ডিয়ার মুসলিমস, ইসলাম ইজ নট অ্যা ম্যাটার অব জোকস (পর্ব সাত)
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:১৪:০২ বিকাল
৬ষ্ঠ পর্বের লিংকঃ http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/1838/President/52261#.VBFU4aNXv2k
এ সিরিজের চলমান বিষয়- “শিরক ও বিদআত”। এ দেশে শিরক বিদআত প্রচলনের ঐতিহাসিক কিছু প্রেক্ষাপট আলোচনা করেছিলাম গত পর্বে।
এ কথা অনস্বীকার্য্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন হিন্দু ব্রাহ্মণরা মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারে নি। সেক্ষেত্রে তারা মুসলমানদেরকে হিন্দুভাবাপন্ন মুসলিম বা হাফ মুসলিম বানানোর মিশন নিয়ে নামে। এবং বলাবাহুল্য তারা এক্ষেত্রে বেশ সফলতা অর্জন করেছে।
গতপর্বে আলোচনা করেছিলাম, শ্রীকৃষ্ঞের ভাবশিষ্য হোসেন শাহী কিভাবে হিন্দু খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মিলে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আলেম উলামা, আমির উমরাহ, ইমাম, শিক্ষক হত্যা করেছে এবং পরবর্তীতে মুসলমানদের মাঝে হিন্দুদের রচিত বিভিন্ন অশ্লীল, নোংরা ও যৌনাচারে ভরা বই পুস্তক প্রচলন করে কিভাবে মনসা পূজা চালু করেছে ও
আরো বিভিন্নভাবে পৌত্তলিক ধর্মের অনু্প্রবেশ ঘটিয়েছে।
এম. আর. তরফদার তাঁর Hussain Shahi Bengal গ্রন্থে বলেন, “Some of the influential muslims used to worship of the snake goddess, Manasa, out of fear for snake bite. It is probably the result of the hindu influence on the Muslims.”(p. 164).
ডাঃ জেমস ওয়াইজ বলেন-গয়ার ব্রাহ্মণগণ তীর্থ যাত্রীদেরকে বিষ্ঞুপদ(বিষ্ঞুর পদচিহ্ন) দেখিয়ে প্রচুর রোজগার করতো। তাদের অনুকরণে মুসলমান সমাজে কদম রসূলের পূজার প্রচলন হয় হোসেন শাহীর বাংলায়।
হোসেন শাহীর পর ইতিহাস আপন গতিতে চলতে থাকে। নিত্য নতুন শিরক বিদআতেরও প্রসার ঘটতে থাকে।
অশ্লীল ও আদি কাম রসাত্মক সাহিত্য রচয়িতা হিন্দু কবি গল্পকারদের অনুকরণে মুসলিম নামধারী কিছু কবি সাহিত্যিকও কল্পিত দেব দেবীর স্তুতিমূলক কবিতা, পদাবলী ও সাহিত্য রচনায় প্রকৃত্ত হয়। তারা শ্রীকৃষ্ঞের প্রণয়লীলা, যৌন আবেদনমূলক কীর্তন, মনসার ভাসান সংগীত, দূর্গা ও গঙ্গার স্তোত্র ও হিন্দুদের পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বহু পুঁথিপুস্তক রচনা করে। এদের মধ্যে কবি আলাওল ও মীর্যা হাফিজ প্রমুখ কবি সাহিত্যিকরাও ছিলেন।
এক পর্যায়ে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ার হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথ এর (উল্লেখ্য যে, পানিপথ একটি স্থানের নাম। অনেকে ভুল করে এটিকে নদী বা সাগরে সংঘটিত যুদ্ধ মনে করে থাকেন।) প্রথম যুদ্ধে দিল্লীর সুলতান ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন কুখ্যাত চেঙ্গিস খানের বংশধর সম্রাট জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবর। এখানে উল্লেখের দাবি রাখে যে, চেঙ্গিস খান মধ্যযুগে মুসলিম জনপদ বাগদাদ ও অন্যান্য স্থান অধিকার করে ও নির্মম বর্বরতা চালায়। সে অনেক লম্বা ইতিহাস। এক পর্যায়ে চেঙ্গিস খানের পুত্র, প্রপৌত্রদের অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও তাঁরা ইসলামের পরিপূর্ণ শিক্ষার অভাবে ভাল মুসলমান হতে পারেন নি।
বাবর মুসলমান ছিলেন। ইতিহাসে বাবরের অনেক সুকীর্তির পাশাপাশি কুকীর্তির ও উল্লেখ আছে। বেশিরভাগ মুঘল সম্রাটই নারীলোলুপ ও মদ্যপ ছিলেন। মহামতি সম্রাট আলমগীর আওরঙ্গজেব সহ গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছিলেন মাত্র।
দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ক্ষমতায় আরোহন করেন হুমায়ুনের পুত্র জালালুদ্দীন মুহাম্মদ আকবর। আকবর ছিলেন অশিক্ষিত, অক্ষরজ্ঞানহীন। কিশোর বয়সে অঢেল ক্ষমতা পেয়েই বেপরোয়া লাগামহীন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন আকবর। মুঘল সম্রাটদের মধ্যে লাম্পট্যের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জাগ্রত অবস্থায় মদ আর নারী ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী। আকবরের এ লাম্পট্যকে পুঁজি করে ইসলাম-বিরোধী পোত্তলিক ধর্মানুসারীরা আকবরকে তাদের অভীষ্ট সাধনে ব্যবহার করতে প্রবৃত্ত হয়। আকবরের কাছে তাদের কন্যাদের স্ত্রী বা উপপত্নী হিসাবে সম্প্রদান করতে থাকে এবং তাদের অপউদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে। এসব হিন্দু নারীদের খুশি করার জন্য শাহী মহলেই জাঁকজমকের সাথে হিন্দুদের নানাবিদ পুজা অর্চনা চলতে থাকে। ঐতিহাসিকদের মতে আকবরের কম বেশি ৪০ জন স্ত্রী ও তিন শতাধিক উপপত্নী বা সেবাদাসী ছিল। মারিয়া মাখানি নামক এক আর্মেনীয় শ্বেতাঙ্গী খ্রিস্টানকে আকবর বিয়ে করেন। তাঁর একাধিক হিন্দু পত্নী ও উপপত্নীর অন্যতম ছিলেন যোঁধা বাঈ।
এভাবে আমরা দেখতে পাই সম্রাট আকবরের উপর শুধু হিন্দু রমনী নয়, হিন্দু ধর্মেরও ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। আর এসকল হিন্দু রমনীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানদের জীবনে পৌত্তলিক ধর্মের প্রভাব কতটুকু তা সহজেই অনুমেয়। এজন্য আমরা দেখতে পাই, হিন্দু মহিষীর গর্ভজাত সন্তান সম্রাট জাহাঙ্গীর দেওয়ালী পূজা করতেন এবং শিবরাত্রিতে ব্রাহ্মণ পন্ডিত ও যোগীদেরকে তাঁর সাথে একত্রে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করতেন। তাঁর শাসনামলের অষ্টম বৎসরে পিতা আকবরের সমাধিসৌধ সেকেন্দ্রায় হিন্দু প্রথা অনুযায়ী শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পালন করেন।
শাহজাহান পুত্র দারাশিকোহ তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘মাজমাউল বাহরাইনে’ হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম একত্রীত ও সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন।
আবার ফিরে যাই আকবর কাহিনীতে।
সম্রাট আকবর ছিলেন ইসলাম ধর্মের গোর বিরোধী। তার শাসনামলে মোসলমানদের দুরবস্হার কোন সীমা ছিল না। সম্রাট আকবর ইসলাম ধর্মের পরিবর্তে নতুন এক ধর্মের প্রবর্তন করেন। ইহা ছিল স্পষ্টতই এক কুফরী ধর্ম অথচ এই নতুন ধর্মের নাম দেওয়া হলো ''দ্বীন-ই-ইলাহী''।
এই নতুন ধর্মের প্রধান উপাদান ছিল সূর্যের উপাসনা করা। বাদশাহ প্রভাতে,দ্বিপ্রহরে,সন্ধায় ও অর্ধরাত্রে বাধ্যতামূলকভাবে সূর্য পূজা করিতেন।তিনি তিলক লাগাতেন ও পৈতা পরতেন। সূর্যোদয়ের সময় ও মধ্যরাত্রিতে নহবত ও নাকাড়া বাজান হতো। এই নতুন ধর্মে সূর্যের নাম উচ্চারনকালে 'জাল্লাত কুদরাতুহু' বলা হতো। বাদশাহ বিশ্বাস করতেন যে ,সূর্য বাদশাহ গনের অভিবাবক ও হিতাকাঙ্খী। তিনি তাই হিন্দুদের কাছ থেকে সূর্যকে বশীভূত করার মন্ত্র শিখেছিলেন। মাঝরাত্রে ও ভোরে তিনি এই মন্ত্র পাঠ করতেন। শিবরাতে তিনি যোগীদের আসরে সমস্ত রাত্রি বসে থাকতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে ,ইহাতে আয়ু বৃদ্ধী পায়।
'ব্রাক্ষ্মদান' নামক জনৈক ব্রাক্ষ্মনকে বাদশাহ রাজকবি নিযুক্ত করেন। ইতিহাসে তিনিই ''বিরবল'' নামে পরিচিত । তারই পরামর্শে 'দেবী' নামক জনৈক হিন্দু দর্শনিক বাদশাহর সহিত মেলামেশা করার সুযোগ পায়। রাত্রিকালে বাদশাহর অন্দরমহলেও এই দার্শনিকের
অবাধ যাতায়াত ছিল। বাদশাহ তাহার সহিত সাক্ষাৎ করার জন্য সর্বদা উদগ্রীব থাকতেন। এই দেবী ও গৌতম নামের জনৈক ব্রাক্ষ্মনের কাছ থেকে বাদশাহ মূর্তি,সূর্য,আগুন,ব্রক্ষ্মা,মহামায়া,বিষ্ঞু, কৃষ্ঞ ও মহাদেব পূজার কায়দা কানন শুনে বড়ই উৎফুল্ল হতেন এবং এইসব গ্রহনও করতেন। ইহা ছাড়া এই ধর্মে আগুন,পানি,গাছ,গাভী পূজা করা হত। নক্ষত্র পূজার ব্যাপারেও বাদশাহ অত্যধিক বাড়াবাড়ি করতেন।
হিন্দুদের পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস করাও ছিল এই ধর্মের কর্তব্য।
বাদশাহ যে সব পূজাপার্বন করতেন অনুসারীগনকেও সেই সব করতে হত। উপরন্তু তাদেরকে বাদশাহকেও সেজদা করতে হত। ভন্ড সূফীদের সর্দার 'তাজুল আরেফিন' বাদশাহকে সেজদা করা ওয়াজেব বলে ফতোয়া দান করেন। এই সেজদার নাম করন করা হয় 'জমিন বুচি'। তিনি বলেন বাদশাহর প্রতি সন্মান প্রদর্শন করা ফরজে আইন। হিন্দুস্হানের ভ্রষ্ট সূফীদের কার্যপ্রনালী দলীলরূপে খাড়া করে তিনি এর ব্যাখ্যা প্রদান করেন। ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে সাধারন ব্যক্তিছাড়াও বিশিষ্ট আলেমগনও এই শেরেকি কার্যে অভ্যস্হ হয়ে পড়েন।
এই নতুন ধর্মে সূদ ও জুয়া ছিল হালাল। খাছ দরবারে জুয়া খেলার জন্য একটি ঘর নির্মান করা হয় এবং জুয়াড়ীদেরকে রাজকোষ থেকে সুদি কর্জ দেয়া হত। মদ্যপান করাও হালাল সাব্যস্হ করা হয়। বাদশাহ স্বয়ং দরবারের নিকট একটি শরাবখানা খুলে দেন। আরো অনেক অনাচার, অজাচারে, অত্যাচারে পূর্ণ ছিল আকবরের শাসনামল। সেসব বিবৃত করে পাঠকদের অার বিরক্তি উৎপাদন করতে চাইনা। তবে আকবরের এই বিকৃত ও অনাচারপূর্ণ মনগড়া ধর্ম ‘দ্বীন এ এলাহী’র অসারতা প্রমাণ ও এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কাছে অসামান্য ভূমিকা রাখেন মোজাদ্দেদী আলফেসানী(রহ)।
ঐতিহাসিক ড. এ. আর. মল্লিক তাঁর British Policy and The Muslims in Bengal গ্রন্থে লিখেন (পাঠকদের সুবিধার্থে বাংলা অনুবাদটিই তুলে ধরলাম)-“মুসলমানগণ ইসলামের মূল উৎসকেন্দ্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের আধাধর্মান্তরিত মুসলমানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলমানদের সাথে বহু বছর যাবত একত্রে বসবাস করে মূল ধর্মবিশ্বাস হতে সরে পড়েছিল এবং হয়ে পড়েছিল ভারতীয়। অধিকন্তু এই ভারতীয় মুসলমানগণ হিন্দুদের বর্ণপ্রথা অবলম্বন করে। অতীতে যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের মধ্যে তাঁদের শক্তি নিহিত ছিল তার প্রতি চরম আঘাত হানে। ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তারা বহুভাগে বিভক্ত, ছিন্নভিন্ন ও অধঃপতিত জাতি হিসাবে চিত্রিত হয়, যার সংশোধনের কোনো উপায় থাকে না। তাই স্যার মুহাম্মদের ইকবালের এ উক্তিতে বিস্ময়ের কিছু নাইঃ নিশ্চিতরূপে আমরা হিন্দুদিগকে ছাড়িয়া গিয়াছি। আমরা দ্বিগুণ বর্ণপ্রথা রোগে আক্রান্ত-ধর্মীয় বর্ণপ্রথা, ফের্কা-উপফের্কা ও সামাজিক বর্ণপ্রথা, যা আমরা শিক্ষা করেছি অথবা হিন্দুদের কাছ হতে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। যেসব নীরব পন্থায় বিজিতগণ বিজেতাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করে থাকে, এ হলো তার একটি।”
(অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এখানেই শেষ হচ্ছে না। আগামী পর্বে বাউল নেকড়া ফকীরদের দ্বারা শিরক বিদআত ও নোংরা যৌনাচার প্রচলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করবো । তার পরেই শিরক ও বিদআত নিয়ে মৌলিক আলোচনা শুরু করবো ইনশাল্লাহ। সাথেই থাকুন।)।
বিষয়: বিবিধ
৩০৮৪ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আকবরের 'দীন-এ-ইলাহী' সম্পর্কে হাল্কা কিছু জানতাম। আজ এই নতুন ধর্ম প্রবর্তনের প্রেক্ষাপটটিও জানলাম এই লেখার দ্বারা।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি লেখা উপহার দেবার জন্য।
অনেক শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
দারুন বিষয় চালিয়ে যান সাথেই আছিভাই।
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
অনেক ধন্যবাদ।
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
তবে দুঃখজনক হচ্ছে আপনিও তেমন ইতিহাস পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। মুসলিম বিদ্বেষী ঐতিহাসিকরা হুসেন শাহীকে মহামানব বানাতে কসুর করে নি। এমনকি মুসলিমদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতার জন্য সে মক্কার শরীফ বংশ হতে আগত বলে ভিত্তিহীন কথাবার্তা প্রচার করে এসব ঐতিহাসিকরা। একইভাবে ‘আকবর দ্য লম্পট’ কে ‘আকবর দ্য গ্রেট’হিসেবে তুলে ধরে।
হোসেন শাহ সম্পর্কে অনেক প্রশংসা ও স্তুতিবাক্য করেছেন হিন্দু ঐতিহাসিকগণ। এসব মিথ্যা প্রশংসার মূল কারণ হচ্ছে ঐসব ঐতিহাসিকের সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। নিরপেক্ষ ও মোহের উর্ধে্ব উঠে তারা ইতিহাস বিশ্লেষণ না করে হোসেন শাহ কর্তৃক মুসলমানদের সর্বনাশে উল্লাস প্রকাশ করেছেন।
হোসেন শাহ ছিল হাবশী শাসক মুজাফফর শাহ এর সামান্য কর্মচারী। সুচতুর হোসেন ছলে বলে কৌশলে ও শাসক মুজাফফর শাহকে নানাভাবে সন্তুষ্ট করে একসময় প্রধান উজির পদে নিয়োগ লাভ করেন। এ নিয়োগ এর পর হোসেন শাহ তার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন হিন্দু আমাত্যবর্গদের সাথে নিয়ে। মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলেন সুলতান মুজাফফর শাহের বিরুদ্ধে। আবার বাদশাহকে পরামর্শ দিয়ে অবাঞ্চিত ও ভুল কাজ করাতেন যাতে জনগণ বিদ্রোহ করে। এভাবে আমীর উমরাহ ও সেনাবাহিনীকেও ক্ষেপিয়ে তোলা হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। এক পর্যায়ে হোসেন শাহ ও বাদশাহ মুজাফফর শাহের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে উভয় পক্ষে একলক্ষ বিশ হাজার সৈন্য নিহত হয়, নিহত হন মুজাফফর শাহও। অনেকের মতে প্রাসাদরক্ষীকে হাত করে হোসেন প্রাসাদ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে স্বীয় হস্তে হত্যা করেন আপন প্রভুকে।
স্যার যদুনাথ সরকার, বৈষ্ঞব লেখকদের বরাত দিয়ে বলেন যে, শ্রীচৈতন্য যে অবতার ছিলেন তা হোসেন শাহ মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To Seeচৈতন্য গৌঢ় নগরে আগমন করলে হোসেন তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং রাজকর্মচারীদের প্রতি ফরমান জারি করেন যে প্রভু চৈতন্যকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় এবং তার ইচ্ছেমত যত্রতত্র ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়।
“হিন্দু লেখকগণের মতে হোসেন শাহীর সিংহাসনে আরোহণের পর হইতে গৌঢ় দেশে ‘রামরাজত্ব’ আরম্ভ হইয়া গেল। মাননীয় দীনেশ চন্দ্র সেন মহাশয় এ বিষয়ের ভূমিকা হিসাবে বলিতেছেনঃ মুসলমানগণ ইরান, তুরান প্রভৃতি স্থান হইতেই আসুন না কেন, এদেশে আসিয়া সম্পূর্ণ বাঙালী হইয়া পড়িলেন। মসজিদের পাশে দেবমন্দিরের ঘন্টা বাজিতে লাগিল, মহরম, ঈদ, শবেবরাত প্রভৃতির পার্শে দূর্গোৎসব, রাম, দোলন উৎসব চলিতে লাগিল।... এহেন পরিস্থিতির মধ্যে সুলতান সাহেবের অভ্ভ্যুদয় ঘটিল। তিনি রাজকীয় ঝামেলা হইতে মুক্ত হইয়া খুব সম্ভব সর্বপ্রথম চৈতন্যদেবের খেদমতে উপস্থিত হইলেন এবং তাহার ভক্ত শ্রেণীভুক্ত হইয়া গেলেন। ‘চৈতন্য চরিত্রামৃতে’ লিখিত আছে যে, ইনি (হোসেন) শ্রীচৈতন্যের একজন ভক্ত হইয়াছিলেন।”(মুসলিম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস, মাওলানা আকরম খাঁ, পৃঃ ৯৮)।
শ্রী চৈতন্যকে বৈষ্ঞব সমাজ শ্রীকৃষ্ঞের অবতাররূপে এমনকি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ঞরূপে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো। গোটা হিন্দু সমাজে শ্রী চৈতন্য এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। স্যার যদুনাথ সরকার বলেনঃ “বাংগালীর হৃদয় মন সকল বন্ধন ছিন্ন করে রাধা কৃষ্ঞের গীতিকার দ্বারা সম্মোহিত হয়। বৈষ্ঞব ধর্মের আবেগ অনুভূতিতে, কাব্যে গানে, সামাজিক সহনশীলতা এবং ধর্মীয় অনুরাগে মনের উচ্ছ্বাস পরবর্তী দেড় শতাব্দী যাবত অব্যাহত থাকে। এ হিন্দু রেঁনেসা এবং হোসেন শাহী বংশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”
(যদুনাথ সরকার, দ্য হিস্ট্রি অব বেঙল, ২য় খন্ড, পৃ ১৪৭)।
প্রকৃতপক্ষে চৈতন্যের আবির্ভাবের উদ্দেশ্য কি ছিল তা আমরা তার নিজের ভাষাতেই জানতে পারি।
“পাষন্ডি সংহারিতে মোর এই অবতার,
পাষন্ডি সংহারি ভক্তি করিমু প্রচার।”
মনু মতে পাষন্ডি হচ্ছে বেদ অমান্যকারী, অন্য বর্ণের চিহ্নধারী ও অহিন্দু। এখানে পাষন্ডি বলতে মুসলমানদেরকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ মুসলিম নিধনই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
শ্রীচৈতন্যকে সহযোগিতা ও লাখো মুসলিম হত্যাকারী মুসলিম নামধারী হোসেন শাহীকেও এজন্য অবতার বলে গণ্য করে হিন্দুসমাজ।
“নৃপতি হুসেন শাহ হয়ে মহামতি
পঞ্চম গৌঢ়ে যার চরম সুখ্যাতি।
অস্ত্রশস্ত্রে সুপন্ডিত মহিমা অপার
কলিকালে হবু যেন কৃষ্ঞ অবতার।”( বংগভাষা ও সাহিত্য, দীনেশ চন্দ্র সেন)।
বাংলা গ্রন্থ প্রণেতা মালধর বসু, বিপ্রদাস, বিজয়গুপ্ত এবং যশোরাজ খান তাঁদের সাহিত্যে হোসেন শাহর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সহ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। মালধর বসু ভগবতীর দশম ও একাদশ স্কন্ধ বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি শ্রীকৃষ্ঞের প্রণয়লীলা বিষয়ক ‘শ্রীকৃষ্ঞ বিজয়’ নামক মহাকাব্য রচনো করেন। হোসেন প্রীত হয়ে তাকে গুণরাজ খান উপাধিতে ভূষিত করেন।
গোপীনাথ বসু ‘কৃষ্ঞমঙ্গল’ নামে মহাকাব্য রচনা করেন এবং বিপ্রদাস মনসামঙ্গল রচনা করেন। এসব গ্রন্থাদি রচনায় হোসেন শাহ ও তার পুত্র নসরত শাহের বেশ প্রভাব ছিল।
এসব অশ্লীল কিচ্ছা কাব্যের প্রভাব মুসলিম সমাজে এতটা পড়ে যে, মুসলিম সমাজে মনসা পূজা প্রচলিত হয়।
অনেক ধন্যবাদ এই বিষয়টা অজানা ছিল ।
লেখা চালিয়ে যান সাথে আছি ইনশাআল্লাহ্ !
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
সুলতান হুসাইন শাহ এর প্রকৃত বংশ পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সম্রাট বাবুর মদ্যপায়ি ছিলেন প্রথম জিবনে তবে ভারতের সম্রাট হওয়ার পর তা ত্যাগ করেন। কিন্তু তা প্রতিরোধ করার কোন চেষ্টা করেননি। মুঘল সম্রাটদের ইতিহাসে দেখা যায় সব চেয়ে অশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত সম্রাট ছিলেন আকবর। তিনি জন্মের সময় হুমায়ুন রাজ্য হারা ছিলেন। আর তিনি তার চাচা কামরান এর হাতে বন্দি ছিলেন। অথচ কিছু তথাকথিত ঐতিহাসিক তাকেই মহান! বানানর কাজে লিপ্ত। জাহাঙ্গির অবশ্য শেষ দিকে আকবরের প্রবর্তিত প্রথাগুলি সংশোধনের চেষ্টা করেছিলেন।
আরেকটি কথা যোধা বাই আকবরের স্ত্রী নন। সম্রাট জাহাঙ্গির এর মাতা ছিলেন আমের এর রাজা ভারমল এর কন্যা। সম্রাট জাহাঙ্গির এর নিজের লিখা তুযুক-ই-জাহাঙ্গিরি এবং আবুল ফজল এর আকবরনামা তে জাহাঙ্গির এর মাতা কে মারিয়াম উজজামানি বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এটি তার উপাধি ছিল। তাকে সম্রাট আকবর এর পাশেই কবর দেয়া হয়েছে। ইংরেজ ঐতিহাসিক কর্নেল টড ভুল করে এই নাম লিখেছেন।তার মুল নাম হারকা বাই বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। যোধা বাই হলেন সম্রাট জাহাঙ্গির এর স্ত্রি এবং সম্রাট শাহজাহান এর মাতা যোধপুরের রাজকন্যা জগত গোসাইন। তাকে তাজ বিলকিস বিবি বলে সম্বোধন করা হতো। যোধপুরের রাজকন্যা হিসেবে যোধা বাই ও বলা হতো।
ইতিহাস বিকৃতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে পুত্রের স্ত্রি কে পিতার স্ত্রি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে!
যোঁধা বাঈ কে নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক আছে। লেখার দৈর্ঘবৃদ্ধি, পাঠক এ বিভ্রান্তি এসব বিষয় বিবেচনায় ঐ বিতর্কটি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে অধিকাংশের মতামত তুলে ধরেছি। যোঁধা বাঈ আকবরপুত্র জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী বলেও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ। তবে তথ্যপ্রমাণসমৃদ্ধ কিছু পাই নি। আপনার লেখায় অবশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি আছে-ইংরেজ ঐতিহাসিকের ভুল। এ বিষয়ে আরো জানা থাকলে রেফারেন্সসহ জানাতে অনুরোধ রইল।
সাথেই থাকুন। পরবর্তীতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন