নতুন জামাইর আদর - কদর এবং অগ্রজদের জন্য আমাদের করণীয়।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:১৩:৩২ দুপুর
এক)
নতুন জামাই বলে কথা।মেয়ের জামাই হিসাবে এই প্রথম যাত্রা।পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা।না থাকারই কথা।কারন সবার তো দুইটা শুশুর বাড়ি থাকেনা।আমার ও সেরকম কিছু ছিল না। আর সামনে দ্বিতীয়টি হবে এমন সম্ভাবনা ও নাই।আবার প্রবাসী হওয়ার কারনে কারোর সাথে শুশুর বাড়ির ইত্যাদি জানার সুযোগ ও হয়নি।তাই শুশুর বাড়ি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।
অভিজ্ঞতা হল - শুশুর বাড়ির আদর-কদর- আপ্যায়ন দেশের সব জায়গায় সমান হয় না। আমার নিজের ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে রমদান ১৩৩৫ হিজরীতে। তার শুশুর বাড়িতে সে গিয়েছে। মনে হল পদ্ধতি আলাদা।হয়ত বিষয়টা এমন - ১২ মাইল পর পর ভাষার যেমন পরিবর্তন হয় - আমার মনে হয়েছে -ভাষার সাথে সামাজিক নিয়ম কানুনের ও পরিবর্তন হয়।
অভিজ্ঞতা হল - পরিবারের ছোট্ট মেয়েকে বিয়ে করলে আলাদা সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।আমার বড় ইচ্ছা ছিল বড় ঘরের বড় মেয়েকে বিয়ে করব।এর একটা যুক্তি ও ছিল।বড় মেয়ের ওপর দিয়ে পরিবারের সকল ধকল যায়। সে জন্য পরিবারের বড় মেয়ে সাহসী এবং দায়িত্বশীলা হয়। বিয়ে করার আগে অভিজ্ঞ বন্ধুরা এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কিন্তু আমার কপালে শুশুর শাশুড়ীর ভালবাসার - সমাপ্তির শেষ অবশ্যই ভাল অংশ।
প্রচলিত আছে পরিবারের শেষ সন্তান জেদী এবং পরনির্ভর স্বভাবের হয়।
অবশ্য আমার বেগম সাহেবা তার পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হলেও পরনির্ভর স্বভাবের নয়। চরিত্রে জেদী স্বভাবটা অবশ্য পরিমানের চাইতে বেশী।তা নাকি “খান” বংশের একান্ত বংশীয় ধারাবাহিকতা।আমার দাদা শুশুর নাকি - তার জেদের কারণে অনেক জমি জামা হারাতে হয়েছিল।
পারিবারিক বৈঠকে জেদ নিয়ে বেশ ঝগড়া হয়। এখন ও হয়।অবশ্য এ ক্ষেত্রে নিজেকে পরাজিত সৈনিকের ভুমিকায় অভিনয় করতে হয়। বড়দের কড়া নির্দেশ হল - পরিবারের বৃহত্তর শান্তি রক্ষার জন্য চুপ থাকা জরুরী।
তবে আমি এখনো মনে করি - খান বংশ নিয়ে গবেষনা করা একান্ত প্রয়োজন। আমার জানা মতে বাংলাদেশে খান দুই প্রকার।
প্রথম প্রকার হল চন্দ্র বিন্দু ওয়ালা খাঁন।
আর দ্বিতীয় প্রকার হল চন্দ্র বিন্দু ছাড়া খান।
সম্মিলিত ভাবে বিয়ের পর থেকে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। এমন কি শুশুরবাড়ি গিয়েও কোন সন্তোষজনক ফলাফল বের করতে পারিনি।বিষয়টা এখনও আলোচনার টেবিলে আছে।
দুই)
ইফতারের প্রায় এক ঘন্টা আগে পৌছলাম পিরোজপুর জেলা শহরে। রিক্সা নিয়ে বাসায় যেতে সময় লেগেছে কয়েক মিনিট। পিরোজপুর শহরটা আমার কাছে মনে হয়েছে ছিমছাম,পরিছন্ন,গোছানো,শান্ত। এই দিক থেকে আমার নিজের শহর সিলেট কে মনে হয়েছে ঠিক বিপরীত। যদিও সিলেটে হাইরাইজ বিল্ডিং এবং আধুনিক শপিং মল অনেক বেশী।
এটার কারন হয়ত - পিরোজপুর শহর শুধু জেলা শহর। আর সিলেট হল বিভাগীয় শহর।
রিক্সা দিয়ে শহরের এপার থেকে ওপারে যেতে সময় লেগেছে হয়তো ১৫ মিনিটি। আমি মূল শহরের কথা বলছি। অধিকাংশ বাসার নেইম প্লেইট দেখলাম সম্মানীত উকিল সাহেবদের।বেশির ভাগই হিন্দু সমাজের।এত উকিল পিরোজপুরে কেন প্রয়োজন ছিল তা জানার সুযোগ হয়নি।
ইফতার করলাম বেশ রাজকীয় কায়দায়। আমরা দুজন- দুই প্রজন্মের জামাই ছিলাম। আমাদের দুজনকে সবার থেকে আলাদা করা হল। রাজসিক! বড় প্লেইটে দুজনকে ই দেয়া হল। তাজা ফল ফলাদি দিয়ে ভরা। একজন বলল - খালূ আপনাকে সব খেতে হবে। এটা নাকি নিয়ম।
আচ্ছা সবার আগে ডাবের পানি দিয়ে শুরু করতে হবে।এটা ও নাকি নিয়ম।
দেখলাম আমার পাশে বসা এই ঘরের মেয়ের প্লেইটের সাইজ ছোট ও পরিমানে অনেক কম। হঠাৎ নিজের এই আবস্থানের জন্য গর্ব অনুভুত হল। অন্য সময় - বেগম সাহেবা সমঅধিকারের ওয়াজ করতেন।কিন্তু বেচারী শুধু তাকিয়ে আছে।তবে মুখে তৃপ্তির হাসি।
বিদেশে বিয়ে করা নিজ স্বামীকে মা’র সামনে বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।এটা হয়তো সব নারীর স্বাভাবিক চাওয়া।আপন স্বামীর খাতির,আদর,আপ্যায়ন একটু বেশী হলে মেয়েরা খুবই খুশী হয়। এটা বুঝলাম এই প্রথম। আমার কাছে বিষয়টা এক পাক্ষিক মনে হয়েছে। কারণ এই নারী স্বামীর বাড়িতে অনেক না পাওয়ার বেদনা,ননদদের নিন্দিত আচরণ,শুশুর শাশুড়ীদের অবমূল্যায়ন - বধু সমাজের জন্য অলিখিত সমাজিক প্রথা।যেই নারী - মেয়ের জামাইকে নিয়ে এত আয়োজন সেই একই নারী আবার তার ঘরের ছেলের বউকে নিয়ে করেন অন্য আয়োজন ভিন্ন হিসাব। এটা সব ক্ষেত্রে প্রায় সমান।
নিজের মেয়ে ও জামাইর জন্য সাতখুন মাফ।কিন্তু ছেলের বউয়ের জন্য পান থেকে চুন খসলেই সব শেষ।
এই ক্ষেত্রে বলা যায় - সত্তা একই - তবে স্থান,কাল,পাত্র বিবেচনায় আপ্যায়ন,আদর,কদর হয় ভিন্ন।মনে হয় এটাই আমাদের যৌথ পরিবারের বৈচিত্র।
এ নিয়েই আমাদেরকে চলতে হবে।আমাদের অগ্রজ যারা তাদেরকে নিয়েই আমাদের সব কিছুই সাজাতে হবে। এতে মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। কারন তারা আমাদের জন্য দোয়া করেন।
নিজের মা' বাপ - শুশুর শাশুড়ি সহ সবাই আমাদের জন্য খুবই জরুরী। সাংসারিক জীবনের প্রতিটি বাঁকে তাদের স্নেহ আর দোয়া আমাদের প্রয়োজন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তা অত্যাবশ্যকীয়।
আজ আমরা আমাদের অগ্রজদের সাথে যা করবো ঠিক তাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
বিষয়: বিবিধ
২৫৩৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১০০% সত্যি কথা বললেন।
ভাগ্যভাল চট্টগ্রামে বিয়ে করেননি!
জামাই আদরের নামে যে অত্যাচার হয় সেটা সহ্য করা অসম্ভব। আরো অসম্ভব আচার এর নামে সুন্নত বিরোধি ও অনৈসলামি নিয়মগুলি সহ্য করা!!
আমি শশুড়বাড়িতে বেয়াদব জামাই বলে পরিচিত। কারন পায়ে ধরে সালাম করিনা্ কাউকে এবং প্লেটে যা খানা দেওয়া হয় ভদ্রতা করে তার সামান্য খাওয়ার বদলে পুরাটাই থেয়ে নিই!!!
খাঁ > khan > খান
জোর প্রতিবাদ করছি-
এমন মন্তব্য করা অনুচিত হয়েছে!!
কাফফারা{হাদিয়া} দিবেন এবং মাফ চেয়ে নিবেন!!
আপাততঃ আর বেশী কোন শাস্তি দেয়া হলোনা,
তবে পর্যবেক্ষণে রাখা হলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন