকবীরের পর ছানা পাঠ করবে। দ্বিতীয় তাকবীরের পর রাসূলের উপর দরূদ পাঠ করবে। তৃতীয় তাকবীরের পর মৃতের জন্য দোয়া করবে। এবং চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফেরাবে।

জানাযার ফরযগুলো নিম্নরূপ:-

ইমাম মালেকের নিকট জানাযার নামাযের রোকন বা ফরয ৫টি যথাঃ-

১। নিয়ত করা, ২। কিয়াম করা, ৩। চার তাকবীর, ৪। প্রত্যেক তাকবীরের পর দোয়া, ৫। একবার ছালাম ফেরানো।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের নিকট জানাযার নামাযের রোকন বা ফরয ৬টি যথাঃ-

১। নিয়ত করা, ২। চার তাকবীর, ৩। প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতেহা পাঠ করা, ৪। দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরূদ পাঠ করা, ৫। তৃতীয় তাকবীরের পর দোয়া করা, ৬। একবার ছালাম ফেরানো। ইমাম শাফেঈ উপরের ছয়টির সঙ্গে কিয়ামকে তথা দাঁড়ানোকেও রোকন সাব্যস্ত করেছেন।

ইমাম আবু হানীফার মতে জানাযার নামাযের রোকন বা ফরয ৪টি যথাঃ-

১। প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়া, ২। দ্বিতীয় তাকবীরের পর রাসূলের উপর দরূদ পাঠ করা, ৩। তৃতীয় তাকবীরের পর মৃতের জন্য দোয়া করা, এবং ৪। চতুর্থ তাকবীরের পর দুই দিকে সালাম ফেরানো। (মাজ‘মু ফাতাওয়া)

৭. নামাযের কোন অবস্থায় বাংলা ভাষায় আল্লাহর সাহায্য চাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ বান্দা যখন নামাযে সাজদা অবস্থায় থাকে, তখনই আল্লাহর নিকটবর্তী থাকে। আর সাজদা অবস্থা দোয়ার জন্য উত্তম সময়। যারা আরবী ভাষা জানেন না, তারা নিজস্ব ভাষায় দোয়া করতে পারবেন। (মাজ’মু ফাতাওয়া)।

মহান আল্লাহ আমাদের সমস্ত মানবজাতিকে কুর’আন ও সহীহ সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান দান করে সে অনুযায়ী সঠিক আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন।।

বিষয়: সাহিত্য

২৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File