মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৪)

লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ১৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:১১:২৮ রাত

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ

মূলঃ মোঃ এলফি নিশায়েম জুফেরি

( ইংরেজী থেকে অনুদিত)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-১)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-২)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৩)

উপসংহারঃ

এটা একটা বাস্তবতা যা অস্বীকার করা যাবেনা যে, কামাল আতাতুর্ক একজন অত্যাচারী একনায়ক ছিলেন। মুসলমানদের সাথে তার নিষ্ঠুর ও নৃসংশ আচরণ তাকে আল্লাহর একজন নিকৃস্টতম শত্রু হিসাবে আলাদা করে। উপরোক্ত বর্ণনা গুলো পাশ্চাত্যের পর্যবেক্ষকদের দ্বারা লিখিত এবং বর্ণিত । প্রকৃত পক্ষে কামালের যে সরাসরি নীতি নয়া তুরস্কে অনুসৃত হয়েছে, তার প্রভাব অনেক ব্যাপক, সুদুর প্রসারী, নুন্যপক্ষে বলা যায় ঘৃণ্য। তার কর্মকান্ড বাস্তবিকই প্রমাণ করে সে আপাদ-মস্তক একজন আল্লাহর শত্রু। এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ। ( নাসিরুদ্দীন আল আলবানী কামাল আতাতুর্ক এর উপর তাকফির কে সমর্থন করেছেন- অনুবাদক )

পরিশিষ্টঃ আতাতুর্কের ওপর দলিল প্রমাণাদি

টাইম ম্যাগাজিন

৯ই জানুয়ারী, ১৯৩৩, পৃষ্ঠা ৬৪


গত সপ্তাহে তির্যকভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে তুর্কীরা নতুন চাঁদের সন্ধান করেছেন। যা তারা তাদের রমজান মাসের শুরু নির্ধারণ করতে দেখে থাকে । রমজান, মুসলমানদের আধ্যাত্মিক মাস, যে মাসে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর উপর কুরান অবতীর্ণ শুরু হয়েছিল। এ বছর নতুন চাঁদের প্রথম দর্শন ছিল ভীতির ও বিশেষ ভাবে গুরুত্ববাহী। তুর্কীদের লৌহ নেতা মুস্তফা কামাল পাশার আদেশে তারা ইতিমধ্যে পর্দা এবং ফেজ (লাল তুর্কী টুপি) পরিত্যাগ করেছে।(টাইম ম্যাগাজিন, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯২৬ সংখ্যা), এবং তিনি এখন আদেশ করেছেন যে, এ বছর রমজানের শুরু থেকে তারা তাদের উপাস্যকে আর আরবী নাম ‘আল্লাহ’ বলে ডাকতে পারবেনা। আল্লাহ প্রেরিত কোনো মানুষ নন, স্বৈরশাসক কামাল মনে করেন, এমন কোনো কারন নেই তুর্কীরা তাদের উপাস্যকে তুর্কী নাম ‘তানরি’ এর পরিবর্তে আল্লাহ বলে ডাকবে। এ ছাড়া কোনো কারন নেই যে, এটা একটি শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য এবং শুধু মাত্র কিছু সংখ্যক ইমাম ছাড়া, যারা কুরানকে তুর্কী ভাষায় মুখস্ত করেছেন, প্রায় সকল ঈমাম গণ কুরানকে আরবীতে মুখস্ত করেছেন। কঠোর নিষ্ঠুরতার সাথে গত সপ্তাহে কামাল আদেশ জারী করেন যে, মসজিদের মিনার থেকে মুয়াজ্জিন যখন বিশ্বাসীদের আজানের মাধ্যমে আহবান করে, তখন তারা উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ এর পরিবর্তে তুর্কী ভাষায় বলবে ‘ তানরি উলুদুর’ যার অর্থ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। যখন ইমামগণ আতাতুর্ক এর আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মসজিদের কাজ থেকে বিরত থাকার হুমকি দেন, মসজিদের জায়নামাজ লুকিয়ে রাখেন, সরকার ঘোষনা করেন যে, তাদের কাছে ৪০০টি আনকোরা জায়নামাজ মজুদ আছে, আরো হুমকি দেন, “তারা নব প্রশিক্ষিত মুয়াজ্জিনকে নিয়োগ প্রদান করবে যারা তুর্কী ভাষায় কুরান মুখস্ত করেছে এবং সরকারের আদেশ পালনে প্রস্তুত”। ধীরে ধীরে নতুন চাঁদের সময় ঘনিয়ে এলো। রমজান প্রায় এসেই পড়েছে, তখন সংস্কৃতি অধিদপ্তরের (এর মধ্যে ধর্মও অন্তর্ভুক্ত) কর্মকর্তারা সাহস সঞ্চয় করে, একনায়ক কামাল কে বললেন যে, তিনি তুর্কীদের উপাস্যের নাম এভাবে বদলাতে পারবেননা, নিদেন পক্ষে শেষ সপ্তাহেতো নয়-ই। ইতিমধ্যে অনেক মুয়াজ্জিনকে কয়েদ খানায় নিক্ষেপ করা হয়েছে, কারণ তারা ঘোষনা করেছে যে, ‘আল্লাহু আকবার’ বলেই তারা চিৎকার দেবে ! জনরোষ খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, অবশ্যই তারা আল্লাহ বলার পক্ষের জনমতের প্রতি সহানুভূতিশীল। আকস্মিক ভাবে একনায়ক কামাল অনুমতি দিলেন, ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি বললেন “ সাময়িক ভাবে তারা যে ভাবে উপাসনা করতে চায়, করতে দিন”। তার মন্ত্রী দ্রুততার সাথে বেড়িয়ে গিয়ে নতুন চাঁদ ওঠার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে, সামগ্রিক ভাবে ইমাম এবং মুয়াজ্জিনরা প্রস্তুত নয়, এই যুক্তিতে এই আনন্দের সংবাদ ঘোষনা করেন। তারা মার্জিত ভাবে বলেন, “ এই মাসে সালাত আদায় এবং কুরান তেলাওয়াত আরবীতে করা যাবে, কিন্তু ইমামদের আলোচনা ও বক্তৃতা অবশ্যই তুর্কী ভাষায় করতে হবে।”

রমজান মাসে মুসলমানেরা বিশেষ ভাবে কিছুটা ক্রুদ্ধ অবস্থায় থাকে, কারন তারা দিনের বেলায় কিছুই ভক্ষণ করেনা। সিয়াম পালন সম্পন্ন হলে তুর্কীরা কিছুটা বাধ্য থাকবে, হয়তবা তারা তাদের একনায়কের কাছে থেকে তাদের উপাস্যের জন্য দেয়া নতুন নাম গ্রহন করবে!

টাইম ম্যাগাজিন

২০ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩, পৃষ্ঠা ১৮


উপাস্যের জন্য নতুন নাম, একজন রূক্ষ পিতা তার মানুষের কাছে,

মুস্তাফা কামাল তার তুর্কি জনগণকে গত ডিসেম্বরে বলেছিলেন যে, তাদেরকে অবশ্যই তাদের উপাস্যের আরবী নাম ‘আল্লাহ’ ভুলে যেতে হবে, তুর্কি ভাষায় ‘তানরি’ শিখতে হবে। ১৩০০ বছরের ধরে ডাকা উপাস্যের নাম পরিবর্তন করার কুন্ঠাকে স্বীকার করে, কামাল মুয়াজ্জিনদের জন্য সময় বরাদ্দ করেন, যাতে তারা তুর্কি ভাষায় কুরান শিখতে পারে। গত সপ্তাহে ধর্ম-ভীরু জনপদ ব্রুসা, ‘ সবুজ শহরে’ একজন মুয়াজ্জিন “তানরি উলুদুর” বলে একটি মিনার থেকে মানুষকে সালাতের দিকে আহবান করেন, যেখানে ব্রুসাবাসীরা চতুর্দশ শতাব্দী থেকে “আল্লাহু আকবার” শুনে আসছেন। রাগান্বিত হয়ে তারা মুয়াজ্জিনকে প্রহার করেন, যে পুলিশ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিল, তাকেও তারা প্রহার করেন। দ্রুততার সাথে উপাস্যের জন্য তার নতুন শব্দ ‘তানরি’ কে রক্ষা করতে, ততোধিক দ্রুততার সাথে নয়া তুরস্কে পুরানো ধ্যান-ধারণার মানুষের কি পরিণতি কি তা দেখাতে, কামাল, যিনি গাজী, বিজয়ী, ব্রুসা তে আঘাত হানেন এবং ৬০ জন বিশ্বাসীকে গ্রেফতার করেন, ওগলুব জামে মসজিদের মুফতিকে বহিস্কার করেন এবং ডিক্রী জারি করেন, এখন থেকে উপাস্য হলো ‘তানরি’।

টাইম ম্যাগাজিন

১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯২৬, পৃষ্ঠা ১৫-১৬


“তুরস্ক আজ মিশনারী সার্ভিসের জন্য এই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল এবং চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র উপহার দিচ্ছে” এভাবেই মিশনারী এক্সিকিউটিভ জেমস এল বার্টন গত সপ্তাহের ‘ ক্রিশ্চিয়ান ওয়ার্ক’ ইস্যুতে লিখেন। কিন্তু প্রথমে তিনি তুরস্কে ১৯২৩ সাল থেকে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সার-সংক্ষেপ বর্ণনা করেন। পরিবর্তন গুলোঃ ১০০ বছর ধরে খ্রিস্টান মিশনারীরা আশাহত ভাবে সংগ্রাম করেছে খিলাফতের হৃদয় জয় করার জন্য। সেই সুযোগ এবার এসেছে, জনাব বারটন বলেন, সন্দেহ হচ্ছে, “ মুসলমানেরা এখন স্বর্গীয় দয়ার বলয়ের বাইরে অবস্থান করছে।”

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (শেষ পর্ব)

RELATED READINGS:

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-১)

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন- ইহুদী? ফ্রিমেসন? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-২)

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন- ইহুদী? ফ্রী-মেসন? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-৩)

কে ছিলেন কামাল আতাতুর্ক- ইহুদী? ফ্রী-মেসন?- শেকড়ের সন্ধানে ( শেষ পর্ব)

বিষয়: বিবিধ

১২৭৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

362806
১৮ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৮:২১
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:৩৬
300723
তট রেখা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। Good Luck Good Luck
362810
১৮ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:৪৪
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন :
“তারা নব প্রশিক্ষিত মুয়াজ্জিনকে নিয়োগ প্রদান করবে যারা তুর্কী ভাষায় কুরান মুখস্ত করেছে এবং সরকারের আদেশ পালনে প্রস্তুত”।


একজন মুয়াজ্জিন “তানরি উলুদুর” বলে একটি মিনার থেকে মানুষকে সালাতের দিকে আহবান করেন


বাংলাদেশে এখন তেমনটাই ঘটছে বা ঘটতে চলেছে যেমনটা তুরস্কে হয়েছে। ইমামদের বক্তব্যের ধরণ কেমন, সেটাও সরকার শিখিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।কাকে নিয়োগ
দেবে আর কাকে বাদ দেবে, সেটা নিয়ে কমিটিতো অনেক আগেই হয়েছে। যারা নিজস্বতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে, তাদের সরিয়ে দিয়ে আজ্ঞাবহ ইমামদের নিয়োগ দিয়েছে।

রুজি রোজগারের চিন্তা করে আল্লাহ্‌ খোদাকে জাহিলিয়্যাতের কাছে বিসর্জন ইমামতি টিকিয়ে রাখার ধান্দায় থাকলে তুরস্কের মত অবস্থা হতে বেশি দেরি নেই।

চালাতে থাকুন, সঙ্গেই আছি। জাযাকাল্লাহু খাইর।
১৮ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
300727
তট রেখা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck Good Luck
362829
১৮ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
শেখের পোলা লিখেছেন : চোখের উপর আতাতুর্কের আস্ফালন নিত্য দেখেই চলেছি৷ ধন্যবাদ৷
১৮ মার্চ ২০১৬ রাত ০৯:৫২
300766
তট রেখা লিখেছেন : দিকে দিকে আজ কত জনপদে
ইসলাম আজ গিয়েছে নির্বাসন,
কামাল, জামালেরা নিপীড়িতের
লাশে চড়ে করছে আস্ফালন,
কুরান, সুন্নাহ দূরে ফেলে মুসলমানেরা
ডাকছে তাদের মরন।
363088
২১ মার্চ ২০১৬ রাত ১২:০৬
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক|ধন্যবাদ|
২১ মার্চ ২০১৬ রাত ১২:১৩
300961
তট রেখা লিখেছেন : ব্লগ পড়ে এবং মন্তব্য করে উতসাহিত করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File