নয়া যমানার ডাক- ৫ (দাজ্জাল প্রতিরোধে ঐক্য)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:২২:০১ দুপুর

দাজ্জাল (antichrist) সম্পর্কে বাইবেলে বলা হয়েছে,

Little children, it is the last time: and as ye have heard that antichrist shall come, even now are there many antichrists; whereby we know that it is the last time —1 John 2:18 KJV

Many deceivers have gone out into the world, those who do not confess that Jesus Christ has come in the flesh; any such person is the deceiver and the antichrist! —2 John 1:7 NRSV (1989)

Who is the liar but the one who denies that Jesus is the Christ? This is the antichrist, the one who denies the Father and the Son. —1 John 2:22 NRSV (1989)

ইহুদীদের ধারণা- ইহুদীরাও মুসলিম ও খৃষ্টানদের ন্যায় দাজ্জালে বিশ্বাসী- যা তাদের নিকট আরমিলাস নামে পরিচিত। (Influenced by Christian and Muslim interpretation, an anti-Messiah type figure known as Armilus appears in some schools of Jewish eschatology)।

রাসূল (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ أَكْثَرَ خُطْبَتِهِ مَا يُحَدِّثُنَا عَنِ الدَّجَّالِ يُحَذِّرُنَاهُ، وَكَانَ مِنْ قَوْلِهِ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّهَا» لَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ أَعْظَمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَمْ يَبْعَثْ نَبِيًّا إِلَّا حَذَّرَ أُمَّتَهُ، وَأَنَا آخِرُ الْأَنْبِيَاءِ، وَأَنْتُمْ آخِرُ الْأُمَمِ، وَهُوَ خَارِجٌ فِيكُمْ لَا مَحَالَةَ، فَإِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُ كُلِّ مُسْلِمٍ، وَإِنْ يَخْرُجْ بَعْدِي فَكُلُّ امْرِئٍ حَجِيجُ نَفْسِهِ، وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ فَلْيَتْفُلْ فِي وَجْهِهِ، وَلْيَقْرَأْ بِفَوَاتِيحِ سُورَةِ الْكَهْفِ "

আবু উমামা বাহেলী রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল সাঃ আমাদের সামনে বক্তব্য দিলেন, বক্তব্যে তিনি আমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী, ভূপৃষ্ঠে সংঘটিত ফিতনাসমূহের মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা হবে সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ। আল্লাহ তা’লা যত নবী প্রেরণ করেছেন সবাই নিজ নিজ উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আমি সর্বশেষ নবী আর তোমরা সর্বশেষ উম্মত। সে অবশ্যই তোমাদের মাঝে আবির্ভূত হবে। আমি তোমাদের মাঝে থাকাবস্থায় সে যদি আত্মপ্রকাশ করে তাহলে প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষ থেকে আমিই তার সাথে দলীলসহ বিতর্ক করব। আর যদি সে আমার পরে আসে তাহলে প্রত্যেক মুসলমান স্বপক্ষে বিতর্ক করবে, আর প্রত্যেক মুসলমানের ক্ষেত্রে আল্লাহ আমার স্থলবর্তী। যে দাজ্জালের সাক্ষাত পাবে সে যেন তার মুখোমুখি যুদ্ধ করে, আর সুরা কাহাফের শুরুর অংশ পাঠ করে।

হাদীস এবং পূর্ববর্তী ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থগুলির concept অনুযায়ী বুঝা যায়, দাজ্জাল কোন দানব বা অতিকায় প্রাণী নয় বরং এটা একটা ফিতনা, মহা সংকট, মানবসভ্যতা বিধ্বংসী সর্বগ্রাসী মতবাদ। ইসলামী চিন্তাবিদদের যারাই দাজ্জাল সম্পর্কে গবেষণা করেছেন, চিন্তা ভাবনা করেছেন তারাই সীদ্ধান্ত দিয়েছেন- দাজ্জাল কোন প্রাণী নয় বরং পাশ্চাত্য সভ্যতাই দাজ্জাল। ইসলামিক স্কলারগণ ইহুদী, খৃষ্টান ও পাশ্চাত্য সভ্যতাকে দাজ্জাল বলে সীদ্ধান্ত দেয়ার পর কোন আলেম বা চিন্তাবিদ এর প্রতিবাদ করেননি বরং মৌন সম্মতি প্রদান করেছেন। কাজেই আমরা বলতে পারি পাশ্চাত্য সভ্যতাই দাজ্জাল এ বিষয়ে ইজমায়ে উম্মত হয়ে গেছে। তবে আমাদের সংযোজন হচ্ছে শুধু পাশ্চাত্য সভ্যতাই নয় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও দাজ্জাল। বিষয়টি ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ইউরোপে মুক্তচিন্তকদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে গীর্জা নিয়ন্ত্রিত ইনকুইজিশন কোর্ট (Inquisition court) কর্তৃক তিন লক্ষ মানুষকে হত্যার পর সমগ্র ইউরোপ কার্যত গীর্জার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। আর তখনই জন্ম নয় সেক্যুলার পুঁজিবাদী গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র নামের বিপরীত মুখী দুটি মতবাদ। শ্রমিকের উদ্বৃত্ত মুল্যতত্ত্বের বৈষম্যে বর্জোয়ার শোষণ ও শোষিত শ্রমিকের প্রাপ্য মজুরির লক্ষে মার্ক্সিয় দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতান্ত্রিকরা আন্দোলন শুরু করে। এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য তারা ব্যক্তি মালিকানার বিলুপ্তি ঘটিয়ে সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ন্যস্ত করে সকল নাগরিকের সমানাধিকারের সাম্যনীতি প্রচার করে। সমাজতন্ত্রের স্রষ্টারা ইউরোপে গীর্জার শোষণ নির্যাতনের ভিত্তিতে ঘোষণা দেয়, ধর্ম হলো আফিম- শোষণের হাতিয়ার। এভাবে তারা ইসলামকেও অন্যান্য ধর্মের পর্যায়ভুক্ত করে প্রত্যাখ্যান করে এবং সৎকাজ, ইশ্বর, পরকাল ইত্যাদি বর্জন করে। এভাবে তারা রাশিয়া কেন্দ্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, আর এর নাম দেয় স্বর্গরাজ্য । এ স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে তারা লক্ষ লক্ষ বনী আদমকে হত্যা করে। পৃথিবীর উপর দিয়ে বইয়ে দেয় ধ্বংস আর বর্বরতার এক নৃশংসতম তাণ্ডব লীলা। তারপর স্বর্গরাজ্যে মানুষ প্রত্যক্ষ করে পূর্বের তুলনায় প্রভু ভৃত্তের আরো কুৎসিততম বৈষম্য। সাধারণ মানুষ নেতৃবৃন্দের গোলামে পরিণত হয়। সেখানে মানবাধিকার এমন শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে যে, সেই স্বর্গরাজ্য ছেড়ে মানুষ পালাতে থাকে। আটকাবার জন্য নির্মিত হয় বার্লিন প্রাচীর কিন্তু আটকানো যায়নি। মানুষ দেয়াল টপকে, চোরাই পথে দেশ ত্যাগ করতে থাকে। শুরু হয় তাদেরকে হত্যা। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ২৭ লাখ নর-নারী কম্যুনিস্ট স্বর্গরাজ্য থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশী পালাতে গিয়ে মারা পড়ে। ভিয়েতনাম, চীন, রাশিয়া ইত্যাদি স্বর্গরাজ্য থেকে পালাতে গিয়ে সরকারী বাহিনীর হাতে, নৌকা ডুবিতে বা অন্যান্য দুর্বিপাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়ে। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়।

সমাজ তন্ত্রের বিপরীত দর্শন হচ্ছে সেক্যুলার পুঁজিবাদী গণতন্ত্র। এ দশর্নের মূল বার্তা হচ্ছে জন্ম একটাই, জীবনটাকে ষোল কলায় ভোগ করাই মানব জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য। কাজেই ধর্ম কর্ম দরকার নাই, ব্যক্তি জীবনে কেউ ধর্মানুষ্ঠান পালন করলে করবে না করলে নাই। কিন্তু জীবনকে উপভোগের জন্য চাই অঢেল অর্থ। এ অর্থোপার্জনে ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ বাচ বিচারের প্রয়োজন নাই। যেহেতু ধর্ম ও পরকাল ঐচ্ছিক বিষয়, পাথির্ব জীবন ও ভোগ বিলাসিতাই মুখ্য, কাজেই হালাল হারামের পরোয়া না করে অর্থোপার্জন কর আর ভোগ বিলাসে নিজেকে ভাসিয়ে দাও। এভাবে নিজেদের প্রবৃত্তির অন্তহীন খাহেশ পূরনার্থে তারা বিশ্বময় উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল, সমগ্র পৃথিবীকে তারা লোটপাট আর নিজেদের পণ্যের বাজারে পরিণত করেছিল, এখনো করছে। এভাবেই তারা দুনীয়ার সম্পদ শোষণ করে ইউরোপে পুঞ্জিভুত করেছিল। যেমন ঐতিহাসিক ব্রুক্স অ্যাডাম (Brooks Adams) তার The law of civilization and Decay গ্রন্থে বলেন- “ ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে বাংলার লুণ্ঠিত সম্পদ আসা শুরু হয় আর সত্বর এর ফল প্রকাশ পেতে শুরু করে। এতবড় বিরাট শিল্প বিপ্লব যার প্রভাব পৃথিবীর প্রত্যন্ত কোণে কোণে অনুভূত হচ্ছে- সৃষ্টিই হতো না যদি পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত না হতো। কেননা ভারতবর্ষের সম্পদেই এই শিল্প বিপ্লব সৃষ্টির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষ থেকে সম্পদের পাহাড় যখন লন্ডনে এসে আছড়ে পড়তে শুরু করল এবং পুঁজি বৃদ্ধি পেল তখন আবিষ্কার-উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক বিরাট প্রতিযোগিতা শুরু হলো। তৃতীয়ত, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে টাকা-পয়সার দ্বারা আজ পর্যন্ত এত বেশি মুনাফা অর্জিত হয় নি যতটা হয়েছে লুণ্ঠিত ভারতীয় সম্পদ দ্বারা। কেননা পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কোন প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল না”।

স্যার উইলিয়াম ডিগবি বলেন,

"England's industrial supremacy owes its origin to the vast hoards of Bengal

and the Karnatik being made available for her use ... Before Plassey was faught and

own and before the ebb. "(Prosperous India; A Revolution , p. 30). tream of treasure

began to flow to England, the industries of our country were at a very low ebb."

(Prosperous India: A Revolution, p. 30)

এভাবে পশ্চিমের দাজ্জাল এশিয়া, আফ্রিকা শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে। আর এশিয়া আফ্রিকায় যখন দুভির্ক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায় তখন প্রয়োজনাতিরিক্ত বলে তাদের সিংহ ভাগ খাদ্য নষ্ট করে ফেলে।

রবীন্দ্রনাথ বাসন্তী গল্পে নারীদেহ আস্বাদনের স্বাদ বাঘ-সিংহের নরমাংস আস্বাদনের সাথে তুলনা করেছেন। অনুরূপভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করে যারা অভ্যস্ত তারাও বাঘ-সিংহের ন্যায় বার বার লোকালয়ে এসে আক্রমণ করে, অশান্তি জিইয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। এজন্যই ইউরোপ তাদের উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যাবার পর মুসলিম দেশগুলির সম্পদ শোষণের জন্য সে গুলির কর্তৃত্ব ধরে রাখে। বিশেষতঃ মুসলমানদের তেল ও রাবার ব্যতীত তাদের সভ্যতার চাকা অচল বিধায় মুসলিম দেশগুলিতে অশান্তি জিইয়ে রেখে তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখছে এবং সম্পদ চোষে নিচ্ছে। এর পরিণতিতে আরাকান থেকে মিসর পর্যন্ত ইসলামের কেন্দ্রগুলি আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি মুসলিম বাস্তুহারা- উদ্ভাস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাদের যথা সর্বস্ব ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। এছাড়া ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকান, ভারত, জিংজিয়াং ইত্যাদিতে যা হচ্ছে তা বণর্নাতিত। মুশলিম বিশ্ব আজ শ্মশান,মহাশ্মশান।

পশ্চিমা পুজিবাদীরা জানে তাদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ ইসলাম । কারণ তারা জানে যে, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা এমন এক সমাজ ব্যবস্থা যা পূর্নাংগ ইনসাফ ও ন্যায় ভিত্তিক। পুজীবাদ ও সমাজ তন্ত্রের মাঝামাঝি বা উভয়টির সমন্বিতরূপ হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। যেখানে নিংশ্ব দিগম্বরের কোন হাহাকার থাকেনা, মুজলুমের আর্তচিৎকার শুনা যায় না, দুর্বলের কান্না দেখা যায় না। এজন্যই পশ্চিমের দাজ্জাল সমাজতন্ত্রের পতনের পর ইসলামের পিছু নিয়েছে। ইসলামকে তারা যমদুতের মত ভয় করে বিধায় পৃথিবীর তাবৎ মিডিয়ার মাধ্যমে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিশোদগার করে যাচ্ছে। ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম, রাসূল (সাঃ) কে সন্ত্রাসী (নাউযুবিল্লাহ) মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী জাতি প্রমাণের জন্য তারা প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সেহেতু তারা উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম দিচ্ছে, অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে আর বিশ্বময় প্রচার করে বেড়াচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম সন্ত্রাসী। এজন্যই রাসূল (সাঃ) দাজ্জালের বর্ণনা দেয়ার সময় দুঃখ ভড়াক্রান্ত হয়ে যেতেন, কারণ তিনি দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তিনি জানতেন, দাজ্জালের সামনে তার উম্মত কতটা অসহায় হয়ে পড়বে । দাজ্জাল সত্যটাকে মিথ্যা বানাবে আর মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করবে। তদুপরি সাহাবায়ে কেরাম ও দাজ্জালের বর্ণনা শুনে ভীত গ্রস্থ ও বিমর্ষ হয়ে যেতেন। তারা যদি জানতেন যে, দাজ্জাল কোন প্রাণী তাহলে তারা জীবনের ভয়ে ভীত হতেন না বরং আশ্বস্ত হতেন যে, হয় তলোয়ার মেরে দাজ্জালকে শায়েস্তা করবেন অথবা কাঙ্ক্ষিত শাহাদত বরণ করবেন। কিন্তু তারা জানতেন দাজ্জাল কোন প্রাণী নয়, তা মুসলমানদের জন্য এক মহা ফিতনা, সর্বগ্রাসী এক মহাবিপর্যয়।

এখন প্রশ্ন হল এই দাজ্জাল, এই মহাবিপর্যয় মোকাবেলার জন্য আমরা কী প্রস্ততি গ্রহণ করেছি?

এখানে রাসূল (সাঃ)-এর দুটি কথা প্রনিধান যোগ্য। তিনি অমুলিমদের ব্যাপারে বলেছেন, আল কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহেদুন-অর্থাৎ মুসলিম নিধনে সকল কাফের এক ও ঐক্যবদ্ধ। এর বাস্তবতা আমরা দিবালোকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আজ হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খৃষ্টানসহ পৃথিবীতে এমন কোন জাতি গোস্টি নেই যারা মুসলমানদের শিয়াল কুকুরের মত মারছে না, শোষণ করছে না, পদদলিত করছে না। আবার রাসূল (সাঃ) মুসলমানদের সম্পর্কে বিধান দিয়ে গেছেন- সকল মুসলমান ভাই ভাই-এক দেহের ন্যায়। দেহের কোন অঙ্গ আঘাত প্রাপ্ত হলে সমস্ত দেহ যেমন ব্যথা জর্জরিত হয়ে যায়- তদ্রুপ কোন মুসলমান আক্রান্ত হলে সমগ্র উম্মাহ বেদনাহত হয়ে উঠবে। তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।

এখন বাস্তবতায় দেখা যায়, কাফেরদের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর উক্তি সত্য প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু মুসলমানদের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ কার্যকর হয়নি অর্থাৎ আমরা পরস্পর ভাই ভাই একদেহ হওয়া তো দুরের কথা বরং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক হাজার হাজার ফেরকা ও দলে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের রক্ত পিয়াসী হয়ে উঠেছি, প্রতিপক্ষ ভাইকে ধ্বংসের চুড়ান্ত কসরত করে যাচ্ছি, দাজ্জালের সহযোগিতায় মুসলিম ভাইদের ধ্বংস করছি। আর এটাই বর্তমান মুসলিম বিশ্বের কমন চিত্র।

আর একারণেই আজ আমাদের এই পতন, দাজ্জালের নিকৃষ্টতম দাসে পরিণত হয়েছি। কাজেই রাসূল (সা) ও কোরানের নির্দেশ তথা উম্মাহর ঐক্য ব্যতীত এ অভিশাপ থেকে মুক্তির দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের সম্ভাবনা কম। কারণ রাজনীতির কোন ধর্ম নাই, এর ধর্মের নাম ক্ষমতা। তাছাড়া রাজনীতিবিদরা ইসলাম ও উম্মাহ রক্ষার দায়ে আবদ্ধ নয়, এ দায়িত্ব আলেম সমাজের উপড় অর্পিত। কাজেই প্রথমত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে ধর্মীয় দল ও ফিরকাগুলির মধ্যে। কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যতগুলি-মাযহাব, মাশরাব, দল,শাখা ফিরকা আছে এ মুহুর্তে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ফরযে আইন। ঐক্য ব্যতীত যেহেতু মুসলিম জাতির মুক্তির কোন উপায় নেই, উম্মাহর ধ্বংসলীলা থেকে বাচার পথ নেই, দাজ্জালের কড়াল গ্রাস থেকে বাচার সুযোগ নেই বিধায় ঐক্য ব্যতীত কোন গত্যন্তরও নেই। সুতরাং যারা ঐক্যের পথে আসবে না বা আসতে চাইবে না তাদেরকে বিচারের মুখামুখি করা হবে। আজকের দিনের পর থেকে যতটা মুসলিম হত্যা হবে, শোষণ, নির্যাতন হবে-সে সবের দায় তাদের উপড় বর্তাবে এবং তাদের থেকে কিসাস ও দিয়ত আদায় করা হবে। কাজেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হব, দাজ্জাল প্রতিরোধে ঐক্য হব, তা রক্ত নদী পেড়িয়ে হলেও, ইংশাআল্লাহ ।

বিষয়: বিবিধ

১২৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File