ধর্ম সংস্কার ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গ- মাহমুদুল হাসান
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:৩১:৩১ রাত
(ইসলাম বিকৃতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হলো)
ইসলামের বিকৃতি
ইসলাম হল হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ দুটি বিষয়ের সমষ্টি। হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকার হলো নামাজ রোজা। এর বাইরে যাবতীয় বিষয় হক্কুল ইবাদ তথা মানবাধিকার ও রাষ্ট্র-রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন, ঈমান আনার পর যারা সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করবে তারাই মুত্তাকী। তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান কর। রাসুল সাঃ এবং খোলাফায়ে রাশেদা নামাজ রোজার বাইরে তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ফরমান চিঠিপত্র জিহাদ সবই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করেছেন। কাজেই এ দুটি অধিকার আদায় না করলে জাহান্নাম। দলিল- জাহান্নামিরা বলবে আমরা নামাজও আদায় করতাম না এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য সংস্থানও করতাম না (মুদ্দাছছির-৪৩, ৪৪)। কিন্তু ইসলাম থেকে নামাজ রোজার শ’খানেক আয়াত ব্যতীত বাকি কুরআন সুন্নাহ বাদ পড়ে গেছে। অর্থাৎ হক্কুল ইবাদ অংশটা বাদ দিয়ে তদস্তলে বিভিন্ন বিদআতকে ইসলাম হিসাবে গ্রহণ করে উম্মাহকে বিভক্ত করা হয়েছে। কাজেই ইসলাম থেকে বাদ পড়া বিষয়গুলির ভিত্তিতে সাতটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক।
মাদ্রাসা-সিলেবাস সংস্কারঃ ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের যাবতীয় উপাদান মাদ্রাসা সিলেবাসে মজুদ আছে। এখানে নামাজ রোজার শ’খানেক আয়াত ব্যতীত বাকি কুরআন-সুন্নাহ বাদ পড়ে গেছে। যেমন, দরিদ্র-অক্ষম শ্রেণীর মৌলিক চাহিদা পূরণের বিধান বাদ পড়ার কারণে অক্ষম অসহায়রা ডাস্টবিনে ও ফুটপাতে পড়ে আছে, অসহায় মেয়েরা পতিতাবৃত্তি করছে। দিয়ত (ক্ষতিপূরণ) এর বিধান বাদ পড়ার কারণে আহত-নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। বিদআত ফিরকার বিধান বাদ পড়ার কারণে উম্মাহ অসংখ্য বিদআত ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে। আকিদার সংজ্ঞা বাদ পড়ার কারণে বিদআতকে আকিদার দোহাই দিয়ে ফিরকা সৃষ্টি করা হচ্ছে। জিহাদ-খিলাফতের সংজ্ঞা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাদ পড়ার কারণে এগুলিকে সন্ত্রাস আখ্যা দেয়া হচ্ছে। রাসুল সাঃ বিত্তবানের সম্পদে অক্ষম দরিদ্রদের হিস্যা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন এবং শক্তিমানের উপর দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিধান দিয়ে গেছেন। আর এসব অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদের বিধান দিয়েছেন বিধায় রাসুল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মহামানব এবং খোলাফায়ে রাশেদা মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু সিলেবাস থেকে এসব বিষয় বাদ পড়ার কারণে তাদেরকে সন্ত্রাসের জনক বলে বিশ্বময় প্রচার করা হচ্ছে। কাজেই ইসলাম থেকে বাদ পরা বিষয়গুলি নিয়ে সঠিক সিলেবাস প্রণয়ন করে কওমি-আলিয়া উভয় ধারাকে একটি বোর্ডের অধীনে এক মুখী করতে হবে।
শরিয়া আদালতঃ ইসলামে বিদআত ফিরকা হারাম কিন্তু ইংরেজ আমলে ইসলাম ও উম্মাহ রক্ষার স্বার্থে জরুরী অবস্থায় মুরুব্বিরা উপমহাদেশে দেওবন্দ, তাবলীগ, জামাতে ইসলামী, আহলে হাদিস, বেরলভী এবং সৌদি আরবে সালাফিজম- এ ছয়টি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। জরুরি অবস্থার এ পদ্ধতিগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় বিদআত। কাজেই ইংরেজ চলে যাবার পর এ ফিরকাগুলি ঐক্যবদ্ধ হওয়া ফরজ ছিল। কিন্তু উল্টো প্রত্যেক ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বীকে রব হিসাবে গ্রহণ করে প্রত্যেকটা ফিরকা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে স্বতন্ত্র ও নতুন ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। যেমন আন্তধর্মের মত আন্তঃফিরকার মুরুব্বীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ে হয় না, তারা একে অন্যের মসজিদে ও ইমামের পিছনে নামাজ পড়ে না ইত্যাদি। কাজেই প্রত্যেক ফিরকা থেকে একজন করে আলেম নিয়ে শরিয়া আদালত গঠন করে এ সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
মুস্তাদআফের অধিকারঃ ইসলামী বিধান মতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি দরিদ্র অক্ষম মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা ফরজ, এর নিচে কেউ থাকবে না। এজন্য ইসলাম যাকাত, ইনফাক ও সম্পদের সমবন্ঠন- এ তিনটি আর্থিক খাত নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ যাকাতে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব না হলে অতিরিক্ত ব্যয় (ইনফাক) করতে হবে, তাতেও না হলে সম্পদ কেউ সঞ্চয় করতে পারবে না, সাংসারিক ব্যয়ের অতিরিক্ত সম্পদ দরিদ্রদের মধ্যে ব্যয় করতে হবে। আর সাংসারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০০ দিরহাম। কিন্তু এসকল বিধান ইসলাম থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এমনকি দেশে নামাজ আদায়ের জন্য চার লক্ষ মসজিদ থাকলেও যাকাত আদায়ের কোন কেন্দ্র নাই অর্থাৎ, মানবাধিকার বাদ দেয়া হয়েছে।
মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠাঃ ইসলামের জন্ম থেকে মুসলমানরা কোন না কোন কেন্দ্রের অধীনে ছিল। কিন্তু কামাল পাশা ১৯২৪ সালে খেলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর থেকে গত ১০০ বছর ধরে ফিলিস্তিন আরাকান কাশ্মীর জিনজিয়ানসহ বিশ্বময় মুসলমানদের উপর যে কেয়ামতের বিভীষিকা বয়ে যাচ্ছে তাতে প্রমাণ হয় একটা কেন্দ্র ব্যতীত মুসলিম জাতি টিকে থাকতে পারবে না। কাজেই খিলাফত বা মুসলিম জাতিসংঘ বা যে নামেই হোক একটা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারপর ন্যাটোর ন্যায় মুসলিম সামরিক জোট গঠন করলেই মুসলিম জাতি বিশ্ব নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হতে পারবে।
উপরোক্ত চারটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করা ফরজে আইন। কারণ এ চারটি বিষয়ের উপর মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব নির্ভর করছে। নিচে আরো তিনটি জরুরী বিষয় উল্লেখ করা হলো।
দুর্নীতি নির্মূলঃ দেশে দুর্নীতি সার্বজনীন এবং অর্থপাচার জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ অভিশাপ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল মসজিদ ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে অর্থাৎ, প্রত্যেক ওয়ার্ডের বড় মসজিদের ইমাম, মসজিদ কমিটি এবং প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হেড/ অধ্যক্ষ মিলে বোর্ড গঠন করবেন। এ বোর্ডের কাজ হল যাকাত, জিযিয়া, উশর, খুমুস আদায় করে নিজ এলাকার দরিদ্র অক্ষমদের পুনর্বাসন করা, বন্যা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন ও ত্রাণ বিতরণ করা, গ্রামীণ ও পারিবারিক সালিশের দায়িত্ব পালন করা, দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি ঋণ প্রদান-উসুল এবং মামলার প্রাথমিক তদন্তভার গ্রহণ করা। জুমার দিন সকলের সামনে এসব কাজ সম্পাদন করা হবে বিধায় ন্যূনতম দুর্নীতির অবকাশ থাকবে না। কাজেই দুর্নীতি নির্মুলের জন্য এটি শ্রেষ্ঠ পন্থা।
অবৈধ সম্পদ উদ্ধারঃ কৃষক শ্রমিক হলো দেশের উৎপাদক শক্তি। তাদের উৎপাদনে একমাত্র হকদার হল দরিদ্র অক্ষম শ্রেণী। কিন্তু লুটেরারা দরিদ্র অক্ষমদের হক লুটপাট করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে এবং বিদেশে পাচার করছে। কাজেই দেশ-বিদেশের সকল অবৈধ সম্পদ উদ্ধার করে দরিদ্র অক্ষম শ্রেণীকে পুনর্বাসন এবং ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
গণতন্ত্রের বিষফলঃ বুর্জোয়া গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রসহ পশ্চিমা সকল মতবাদের মূল ভিত্তি হল ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশন এবং কার্ল মার্কসের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অর্থাৎ, জীবন যুদ্ধে যোগ্যরা টিকে থাকবে অযোগ্যরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ হল থিসিস এন্টিথিসিসের পর সিনথেসিস আসবে অর্থাৎ, রাজনৈতিক দলগুলি পরস্পর দ্বন্দ্ব সংঘাত সংঘর্ষ করে শক্তিমান দল সরকার গঠন করবে দুর্বলরা হেরে যাবে। এটাই অশ্চিমা সকল মতবাদের মূল ভিত্তি। কাজেই বুর্জোয়া গণতন্ত্র বর্জন করে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
আলোচ্য সাত দফা বাস্তবায়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। আর এ ফরজ বাস্তবায়নের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আলেম সমাজের দায়িত্বঃ কওমি-আলীয়ার একজন শিক্ষক (মুহাদ্দিস) হিসাবে উভয় ধারার আলেমগণ আমার ওস্তাদ, আর ছাত্ররা আমার ছাত্র বা ছাত্রতুল্য। কাজেই ইউসুফ (আঃ) এর মত উপযাচক হয়ে ছাত্র শিক্ষক উভয় শ্রেণীর পক্ষ থেকে আমি প্রতিনিধিত্ব দাবি করছি এজন্য যে, একেকজন একেক রকমের কথা বলার কারণে আজ উম্মাহর পতন এবং আল্লাহর গজব চলছে। কাজেই আমি সম্মিলিত আলেম সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে একা কথা বলব। আর আলেম সমাজ ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ রুশোর সামাজিক চুক্তির ন্যায় এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবেন যে, বিশ্বময় উম্মাহর পতন, আল্লাহর গজব এবং পশ্চিমারা বিজয়ী হয়ে গেছে অথচ আমরা কিছুই করতে পারিনি। কাজেই এ গজব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে অমুককে দায়িত্ব দেয়া হলো, সে কোরআন-সুন্নাহ ও যুক্তিভিত্তিক যে প্রস্তাব দিবে আমরা তা মেনে নেব।
তবে তার কোন কথায় বিতর্ক সৃষ্টি হলে আমরা হাটহাজারী মাদ্রাসা, ঢাকা আলিয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দুইজন করে বিজ্ঞ আলেম মিলে একটা থিঙ্ক ট্যাংক/ওলামা পরিষদ/শরিয়া আদালত গঠন করে সেখানে অথবা হাইকোর্টে তার ফয়সালা করব। এর বাইরে কেউ আপত্তি তুললে বা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ালে সে দুষ্কৃতিকারী বলে গণ্য হবে বিধায় শরিয়া আদালতে তার বিচার করা হবে।
কাজেই একজন নায়েবে রাসুল এবং সম্মিলিত আলেম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সারা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেয়া হল যে- ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ। কারণ পুঁজিবাদ, মুনাফা মুক্তবাজার ইত্যাদির কথা বলেছে কিন্তু দরিদ্র অক্ষম শ্রেণী সম্পর্কে কিছুই বলেনি। সমাজতন্ত্র মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার সম্পদের মালিকানা বিলুপ্ত করে সরকার নামক একক পুঁজিপতির কামলা বানাতে চায়। পক্ষান্তরে ইসলাম বিত্তশালীদের থেকে সম্পদ উসুল করে প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। কাজেই ইসলাম হল পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সমন্বিত রূপ বিধায় ইসলামই প্রগতি। আবার পশ্চিমারা এনলাইটেনমেন্ট এবং ফরাসি বিপ্লবের পর আফ্রিকায় দাস ব্যবসা করেছে এবং সারা পৃথিবী দখল করে লুটপাট করে নিয়ে তাদের শিল্প বিপ্লবের পুঁজি সংগ্রহ করেছে। পক্ষান্তরে ইসলামের জন্মই হয়েছে প্রত্যেকটা দরিদ্র-অক্ষম মজলুমকে খুঁজে খুঁজে বের করে তার অধিকার প্রদান করার জন্য। দলিল- রাসুল সাঃ এবং খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহ-কর্মপদ্ধতি। কিন্তু ইসলাম তথা মাদ্রাসা ও সকল ফিরকার সিলেবাস থেকে পার্থিব জীবন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বাদ পড়ে গেছে। প্রমাণ আমার গ্রন্থাবলী। কাজেই ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ হিসাবে মানবতার রক্ষাকবচ খেলাফতের ঘোষণা দেয়া হলো।
খেলাফত প্রতিষ্ঠাঃ রাসুল সাঃ বলেছেন ‘শেষ জামানায় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে (আহমদ-১৮৪০৬)। কাজেই প্রকৃত ইসলামটা প্রকাশ করলে বহু আগেই খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। কারণ পৃথিবীর মানুষ বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের প্রতি বিষিয়ে উঠেছে, তারা মুক্তির জন্য ত্রাহি ত্রাহি করছে। কাজেই আলেম সমাজের পক্ষ থেকে খিলাফতের ঘোষণা দেয়া হলো- (১) সকল পতিতালয় এবং হিজরালয়গুলিকে মহিলা মাদ্রাসা হিসাবে ঘোষনা দেয়া হলো। প্রত্যেকটা পতিতা-হিজরাকে প্রয়োজনীয় তারবিয়্যত দিয়ে এক একটা রাবিয়া বসরী বানানো হবে। তারপর এতিম মেয়ে শিশু, বিধবা ও বৃদ্ধাদের মহিলা মাদ্রাসায় এবং এতিম ছেলে শিশু ও বৃদ্ধদের পুরুষ মাদ্রাসায় আশ্রয় দেয়া হবে এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও পার্থিব শিক্ষা দেয়া হবে। তারপর আগামী সরকার আসলে সকল মুস্তাদআফের পুনর্বাসন ও ভাতা দেয়া হবে। (২) নিহত ও আহতদের ক্ষেত্রে দিয়ত (ক্ষতিপূরণ) ও বিচার- উভয়টির এক্তিয়ার দেওয়া হবে।
অর্থের উৎস তিনটি- (ক) দেশ-বিদেশের সকল অবৈধ সম্পদ ফেরত আনা হবে। (খ) যাকাতে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব না হলে পারিবারিক ব্যয়ের জন্য ৪০০০ দিরহাম রেখে বিত্তবানদের থেকে বাকি সম্পদ ক্রমান্বয়ে নিয়ে আসা যাবে। (গ) যে কোন ফিরকাকে আর্থিক সাহায্য দান জায়েজ নাই বিধায় এক্ষেত্রে অনুসারীরা যে টাকা ব্যয় করতো সেই টাকা এখন মসজিদ মাদ্রাসাসহ মুস্তাদআফ পুনর্বাসনের কাজে ব্যয় করবে।
সিলেবাস সংশোধনঃ নামাজ রোজার শ’খানেক আয়াত ব্যতীত মাদ্রাসা সিলেবাস থেকে রাষ্ট্র রাজনীতি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত পার্থিব যাবতীয় বিষয় বাদ দিয়ে ইসলামকে উল্টে দেয়া হয়েছে। যেমন মাদ্রাসা শিক্ষিতদের দায়িত্ব ছিল যাকাত জিযিয়া ইত্যাদি আদায় করে দরিদ্র অক্ষম শ্রেণীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করা এবং নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয়া। কিন্তু উল্টো আমরা দরিদ্রের হক দান সদকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি এবং নিহতের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে ও খতম পড়ে টাকা আনছি। আবার আলিয়া মাদ্রাসা সম্পর্কে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ এ ধারার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য হল, আলিয়া শিক্ষিতদের কেরাত শুদ্ধ নয় বিধায় তাদের পেছনে নামাজ হয় না, আলিয়ার শিক্ষকরা রিডিং-এবারত পড়তে পারে না, পড়াতে পারে না, নকল হয়, পরীক্ষায় বাইরে খাতা লিখানো হয়, সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হল, ইসলাম শ্রেষ্ঠ মতবাদ সত্ত্বেও ইসলামী শিক্ষার উপর এত জুলুম নির্যাতন এবং দ্বিধারায় বিভক্ত কেন, এটা কার ষড়যন্ত্রের ফসল, এই সিলেবাস পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের শিকার কেন? কওমি শিক্ষিতরা সারা জীবন লেখাপড়া করেও রাষ্ট্র রাজনীতিতে কোন অবদান রাখতে পারে না শুধু দান সদকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে আর আলীয়া শিক্ষিতরা শুদ্ধ রূপে কোরআন পর্যন্ত পড়তে পারবে না। অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদের শিক্ষায় এমন প্রহসন নাই।
ইহুদি-খ্রিস্টান হল ইসলামের জন্ম শত্রু। তাদের এমন কোন পুঁজি নেই যার বদৌলতে ইসলাম ও উম্মাহর উপর বিজয়ী হতে পারে। কিন্তু তারা হাজার বছরের ধূর্ত প্রচেষ্টায় ইসলামের পার্থিব যাবতীয় বিষয় বাদ দিয়ে একটা ব্যর্থ সিলেবাস দিয়ে মুসলমানদের আত্মিক শক্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার ওসমানিয়া খেলাফত ধ্বংস করে জাতি রাষ্ট্রের ভিত্তিতে মুসলমানদের অসংখ্য খন্ডে বিভক্ত করে তাদের বাহ্যিক শক্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এভাবেই পশ্চিমারা ইসলাম ও উম্মাহর উপর বিজয়ী হয়েছে।
পৃথিবীর সকল ধর্মের মধ্যে একমাত্র ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম আত্তীকরণ করে, অন্যান্য ধর্ম তা করে না অর্থাৎ, হিন্দু বৌদ্ধ ও ইহুদী ধর্ম ধর্মান্তরিত করে আত্তীকরণ করে না। কাজেই এখন তুলনাটা হবে শুধু ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মধ্যে। সকল ধর্মের উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টার অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ব্যস এখন কুরআন ও বাইবেলের মধ্যে তুলনা করে দেখুন- কুরআন এ দুটি বিষয়ে যে পূর্ণাঙ্গ বিধান দিয়েছে তার সামনে বাইবেলের অবস্থান সূর্যের সামনে মাটির প্রদীপ তুল্য। কুরআনের সাথে বাইবেলের কোন তুলনাই চলে না। তাছাড়া ইসা আঃ প্রবর্তিত খ্রিস্ট ধর্ম শুধু বনী ইসরাঈলের জন্য। যেমন তিনি বলেন, বনি ইসরাইলের বাইরে যারা তার অনুসরণ করবে তারা কুকুর (মথি-১৫; ২১-২৮)। কাজেই এখন আলেম সমাজের কাছে প্রশ্ন হল, আপনারা এত ক্ষমতাধর যে, রাসুলের সাঃ একক উম্মাহকে হাজারটা খন্ডে বিভক্ত করতে পারলেন কিন্তু বিশ্বময় অন্যদের তো বটেই এমনকি মুসলমানদের খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে কেন, কিভাবে, কোন যুক্তিতে, কিসের ভিত্তিতে- এখানে আপনাদের ক্ষমতা কোথায়? কাজেই এসবের দায় আলেমদের। কারণ ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বলিত বিষয়াবলী এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব মাদ্রাসায় পাঠ্য থাকলে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশিত থাকতো এবং বিশ্বময় মুসলমানরাই নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত থাকতো। এটাই হলো ইসলাম ও উম্মাহর পতন, আল্লাহর গজব এবং পশ্চিমারা মুসলমানদের উপর বিজয়ী হওয়ার কারণ।
ইসলামের সামনে পশ্চিমা মতবাদ অতিশয় তুচ্ছ ও নগণ্য। কিন্তু মাদ্রাসা সিলেবাস থেকে পার্থিব যাবতীয় বিষয় বাদ দিয়ে ইসলামকে একটা ভিক্ষার ধর্ম ও মাদ্রাসা শিক্ষিতদের পরনির্ভরশিল বানানো হচ্ছে। মাদ্রাসার সিলেবাস থেকে মানবাধিকার বাদ পড়ার কারণে দরিদ্র অক্ষমদের পুনর্বাসন হচ্ছে না, উম্মাহর ঐক্যের বিধান বাদ পড়ার কারণে আরাকান ফিলিস্তিনসহ বিশ্বময় মুসলমানদের উপর কেয়ামতের বিভীষিকা বয়ে যাচ্ছে। কাজেই একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হিসাবে এ সিলেবাস নাজায়েজ ঘোষণা দিয়ে প্রকৃত ইসলামী সিলেবাস প্রণয়নের দাবিতে জিহাদের ডাক দেয়া হলো- যাতে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা বিশ্ব শাসনের উপযোগী হিসাবে গড়ে উঠতে পারে।
এখন আমাদের সম্মিলিত আলেম সমাজ এবং উম্মাহর ফরয দায়িত্ব হল, ইসলাম থেকে বাদ পড়া বিষয়াবলি, আমাদের পূর্বপুরুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং তা গ্রহণ করে বর্তমান পর্যন্ত উন্নীত আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সমন্বয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করে কওমি আলিয়া উভয় ধারায় সমানভাবে পাঠ্যভুক্ত করে একটি বোর্ডের অধীন করতে হবে। তখন এ সিলেবাস হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সিলেবাস। আর তখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এ সিলেবাস গ্রহণ করবে। ফলে মুসলমানদের শিক্ষা ধারা একমুখী হয়ে যাবে এবং মুসলিম রেনেসাঁ শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিদআত ফিরকা বিলুপ্তকরনঃ রাসুল সাঃ বলেন, মানুষ অজ্ঞ লোকদের কাছে ফতোয়া (জীবন বিধান) চাইবে আর তারা ফতোয়া দিয়ে নিজেরা গোমরা হবে অন্যদেরও করবে (বুখারী- ১০০)। এর প্রমাণ হল আমাদের ফেরকাগুলো। কারণ ইংরেজ আমলের জরুরি অবস্থায় আমাদের মূরুব্বীদের প্রবর্তিত পদ্ধতিগুলি জায়েজ হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় এগুলো বিদআত। কারণ রাসুল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম এসব কর্মকান্ড করেননি। কিন্তু পরবর্তী অজ্ঞ লোকেরা প্রত্যেক ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বীকে রব (বিধানদাতা) হিসাবে গ্রহণ করেছে (তওবা-৩১), কোরআন সুন্নাহ বাদ দিয়ে ফিরকার সিলেবাসকে একমাত্র ইসলাম হিসেবে গ্রহণ করেছে (মুমিনুন- ৫৩), তারা দ্বীনকে বিভক্ত করে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেছে বিধায় রাসুলের সাথে সম্পর্ক নাই (আনআম- ১৫৯)।
কারণ রাসুল সাঃ এবং খোলাফায়ে রাশেদা নামাজ রোজার বাইরে বাকি জীবন ও সময় ব্যয় করেছেন মানবাধিকার অর্থাৎ মানুষের আর্থিক ও বিচারিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে। যেমন উমর রাঃ আটার বস্তা মাথায় নিয়ে অভাবীর ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন, মরুভূমিতে আটকে পড়া প্রসূতির জন্য নিজের স্ত্রীকে নার্স হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন, আবু বকর রাঃ প্রতি রাত্রে গিয়ে এক অন্ধ বৃদ্ধা নিঃসঙ্গ মহিলার প্রয়োজনীয় কাজ গুছিয়ে দিয়ে আসতেন। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা ফিরকা রাষ্ট্র রাজনীতি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহ, রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ (কর্মপদ্ধতি) বাদ দিয়ে মুসলমানদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছে নিজ নিজ ফিরকার বিদআতের দিকে। অর্থাৎ রাষ্ট্র রাজনীতি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়াবলি পশ্চিমা মতবাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রত্যেকটা ফিরকা নিজ নিজ বিদআতকে ইসলাম হিসাবে গ্রহণ করেছে। তারপর এই বিদআতকে আকীদার দোহাই দিয়ে উম্মাহকে অসংখ্য ফিরকায় বিভক্ত করে পরস্পরের শত্রু বানিয়ে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রত্যেকটা ফিরকা একে অন্যের খুনখার শত্রুতে পরিণত হয়েছে। একে অন্যকে কাফের প্রমানের জন্য কোরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করছে।
অথচ বিদআত সম্পর্কে ইমাম মালেক বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি দ্বীন পূর্ণ করলাম এবং আমার নেয়ামত পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম (মায়েদা-৩)। কিন্তু বিদআতীরা প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ দ্বীন পূর্ণ করেননি এবং রাসুল সাঃ আমানতের খেয়ানত করেছেন। কারণ এসব বিদআত তিনি করেননি। আর ইমাম শাফি বলেন, যে সুন্দর ভেবে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু (বিদআত) সৃষ্টি করল সে নতুন শরীয়ত রচনা করলো (আল ই’তিসাম)। কাজেই প্রত্যেকটা ফিরকা নতুন শরীয়ত রচনা করে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এখন ইসলাম হয়ে গেছে ব্যক্তি ও ফিরকা কেন্দ্রিক। কাজেই যারা উম্মাহকে বিভক্ত করে পরস্পরের শত্রু বানিয়ে ধ্বংস করছে পৃথিবীর মাটিতে তাদের বিচার হওয়া উচিত।
সুতরাং সবাইকে নিজ নিজ ফিরকার নাম বাদ দিয়ে মতলক মুসলিম হয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেউ অস্বীকার করলে সে শয়তান (আনাম- ১৫৩, তাবারি), কাফের (আল ইমরান- ১০৬, কুরতুবি), এ উম্মতের ইহুদি (আল ইমরান- ১০৫), ফেরকার প্রবর্তককে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে (তওবা- ৩১), রাসুলের সাথে কোন সম্পর্ক নাই (আনআম- ১৫৯), শয়তানের মত উম্মাহর মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ায় (মায়েদা-৯১), মুসলিম ১৮৫২ নং হাদিসে তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইত্যাদি আরো অসংখ্য দলিল। কাজেই শরিয়া আদালতে তাদের বিচার হতে হবে।
জনগণের দায়িত্বঃ বাংলাদেশ সংবিধানের ৭ নং ধারায় বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। আর জনগণ বলতে বোঝায় কৃষক শ্রমিক। তাদের উৎপাদনে রাষ্ট্র চলে, তারা বয়কট করলে রাষ্ট্র অচল হয়ে যাবে। কাজেই ধর্মীয় রাজনৈতিক যে জাহেলিয়াত চলছে তা নিরসনের জন্য একটা ফরাসি বিপ্লব প্রয়োজন।
দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লবের ডাকঃ ফরাসী সমাজ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল (১) ধর্মজীবী পুরোহিত শ্রেণী (২) সামন্ত প্রভু ও রাজকর্মকর্তাবৃন্দ (৩) কৃষক শ্রমিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবীরা। প্রথম দুটি শ্রেণী কোন উৎপাদন করত না, তারা তৃতীয় শ্রেণীকে শোষণ করে সর্বোচ্চ ভোগবিলাস, সম্মান ও ক্ষমতা ভোগ করত। ফলে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লব-যার ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের জন্ম হয়- যে মতবাদ পৃথিবী শাসন করছে।
ঠিক একই ভাবে আমরাও তিন শ্রেণীতে বিভক্ত- (১) আলেম সমাজ ও ধর্মীয় মুরুব্বি (২) রাজনীতিবিদ ও আমলাগন (৩) কৃষক শ্রমিক অর্থাৎ কৃষক, খেতমজুর, শিল্প শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিক। এখানেও প্রথম দুটি শ্রেণী কোন উৎপাদন করে না, তারা তৃতীয় শ্রেণিকে অবলম্বন করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে।
সৃষ্টির আদি থেকে ধর্মীয় পুরোহিত ও শাসক শ্রেণী আঁতাত করে জনগণের ওপর শোষণ নির্যাতন চালিয়েছে। এ দুটি শ্রেণীর করাল গ্রাস থেকে মুক্তির জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য মতবাদ জন্ম নিয়েছে, ফরাসি বিপ্লব হয়েছে। কিন্তু ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন মতবাদ এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। প্রমান আমার গ্রন্থাবলী। কাজেই আমরা “কৃষক-শ্রমিক ঐক্য ফ্রন্ট” গঠনের দাবি পেশ করছি। জাতির কল্যাণে নিবেদিত কিছু লোক এ সংগঠনের নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন। তারপর এ সংগঠনের দায়িত্ব হল সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আলোচ্য সাত দফা বাস্তবায়ন করা এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জাহেলিয়ত নির্মূল করা।
ধর্মীয় জাহেলিয়াতঃ তোমরা কি জাহেলী শাসনব্যবস্থা কামনা কর (মায়েদা-৫০), তোমরা জেনে শুনে সত্য মিথ্যার মিশ্রণ করো না (বাকারা-৪২)। কিন্তু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ কাজগুলিই হচ্ছে। যেমন ধর্মীয় মুরুব্বিদের দাবি হলো- তারা আল্লাহ রাসূল ও কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ করছে আসলে তারা নিজ নিজ ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বী ও ফিরকার সিলেবাস অনুসরণ করছে, তারা জনগণকে জান্নাতের টিকেট দিচ্ছে আসলে তারা উম্মাহকে অসংখ্য বিদআত-ফিরকায় বিভক্ত করে জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, দাবি হলো মাদ্রাসা শিক্ষা ইসলামী শিক্ষা আসলে এটা ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের শিক্ষা। এসবই হল সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ এবং জাহেলিয়াত। কাজেই শরিয়া আদালতে বা হাইকোর্টে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার এবং সকল ফিরকা বিভক্তি বিলুপ্তির ফয়সালা করতে হবে।
রাজনৈতিক জাহেলিয়াতঃ ‘নৌকা আর ধানের শীষ দুই সাপের এক বিষ’ নয় বরং একই সাপের বিষে দুই দল আক্রান্ত। আর সেই সাপটার নাম বুর্জোয়া গণতন্ত্র। কারণ প্রচলিত গণতন্ত্র হলো একটা ধ্বংসাত্মক জাহেলী মতবাদ। এ মতবাদের লক্ষ্য জনসেবা নয় বরং পার্থিব ক্ষমতা ও সম্পদ। এ মতবাদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানগুলিকে দানবে পরিণত করে। যেমন প্রত্যেক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রাজনীতিতে না এলে তারাই ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু এ গণতন্ত্র তাদেরকে সরকারে থাকলে খুনি লুটেরা দানবে পরিণত করে আর বিরোধী দলে থাকলে গুম খুন নির্যাতনের শিকার বানায়। এ মতবাদ একক জাতিকে বিভক্ত করে পরস্পরের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ উসকে দিয়ে সংঘাতে লিপ্ত করে। দলীয় কর্মীরা দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য মিছিল মিটিং মারামারি খুনাখুনি এমনকি নিজের জীবন উৎসর্গ করে। আর মাগনা কেউ কাজ করে না বিধায় দল ক্ষমতায় গেলে তারা দেশটাকে ক্ষমতা, লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে পরিণত করে। এ মতবাদ ডাকাতির আধুনিক সংস্করণ চাঁদাবাজির প্রবর্তন করেছে।
সেকুলার শিক্ষিতদের একাংশ যারা ধর্মীয় অনুশাসন মানে না তারা দেশের সম্পদ লুটপাট করে পাচার করছে অথচ মুস্তাদআফরা ফুটপাতে ও ডাস্টবিনে পরে আছে। জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক ঘোষণা দিয়ে গণতন্ত্র নামক দেবতার উদ্দেশ্যে জনগণের জান মাল বলি দেওয়া হয়। অথচ জাহিলি যুগে কোন রাজা বাদশা নেতা সরদার এভাবে জনগণের জান মাল ধ্বংস করেনি বিধায় বুর্জোয়া গণতন্ত্র হলো একটা চরম জাহেলী মতবাদ। কাজেই এই জাতীয় মতবাদ যে হারাম তা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। সুতরাং এ গণতন্ত্র বর্জন করা ফরজ।
রাষ্ট্রশাসন ও নির্বাচন পদ্ধতিঃ এখন আমাদের ‘কৃষক শ্রমিক ঐক্যফ্রন্ট’ এর ঘোষণা হলো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলি থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। আর নির্বাচনী ব্যবস্থা হবে ৩০০ আসনের জন্য আমরা জাতির কল্যাণে নিবেদিত ৩০০ জন ব্যক্তি চাইবো- যারা মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করবেন। তারা নিজ এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন। শর্ত হলো তারা বয়স্ক হতে হবে, সম্পদশালী হতে হবে, তাদের সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে- যাতে তাদের উপার্জনের উপর পরিবার নির্ভরশীল না হয়। তারা সম্পদের হিসাব দিয়ে সংসদে যাবেন, তারপর মেয়াদ পূর্তির পর তাদের সম্পদ বাড়বে না বরং কমে যাবে।
মুস্তাদআফের অধিকার প্রতিষ্ঠাঃ ৭১ এর লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে। এখন ২৪ এর মহাবিপ্লবের পর সবাই নিজ নিজ দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করছে, ক্ষমতার জন্য নতুন নতুন দল আত্নপ্রকাশ করছে কিন্তু মুস্তাদআফের কথা কেউ কিছুই বলছে না। কাজেই মুস্তাদআফ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে ‘কৃষক শ্রমিক ঐক্যফ্রন্ট’ এর ঘোষণা হল, সকল অবৈধ সম্পদ ফেরত এনে দরিদ্র অক্ষম শ্রেণীর পুনর্বাসন ও ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
রাষ্ট্রের দায়িত্বঃ রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে। কিন্তু উপরোক্ত আলোচনায় বিশেষত আমার গ্রন্থাবলীতে প্রমাণ করা হয়েছে মুসলমানদের ধর্মীয় সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছিল এসব সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু তারা কোন দায়িত্ব পালন করছেন না, শুধু জনগণের অর্থের শ্রাদ্ধ হচ্ছে। কাজেই ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে শরিয়া আদালত/ফতোয়া বোর্ড/উলামা পরিষদ গঠন করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্যথায় ধর্মীয় সংঘাত সংঘর্ষের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় দায়ী থাকবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে জঙ্গি সংশোধন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানে আমি এক সপ্তাহ জঙ্গিদের সাথে কাউন্সিলিং করব, এরপর কেউ সন্ত্রাস করলে সেজন্য আমি জবাবদিহি করব। কিন্তু সরকার এই দায়িত্ব পালন না করলে জঙ্গি সংক্রান্ত ঘটনা ঘটলে ধর্ম মন্ত্রণালয়/ সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলের লক্ষ্যে আমি ‘হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ’ এর সদস্যপদ দাবি করছি। সেখানে আমার বক্তব্য প্রচার করলে সাম্প্রদায়িকতা শূন্যের দিকে নেমে আসবে ইনশাল্লাহ। আলোচ্য সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
হাইকোর্টের দায়িত্বঃ ফিলিস্তিন আরাকানসহ দুনিয়ার মজলুমদের রক্ষা করা ফরজ, মুস্তাদআফ-প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর পুনর্বাসন ও ভাতা দেয়া ফরজ। ইসলাম এসেছিল ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল করার জন্য কিন্তু মাদ্রাসার বিকৃত সিলেবাস উল্টো ভিক্ষুক তৈরি করছে। প্রত্যেকটা ফিরকা জান্নাতের নামে জাহান্নামের টিকেট দিচ্ছে। এ সকল বিষয়ে শুধু মানবাধিকারই লঙ্ঘিত হচ্ছে না বরং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হচ্ছে। কাজেই সংবিধানের ৪৪ এবং জাতিসংঘ সনদের ৮ নং ধারা অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব হাইকোর্টের। সুতরাং হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক এবং আইনজীবীগণের প্রতি চারটি বিষয়ে রিট পিটিশনের আবেদন জানাচ্ছি-
১। মাদ্রাসার সিলেবাস সংস্কারের জন্য মাদ্রাসা বোর্ডগুলির বিরুদ্ধে।
২। মুসলমানদেরকে বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত করার কারণে ফিরকাগুলির প্রধান মুরুব্বিদের বিরুদ্ধে।
৩। ইসলাম প্রদত্ত মুস্তাদআফের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে।
৪। মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে।
এসব বিষয় প্রমাণের উদ্দেশ্যে মাননীয় হাইকোর্টের সামনে আমার গ্রন্থাবলী ও বক্তব্য পেশ করার জন্য আমাকে সুযোগ দানের আবেদন জানাচ্ছি।
আমার কৈফিয়তঃ উপযাচক হয়ে নিজের সম্পর্কে দুটি কথা বলতে হচ্ছে। আমার বাবা দেওবন্দ থেকে আসার সময় অনেক কিতাবাদী নিয়ে এসেছিলেন এই আশায় যে, তার ছেলে হবে, এগুলি পড়িয়ে আলেম বানাবেন। কিন্তু পরপর কন্যা সন্তান জন্মের পর অনেক দোয়া-তদবীরের পর একটা অভিশপ্ত শিশুর জন্ম হলো। জন্ম থেকে পৃথিবীর লাঞ্ছনা বঞ্চনা জুলুম নির্যাতন ভোগ করে সেই শিশুটিই আজকের আমি। কাজেই আমি শ্রেষ্ঠ মুস্তাদআফ এবং মুস্তাদআফ শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসাবে দুনিয়ার সকল মুস্তাদআফের পক্ষ থেকে জিহাদের ডাক দেয়া হলো। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ উদ্ধার করে এবং বিত্তশালীদের থেকে প্রয়োজনে ৪ হাজার দিরহাম ব্যতীত বাকি সম্পদ এনে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মুস্তাদআফ-দুর্বল, অক্ষম, পতিতা-হিজরাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক জিহাদের ডাক দেয়া হলো।
আবার ১৫ বছর বয়সে নয়টি ভাই বোন নিয়ে এতিম হওয়ার পর কৃষিকাজ করে এতিমদেরকে প্রতিপালন করেছি। আর আল্লাহ আমাকে আলেমও বানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই রাসুল সাঃ এবং আলেম সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে মাদ্রাসার সিলেবাস এবং সকল ফিরকা বিভক্তিকে হারাম ঘোষণা করে সিলেবাস সংস্কার ও ঐক্যের জন্য সর্বাত্মক জিহাদের ডাক দেয়া হলো। খেলাফত/মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে ফিলিস্তিন আরাকানসহ মুসলমানদের সকল সমস্যার সমাধান করা ফরজ, এ লক্ষ্যে মুসলিম দূতাবাসগুলি অবরোধের ডাক দেয়া হলো। এখন আলেম সমাজ, মাদ্রাসা ছাত্র এবং সর্বস্তরের মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ পদ্ধতিতে বিশ্ব নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাবেন।
ছাত্র সমাজ ও যুব সমাজের সাথে চুক্তিঃ হবস, লক, রুশোর সামাজিক চুক্তির ন্যায় মাদ্রাসা ছাত্র, ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্র সমাজ এবং যুব সমাজের সাথে একটা চুক্তি হয়ে যাক। চুক্তিটি হল, আমি যদি প্রমাণ করে দেই যে, ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ তাহলে ছাত্র সমাজ পশ্চিমা নিষ্ঠুর মতবাদ বর্জন করে ইসলামে ফিরে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে- এ অঙ্গীকার করতে হবে।
প্রমাণঃ ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ, প্রমাণ- ‘ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার সংঘাত’। বৈশ্বিক মানবাধিকারের দলিল হল জাতিসংঘ সনদ। কিন্তু ‘মানবাধিকার প্রশ্নে ইসলাম ও জাতিসংঘ সনদ’ গ্রন্থে প্রমাণ করা হয়েছে ইসলামের সামনে জাতিসংঘ সনদ একেবারেই তুচ্ছ ও নগণ্য। কিন্তু মাদ্রাসা-সিলেবাস থেকে মানবাধিকার সংক্রান্ত সকল বিষয় বাদ পড়ে গেছে। প্রমাণ- ‘শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন’। উম্মাহ পতনের কারণ হলো মুসলমানদের ফিরকা বিভক্তি। প্রমাণ- ‘আলমদের পতনে বিশ্ব কি হারালো’ ইত্যাদি গ্রন্থ জাতির সামনে পেশ করলাম। এরপরেও যদি কারো আপত্তি থাকে তাহলে হাইকোর্ট থেকে হেগের আদালত পর্যন্ত, ঢাকা থেকে অক্সফোর্ড পর্যন্ত যেকোনো আদালতে/আসরে আমি প্রমাণ করব, ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ, ইনশাআল্লাহ।
এখন ছাত্র সমাজের প্রতি আবেদন, যদি তোমরা তওবা-৩১ নং আয়াত অনুযায়ী ধর্মীয় মুরুব্বিদের এবং আল ইমরান ৬৪ নং আয়াত (তাবারী) অনুযায়ী রাজনৈতিক মুরুব্বিদের রব হিসাবে গ্রহণ করে থাকো তাহলে উম্মাহর উপর যে গজব চলছে তা ঈসার আঃ ভাষায়- it is the first pain of childbirth- এটাতো প্রসব ব্যথার সূচনা মাত্র। আর যদি তোমরা আল্লাহকে একমাত্র রব জানো ও মানো তাহলে ধর্মীয় রাজনৈতিক মুরুব্বী বর্জন করে কোরআনে ফিরে এসে ইসলাম প্রদত্ত মানবাধিকারের ঘোষণা দিলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে এবং মুসলিম জাতি বিশ্ব নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
কাজেই তোমরা ঘোষণা দাও- উল্লিখিত সাত দফা বাস্তবায়ন করা হবে, দুনিয়ার সকল মুস্তাদআফের পুনর্বাসন করা হবে, পতিতালয় ও হিজরালয়গুলিকে মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হবে, প্রত্যেকটা মজলুমের ন্যায়বিচার করা হবে, মুসলিম জাতিসংঘ/খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে ন্যাটোর ন্যায় সামরিক জোট গঠন করে ফিলিস্তিন আরাকান মুক্ত করা হবে এবং উম্মাহর সকল সমস্যার সমাধান করা হবে, এ লক্ষ্যে মুসলিম দূতাবাসগুলি অবরোধ করতে হবে। ব্যস তাহলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে, কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়বে না।
সাংবাদিক সমাজের দায়িত্বঃ সাংবাদিক ভাইয়েরা লক্ষ করুন- আলোচ্য বিষয় সংক্রান্ত আমার লেখা কয়েকটা চটি বই পাঠিয়েছিলাম- হাটহাজারী মাদ্রাসা, ঢাকা আলিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, মাদ্রাসা বোর্ডসমূহ, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও আলেমদের কাছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি অর্থাৎ, তারা ফিরকাবদ্ধ থেকে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করবেন কিন্তু কুরআন-হাদিসে ফিরে আসবেন না। অর্থাৎ যাদেরকে ইসলাম ও উম্মাহর রক্ষক মনে করা হয় আসলে তারাই ভক্ষক (ধ্বংসকারী)। কাজেই এসব বিষয় সমগ্র জাতিকে জানিয়ে ইসলাম, উম্মাহ ও মানবতা রক্ষার স্বার্থে জাতির বিবেক হিসাবে সাংবাদিক ভাইদের তিনটি ফরয দায়িত্ব পালনের দাবী জানাচ্ছি।
(১) আমার গ্রন্থাবলীতে প্রমাণ করা হয়েছে, মাদ্রাসার সিলেবাস হারাম এবং যে কোনো ফিরকার অনুসরণ, আনুগত্য, সাহায্য দান, ভোট দান হারাম। কাজেই সিলেবাস সম্পর্কে মাদ্রাসা ছাত্রদের এবং ফিরকা-বিভক্তি সম্পর্কে সমগ্র মুসলমানদের জাগিয়ে তুলবেন যেন তারা দুর্বার আন্দোলন শুরু করে। সেই সাথে সরকার, হাইকোর্ট এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাবেন- যাতে তারা একটা নিরপেক্ষ আদালতে এসব বিষয়ে আমার রচনাবলী ও বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ করে দিয়ে মুসলমানদেরকে সঠিক ইসলামে ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত করেন।
(২) মুস্তাদআফ শ্রেণী অর্থাৎ, দরিদ্র-অক্ষম শ্রেণীকে তাদের অধিকারের কথা জানিয়ে রাজপথে টেনে আনবেন। তারা কোরআন বুকে ঝুলিয়ে স্লোগান দিবেন ‘ইসলাম প্রদত্ত আমাদের অধিকার আদায় করো অন্যথায় কুরআন নিষিদ্ধ কর’। আসলে কুরআন নিষিদ্ধ হয়ে আছে এ শ্লোগানের মাধ্যমে কুরআন ফিরে আসবে।
(৩) সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সকল পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, ইসলাম থেকে বাদ পড়া বিষয় এবং ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বলিত আমার রচনাবলী পত্রিকায় ছাপিয়ে জনগণকে জানার সুযোগ করে দিবেন। ,
সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আরেকটি আবেদন, ২০২১ সালে এক প্রকাশককে কিছু টাকা ও দুইটি বই দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বই প্রকাশ করবে বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিল। বই দুটির মূল কপি তার কাছে থাকার কারণে আমি অন্যত্র থেকে প্রকাশ করতে পারিনি। কাজেই এ প্রতারকের প্রতিকার দাবি করছি। তার পরিচয়- নিজাম উদ্দিন, প্রিন্সিপাল পাবলিশার্স, শহীদ ফারুক রোড, পশ্চিম যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। মোবাইল- 01919 031917
এখন ধর্মীয়-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন, আপনারা যদি মনে করেন আমি নিজের লাভ লোভের বশে এসব কথা বলেছি তাহলে আমার বিচার করুন। আর যদি বুঝেন ইসলাম, উম্মাহ ও আপনাদের স্বার্থের কথা বলেছি তাহলে আর দেরি না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর গজব থেকে নিজেরা বাঁচুন এবং মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করুন। কিন্তু যদি এই দুই শ্রেণী এগিয়ে না আসে তাহলে ‘কৃষক শ্রমিক ঐক্যফ্রন্ট’ এর দায়িত্ব বহন করতে হবে, সমগ্র উম্মাহ এবং মানব জাতির মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক সমঝ দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন